প্রধানমন্ত্রী : অন্যায়ের কাছে মাথা নত করিনি করব না > শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাল সংসদ

আগের সংবাদ

বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী : পাচারের টাকা ফেরত আনব

পরের সংবাদ

ছয় লক্ষ্য অর্জনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন : ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট, সর্বোচ্চ ঘাটতির দিক থেকেও নতুন মাইলফলক > বাজেট ২০২২-২৩

প্রকাশিত: জুন ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১০, ২০২২ , ১:০৫ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেঁজুতি : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ নতুন অর্থবছরের বাজেট পেশ হয়েছে। অর্থমন্ত্রী কৌশলও নির্ধারণ করেছেন, যাতে এসবের প্রভাব থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করা এবং অর্থনীতি গতিশীল রাখা যায়। একই সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে দেশীয় শিল্পকে উৎসাহ প্রদান করেছেন। যাতে আমদানি পণ্য দেশেই উৎপাদন করা যায়। অর্থাৎ বাংলাদেশকে একটি আত্মনির্ভরশীল দেশে রূপান্তরের জন্য তিনি তার নতুন বাজেটে আমদানিকে নিরুৎসাহিত করেছেন। প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আগামী অর্থবছরে মোট ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা করেছেন, যা জিডিপির ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। ে
‘কোভিড-১৯ এর অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ সেøাগান নিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য নতুন এ বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেটের আকার চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি। আর সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৮৪ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা বেশি। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এবারের প্রস্তাবিত বাজেট দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ঘাটতির দিক থেকেও নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে।
অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ, উন্নত বাংলাদেশে পরিণত করতে চান। সে লক্ষ্যেই তিনি কোভিড পরবর্তী সময়ের বাংলাদেশকে আবার উন্নয়নের ধারায় নিয়ে যেতে চাইছেন আগামী বাজেটের মাধ্যমে। যাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলার সুবর্ণ রেখাটি বাংলাদেশ স্পর্শ করতে পারে। তাইতো ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রপ্তানি বৃদ্ধি ও রপ্তানি বহুমুখীকরণ, কর্মসৃজন ও পল্লী উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলা এবং সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতা সম্প্রসারণে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ অভাবনীয় স্বর্ণালি এক অধ্যায় পার করছে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে শান্তি, প্রগতি আর সম্প্রীতির এক মিলনমেলায়। একের পর এক রচিত হচ্ছে উন্নয়নের সাফল্যগাথা। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য অনুকরণীয় উন্নয়ন স্বপ্নদ্রষ্টা। তার নেতৃত্বে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
নতুন এ বাজেটে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে অর্থনীতিকে গতিশীল রাখা এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে স্বস্তি দেয়াই বড় চ্যালেঞ্জ। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বিভিন্ন সংগঠনের প্রস্তাবনা পেয়েছি। এসব আলোচনা, প্রস্তাবনা ও বিশ্লেষণে আগামী অর্থবছরের বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ উঠে এসেছে। এ সময় তিনি প্রধান ৬টি চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, এবারের বাজেটে প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা এবং অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বাড়ানো। গ্যাস, বিদ্যুৎ মূল্যবৃদ্ধিজনিত বর্ধিত ভর্তুকির জন্য অর্থের সংস্থান। বৈদেশিক সহায়তার অর্থ ব্যবহার এবং মন্ত্রণালয়, বিভাগের উচ্চ-অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ে শেষ করা। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়ন। অভ্যন্তরীণ মূল্য সংযোজন কর সংগ্রহের পরিমাণ এবং ব্যক্তি আয় করদাতার সংখ্যা বাড়ানো। সবশেষে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক পর্যায়ে রাখা। তিনি আরো বলেন, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের অত্যন্ত কৌশলী হতে হবে। কোনো একটি সমস্যা সঠিকভাবে সমাধান করা না গেলে তা সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে পারে।
তবে অর্থমন্ত্রীর এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বাজেটে সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় যে পদক্ষেপগুলো নেয়া জরুরি, সেখানে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনার অভাব রয়েছে। বিশেষত, মূল্যস্ফীতি সংক্রান্ত যে সংকটের মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি, তা সমাধানের লক্ষ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির শুল্ক কমানো এবং জোগান বাড়ানোর জন্য প্রথাগত আমদানির বিকল্প উৎস খতিয়ে দেখার মতো বিভিন্ন উদ্যোগ বাজেট ঘোষণায় অনুপস্থিত ছিল।
