প্রধানমন্ত্রী : অন্যায়ের কাছে মাথা নত করিনি করব না > শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাল সংসদ

আগের সংবাদ

বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী : পাচারের টাকা ফেরত আনব

পরের সংবাদ

ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত কমিটির নমুনা সংগ্রহ : সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডিতে নিহত বেড়ে ৪৬

প্রকাশিত: জুন ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ-আগুনে ব্যাপক হতাহতের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেছেন এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলেছেন। গত শনিবার ঘটনার সূত্রপাত হলেও আগুন পুরোপুরি নেভাতে দেরি হওয়ায় এবং ঘটনাস্থল ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় তদন্ত কমিটি এতদিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে পারেনি বলে জানায় জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র।
এদিকে ঘটনার সূত্রপাত ও কারণ এবং তদন্ত কমিটির অগ্রগতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রহমান গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভোরের কাগজকে বলেন, তদন্ত কমিটি স্বাধীনভাবে তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তদন্ত কমিটি কাজ শেষে প্রতিবেদন না দেয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কথা উচিত হবে না। কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়েছেন, বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করেছেন এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলেছেন। কমটিরি সদস্যরা নিজেরা বসেছেন। জেলা প্রশাসক বলেন, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত মরদেহ পাওয়া গেছে ৪৬ জনের। এর মধ্যে মরদেহ শনাক্ত হয়েছে ২৭ জনের। এসব মরদেহ আমরা তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি। বাকিগুলো ডিএনএ টেস্টের জন্য দেয়া হয়েছে। এই ঘটনায় নিখোঁজ কতজন জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিখোঁজের কোনো সংখ্যা এই মুহূর্তে আমাদের কাছে নেই।
অন্যদিকে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ আগুন-বিস্ফোরণের ঘটনার চারদিন পর গত বুধবার রাতে ডিপোর ভেতর থেকে দুইজনের দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে। আগুনে পুড়ে যাওয়া কন্টেইনার অপসারণের সময় উদ্ধার এসব দেহাবশেষ পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল ৪৬ জনে। সীতাকুণ্ড থানার ওসি আবুল কালাম জানান, কন্টেইনার অপসারণের সময় ডিপোর ভেতর থেকে দুইজনের দেহাবশেষ পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। দেহাবশেষগুলো আগুনে সম্পূর্ণ ঝলসে গেছে। আগের দিন যেখানে দুইজনের দেহের বিভিন্ন অংশ পাওয়া গিয়েছিল তার থেকে ভিন্ন জায়গায় এসব পাওয়া গেছে। সে কারণে মনে হচ্ছে, এ দুটি দেহাবশেষ পৃথক মানুষের। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মরদেহ উদ্ধারের পর হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।
সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুন থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে শনাক্তবিহীন মরদেহ শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। শনাক্তবিহীন মরদেহে নিজের স্বজন আছেন কিনা জানতে বা নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজ পেতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা জমা দিতে ভিড় করেন অনেকে। নমুনা সংগ্রহের জন্য নির্ধারিত বুথে গতকাল বৃহস্পবিার পর্যন্ত তিন দিনে ৪২ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ২৩ জনের বিপরীতে মৃতদেহের পরিচয় শনাক্ত করতে ৬ থেকে ৯ জুন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ইমারজেন্সি কেয়ারের সামনে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের বুথে তারা নমুনা দিয়েছেন। ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের কাজটি করছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ। সিআইডি চট্টগ্রাম মেট্রোর পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শাহনেওয়াজ খালেদ বলেন, তিন দিনে ২৩ জনের বিপরীতে ৪২ জনের কাছ থেকে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আর কেউ যদি ডিএনএ পরীক্ষা জন্য নমুনা দিতে চায়, তাহলে ঢাকায় গিয়ে দিতে হবে।
এদিকে ঘটনাস্থল সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ১৩০টি পোশাক কারখানার সব মিলিয়ে ৪০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য ছিল বলে ধারণা করছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। তবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কী পরিমাণ পণ্যের ক্ষতি হয়েছে তা এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিএম কন্টেইনার ডিপো পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ডিপোতে আগুন লাগায় পোশাক শিল্পের কী ক্ষতি হয়েছে তার পরিমাণ জানতে এখন ফরোয়ার্ডার ও শিপিং এজেন্ট কাজ করছে। কী পরিমাণ মালামাল বন্দর কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করেছে এবং দুর্ঘটনার সময় ডিপোতে কী পরিমাণ পণ্য ছিল তা হিসেব করছে তারা।
আশা করছি, দুই-একদিনের মধ্যেই তা জানানো যাবে। তিনি বলেন, ডিপোতে যে পণ্যগুলো অক্ষত অবস্থায় রয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে বিদেশি বায়ারদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে বায়াররা এসব পণ্যের ইনস্যুরেন্স করে রাখে। আমরা পণ্যগুলোর জন্য রপ্তানি আদেশ নিয়ে ফেলেছি। কাস্টমসের আন্ডারে পণ্যগুলো চলে গেছে। এখন কী হবে তা নিয়ে ব্যাংক, কাস্টমস ও বিদেশি ক্রেতার সঙ্গে কথা বলতে হবে। বিদেশি ক্রেতারা কী করতে চান তাদের মতামত নিতে হবে।
দায়ের করা মামলায় পুলিশের অভিযোগ : ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বিএম কন্টেইনার ডিপো কর্তৃপক্ষের অবহেলা, তথ্য গোপন ও চরম অবস্থাপনাকে দায়ী করছে পুলিশ। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ডিপোতে কেমিক্যাল ভর্তি ড্রাম কন্টেইনার রাখা হলেও আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের কাছে তা গোপন রাখা হয়। বিএম কন্টেইনার ডিপোতে রপ্তানিমুখী ও আমদানিকৃত গার্মেন্টস পণ্যসহ সাধারণ পণ্য ভর্তি কন্টেইনারের পাশাপাশি কেমিক্যাল ভর্তি ড্রাম কন্টেইনার রাখা হতো। কিন্তু অগ্নি দুর্ঘটনা মোকাবিলায় বিএম কন্টেইনার ডিপো কর্তৃপক্ষের ফায়ার ফাইটিংয়ের পর্যাপ্ত সরঞ্জাম এবং প্রশিক্ষিত জনবলও ছিল না। কেমিক্যাল জাতীয় পদার্থের আগুন নেভানোর মতো কোনো প্রকার প্রস্তুতি না থাকলেও সেখানে টনে টনে কেমিক্যালের মজুত করা হয়। গত মঙ্গলবার রাতে সীতাকুণ্ড থানার এসআই আশরাফ সিদ্দিকী বিএম কন্টেইনার ডিপো কর্তৃক্ষের ৮ কর্মকর্তাকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। তবে মামলায় আসামির তালিকায় নাম নেই মালিক পক্ষের কারো। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩৩৭/৩৩৮/৩০৪ এর ক/৪২৭ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়