প্রধানমন্ত্রী : অন্যায়ের কাছে মাথা নত করিনি করব না > শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাল সংসদ

আগের সংবাদ

বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী : পাচারের টাকা ফেরত আনব

পরের সংবাদ

ঈশ্বরগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে তৈরি হচ্ছে কেঁচো সার

প্রকাশিত: জুন ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. সেলিম, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) : ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) উৎপাদনে স্থানীয় যুবকদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ করা গেছে। এই ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনে উপজেলা ১২ জন চাষি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন। আরো প্রায় ৩০-৩৫ জন ভার্মি কম্পোস্ট চাষের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। অতি অল্প সময়ে কম খরচে ৩০-৪০ দিন সময়ের মধ্যে উৎপাদনে আসে ভার্মি কম্পোস্ট। ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনে চাক, চারী (খাদা) ও চৌবাচ্চা এই তিন পদ্ধতিতে চাষ করা হয়ে থাকে।
জানা গেছে, ফল ও সবজি বাগান, ছাদ বাগান, পান বরজ, পারিবারিক পুষ্টি বাগান ও নার্সারিতে ভার্মি কম্পোস্ট সারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে অনেকেই এখন জৈবসার ব্যবহারে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। ফলে ভার্মি কম্পোস্টের কদর দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
স্থানীয় একাদিক চাষি ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, বিশেষ ধরনের কেঁচো ও সংগৃহীত গোবরের সমন্বয়ে রিং বা চাকে বাড়ির পাশে চালা ঘরে ছায়াযুক্ত স্থানে স্থাপন করতে হয়। কেঁচো, গোবর ও চাকসহ প্রতিটির খরচ হয় প্রায় ৫০০-৬০০ টাকা। আর ৩৫-৪০ দিন পরে প্রতিটি থেকে এক সপ্তাহে ১০ কেজি সার পাওয়া যায়। প্রতি কেজি সারের বর্তমান বাজার মূল ১২-১৩ টাকা। এছাড়া চারী বা খাদা চাষের খরচ প্রায় একই রকম। তবে চৌবাচ্চা পদ্ধতিতে খরচ একটু বেশি কিন্তু এটি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় লাভবান হওয়া যায়।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার প্রতিটি চাষি গড়ে ৫০টির বেশি চাক ব্যবহার করে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করছেন। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় অনেক উদ্যোগী যুবক বাণিজ্যিকভাবে ভার্মি কম্পোস্ট সারের উৎপাদনের আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের পাইকুড়া গ্রামের উদ্যোগী যুবক মোজাম্মেল হক জানান, ২০২০ সালে মাত্র ১০টি রিং দিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন শুরু করেছিলেন। বর্তমানে তার ৮০টি রিং ও ২টি চৌবাচ্চায় ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করা হচ্ছে। এতে প্রতি মাসে গড়ে ১২-১৫ হাজার টাকা আসে। নতুন উদ্যোক্তাদের কাছে বছরে প্রায় দেড় লাখ টাকার কেঁচো বিক্রি করেন তিনি। তিনি আরো জানান, শেড ঘর রিং চৌবাচ্চাসহ তার মোট খরচ হয়েছে এক লাখ টাকা। কিন্তু উৎপাদনে আসার পর বছরে ৩-৪ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।
পৌর এলাকার শিমরাইল গ্রামের কেঁচো সার উৎপাদনকারী মনিরুদ্দিন জানান, স্বল্প খরচে অধিক উপার্জনের লক্ষ্যে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) উৎপাদনের কাজ। স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তাদের দেয়া বিশেষ কেঁচো ও সংগৃহীত গোবরের সমন্বয়ে তিন বছর পূর্বে মাত্র কয়েকটি রিং চাকে তিনি শুরু করেন কেঁচো সার উৎপাদনের কাজ।
বর্তমানে ১৫০টি রিং চাকে নিয়মিত সার উৎপাদন করছেন মনিরুদ্দিন। কেঁচো সার উৎপাদনে স্থানীয় কৃষি বিভাগের নিয়মিত তদারকিতে মান নিয়ন্ত্রণ ও বিক্রয়ে সহযোগিতার ফলে এ কাজে লাভবান মনিরুদ্দিন। এখন তার পরিবারের জীবিকার প্রধান উৎস কেঁচো সার বিক্রির লভ্যাংশ।
এ ব্যাপারে উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলী আখছার খান ভোরের কাগজকে জানান, ফল ও সবজি বাগান, ছাদ বাগান, পান বরজ, পারিবারিক পুষ্টি বাগান ও নার্সারিতে কেঁচো সারের চাহিদা রয়েছে প্রচুর। রাসায়নিক সারের পরিবর্তে অনেকেই এখন জৈবসার ব্যবহারে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এখন ৫২০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে কেঁচো সার।
তিনি আরো জানান, গণমাধ্যমের বদৌলতে উৎপাদিত সারের চাহিদা স্থানীয় গণ্ডি পেরিয়ে এখন ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ ও ঢাকার গুলশানের শৌখিন ফল বাগানের মালিকরা নিয়মিত ক্রেতা হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি, প্রতিনিয়ত রাসায়নিক সার ব্যবহারে মাটির হারানো উর্বরতা ফিরে পেতে পরিবেশসম্মত কেঁচো সার ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। জৈবসার উৎপাদনকারীদের পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষিত করা হবে। এ বছর জৈবসার প্রকল্পের আওতায় প্রদর্শনী বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়