ডিএমপি কমিশনার : জীবনে সফলতার শর্টকাট কোনো রাস্তা নেই

আগের সংবাদ

বিপজ্জনক জেনেও সংরক্ষণে ত্রæটি

পরের সংবাদ

সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডি : পোশাক রপ্তানিতে বড় ধাক্কার আশঙ্কা

প্রকাশিত: জুন ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে বিশ্বজুড়ে। তাতে মূল্যস্ফীতির চাপ বেড়েছে দেশে দেশে। জ্বালানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্যান্য পণ্যের চাহিদা কমেছে। বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে বিক্রিও কমে গেছে। ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রত্যাশিত ক্রয়াদেশ কমিয়ে দিচ্ছে। এমন সময়ে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বড় ধাক্কা আসতে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুনের পর বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় সব কন্টেইনার পণ্যভর্তি ছিল। ফলে আগুনে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করা ও আমদানির বহু পণ্য পুড়ে ছাই হয়েছে। এতে আনুমানিক ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য পুড়েছে। বাংলাদেশি টাকায় যা দাঁড়ায় প্রায় ৯০০ কোটি টাকা। এদিকে এ অগ্নিকাণ্ডে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি বিশ্ববাজারে ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ারও আশঙ্কা করছেন তারা।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসেব অনুযায়ী, মার্চ ও এপ্রিলে ৫০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি থাকলেও মে মাসে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ২৩ শতাংশে নেমে আসে। শুধু মে মাসে রপ্তানি হয়েছে ৩১৬ কোটি ডলারের পোশাক। এর মধ্যে হঠাৎ সিতাকুণ্ডের এমন ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি বিশ্ববাজারে ভাবমূর্তি নষ্ট হবে বলে মনে করেন বিজিএমইএ সহসভাপতি শহীদউল্লাহ আজিম। ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, আমাদের পোশাক শিল্পের বড় ক্ষতি হয়ে গেল। এমনিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে আমাদের শিল্পে। মে মাসে গত ৯ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। যুদ্ধের কারণে ইউরোপ ও আমেরিকায় মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। সেখানকার মানুষের খাদ্যের জন্য বেশি খরচ করতে হচ্ছে। তারা পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। যার প্রভাব পড়েছে রপ্তানি আয়ে।
তিনি বলেন, সীতাকুণ্ডের আগুনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও অনেক মানুষ মারা যাওয়ায় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পে আরেকটি বড় ধাক্কা লাগল। এর ফলে ক্রেতারা হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে অর্ডার কমিয়ে দেয়। বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে অন্য দেশে চলে যাবে। সবমিলিয়ে সামগ্রিক রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, সবসহ ১৩০০ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে পোশাক খাতেরই আছে এক হাজার কোটি টাকার বেশি। অনন্ত এপ্যারেলস এর ৫ কন্টেইনার পণ্য ছিল, এমজে সোয়েটারের ৪ লাখ ৮ হাজার ডলারের পণ্য ছিল। এছাড়া সিনসিন এপ্যারেলস, মিতালি কম্পোজিটসহ অনেক প্রতিষ্ঠানই ছিল।
বিজিএমইএর সহসভাপতি রকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, গত পাঁচ দিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে রপ্তানির জন্য এখানে পণ্যের চালান বোঝাই করা হয়েছে। ডিপোতে প্রাণ এবং অনন্ত গ্রুপের পণ্য ছিল। এমন পণ্যও ছিল যেগুলো মার্কিনভিত্তিক চেইন ক্লথ ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএমের জন্য চালানের অপেক্ষায় ছিল। এছাড়া ইউরোপীয় একটি ব্র্যান্ডকে ১০০ টিইইউ পণ্য পাঠানোর কথা ছিল।
বিজিএমইএর মুখপাত্র ও পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, আগুনে সবচেয়ে বেশি পুড়েছে সুইডেনভিত্তিক তৈরি পোশাকের খুচরা বিক্রেতা ব্র্যান্ড হ্যানস এন্ড মৌরিটজের (এইচএন্ডএম) পোশাক। আমাদের মালিকরা সব বুঝিয়ে দিয়ে রপ্তানির জন্য ওই ডিপোতে রেখেছিল। অন্য কোম্পানির কেনা পোশাকও ছিল ডিপোতে। তবে বেশির ভাগ পোশাক ছিল এইচএন্ডএমের।
বিকেএমইএর সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান ভোরের কাগজকে বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠানের পণ্য পুড়েছে। আইনগত জটিলতায় এসব পণ্যের ক্ষতিপূরণ পাওয়ারও সম্ভাবনা কম। যাদের পণ্য ছিল তাদের এখন বন্দরে ক্লেম করতে হবে। এটা না করলে পণ্যের ক্ষতি তো হয়েছেই, উল্টো স্মাগলিং মামলায় পড়ে যাবে। কারণ এর আইন অনেক কঠিন। তারা যে স্মাগলার না, এজন্য কাগজপত্র সবসহ তিনদিনের মধ্যেই জানাতে হবে।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রাথমিকভাবে ৯ হাজার ৮১৩ কোটি টাকারও বেশি আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করছে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ডিপো এসোসিয়েশন (বিকডা) কর্তৃপক্ষ। বিকডার তথ্য অনুযায়ী, রপ্তানির জন্য ৮০০ টিইইউস (২০ ফুট দীর্ঘ কন্টেইনার) বোঝাই তৈরি পোশাক এবং হিমায়িত খাদ্যপণ্য ছিল। আমদানিকৃত পণ্য বোঝাই কন্টেইনার ছিল ৫০০টি এবং খালি কন্টেইনার ছিল ৩ হাজার। বেসরকারি বিএম কন্টেইনার ডিপোতে প্রায় ৬০০ শ্রমিক কাজ করেন। ৩০ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত ডিপোটির কন্টেইনার ধারণক্ষমতা ৬ হাজার ৫০০ টিইইউস। এর মধ্যে শনিবার ডিপোটিতে ৪ হাজার ৩০০ টিইইউস (২০ ফুট দীর্ঘ কন্টেইনার) রপ্তানি, আমদানি এবং খালি কন্টেইনার ছিল।
বিকডার সচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, প্রাথমিকভাবে ১১০ মিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্যের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে রপ্তানি কন্টেইনারে ৪৫ মিলিয়ন ও আমদানি পণ্যের কন্টেইনারের ক্ষেত্রেও ৪৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি এবং অন্তত ২০ মিলিয়ন ডলারের খালি কন্টেইনারের ক্ষতি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে ১৯টি ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো (আইসিডি) রয়েছে। এগুলো প্রায় শতভাগ রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনা করে। এছাড়া ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্য যেমন- চাল, গম, সরিষা, ছোলা, ডালসহ আরো বেশ কিছু পণ্য ডেলিভারির জন্য নিয়ে আসা হয় এসব ডিপোতে। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বন্দর এলাকার বাইরে থেকেই পণ্য খালাস ও ডেলিভারির মাধ্যমে এই ডিপোগুলো মূলত চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমাতে সাহায্য করে। এসব ডিপোর ধারণক্ষমতা প্রায় ৭৭ হাজার টিইইউস কন্টেইনার। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের ধারণক্ষমতা ৪৯ হাজার ১৮টিইইউএস কন্টেইনার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়