সংসদে আলোচনা : ‘ছয় দফা ছিল স্বাধীনতার সিঁড়ি’

আগের সংবাদ

ছয় লক্ষ্য অর্জনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন : ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট, সর্বোচ্চ ঘাটতির দিক থেকেও নতুন মাইলফলক > বাজেট ২০২২-২৩

পরের সংবাদ

নিখোঁজের সংখ্যা অজানা নিহত বেড়ে ৪৪

প্রকাশিত: জুন ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোর আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে ডিপোর ভেতরের কয়েকটি কনটেইনার থেকে এখনো উড়ছে ধোঁয়া। এরই মধ্যে কনটেইনার সরানোর কাজ শুরু করেছে ডিপো কর্তৃপক্ষ। এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাসুদ রানা (৩৬) নামে ডিপোর আরো এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৪৪। এই ঘটনায় এখনো আনুমানিক ২৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজদের সন্ধানে স্বজনরা চমেক হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ছবি নিয়ে বসে আছেন। তাদের অনেকেই ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনাও দিয়েছেন।
সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় কতজন নিখোঁজ আছেন জানতে চাইলে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, নিখোঁজের বিষয়টি এখনো ফাইনাল হয়নি। আজ (বুধবার) রাত সাড়ে ৮টায় জেলা প্রশাসনের সঙ্গে পুলিশ প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তাদের একটি বৈঠক আছে। সেই বৈঠকে নিখোঁজের বিষয়টি ফাইনাল করার পর প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে বিষয়টি গণমাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে।
গতকাল বুধবার সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাসুদ রানা মারা যান। আইসিইউর চিকিৎসক ডা. হারুনুর রশিদ বলেন, আশঙ্কাজনক অবস্থায় মাসুদ রানাকে আইসিইউতে আনা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল ভোরে তিনি মারা যান। চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই মো. আলাউদ্দীন তালুকদার বলেন, নিহত মাসুদ রানার বাড়ি জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলায়। তিনি ওই কনটেইনার ডিপোতে মাল লোড-আনলোডের কাজ করতেন। পরবর্তী নিয়ম অনুসরণ করে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
অন্যদিকে গতকাল সকাল থেকে ডিপোর প্রধান ফটক বন্ধ করে শুরু হয় কনটেইনার অপসারণের কাজ। আগুনের কুণ্ডলি দেখা না গেলেও

ধ্বংসস্তূপ থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। বিএম কনটেইনার ডিপোর সামনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের ১৮ বীর এর লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফুল ইসলাম হিমেল বলেন, আমরা সবার আগে গুরুত্ব দিয়েছি নিরাপত্তার বিষয়টি। তাই সবকিছু নিশ্চিত হওয়ার পরই আমরা অপসারণ কাজ শুরু করি। আগুন নেই, তবে কনটেইনারের গার্মেন্টস পণ্যগুলোতে পানি দেয়ায় সেখান থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। কনটেইনার সরানোর কাজ চলছে। এছাড়া সেনাবাহিনীর একটি তদন্ত দল অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত কাজ করছে।
তিনি বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর আমরা সব জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছি। কোনো মরদেহ পাওয়া যায়নি। অনেক কনটেইনার পুড়ে দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। ক্রেনের মাধ্যমে সেগুলো সরাচ্ছি। যদি কনটেইনারের মধ্যে মরদেহ পাওয়া যায় তাহলে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে।
তিনি আরো বলেন, আগুন লাগার বড় কারণ এখানে কিছু রাসায়নিক কনটেইনার ছিল। রাসায়নিক সবগুলো কনটেইনারকে আমরা শনাক্ত করার চেষ্টা করেছি এবং সেগুলোকে পৃথক করে ফেলেছি। ডিপো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, প্রায় ৩০টির মতো কনটেইনারে রাসায়নিক ছিল।
ডিপোতে ৪ হাজার চারশ’র মতো কনটেইনার ছিল। তার মধ্যে প্রাথমিক তথ্যমতে, ৪০০ কনটেইনার ধ্বংস হয়েছে। এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, শুরু থেকেই আমরা লক্ষ্য রেখেছি, আগুন যাতে আর না বাড়ে এবং আর কোনো বিস্ফোরণ না ঘটে- সে লক্ষ্যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কাজ করছি। আগুন লাগার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আগুন বিপদসীমার নিচে এবং ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে একদম নিভে যেতে সময় লাগল ৮৬ ঘণ্টা।
গত শনিবার সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় এ পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ৯ কর্মীসহ ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার চারদিন পেরিয়ে গেলেও খোঁজ নেই অনেকের। প্রিয়জনের খোঁজ পেতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভিড় করছেন স্বজনরা। ব্যাপক বিস্ফোরণে ছিন্ন-ভিন্ন হওয়া মানুষের দেহের অংশবিশেষ পাওয়া যাচ্ছে এখনো। সেই ডিপোতে কতজন লোক ছিলেন এবং এই ঘটনায় কতজন নিখোঁজ রয়েছেন তার হিসাব ফায়ার সার্ভিস, জেলা প্রশাসন, পুলিশসহ কোনো সংস্থা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছে না।
বিস্ফোরণে নিহতদের মরদেহ শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। শনাক্তবিহীন মরদেহগুলোতে নিজের স্বজন আছেন কিনা জানতে বা নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজ পেতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা জমা দিতে ভিড় করেন অনেকে। নমুনা সংগ্রহের জন্য নির্ধারিত বুথে গত দুইদিনে ৪০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ২২ জনের খোঁজে তারা নমুনা দিয়েছেন। ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের কাজটি করছে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান জানান, নিহত ৪৪ জনের মধ্যে শনাক্ত ২৭ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি মরদেহগুলো বর্তমানে ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়েছে। তাদের পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। নমুনার ফলাফল পেতে অন্তত এক মাস সময় লাগতে পারে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়