মহামারির সব ধকল কাটিয়ে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর মুহূর্তে শুরু হয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের দামামা। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে গোটা বিশ্ব এখন অর্থনৈতিক সংকটের মুখে। এতে সৃষ্টি হয়েছে অর্থনীতির নানা সংকট। এমন সংকটময় মুহূর্তে ঘোষণা করা হলো ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাজেট। এটি দেশের ৫১তম এবং অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালের তৃতীয় বাজেট। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থমন্ত্রী অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে সেই সংকট কাটিয়ে নতুন উদ্দীপনা আনতে কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছেন ভর্তুকি, প্রণোদনা এবং নগদ ঋণ খাতে ব্যয় বাড়ানোর উদ্যোগকে। তার লক্ষ্য এর মাধ্যমে চলমান অর্থনীতি, উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ী তথা ক্রেতা-ভোক্তার সক্ষমতার উন্নয়ন।
বাজেট উত্থাপনের আগে দুপুর ১২টায় জাতীয় সংসদে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে বাজেট অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বাজেটে সম্মতি জানিয়ে স্বাক্ষর করেন। সংসদে এর ওপর ১৪ জুন থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ব্যতীত প্রতিদিন আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ৩০ জুন সংশোধিত আকারে বাজেট পাস হবে এবং ১ জুলাই থেকে নতুন অর্থবছর কার্যকর হবে। অর্থমন্ত্রী ১৭২ পৃষ্ঠার বাজেট বক্তৃতার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন, বাকি অংশ পঠিত বলে গণ্য করা হয়। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার মাঝে ডিজিটাল ডিসপ্লের মাধ্যমে খাতভিত্তিক প্রজেকশন দেখানো হয়। বাজেট উত্থাপনের পর আইন অনুযায়ী সরকারের আর্থিক প্রস্তাবনাবলি কার্যকরণ এবং কতিপয় আইন সংশোধনকল্পে আনীত বিল অর্থবিল-২০২২ সংসদে উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।
নতুন বাজেটে সরকারের আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা হতে যাচ্ছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। অনুদান ছাড়া ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। আর অনুদানসহ ঘাটতি ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। আয়ের লক্ষ্যমাত্রা চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ৪৪ হাজার ৭৯ কোটি টাকা বেশি। কর বাবদ ৩ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা আয় করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে এনবিআরকে আগের বছরের তুলনায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দিচ্ছে সরকার। এনবিআরবহির্ভূত কর থেকে আয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। আর কর ছাড়া আয় ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি। বৈদেশিক অনুদান থেকে আয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটকে গতানুগতিক বাজেট হিসেবে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, বাজেট গতানুগতিক এবং নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পুরনো চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠার জন্য তেমন স্পেশাল কিছু নেই। চ্যালেঞ্জগুলো হলো যেমন- বাণিজ্য ঘাটতি, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান, টাকার অবমূল্যায়ন, কর্মসংস্থানের অভাব, আয় বৈষম্য। মানুষ শুনতে চায়, যারা বঞ্চিত তাদের জন্য বাজেটে কী বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সমসাময়িক সমস্যা থেকে পরিত্রাণ এবং কীভাবে জীবনযাত্রার মানের আরেকটু উন্নয়ন ঘটানো যাবে। দেশের প্রবৃদ্ধি হবে, রিজার্ভ বাড়বে- এগুলো অর্থনীতির সূচক মাত্র। তিনি বলেন, বাজেট বর্ণনায় বিভিন্ন উন্নয়ন হয়েছে বলে আত্মতৃপ্তি দেখানো হয়েছে। কিন্তু যেগুলো হয়েছে, তা ভবিষ্যতে কীভাবে মেনটেন্যান্স করবে, সাধারণ মানুষের কী উপকারে আসবে বা এ বিষয়ে বলা হয়নি। পল্লী অঞ্চলে উন্নয়ন, কালভার্ট নির্মাণের কথা বলা হয়েছে- এটা ভালো উদ্যোগ।
