সংসদে আলোচনা : ‘ছয় দফা ছিল স্বাধীনতার সিঁড়ি’

আগের সংবাদ

ছয় লক্ষ্য অর্জনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন : ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট, সর্বোচ্চ ঘাটতির দিক থেকেও নতুন মাইলফলক > বাজেট ২০২২-২৩

পরের সংবাদ

জোরালো আন্দোলনে বিএনপি : মামলা-হামলা উপেক্ষা করে রাজপথে সরব > পরিবর্তন আসছে কর্মসূচির ধরনে

প্রকাশিত: জুন ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রুমানা জামান : আন্দোলন প্রশ্নে বিএনপি এখন ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে’। পিছু হটলেই পড়তে হবে অস্তিত্ব সংকটে। তাইতো বদলে গেছে দলটির নেতাকর্মীদের ‘বডিলেঙ্গুয়েজ’। মামলা-হামলার ভয় উপেক্ষা করে তারা সরব থাকছেন রাজপথে। কেউ বলছেন- ‘ছাড় দেয়ার আর সময় নেই, যেখানেই আঘাত সেখানেই প্রতিরোধ’। কেউবা দিচ্ছেন সরকার পতনের হুঙ্কার। দলটির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, চলমান কর্মসূচির গতি বাড়িয়ে এমন কঠোর জোরালো কর্মসূচি আসবে; যেখানে জনগণের সম্পূর্ণ সম্পৃক্ততার মধ্য দিয়ে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হবে।
কয়েক মাস আগেও হাতেগোনা গুটিকয়েক নেতাকর্মীকে নিয়ে ‘মুখরক্ষার কর্মসূচি’ পালন করতে গিয়ে সরকারিদলের মন্ত্রী-এমপিদের নানা টিপ্পনীর মুখে পড়তে হতো বিএনপি নেতাদের। ‘যে দলের আন্দোলনে মাঠে নামার সাহস নেই তাদের মুখে সরকার পতনের হুঙ্কার হাস্যকর শোনায়’- এমন মন্তব্য শুধু সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের মুখেই নয়; চাউর ছিল সাধারণ মানুষের মুখেও। তবে বর্তমান পেক্ষাপটে দাবি আদায়ে রাজপথে টিকে থাকার শপথ নিয়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে কর্মসূচি পালন করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। গত কয়েক দিন ধরে সারাদেশে দফায় দফায় ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। প্রায় ৪শর বেশি ছাত্রদল নেতাকর্মীরা আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের নামে নতুন মামলা হয়েছে। তবুও এবারের আন্দোলনকে বাঁচা-মরার লড়াই হিসেবে নিয়ে মাঠে অনড় রয়েছেন তারা।
দাবি আদায়ে আন্দোলনই শেষ সিদ্ধান্ত কিনা? জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অবশ্যই কঠোর আন্দোলনের বিকল্প ভাবছি না। আন্দোলন মানেই নড়াচড়া করা। কিন্তু কোনো সরকার যখন জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায় তখন কেবল নড়াচড়া নয়, ভূমিকম্প হয়। তিনি বলেন, আন্দোলন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফর্মে আসে। কখনো সেটা প্রতিবাদ সমাবেশ, সমাবেশ কিংবা ধর্মঘট অবরোধের মধ্য দিয়ে আসে। তাই বিএনপির রুটিন কর্মসূচির বাইরে ধাপে ধাপে সুনির্দিষ্ট এমন কর্মসূচি আসবে যেখানে জনগণের সম্পূর্ণ সম্পৃক্ততার মধ্য দিয়ে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হবে।
দলটির দায়িত্বশীল নেতারা জানান, সরকার পতনে চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। এবারের আন্দোলনকে ‘বাঁচা-মরার’ লড়াই হিসেবে নিয়ে রাজপথে নামার জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুত করা হচ্ছে। দল পুনর্গঠনের মাধ্যমে আনা হচ্ছে তরুণ নেতৃত্ব। নেতারা জানান, এবারের আন্দোলনের কোনো ‘টাইমফ্রেম’ থাকবে না। মামলা-হামলার মধ্যেও আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ যাবে কোন পথে ফায়সালা হবে রাজপথে। এই রাজপথ থেকেই বর্তমান অবৈধ

