রাজধানীর বছিলায় জুতার কারখানায় আগুন

আগের সংবাদ

সংসদে প্রধানমন্ত্রী : দেড় বিলিয়ন ডলার সহায়তা সংগ্রহের চেষ্টা চলছে

পরের সংবাদ

অভিযানের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন : ময়মনসিংহে নিবন্ধনহীন ৪৩ ক্লিনিকে চলছে স্বাস্থ্যসেবা

প্রকাশিত: জুন ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রুহুল আমীন খান, ময়মনসিংহ থেকে : ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন অফিসের অনিবন্ধিত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। লোক দেখানো অভিযানকে দায়সারা বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন বিশিষ্টজনরা।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী সারাদেশে অনিবন্ধিত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো বন্ধে কঠোর নির্দেশনার পর অবৈধ ক্লিনিক মালিকদের সঙ্গে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ক্যাশিয়ার ইমরান মেহদীর দেন-দরবারের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্লিনিকসংশ্লিষ্ট অনেকেই। এতে সমাধানও হয়ে যাচ্ছে অবৈধ ক্লিনিক মালিকদের টিকে থাকার লড়াই।
জানা যায়, ময়মনসিংহে মোট ১০৩টি অনিবন্ধিত ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে ৬০টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বাকি অবৈধ ৪৩টিতে চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে।
এদিকে অনুমোদনহীন ক্লিনিকের বিরুদ্ধে সিভিল সার্জনের অভিযান চললেও অন্যদিকে নিবন্ধনহীন ক্লিনিকের তালিকা প্রকাশ নিয়ে চলছে লুকোচুরি খেলা। নগরীতে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা এসব অনিবন্ধিত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার টিকিয়ে রাখার নেপথ্য কারা, এমন প্রশ্ন উঠেছে সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের ভেতরে বাইরে অনেকের।
এ পর্যন্ত ময়মনসিংহ জেলায় ৬৫টি অনিবন্ধিত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিভিল সার্জন অফিস কর্তৃক বন্ধ করে দেয়ার দাবি করলেও অবশিষ্টগুলো বন্ধ হবে কিনা এ নিয়ে সন্দেহের দানা বেঁধেছে অনেকের। আর নিবন্ধিত ক্লিনিকগুলো কতটা নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেছেন তা নিয়েও রয়েছে এক ধরনের সংশয়।
নগরে কতটি অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ এবং সিভিল সার্জন অফিস এ নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করেছে। বিভাগীয় এ শহরে সবচেয়ে বেশি মানুষ আসে চিকিৎসার জন্য। ময়মনসিংহ বিভাগের একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। আর এ হাসপাতালকে ঘিরেই সূচনালগ্ন হতে গড়ে উঠেছে শত শত বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। যার বেশির ভাগই অবৈধ। তবে এ বিষয়ে যাদের দেখার কথা ছিল তারা ছিল নীরব।
এ সুযোগেই ময়মনসিংহ শহরে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসার নামে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণার মহোৎসবে পরিণত হয়ে আসছে। নগরীর প্রতিটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের রয়েছে একশ্রেণির শক্তিশালী দালাল চক্র।
এরা নিরীহ রোগীদের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে ক্লিনিকে নিয়ে সর্বস্ব কেড়ে নেয়। কখনো আবার ভুল চিকিৎসায় লাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে সেবা প্রার্থীদের।
একটি সূত্র জানায়, নগরীর বিভিন্ন অলিগলিতে গজিয়ে ওঠা এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স ও সরকারি নীতিমালার তোয়াক্কা করে না। গোপনে অফিস সংশ্লিষ্ট তদারকি ব্যক্তিদের সঙ্গে রফা-দফার মাধ্যমে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।
এদিকে ময়মনসিংহ শহরে প্রায় ৯ শতাধিক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থাকলেও জেলা সিভিল সার্জন অফিসের হিসাব মতে লাইসেন্স রয়েছে মাত্র ৪০০টির। বাকিগুলো চলছে অদৃশ্য শক্তির বলয়ে।
ট্রেড লাইসেন্স অথবা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স প্রক্রিয়াধীন এমন আবেদন দেখিয়ে নির্বিঘেœœ চালিয়ে আসছে কার্যক্রম। অথচ প্রকাশ্যে অবৈধভাবে কয়েকশ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা চালিয়ে গেলেও জেলা সিভিল সার্জন এসবের কিছুই জানেন না।
এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সরকারের নিবন্ধনবিহীন ক্লিনিকের বিরুদ্ধে নেয়া অধিদপ্তরের কঠোর অবস্থান কতটা বাস্তবায়ন হবে? এ নিয়ে নগরীর সচেতন মহলে চলছে জল্পনা-কল্পনা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ডা. শাহ্ আলম বলেন, ময়মনসিংহ বিভাগের ৪ জেলায় ১৯৩টি অনিবন্ধিত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অনিবন্ধিত বাকিগুলোর বিরুদ্ধেও পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিভিল সার্জন অফিস ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঠিক পরিসংখ্যানের বিষয়টি একে অপরের ওপর চাপিয়ে দেয়। এতে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি।
তবে নগরীর অনিবন্ধিত ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকার বিষয়ে কথা হয় সিভিল সার্জন নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, জেলায় মোট ১০৩টি অনিবন্ধিত ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে ৬০টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
বাকি ৪৩টি অবৈধ, পর্যায়ক্রমে এগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। তার কাছে অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের তালিকা চাইলে পরামর্শ দেন কার্যালয়ের ক্যাশিয়ার ইমরান মেহদীর সঙ্গে কথা বলতে।
সাংবাদিক পরিচয়ে ইমরান মেহদীর কাছে অনিবন্ধিত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকা চাইলে তিনি বলেন, সিভিল সার্জনের অনুমতি ছাড়া তালিকা দেয়া যাবে না। এমন পরস্পরের ঠেলাঠেলিতে তথ্য প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।
কথা হয় ময়মনসিংহ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. হরি শংকর দাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, তার সংগঠনের আওতায় ১১২টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে।
এই সংগঠনের আওতায় ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো সরকারের শতভাগ শর্ত মেনে চলছে। মানসস্মত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হলে তদারকি কর্তৃপক্ষকে দেখতে হবে এসব প্রতিষ্ঠানের ফিটনেস ঠিক আছে কিনা। মানসম্মত চিকিৎসার প্রথম শর্ত মানসম্মত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়