সংসদে আলোচনা : ‘ছয় দফা ছিল স্বাধীনতার সিঁড়ি’

আগের সংবাদ

ছয় লক্ষ্য অর্জনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন : ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট, সর্বোচ্চ ঘাটতির দিক থেকেও নতুন মাইলফলক > বাজেট ২০২২-২৩

পরের সংবাদ

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা

প্রকাশিত: জুন ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

করোনার করুণ পরিণতিতে দেশবাসী যখন চরম বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছে, ঠিক তখন দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো অবস্থা তৈরি করেছে। যদিও এ বছর এখনো উদ্বেগজনক কিছু ঘটেনি, তবে আশঙ্কা দানা বাঁধতে শুরু করেছে। এমনিতেই গত দুই বছর করোনায় দেশের স্বাস্থ্য খাতকে চরম ধকল সামলাতে হয়েছে, তার ওপর যদি আবারো ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক আকারে দেখা দেয়, তবে সেটি স্বাস্থ্য খাতকে আরো বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে।
বিগত কয়েক বছরে ঢাকাসহ সারাদেশে ডেঙ্গুর মারাত্মক রূপ ধারণ করতে দেখা গেছে। তবে ডেঙ্গুর প্রকোপ কম-বেশি হওয়ার পেছনে এর ভেরিয়েন্টের একটি অবদান আছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিসিএসআইআরের উদ্যোগে পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, ডেঙ্গুর চারটি সেরোটাইপ রয়েছে। এগুলো হলো- ডেনভি-১, ডেনভি-২, ডেনভি-৩ ও ডেনভি-৪। দেশে ডেনভি-৩ শনাক্ত হয় ২০১৭ সালে। ২০১৮ সালে ডেনভি-৩ আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে এবং সবশেষে ২০১৯ সালে মহামারি আকার ধারণ করে এটি। যদিও ডেঙ্গুর প্রকোপ দেশে বড় আকারে দেখা দেয় ২০০০ সালে। ওই বছরে ৫ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় আর মৃত্যুবরণ করে ৯৩ জন। কিন্তু তার চেয়েও কয়েক গুণ ভয়াবহ আকার দেখা দেয় ২০১৯ সালে। সরকারি হিসাবে ওই বছরে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন আক্রান্ত হয় এবং মৃত্যুবরণ করে ১৭৯ জন। ইতিহাসের সর্বাধিক আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ওই বছর। আর আক্রান্ত ও মৃত্যুর অধিকাংশই ঘটে ঢাকায়। সারাদেশে যত মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল, তার অর্ধেকই ছিল ঢাকায় এবং এখানে মৃত্যুর হার ছিল সারাদেশে মোট মৃত্যুর ৭৭ শতাংশ।
করোনাকালীন ২০২০ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা কম থাকলেও ২০২১ আবারো প্রবলভাবে দেখা দেয় ডেঙ্গুর প্রকোপ। ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঘটনা। ২৮ হাজার ২৬৫ জন আক্রান্ত ও ১০৫ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ওই বছর। তবে এ বছর এখনো ডেঙ্গুর ভয়ংকর রূপ দেখা যায়নি সত্য, কিন্তু যদি বিগত বছরগুলোর ন্যায় মারাত্মক রূপ ধারণ করে তবে তা সামাল দেয়া যে কষ্টকর হবে, তা বলাই বাহুল্য। কারণ বিগত কয়েক বছর ডেঙ্গুতে বেসামাল অবস্থা তৈরি হলেও এখনো পর্যন্ত এডিস নির্মূলে সরকারের তেমন কোনো কার্যকরী ও টেকসই উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার প্রজনন মৌসুম ধরা হয়। কারণ এ সময় বৃষ্টিপাতের কারণে পানি জমে। সে পানিতেই এডিস মশার প্রজনন ঘটে। এডিস মশার আঁতুড়ঘর যেহেতু পানি, তাই এ সময় আমাদের চারপাশে জমে থাকা পানিতে ডেঙ্গুর বংশবিস্তার বেশি হয়। তবে এখানে স্মরণীয় যে, সব পানিতেই এডিস মশা জন্মায় না। নর্দমা, কূপ, পুকুর, লেক, নদী বা মাটির আধারে ডিম পাড়ে না এডিস মশা। এসব জায়গায় যে মশা দেখা যায়, তা এডিস নয়। এই মশা জনগণের আবাসস্থল নয়তো নির্জন ও পরিত্যক্ত জায়গায় জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে জন্ম নেয়। তাই ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে মশার প্রজনন বন্ধ করা আর মশা নির্মূলের কোনো বিকল্প নেই। পানি জমতে পারে এমন কোনো অবস্থাই যেন না হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে। সকল প্রকারের ডাবের খোসা, নারিকেলের মালা, পুরনো টায়ার, চিপসের খালি প্যাকেট, ছাদের ওপরে জমে থাকা পানি ইত্যাদি সবই সরিয়ে ফেলতে হবে নিজ উদ্যোগে।
এডিস মশা ডিম পাড়ার পরে এক বছর পর্যন্ত সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। কোনো পাত্রে এডিসের ডিম থাকলে তার অপসারণ না করলে এক বছরের মাথায় পানির স্পর্শ পেলে ডিম ফুটে বাচ্চা হতে পারে। পানি জমে মশার বংশবৃদ্ধি যাতে না ঘটে, সে ব্যাপারে নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দায়িত্ব নিতে হবে। রাস্তাঘাটের আশপাশে, নালা ও নর্দমায় যাতে পানি জমতে না পারে, সেজন্য সিটি করপোরেশনকে আরো সজাগ ও সচেতন হতে হবে এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধে টেকসই ও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি ডেঙ্গু নির্মূলের জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন। একসময় দেশে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ ছিল খুব বেশি। যার বাহকও মশা। সেই ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে এসেছে সুষ্ঠু পরিকল্পনামাফিক কাজ করার জন্য। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও তদ্রƒপ পদক্ষেপ নিতে হবে। একমাত্র জনসচেতনতা ও সঠিক কর্মকৌশলই আমাদের ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে মুক্তি দিতে পারে।

মনিরুল হক রনি
প্রভাষক, সাভার সরকারি কলেজ, ঢাকা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়