রাজধানীর বছিলায় জুতার কারখানায় আগুন

আগের সংবাদ

সংসদে প্রধানমন্ত্রী : দেড় বিলিয়ন ডলার সহায়তা সংগ্রহের চেষ্টা চলছে

পরের সংবাদ

পি কে হালদারের ৮৮ ব্যাংক অ্যাকাউন্টের খোঁজ : ভারতেই তিনশ কোটি টাকার সম্পদ, মালয়েশিয়ায় ৭ ফ্ল্যাট

প্রকাশিত: জুন ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সত্যজিৎ চক্রবর্তী, কলকাতা থেকে : বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া পি কে হালদারসহ ছয় অভিযুক্তকে আবার ১৪ দিনের কারা হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার কলকাতার বাঙ্কশাল আদালতে এ আদেশ দেয়া হয়। শিব শংকর হালদার পরিচয় দিয়ে ভারতে অবস্থানের বিষয়টি আদালতে স্বীকার করেন পি কে হালদার। আগামী ২১ জুন ফের তাদের কলকাতা নগর দায়রা আদালতের স্পেশাল সিবিআই-৩ কোর্টের জীবন কুমার সাধুর এজলাসে তোলা হবে।
এর আগে কারাগারে থাকা অবস্থায় পি কে হালদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। জিজ্ঞাসাবাদের সেই বয়ান রেকর্ডও করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায় ইডি। আদালতে ইডি জানায়, পি কে হালদারের ৮৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে, যেখানে প্রায় ৬০ কোটি টাকা রয়েছে। এছাড়া মালয়েশিয়ায় সাতটি ফ্ল্যাটসহ প্রায় ৪০টি সম্পত্তির হদিস পেয়েছে ইডি। সব মিলিয়ে তারা পি কে এবং তার সহযোগীদের ৩০০ কোটি টাকার সম্পদের হদিস পেয়েছে বলে জানিয়েছে।
পি কে হালদারসহ বাকি অভিযুক্তরা হলেন- তার ভাই প্রাণেশ হালদার, স্বপন মিস্ত্রি ওরফে স্বপন মৈত্র, উত্তম মিস্ত্রি ওরফে উত্তম মৈত্র, ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদার এবং আমানা সুলতানা ওরফে শর্মী হালদার। গত ১৪ মে অশোকনগরসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে এই ছয় অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে ইডি। এরপর দুই দফায় মোট ১৩ দিন রিমান্ডের নির্দেশ দেন আদালত। এ সময় নিজেদের হেফাজতে নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায় ইডি।
এর আগে ১৩ দিনের ইডি রিমান্ড শেষে গত ২৭ মে আদালত তাদের ১১ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। তখন কারাগার গিয়েও পি কে হালদারকে ইডি জিজ্ঞাসাবাদ করে বলে জানা গেছে। সেসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের ওই বয়ানও রেকর্ড করা হয়। পি কে হালদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ইডির কর্মকর্তারা এরই মধ্যেই জানতে পেরেছেন, শুধু

অশোকনগর বা পশ্চিমবঙ্গ নয়; পি কে হালদার ও তার সহযোগীরা ভারতজুড়ে প্রতারণার জাল ছড়িয়েছেন। তাদেরকে জেরা করে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তিরও হদিস পাওয়া গেছে। অর্থ আত্মসাতের একটা বিশাল অংশ বিনিয়োগ করা হয়েছে আবাসন খাতে। কলকাতা এবং এর উপকণ্ঠে এমন একাধিক সংস্থার খোঁজ পাওয়া গেছে, যেগুলো পি কে হালদার বা তার সহযোগীদের হাতেই গড়ে উঠেছে। যদিও সেই আয়ের উৎস পি কে হালদার বা তার সহযোগীরা কেউই দেখাতে পারেননি। এ রকম পরিস্থিতিতে হাজার কোটি টাকা পাচারকারী পি কে হালদারসহ বাকি পাঁচজনের বিরুদ্ধে ফের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালত।
ইডি আইনজীবী আদালতকে জানান, দুবাই, সিঙ্গাপুর, গ্রানাডাসহ একাধিক দেশে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন পি কে হালদার। ভারতবর্ষে ৩৫০ কোটি টাকাসহ বাংলাদেশ থেকে মোট ১০ হাজার কোটি টাকা পি কে হালদার তার আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে পাচার করেছেন। পি কে হালদার এবং যাদের মাধ্যমে টাকা পাচার করতেন, তারা সবাই বাংলাদেশি। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৮৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের হদিস পেয়েছে ইডি। এদিকে জেল হেফাজতে থাকা অবস্থায়ই জেরা জারি রয়েছে ইডির। জেরায় প্রতিদিনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে। আর সে কারণে ফের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন ব্যাঙ্কশাল আদালত। এ সময় ইডি জেলে ঢুকে জেরা করতে পারবে।
বাংলাদেশ থেকে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় অভিযুক্ত পি কে হালদার ভারতে শিবশংকর হালদার নামে পরিচিত। ইডি বলেছে, শিবশংকর হালদার পরিচয় দিয়ে ভারতের একাধিক সরকারি পরিচয়পত্র, যেমন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রেশন কার্ড, ভোটার পরিচয়পত্র, আয়কর দপ্তরের পরিচয়পত্র পিএএন বা প্যান, নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র, আধার কার্ড প্রভৃতি জোগাড় করেছিলেন পি কে হালদার। তার সহযোগীরাও একই কাজ করেছেন বলে জানিয়েছে ইডি। পি কে হালদার আদালতকে জানান, প্রশান্ত কুমার হালদার, শিব শংকর হালদার এবং পি কে হালদার একই ব্যক্তি- আমিই। গত ১৪ দিনে কারাগারে থাকার সময় পি কে হালদারকে জেরা করে ইডি। সেই জেরার সময় উঠে আসা গুরুত্বপূর্ণ নানা তথ্য গতকাল তুলে ধরে ইডি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়