প্রধানমন্ত্রী : অন্যায়ের কাছে মাথা নত করিনি করব না > শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাল সংসদ

আগের সংবাদ

বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী : পাচারের টাকা ফেরত আনব

পরের সংবাদ

ইশতেহারের আলোকে উন্নয়নের দিকনির্দেশনা

প্রকাশিত: জুন ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুহাম্মদ রুহুল আমিন : প্রতিটি বাজেটে নির্বাচনী ইশতেহারে থাকা প্রতিশ্রæতির বাস্তবায়ন ঘটিয়ে থাকে আওয়ামী লীগ। দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই বলে থাকেন আওয়ামী লীগ যা কিছু করে না কেন, নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকেই করে। দলটির নেতারা বলছেন, নির্বাচনের আগে ইশতেহারে আওয়ামী লীগ যা কিছু প্রতিশ্রæতি দেয়, প্রতিটি কর্মকাণ্ডেই তার প্রতিফলন থাকে। এমনকি ইশতেহার অনুযায়ী প্রতি বছর বাজেট প্রণয়ন করা হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। এ বাজেটেও নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিফলন ঘটেছে।
টানা তৃতীয় বারের মতো রাষ্ট্র ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের ইশতেহার শিরোনাম ছিল ‘উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ’। সেখানে বলা হয়েছিল উন্নয়ন, সুশাসন, দারিদ্র্যদূরীকরণ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, আমার গ্রাম আমার শহর, পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল, এলিভেটর এক্সপ্রেসওয়েসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা। পরবর্তী নির্বাচনের বাকি আছে আর দেড় বছর। আগামী বাজেট হবে নির্বাচনী বছরের বাজেট। তার আগে বর্তমান সরকার ঘোষিত ইশতেহার ও সরকারের তৃতীয় মেয়াদের চতুর্থ বছরের বাজেট ঘোষণা হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার। এবারের বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। বাজেটের শিরোনাম দেয়া হয়েছে ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’। প্রস্তাবিত বাজেটে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে দারিদ্র্যদূরীকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল রাখা, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, মেগা প্রকল্পের অগ্রগতি, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বাস্তবায়নের।
বাজেটে কোভিড পরিস্থিতি

কাটিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ফেরার স্বপ্ন দেখানো হয়েছে। এবারের বাজেটে প্রাধান্য পেয়েছে আয়বর্ধন ও কর্মসৃজনের ধারা অব্যাহত রেখে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে টেকসই করা। সেইসঙ্গে থাকছে ২০৩০ সালে এসডিজি অর্জনের মাধ্যমে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ, ২০৩১ সালে উচ্চ মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ; ২০৪১ সালে একটি জ্ঞানভিত্তিক, সুখী-সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ এবং ২১০০ সালে নিরাপদ বদ্বীপ বাংলাদেশ বিনির্মাণ।
আওয়ামী লীগের প্রধান নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি ছিল দারিদ্র্যদূরীকরণ। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রাধান্য পেয়েছে ৩টি বিষয়। প্রথমত বিশ্বের বিভিন্ন বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে সৃষ্ঠ ক্ষতি মোকাবিলা বিবেচনায় নেয়া। দ্বিতীয়ত; রাশিয়া-ইউক্রেন সমস্যার ফলে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ঝুঁকির আশঙ্কা বিবেচনা করে আগামীদিনের কৌশল নির্ধারণ। তৃতীয়ত; বিশ্বব্যাপী জ¦ালানি তেলসহ প্রধান প্রধান সব আমদানি দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ও সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যবস্থা ব্যাহত হয়ে সামগ্রিকভাবে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির যে সম্ভাবনা রয়েছে, সেটিও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে জনগণের চাহিদা ও স্বাস্থ্য খাতে উদ্ভূত প্রয়োজন মেটানো এবং দেশের মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার বিষয়টিও বিবেচনা করা হয়েছে। এবারের ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা বাজেটের আকারে জিডিপি ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৪ লাখ ৩১ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। কৃষি খাত, খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনাকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পুরো অর্থ বছরজুড়েই থাকবে সরকারের নানা ধরনের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, বাড়ানো হবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা। বাজেটকে প্রতিশ্রæতি পূরণের বাজেট হিসেবেই দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তাদের মতে, কোভিড-১৯ ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ উদ্ভূত অর্থনৈতিক সংকট হতে উত্তরণ, প্রণোদনা প্যাকেজের বাস্তবায়ন, অগ্রাধিকারভুক্ত প্রকল্পের কাজ সময়মতো শেষ করা, সামাজিক নিরাপত্তার আওতা সম্প্রসারণ, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কৃষি খাতে প্রণোদনাসহ সর্বোপরি অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষাকে বিবেচনায় নেয়া।
বাজেটে ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ বাজেটে করোনা ভাইরাসের প্রলম্বিত প্রভাব মোকাবিলার পাশাপাশি আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮ তে বর্ণিত প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়ন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ও দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-৪১) বাস্তবায়ন এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ও লক্ষ্য অর্জনের প্রয়াস চালাব।
এদিকে বাজেট সম্পর্কে জানতে চাইলে গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, এটি গরিবের বাজেট, ব্যবসাবান্ধব ও গণমুখী বাজেট। এই বাজেটে নিশ্চয়তা আছে, সোশ্যাল সেফটিনেট আগের চেয়েও সাত হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। গতবারের চেয়ে আরো ৭ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে, আওতা বাড়ানো হয়েছে। কাজেই এই বাজেট সবদিক বিবেচনা করে নি¤œবিত্ত-মধ্যবিত্তদের বিষয়কে নজর দেয়া হয়েছে। সেখানে সাত হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বাজেট সম্পর্কে বলেন, যুদ্ধের কারণে ইউরোপ আমেরিকা থেকে শুরু করে সমগ্র পৃথিবীব্যাপী মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। সেটির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে, তা কতদিনে শেষ হবে সেটি কেউ জানে না। সেজন্য অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সোশ্যাল সেফটি নেট বা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বাড়ানো হয়েছে যাতে নি¤œ আয়ের মানুষ সুরক্ষা পায়। এটি গরিববান্ধব বাজেট।
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আওয়ামী লীগের সব বাজেট করা হয় নির্বাচনী ইশতেহারকে প্রাধান্য দিয়ে। এবারো সেটাই করা হয়েছে। কেননা, নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ীই সব কর্মকাণ্ড প্রধানমন্ত্রী পরিচালনা করে থাকেন। বাজেটেও তার প্রতিফলন ঘটে থাকে। তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস অভিঘাত থেকে মুক্ত হয়ে উন্নয়নের ধারা অক্ষুণ্ন রাখা ও উত্তরোত্তর বৃদ্ধির জন্য কৃষি, খাদ্য, নতুন কর্মসংস্থান সৃজন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনা, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলা করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং ভর্তুকির চাপ সামাল দেয়াসহ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এই বাজেটে। এই বাজেটে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা হয়েছে। জনবান্ধব ও উন্নয়ন বান্ধব এই বাজেটকে আমরা স্বাগত জানাই।
আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খান ভোরের কাগজকে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ অনুযায়ী ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিশ্চিত করার প্রয়াসেই ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন ও প্রস্তাবনা হয়েছে। ইশতেহারে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর প্রশাসনের কথা উল্লেখ ছিল। প্রস্তাবিত বাজেটে তাই বিজনেস ইন্টেলিজেন্স সফটওয়্যার ব্যবহারের তাগিদ এসেছে। ইলেকট্রনিক ফিস্ক্যাল ডিভাইস এর ব্যবহার ও ক্ষেত্র বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ইশতেহার অনুযায়ী জেলাওয়ারি বাজেটকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, যা গণমুখী। শুধু গ্রামীণ জনজীবনের উন্নয়নই নয়, গ্রামের শহরের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। যা ইশতেহার অনুযায়ী গ্রাম এবং শহরের বৈষম্য দূর করবে। ইশতেহারে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের কথা বলে ২০২৩-২৪ সালে ১০ ট্রিলিয়ন ডলারের বাজেটের প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়েছিল, প্রস্তাবিত ৬ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন অঙ্কের বাজেট সেই পথের ঐ নতুন মাইলফলক। কাজেই সার্বিক বিবেচনায় এবারের বাজেট অবশ্যই আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রæতির বাস্তব প্রতিফলন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়