সংসদে আলোচনা : ‘ছয় দফা ছিল স্বাধীনতার সিঁড়ি’

আগের সংবাদ

ছয় লক্ষ্য অর্জনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন : ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট, সর্বোচ্চ ঘাটতির দিক থেকেও নতুন মাইলফলক > বাজেট ২০২২-২৩

পরের সংবাদ

বাজেটের ১ শতাংশ হোক সংস্কৃতির

প্রকাশিত: জুন ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শরীফা বুলবুল : শুদ্ধ সংস্কৃতিই পারে অসাম্প্রদায়িক চেতনা গঠন, পশ্চাৎপদ চিন্তার বিপরীতে বিজ্ঞানমনস্ক আধুনিক মানুষ গড়ে তুলতে। অথচ জাতীয় বাজেটে দেখা যায়, সংস্কৃতি খাতই সবচেয়ে উপেক্ষিত। দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে গেলেও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে রয়েছে পিছিয়ে। সংস্কৃতি খাতের বরাদ্দ নিয়ে চিন্তিত এই অঙ্গনের বিশিষ্টজনরা। মৌলবাদী ধ্যান-ধারণার যেমন ব্যাপক বিস্তার ঘটছে সেই সঙ্গে দেশে সংস্কৃতি চর্চার পথ অনেক ক্ষেত্রে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে আগামী প্রজন্মের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশে সাংস্কৃতিক বিপ্লব ঘটানো জরুরি। এ জন্য বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এমনটাই মনে করছেন দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধি ও বিশিষ্টজনরা। তারা বলছেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। তাছাড়া সামাজিকভাবেও উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। তবে বাজেটে বরাদ্দ কম থাকায় উদ্যোগে ভাটা পড়েছে। তাই জাতিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সংস্কৃতি ও শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে হবে। এ জন্য জাতীয় বাজেটের অন্তত ১ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে

সংস্কৃতি খাতে। আজ ঘোষিত হবে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট। বাজেট ঘোষণার আগে এমনটাই দাবি তুলেছেন তারা। তাদের অনেক দিনের দাবি, মোট বাজেটের ন্যূনতম ১ শতাংশ হোক সংস্কৃতির। কেউ কেউ বলছেন, ২ শতাংশ হলে আরো ভালো হয়।
এ বিষয়ে নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার ভোরের কাগজকে বললেন, প্রতি বছরই আমরা এ দাবি জানিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমরা চাইলে তো আর হবে না, সরকারকে চাইতে হবে। তবু এবারো আমরা আশাবাদী। কয়েক বছর ধরে অতি সামান্য করে হলেও এ খাতের বরাদ্দ বাড়ছে, যদিও তা অন্য খাতগুলোর তুলনায় খুবই গতানুগতির এবং একেবারেই নগণ্য।
তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন বলে আসছি, দেশের মোট বাজেটের ১ শতাংশ যেন সংস্কৃতির জন্য রাখা হয়। জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা রুখতে যদি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হয়, তাহলে প্রগতিশীল ও মানবতাবাদী সংস্কৃতি চর্চার কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য সংস্কৃতি খাতের বাজেটটি একটু বড় হওয়া দরকার। এর কোনো বিকল্প দেখছি না।
রামেন্দু মজুমদার মনে করেন, তৃণমূল পর্যায়ে প্রতিটি উপজেলায় অন্তত একটি করে মুক্তমঞ্চ দরকার, যেখানে নিয়মিত নাটক, গান, নৃত্য ও আবৃত্তি চর্চা হবে। সেখানে সংস্কৃতিকেন্দ্রের মতো একটি জায়গা থাকবে, যেখানে সংস্কৃতিকর্মীরা মিলিত হবেন। উপজেলাপর্যায়ে অবিলম্বে একজন করে শিল্পকলা অফিসার নিয়োগ দেয়া অত্যাবশ্যক। তাই সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং শিল্পীদের প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য প্রত্যেক জেলা ও উপজেলায় সংগীত, নাটক, নৃত্য, আবৃত্তি ও চারুকলার স্থায়ী প্রশিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।
অনুদানের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে সংস্কৃতি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে হবে এমন মন্তব্য করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ না বাড়ালে সাংস্কৃতিক জাগরণ সম্ভব নয়। মুখে বলি, সংস্কৃতি একটি জাতির পরিচয় বহন করে। বাস্তবে জাতির এই মন্ত্রণালয়টি একেবারে উপেক্ষিত। জাতীয় বাজেটের অন্তত ১ শতাংশ এ খাতে বরাদ্দ দিতে হবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা সরকারের কাছে ১৭ দফা দাবি জানিয়েছি। এখন অপেক্ষায় আছি।
সংস্কৃতি হচ্ছে অক্সিজেনের মতোই, দেখা যায় না। তবে অক্সিজেন যেভাবে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে, সংস্কৃতিও তেমনি; এমন মন্তব্য করে নাট্যজন মামুনুর রশীদ বললেন, আমি মনে করি, জাতীয় বাজেটের অন্তত ২ শতাংশই সংস্কৃতির জন্য বরাদ্দ দেয়া উচিত। কারণ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিধি সঙ্কোচিত। এর অধীন শিল্পকলা একাডেমি, শিশু একাডেমি ও বাংলা একাডেমির মূল কাজ হয়ে গেছে অনুষ্ঠান আয়োজন ও টুকটাক প্রশিক্ষণ দেয়ার মতো বাড়োয়ারি কাজ। তাদের দায়িত্ব হচ্ছে শিল্প-সাহিত্যকে উৎসাহিত করা, নিজেদের অনুষ্ঠান করা নয়। এমন কর্মকাণ্ড থেকে সরে এসে বাস্তবভিত্তিক কাজ করা।
সংস্কৃতির বড় জায়গাজুড়ে আছে চলচ্চিত্র। এ খাতকে ঘোষণা করা হয়েছে শিল্প হিসেবে। এর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িয়ে রয়েছেন মধুমিতা মুভিজের কণর্ধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ। তিনি বলেন, চলচ্চিত্র খাত শিল্প হিসেবে ঘোষিত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এর কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি, এর বেনিফিট (সুবিধা) পাওয়া দূরের কথা। এ শিল্পের উন্নয়ন করতে হলে প্রেক্ষাগৃহের আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রে ট্যাক্স ফ্রি করে দিতে হবে অন্তত পাঁচ বছরের জন্য। সত্যিকারের প্রযোজকদের কম সুদে ঋণ দিতে হবে। আর সংস্কৃতি খাতে বাজেট বাড়ালেই এসব সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, চোখের সামনে একে একে সব হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এখন যেসব হল হচ্ছে সেসব হল সাধারণ মানুষ কিংবা কোনো গার্মেন্টসকর্মীর জন্য নয়। আমরা নিভু নিভু করে জ্বলছি। আমাদের বাঁচাতে হবে। তাহলেই এই শিল্প উঠে দাঁড়াতে পারবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়