রাজধানীর বছিলায় জুতার কারখানায় আগুন

আগের সংবাদ

সংসদে প্রধানমন্ত্রী : দেড় বিলিয়ন ডলার সহায়তা সংগ্রহের চেষ্টা চলছে

পরের সংবাদ

ঐতিহাসিক ৬ দফা ছিল ‘ম্যাগনাকার্টা’ : আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী > শ্রমিকদের কারা উসকানি দিচ্ছে?

প্রকাশিত: জুন ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : গার্মেন্ট শ্রমিকদের উসকানি দিয়ে কারা আন্দোলন করাচ্ছে। আর এই উসকানিদাতাদের প্ররোচনাকারী কারা- সে সম্পর্কে খোঁজ নেয়ার কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, গার্মেন্টস শ্রমিকরা আন্দোলন করছে। আন্দোলন করবেন ঠিক আছে কিন্তু যেসব দেশ গার্মেন্টসপণ্য কিনবে; আমরা এখন ভালো একটা সুযোগ পাচ্ছি, উৎপাদন বাড়ছে। শ্রমিকদের বেতন তো বন্ধ হয়নি। এখন বেতন বাড়ানোসহ নানা আন্দোলন করতে গিয়ে যদি রপ্তানি যদি বন্ধ হয় তখন গার্মেন্টসসহ সব কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আমও যাবে, ছালাও যাবে। বেতন না বেড়ে চাকরিই হারাতে হবে। ঘরে ফিরে যেতে হবে, তখন কী করবেন?
ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ প্রমুখ। গণভবন প্রান্তে সভার সঞ্চালনা করেন দলটির প্রচার সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গার্মেন্ট শ্রমিকদের যে নেতারা উসকানি দিচ্ছে, তারা কার প্ররোচনায় উসকানি দিচ্ছে সেটাও ভেবে দেখতে হবে। যেসব দেশ পোশাক কিনবে তাদের ক্রয়ক্ষমতা সীমিত হয়ে যাচ্ছে। দিনে দিনে আরো খারাপ হচ্ছে। আমরা আমেরিকায়-ইউরোপে পাঠাই, সব জায়গায় জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। সেখানে মানুষ কত দুরবস্থায় আছে, কত মানুষ না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। সেই তুলনায় বাংলাদেশে এখনো অন্ততপক্ষে সবার খাদ্য, ওষুধ, ভ্যাকসিন সবকিছু দিয়ে যেতে পারছি। সেখানে যদি কেউ অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে যায়, তাহলে বলব শেষে একূল-ওকূল দুকূলই হারাতে হবে।
তিনি বলেন, রাশিয়া-উইক্রেন যুদ্ধ এত তাড়াতাড়ি থামবে না। যে জাহাজে ৮০০ ডলারে পণ্য পরিবহন করি, সেটা এখন আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার ডলার হয়ে গেছে। কাজেই জিনিসের দাম বাড়বেই। কেউ যদি এখন আন্দোলন করে কারখানা বন্ধ ও কাজ বন্ধ করে তো চাকরিও চলে যাবে। সেটা মাথায় রাখতে হবে। তখন আর বেতন বাড়া