সরকারকে ধাক্কা দিতে। আমাদের ছাত্রদল তাদের শরীরের রক্ত ঢাকার রাজপথে দিয়ে এই ধাক্কা দেয়ার আন্দোলনের সূচনা করেছে।
সূত্র জানায়, জোরালো আন্দোলনকে টার্গেট করে তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রস্তুত করছে বিএনপি। দলটির ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা শাখার গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের আন্দোলনের বার্তা দেয়া হয়েছে। আন্দোলন সফলে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তিন স্তরের নেতাকর্মীকে। ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসূচি সমন্বয়ের জন্য বিএনপি মহাসচিবের পাশাপাশি তিনজন স্থায়ী কমিটির সদস্যকে দায়িত্ব দেয়ার ব্যাপারে প্রস্তাব এসেছে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে। সারাদেশের নেতাকর্মীরা একযোগে রাস্তায় নামার সিগন্যাল না পাওয়া পর্যন্ত তৃণমূল নেতাদের প্রেপ্তার এড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে রাজধানীর প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড থেকে ১০ জন করে নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে হাইকমান্ডকে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা সবুর করে ছিলাম। সবুরে মেওয়া ফলে। সবকিছুর একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। বিএনপির গণজাগরণ শুরু হয়েছে। এটাকে সিনেমার ট্রেলার মনে করতে পারেন। পুরো সিনেমা এখনো বাকি। গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন বিএনপির একমাত্র লক্ষ্য।
পরিবর্তন আসছে কর্মসূচির ধরনে : ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিএনপি জোটের আন্দোলনে দেশজুড়ে হয় চরম সংহিংসতা। হরতাল অবরোধে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে দেশ। ২০১৫ সালে ৯৩ দিনের টানা হরতালে রাজপথ উত্তাল করে বিএনপি। সে সময়ে আগুন সন্ত্রাসের তকমা লাগে বিএনপির গায়ে। এ জন্য দলের নগর কমিটির নেতাদের দায়ী করে আসছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। ফলে গত ৭ বছরে ব্যাপক বদলেছে বিএনপির কর্মসূচির ধরন। দলটি এখন সভা সমাবেশে, গণঅনশন, মানববন্ধন, স্মরকলিপির মতো কর্মসূচি দিয়ে জনগণকে আস্থায় এনে গণঅভ্যুথানের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ব্যাপক জনসমাগম ঘাটাতে চায়। ধীরে ধীরে গরম কর্মসূচিতে যেতে চায় তারা। সেক্ষেত্রে হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচির চিন্তাও রয়েছে। দলটির নেতারা মনে করেন, বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনের ভুলগুলো আর করা যাবে না। বরং এমন কৌশল নিয়ে রাজপথে নামতে হবে যাতে আন্দোলন মুখ থুবড়ে না পড়ে।
আন্দোলনের পেক্ষাপট তৈরি হলো যেভাবে : গত বছরের সেপ্টেম্বরে দলের নির্বাহী কমিটির ম্যারাথন বৈঠক করেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও আন্দোলনের কর্মকৌশল কী হবে, মাঠপর্যায়ের সংগঠনকে সক্রিয় করতে কী করা প্রয়োজন সব বিষয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন তারা। ওই বৈঠকের পরই চূড়ান্ত আন্দোলনের একটি শক্ত ভিত্তি প্রস্তত করা হয়। এরমধ্যেই র‌্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা, সরকারের ব্যর্থতার চিত্র উন্মোচন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু ইস্যু সামনে আসে। এসব ধরেই মামলা ও ধরপাকড়ের মধ্যেই কর্মসূচি চালিয়ে নিতে থাকে দলটি।
সর্বশেষ গত ৩ মে ঈদের দিন বিএনপির সিনিয়র নেতারা খালেদা জিয়ার বাসা ‘ফিরোজা’য় একঘণ্টা অবস্থানকালে নির্বাচন, আন্দোলনসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করেন। সেদিন দলীয় চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করার পর থেকেই নেতারা উচ্চকণ্ঠেই সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে শুরু করেছেন। নির্বাচনের ব্যাপারেও নিজেদের অনড় অবস্থান জানান দিচ্ছেন। জানতে চাইলে বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বলেন, ঈদের দিন ম্যাডামের কথা শুনে মনে হয়েছে; রাজনীতিতে কোথায় কী মেরুকরণ হচ্ছে, সব খবরই তার কাছে রয়েছে।
‘যুগপৎ’ আন্দোলনের রূপরেখা শিগগিরই : নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার হাঁকডাকে ছোট দলের সঙ্গে বড় দলের নেতাদের সম্মিলন ঘটানোর প্রস্তুতি চলছে বিএনপিতে। এরপরই দাবি আদায়ে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে রাজপথে ঐক্য গড়ে তুলবে দলটি। বিএনপি ও বাম ঘরানার একাধিক নেতা ইঙ্গিত দিয়েছেন, নির্বাচনের আগে ৩টি মঞ্চ থেকে এই যুগপৎ আন্দোলন হতে পারে। তা হলো- বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট; আ স ম আব্দুর রবের জেএসডি ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্যসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের জোট ও ইসলামি দলগুলোর জোট।
সূত্র জানায়, যুগপৎ আন্দোলনের একটি রূপরেখাও তৈরি করেছে বিএনপি। ছোট দলগুলোর সঙ্গে চলমান সংলাপে মূলত রূপরেখায় সংযোজন বা বিয়োজন করা নিয়েই দেন-দরবার হচ্ছে। বিএনপির নেতাদের মতে, সরকারবিরোধী যেসব দল ওই কর্মসূচিকে সমর্থন করবে, তারাই যুগপৎ আন্দোলনে শামিল হবে; এবং ওই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই সরকারবিরোধী আন্দোলন একই পথে গিয়ে দাঁড়াবে। যা হবে রাজপথের ঐক্য।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, সমমনা দলগুলোকে নিয়ে বিএনপি আন্দোলন গড়ে তুলবে। আর এ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই রাজপথে ঐক্য গড়ে উঠবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়