সংসদে আলোচনা : ‘ছয় দফা ছিল স্বাধীনতার সিঁড়ি’

আগের সংবাদ

ছয় লক্ষ্য অর্জনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন : ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট, সর্বোচ্চ ঘাটতির দিক থেকেও নতুন মাইলফলক > বাজেট ২০২২-২৩

পরের সংবাদ

দিনাজপুরে চাল নিয়ে প্রতারণা : বস্তার লেখার সঙ্গে চালের মিল নেই

প্রকাশিত: জুন ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মোস্তাফিজুর রহমান বকুল, পার্বতীপুর (দিনাজপুর) থেকে : দিনাজপুরে চাল নিয়ে প্রতারণার নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। বস্তার উপরে লেখা চালের জাতের সঙ্গে ভেতরের চালের কোনো মিল নেই। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চালের ঊর্ধ্বমুখী বাজারে চালকল মালিকদের অভিনব প্রতারণায় সাধারণ মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে।
দিনাজপুর অঞ্চলে জহুরা অটোরাইস মিল, সোহা অটোরাইস মিল, উত্তরা অটোরাইস মিল, চারভাই অটোরাইস মিল, হক অটোরাইস মিল, মণ্ডল অটোরাইস মিলসহ ১৫-২০টি অটোরাইস মিলের চাল বাজারজাত হয়ে থাকে। এছাড়া পার্বতীপুরের ভবের বাজারে অবস্থিত এসপি রাইস ইন্ডাস্ট্রিজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন জাতের চাল প্যাকেটজাত (বস্তা) করে বাজারজাত করছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক পলাশ কুমার রায় (ডালিম) অকপটে সেকথা স্বীকারও করেন। অধিকাংশ চালকলে ব্রি-২৮ ধান ছেঁটে হচ্ছে মিনিকেট, জিরাশাইল। অথচ মিনিকেট ও জিরাশাইল নামে কোনো ধান নেই। ব্রি-২৮ চালের স্বাভাবিক দর প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) ২ হাজার ৮০০ টাকা। মিনিকেট, জিরাশাইল হয়ে তা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ১০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায়। ব্রি-২৯ ছেঁটে হচ্ছে ব্রি-২৮। শোভন স্বর্ণা বা স্বর্ণা-৫ ও ব্রি-৫১ ধান অটোমেটিক মিলে ছেঁটে পাইজম হয়ে ২ হাজার ৪৫০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকার বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ টাকায়। পাইজাম চাল দেখতে খাটো ও চিকন। খেতে বেশ সুস্বাদু। এক সময় আমন মৌসুমে এ ধান চাষ করা হতো। ফলন কম হওয়ায় এখন দিনাজপুর অঞ্চলে এ ধানের চাষ হয় না বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়।
বস্তার উপর ও ভেতরে চালের ভিন্নতার বিষয়টি নিশ্চিত করে কয়েকজন খুচরা ব্যবসায়ী জানান, মিল-মালিকরা যদি বস্তার উপরে এক জাত লিখে ভেতরে অন্য জাতের চাল দেয় এতে তাদের করার কিছ নেই। ব্যবসায়ীদের অভিযোগের সত্যতা মিলে কয়েকজন অটোরাইস মিলের মালিকের সঙ্গে কথা বলে।
দিনাজপুর সদরের পুলহাট এলাকার সোহা অটোরাইস মিলের মালিক ও দিনাজপুর জেলা চালকল মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ সাদেকুল ইসলাম জানান, তার মিলে ব্রি-২৯ ধান থেকে উৎপাদিন চাল সুলভ ২৮, ব্রি-২৮ থেকে উৎপাদিত চাল

মিনিকেট-জিরাশাইল, শোভন স্বর্ণা বা স্বর্ণা-৫ ও ব্রি-৫১ ধান থেকে উৎপাদিন চাল পাইজম নামে বাজারজাত করা হয়। ধানগুলো প্রায় একই রকম হওয়ায় এবং বাজারে চাহিদা থাকায় এভাবে বাজারজাত করা হয়। শুধু তার মিলেই নয়, সারাদেশেই এভাবে চাল উৎপাদিত হয়ে বাজারজাত হচ্ছে। সেতাবগঞ্জ উপজেলার উত্তরা অটোরাইস মিলের মালিক আলহাজ মো. আলতাফুর রহমানও একই কথা বলেন।
পার্বতীপুর চালকল মালিক সমিতির সভাপতি ও মণ্ডল অটোরাইস মিলের মালিক মশিউর রহমান এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। দিনাজপুর জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন জানান- বর্তমানে অনেক জাতের ধান চাষ হয়ে থাকে। ওই জাতের নামে চাল বাজারজাত করলে কেউ নিতে চায় না। সেজন্য হয়তো কেউ কেউ প্রায় একই রকম দেখতে চাল বাজারে চাহিদামতো নাম দিয়ে থাকতে পারে। তবে বিষয়টি তার জানা নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কৃষকরা মিনিকেট নামে ভারতীয় জাতের একটি ধানের চাষ করে থাকে। বাজার থেকে তা কিনে মিলে ছাঁটাই করেই মিনিকেট চাল বাজারজাত করা হয়। কখনই মোটা চাল মিলে ছাঁটাই করে চিকন (মিনিকেট) চাল করা হয় না।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দিনাজপুরের সহকারী পরিচালক মমতাজ বেগমের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দিনাজপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. কামাল হোসেন বলেন- হাইব্রিড, ২৮, ২৯ এবং কাটারিভোগ চালের বিষয়ে নিয়মিত মনিটরিং করে খাদ্য বিভাগ। বিষয়টি তাদের নজরে আসেনি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দিনাজপুরের উপপরিচালক মো. মঞ্জুরুল হক গত সোমবার সকালে মোবাইল ফোনে জানান, বর্তমানে ধানের শতাধিক জাত রয়েছে। জাত অনুযায়ী ব্র্যান্ডিং করে চাল বাজারজাত করাও সমস্যা। তবে ভোক্তাকে এভাবে প্রতারিত করা অপরাধ। চালকলে কোন জাতের ধান ছেঁটে কোন ধানের চাল বস্তায় ভরে বাজারজাত করা হচ্ছে তা যথাযথভাবে তদারকি করলেই এ ধরনের প্রতারণা বন্ধ করা সম্ভব বলে অভিজ্ঞমহল মনে করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়