না, বেতনহীন হয়ে যেতে হবে। সেটা না বুঝলে কিছু করার নেই। কারো কথায় অশান্তি সৃষ্টি করলে দেশের ক্ষতি, নিজেরও ক্ষতি। নেতাদের কোনো অসুবিধা নেই। তারা যেখানে থেকে উসকানি পাচ্ছে সেখান থেকে ভালো অঙ্কের টাকা পাবে। কিন্তু শ্রমিকদের ভাগ্যে কী হবে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন বাড়িয়েছি। যারা ১ হাজার ৬০০ টাকা পেত তারা ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পাচ্ছে। ওভারটাইম, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা যথেষ্ট পাচ্ছে। হ্যাঁ, জিনিসের দাম কিছু বেড়েছে, আরো কত বাড়বে, তার ঠিক নেই। এটা সারাবিশ্বেই। সবাইকে মিতব্যয়ী হতে হবে। প্রত্যেকে নিজের সঞ্চয় করা, নিজের ব্যবস্থা করা নিজেকে করতে হবে। সব তো সরকার করে দিতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে। প্রত্যেক জিনিসের দাম বেড়েছে। ইংল্যান্ডের মানুষ ১ বেলার খাবার বাদ দিয়েছে। সুপারশপ থেকে ভোজ্যতেল ১ লিটারের বেশি কেউ কিনতে পারবে না, রেস্ট্রিকশন দেয়া আছে। সেখানে আমরা ভর্তুকি দিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছি। আমাদের রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার। সেই টাকা ভেঙে ভেঙে বিদ্যুৎ, গ্যাস, কৃষি, স্বাস্থ্যের জন্য ভর্তুকি ও সহযোগিতা দিচ্ছি- যা কোনো দেশ করেনি। ভ্যাকসিন কিনে বিনামূল্যে দিয়েছি। বিনা পয়সায় টেস্ট কিট দিচ্ছি। তারপরও যদি কেউ গোলমালের চেষ্টা করে তাহলে এ দেশটা একেবারে স্থবির হয়ে যাবে। তখন সাধারণ মানুষের কী অবস্থা হবে?
তিনি বলেন, গ্রামের মানুষের অবস্থা এখনো অনেক ভালো। সেটা ভালো রাখতে নজর দিচ্ছি। ১ ইঞ্চি জমি যাতে অনাবাদি না থাকে। বিশ্বব্যাপী যেখানে খাদ্যের মন্দা সেখানে নিজেদের মাটি আছে, মানুষ আছে; ফসল ফলাতে হবে। নিজের খাবারের ব্যবস্থা নিজেকেই করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকারে এসে বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা আনতে পেরেছি। তারপরও আমাদের সরকারকে উৎখাতে বারবার অপচেষ্টা চলছে। টানা তিন মেয়াদে সরকারে আছি বলেই ইতিহাসে এই প্রথম একটা দীর্ঘ সময় গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। দেশের উন্নতি হয়েছে। নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু করেছি। যার কারণে বিশ্বে আজ আমরা প্রশংসিত।
ঐতিহাসিক ৬ দফা ছিল ‘ম্যাগনাকার্টা’ : বঙ্গবন্ধুর উত্থাপিত ৬ দফা দাবি ছিল বাঙালির মুক্তির সনদ। এটি দেশের স্বাধীনতার জন্য জনগণকে প্রস্তুত করেছিল। ছয় দফা দাবি ছিল দেশের স্বাধীনতার জন্য জনগণকে পুরোপুরি প্রস্তুত করা এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের পক্ষে জনগণকে প্রস্তুত করা। প্রকৃতপক্ষে, এটি ছিল ঐতিহাসিক দলিল ‘ম্যাগনাকার্টা’, যার মাধ্যমে দেশের মানুষ নিজেদের স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করেছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অঞ্চলে জনগণের অধিকার ছিল না। সব সময় বঞ্চনার শিকার হতে হতো। পূর্ব পাকিস্তানে জনসংখ্যা বেশি হলেও রাজধানী হলো করাচিতে। সেখানে ফুল ফোটানো হলো আমাদের অর্থে। এই শোষণ-বঞ্চনা ও আঘাতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৫৬ সালে জাতির পিতা মন্ত্রিত্ব ছেড়ে সংগঠনের দায়িত্ব নেন। সব সময় তার আকাক্সক্ষা ছিল- বাঙালি জাতির জন্য কিছু করা। স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে মর্যাদা নিশ্চিত করা এবং ভূখণ্ড দেয়া। তিনি হঠাৎ করে এ দেশের স্বাধীনতার কথা বলেননি। ধাপে ধাপে আগে মানুষকে প্রস্তুত করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে বসে বঙ্গবন্ধু ৬ দফা নিজেই প্রণয়ন করেন। এটা একমাত্র মোহাম্মদ হানিফ জানতেন। কারণ তিনি এটা ইংরেজি এবং বাংলা টাইপ করে বঙ্গবন্ধুর হাতে দেন। ৫ ফেব্রুয়ারি বিরোধী দলের সম্মেলনে করাচিতে ৬ দফা পেশ করতে গেলে তাকে তীব্র বাধা দেয়া হয়। দুর্ভাগ্যের বিষয় সেখানে আমাদেরও কিছু লোক ছিল। ফলে ৬ দফার কিছু দফা তিনি ওখানে প্রেসে প্রকাশ করে দেন, এজন্য তার জীবনের ওপর হুমকি আসে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ১০ ফেব্রুয়ারি জাতির পিতা দেশে এলেন। ১১ ফেব্রুয়ারি প্রেস কনফারেন্স করে ৬ দফার ব্যাখ্যা দিলেন। কেন ৬ দফা তার ওপর একটা লেখা লিখেন। পোস্টার-লিফলেট করে ৬ দফার ব্যাপক প্রচার করা হয়।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ৬১ সালে বঙ্গবন্ধু ছাত্র নেতাদের ডেকে একটি নিউক্লিয়াস ফর্ম করে স্বাধীনতার বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেন, এমনভাবে যেন মানুষ ধীরে ধীরে প্রস্তুতি নেয়। শেখ ফজলুল হক মনি বিএম কলেজ থেকে পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, তাকে দিয়েই এটা শুরু। মনি ভাইকে দিয়েই নিউক্লিয়াস ফর্ম করার কথা হয়। আমির হোসেন আমু একমাত্র আছেন, লতিফ সিদ্দিকী আছেন। আরো কয়েকজন আছেন। আর যেগুলো বিএনপিতে গেছে ওই দুর্বৃত্তদের নাম নিতে চাই না। এভাবেই ছাত্রলীগকে দিয়ে এটা করানো হয়েছিল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়