প্রধানমন্ত্রী : অন্যায়ের কাছে মাথা নত করিনি করব না > শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাল সংসদ

আগের সংবাদ

বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী : পাচারের টাকা ফেরত আনব

পরের সংবাদ

ইউপি সচিবদের গণবদলিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অসন্তোষ

প্রকাশিত: জুন ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ইউপি সচিবদের গণবদলিতে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। দূরবর্তী স্থানে বদলির পর এক ইউপি সচিব মারা যান এবং একজন চাকরি ছেড়ে দেন। বাঞ্ছারামপুরের রুপসদী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এক মাস আগে সরাইলের শাহবাজপুরে বদলি করা হয় হারাধনকে। গত ৯ মে এখানে যোগদান করেন তিনি। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন- জেলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে এই বদলিতে হতাশায় ভুগছিলেন হারাধন। তার মৃত্যুতে খবর ছড়ায়, শারীরিকভাবে অসুস্থ হারাধন বদলি পরিবর্তনে প্রশাসনের পদস্থ এক কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন। সেসময় কড়া ধমক দেয়া হয় তাকে। এরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ৭ জুন বেলা ৩টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে হারাধনকে মৃত অবস্থায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
কর্তব্যরত চিকিৎসক আরিফুজ্জামান জানান, হারাধন সুত্রধরকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তার ইসিজি করে কোনো সারা মিলেনি। হারাধনকে হাসপাতালে নিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার শাখার উপপরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রুহুল আমিন এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সামিন সারোয়ার হাসপাতালে আসেন। তারা দুজনেই হাসপাতাল থেকে মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে বাঞ্ছারামপুরে গ্রামের বাড়িতে রওনা করা পর্যন্ত সেখানে উপস্থিত ছিলেন। হারাধনের মরদেহ নিয়ে বাঞ্ছারামপুরে যান স্থানীয় সরকার শাখার সিএ তাইফুর লতিফ, অফিস সহকারী বাচ্চু মিয়া এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের নাটাই দক্ষিণের সচিব লিটন চক্রবর্তী এবং জেলা ইউনিয়ন পরিষদ সচিব সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হাসান ভূইয়া। সূত্র জানায়, তারা রওনা করার পর বারবারই বাঞ্ছারামপুর প্রশাসনের কর্মকর্তারা যোগাযোগ করে মরদেহ কোথায় আছে জানতে চান। ইউএনও একি মিত্র চাকমা ও সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) কাজী আতিকুর রহমান উপজেলা কমপ্লেক্সে মরদেহ পৌঁছার অপেক্ষা করতে থাকেন। সূত্র জানায়, ওই দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে হারাধনের মরদেহ তার বাড়িতে পৌঁছার পর সেখানে ছুটে আসেন ইউএনও এবং এসিল্যান্ড। বাঞ্ছারামপুর কেন্দ্রীয় শ্মশানে দাহ শুরুর সময়ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন তারা। গত ২৫ এপ্রিল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখা থেকে জেলার ১০০ ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের মধ্যে ৫৭ জনকে বদলি করা হয়। তবে ওই তারিখে ২টি বদলি আদেশ হয়। প্রথম আদেশ ছিল ৫৬ জনের। পরের আদেশে ৫৭ জন করা হয়। ৫৭ নম্বর ক্রমিকে ছিলেন হারাধন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সচিব বলেন, এই বদলি দুঃখজনক। আমরা ছোট চাকরি করি। কিন্তু অনেক দূরে আমাদের বদলি করা হয়েছে। বদলিতে মানবিক আবেদন-নিবেদনও উপেক্ষিত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে বেকায়দায় পড়েছেন অনেকে। এদিকে দূরে বদলির পর নিরুপায় হয়ে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন অহিদুল আলম নামের এক ইউপি সচিব। তার চাকরি ছাড়ার বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত। অহিদুলকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের নাটাই উত্তর ইউনিয়ন থেকে বাঞ্ছারামপুরের উজানচর ইউনিয়ন পরিষদে বদলি করা হয়। অহিদুল আলম জানান, তার ব্রেইন স্ট্রোক হয়েছে দুবার। নতুন কর্মস্থলে তিনি তার ছেলেকে নিয়ে ৮ দিন গিয়েছেন। এতে তার খরচ হয়েছে ১৬ হাজার টাকা। শেষ পর্যন্ত গত সপ্তাহে চাকরি ছাড়ার আবেদন জমা দিয়েছেন। এর আগে বদলি আদেশের পর জেলা প্রশাসকের কাছে তার শারীরিক অবস্থার বিবরণ তুলে ধরে একটি আবেদন করেন। এরপর জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাতের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। তিনি জানান, দুই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান। দুপুর ১টায় সাক্ষাৎ হবে না বলে তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়।

এরপর নিরুপায় হয়ে চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। অহিদুল আর দুবছর পরই অবসরে যেতেন।
বদলির বিষয়ে কথা বলার জন্যে গত বুধবার দুপুরের পর একাধিকবার জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার শাখার উপপরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রুহুল আমিনের মোবাইলে ফোন করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়