এ অর্থনীতিবিদ বলেন, এ বাজেটে সাধারণ মানুষের উন্নয়ন হবে না, হয়তো প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পেতে পারে। কিন্তু আয় বৈষম্য, সম্পদের বৈষম্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে সমস্যা- এগুলো কীভাবে যাবে? এ বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা নেই। কোন কোন খাতে বেশি ব্যয় বাড়িয়েছে এ বিষয়গুলো বাজেটে উঠে এসেছে। বাজেটের আকার বাড়লে এসব বরাদ্দ বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান। ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, আমরা যে ধরনের উদ্যম, উদ্যোগ নিয়ে বাজেট প্রস্তাব করেছি সেখানে আরো একটু বেশি উচ্চাকাক্সক্ষী হওয়া দরকার ছিল। সেটা আমরা করতে পারিনি, কারণ আমাদের অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের যে ধারাবাহিক দুর্বলতা সে দুর্বলতা এবারের বাজেটেও রয়ে গেছে। ফলে আমাদের রাজস্ব জিডিপির হার চাহিদা অনুযায়ী বাড়াতে পারিনি। যারা স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা খাতে আরো অর্থায়নের দরকার ছিল। কিছু প্রবৃদ্ধি আছে কিন্তু মূল্যস্ফীতির যে চাপ তাতে এসব মানুষের আরো বেশি খাদ্য সহায়তা, নগদ সহায়তার দরকার ছিল। আরো বেশি মানুষকে এ খাতে যুক্ত করা দরকার ছিল।
কোভিডের কারণে শিক্ষা খাতের ওপর ব্যাপকভাবে প্রভাব পড়েছে। শিক্ষা খাতের জন্য লক্ষ্য নির্দিষ্ট প্রকল্প নেয়ার জন্য যে ধরনের অর্থায়ন দরকার, শিক্ষা বাজেটে সেই ধরনের অর্থায়ন হয়নি। আমাদের দেশে যেভাবে ধনীর সংখ্যা বাড়ছে, আয় বৈষম্য বাড়ছে, সম্পদ বৈষম্য বাড়ছে- এসব বৈষম্য কমানোর কোনো উদ্যোগও এবারের বাজেটে নেই। উল্টো দুর্নীতি করে যারা টাকা পাচার করেছে তাদের বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দেয়া হয়েছে। এতে অর্থনীতিতে যে সিগন্যাল দেয়, সেটা কর আহরণের জন্য ইতিবাচক নয়। এটা অর্থনৈতিকভাবে খুব লাভজনক হয় না। নীতির দিক থেকে ব্যত্যয় হয় এবং রাজনৈতিক দিক থেকেও ইতিবাচক কোনো ফল আনে না।
রপ্তানি বাড়াতে উদ্যোগ : রপ্তানি বাড়ানোর জন্য বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে সরকার এবং পাশাপাশি রপ্তানিতে ভর্তুকি-প্রণোদনা অব্যাহত রাখা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, সিএমএসএমই খাতের জন্য ৪০ হাজার কোটি টাকার চলতি মূলধন ঋণের তহবিল, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে বাড়ানো এবং ২ শতাংশের বেশি সুদের হারে ভর্তুকি প্রদান এবং ৫ হাজার কোটি টাকার একটি প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট পুনঃঅর্থায়ন প্রকল্প। তিনি আরো বলেন, সরকার রপ্তানিমুখী শিল্পের সক্ষমতা বাড়ানো, গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ, রপ্তানি পণ্যের জন্য নতুন বাজার অনুসন্ধান, পরিবহন ও ইউটিলিটি সুবিধার উন্নয়ন এবং দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় অগ্রাধিকার এবং মুক্তবাণিজ্য চুক্তি ইত্যাদি স্বাক্ষরের মাধ্যমে রপ্তানি বাড়ানোর জন্য বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে। সরকার রপ্তানি বাড়াতে বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করছে। পাশাপাশি রপ্তানি বাড়াতে রপ্তানি ভর্তুকি-প্রণোদনা অব্যাহত রেখেছে।
তিনি বলেন, কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (সিএমএসএমই) খাতের উন্নয়নের জন্য ভূমিকা নেয়া হয়েছে। দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নে কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আত্মনির্ভরশীলতা বাড়ানো, কর্মসংস্থান সৃজন ও উদ্যোক্তা তৈরিকে উৎসাহিত করার জন্য কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। সিএমএসএমই ঋণ ও অগ্রিমের নিট স্থিতির পরিমাণ প্রতি বছর কমপক্ষে ১ শতাংশ বাড়ানোসহ আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে ন্যূনতম ২৫ শতাংশে উন্নীত করার জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। কেস-টু-কেস ভিত্তিতে নতুন উদ্যোক্তাদের সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জামানতবিহীন এবং সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতসহ পুনঃঅর্থায়ন বিবেচনা করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সর্বোচ্চ বরাদ্দ ১০ প্রকল্পে : আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১০টি খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা। এছাড়া একক প্রকল্প হিসেবে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে। সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত ১০ প্রকল্পগুলোর মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে ১৪ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা, মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্টে ৬ হাজার ১৬২ কোটি টাকা, চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচিতে (পিইডিপি-৪) ৬ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে। এছাড়া পদ্মা সেতু রেল সংযোগে (১ম সংশোধিত) ৬ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা, ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টে (লাইন-৬) ৪ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (১ম পর্যায়) কাজে ৩ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা, পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণে (২য় সংশোধিত) ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, এলেঙ্গা-হাটিকামরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে (১ম সংশোধিত) প্রায় ২ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়