রাজধানীর বছিলায় জুতার কারখানায় আগুন

আগের সংবাদ

সংসদে প্রধানমন্ত্রী : দেড় বিলিয়ন ডলার সহায়তা সংগ্রহের চেষ্টা চলছে

পরের সংবাদ

তথ্যে অনেক অসঙ্গতি : সমুদ্রে নিখোঁজ পর্যটক ফিরোজ এখন পুলিশ হেফাজতে

প্রকাশিত: জুন ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : কুয়াকাটা সমুদ্রে নিখোঁজ কথিত পর্যটক ফিরোজ শিকদার এখন মহিপুর থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার ভোররাতে বেনাপোল বন্দর থেকে মাইক্রোবাসে মহিপুর থানায় পৌঁছান ফিরোজ ও তার বড় ভাই মাসুম শিকদার। মঙ্গলবার দুপুরে মহিপুর থানার ওসি আবুল খায়ের গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে ফিরোজকে হাজির করেন। কীভাবে তিনি কুয়াকাটা সৈকতে সাঁতার কাটতে নেমে চেন্নাই পৌঁছালেন, এমন প্রশ্ন ছিল সাংবাদিকদের। এ সময় ফিরোজের কথাবার্তা ছিল অসংলগ্ন ও রহস্যে ঘেরা। তার কথাবার্তা শুনে গণমাধ্যমকর্মীদের মনে হয়েছে পুরোটাই মনগড়া কাহিনী।
ফিরোজ পুলিশ ও সাংবাদিকদের জানান, গত ২৭ মে দুপুরে আত্মীয় ও বন্ধুদের সঙ্গে কুয়াকাটায় বেড়াতে এসে গোসল করার সময়ে ঢেউয়ের তোড়ে তিনি ডুবে যান। ১৫-২০ মিনিট পর পানির উপরে উঠে একটি কলাগাছ পেয়ে সেটি নিয়ে ৫-৬ ঘণ্টা সাগরে ভাসার পর একটি ভারতীয় মাছ ধরার ট্রলারের জেলেরা তাকে উদ্ধার করেন।
২৮ মে শেষ বিকালে নৌবাহিনীর একটি জাহাজে তাকে তুলে দেন জেলেরা। এরপর ৫-৬ দিন সেই জাহাজটি সাগরে চলার পর তাদের অফিসে নিয়ে আসে। তখন ফিরোজ জানতে চাইলে নৌবাহিনী বলে এটি চেন্নাই। এমন সময় একজন অফিসার কাগজে তার একটি স্বাক্ষর নিয়ে তাকে ২ হাজার রুপি দিলে ১ হাজার ৫০ রুপি দিয়ে তিনি একটি মোবাইল সেট কেনেন। পরে এক অফিসার তাকে একটি মোবাইল সিম দিলে সেই সিম মোবাইলে ভরে গত শনিবার দুপুরে তার ভাই মাসুদ শিকদারকে ফোন দিয়ে সব ঘটনা তুলে ধরেন। এরপর বিকালে নৌবাহিনীর অফিসাররা তাকে চেন্নাই বিমানবন্দরে নিয়ে যান এবং রাত ১০টায় বিমানে তাকে কলকাতায় পাঠানো হয়। একদিন রাখার পর সোমবার সকালে তাকে ট্রেনে উঠিয়ে দেয়া হয়। ট্রেন থেকে নেমে ৪০ টাকায় সিএনজিতে চড়ে দুপুরে বেনাপোল চেকপোস্টে তার কাছ থেকে বিমান ও ট্রেনের টিকিট এবং মোবাইল ফোন কেনার সব কাগজপত্র রেখে দেয়া হয়। এ সময় তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে সিমটিও রেখে খালি সেটটি দিয়ে দেয়া হয়। পরে বেনাপোল পার হয়ে বাংলাদেশের অংশে এলে পুলিশ তার পাসপোর্টসহ কাগজপত্র দেখতে চায়। কিন্তু ফিরোজ তখন কিছুই দেখাতে পারেননি। এ সময় তার বাড়ির লোকজন সেখানে উপস্থিত আছে এবং তার কোনো এক নিকটাত্মীয় কাস্টমসে চাকরি করেন বলে উল্লেখ করেন এবং মহিপুর থানায় তার নিখোঁজ হওয়ার জিডির কপি দেখানো হয় পুলিশকে।
এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলার জেলে ফিশিং ট্রলার মাঝি সমবায় সমিতির সভাপতি নুরু মাঝি বলেন, লবণাক্ত সমুদ্রের পানিতে ৫-৬ ঘণ্টা কেউ ভাসমান থাকলে চেহারা ও ত্বকের দৃশ্যমান পরিবর্তন ঘটবে। কিন্তু ফিরোজের বেলায় তার কিছুই স্পষ্ট ছিল না। তাছাড়া এ ধরনের পানিতে ১৫-২০ মিনিট ডুবে থাকাও সম্ভব নয়।
বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি বি এম কামাল হোসেন বলেন, আমাদের কাছে ফিরোজ শিকদারকে পাঠানো হয়েছে ইমিগ্রেশন থেকে তাকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার জন্য। সেই অনুযায়ী আমরা ফিরোজকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি। তার কাগজপত্র বা পাসপোর্ট ছিল কিনা সেটি দেখার বিষয় ইমিগ্রেশন পুলিশের, আমাদের না। ইমিগ্রেশন পুলিশই ভালো বলতে পারবে কীভাবে ফিরোজ ভারত থেকে বাংলাদেশে আসছে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মো. ইলিয়াস বলেন, ইমিগ্রেশনে তাকে আটকানোর পর আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তিনি বলেছেন ওপারের এক লোক তাকে দিয়ে গেছে। এখন কোন লোক কীভাবে তাকে দিয়ে গেছে, সেটি ফিরোজই বলতে পারবেন। আমার দায়িত্ব ছিল তাকে পোর্ট থানায় পাঠানো, আমি সেখানে পাঠিয়েছি।
মহিপুর থানার ওসি আবুল খায়ের বলেন, ফিরোজ কুয়াকাটা সৈকতে এসে এরপরে সাগরে ভেসে গিয়েছেন কিনা সেটি স্পষ্ট না হলেও বেনাপোল সীমান্ত থেকে মহিপুরে এসেছেন এটি সত্য। তবে এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তী আইনগত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৭ মে ফিরোজ শিকদার বন্ধুদের সঙ্গে সমুদ্রে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হন। এরপর অনেক খোঁজাখুজির পরও তাকে পাওয়া যায়নি। ফিরোজের বাড়ি গলাচিপা থানার আমখোলা গ্রামে। তার বাবার নাম মিলন সিকদার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়