ডিএমপি কমিশনার : জীবনে সফলতার শর্টকাট কোনো রাস্তা নেই

আগের সংবাদ

বিপজ্জনক জেনেও সংরক্ষণে ত্রæটি

পরের সংবাদ

বাতাসে লাশপোড়া গন্ধ, আর্তনাদ : চমেক হাসপাতালে এমন দৃশ্য আগে দেখেনি কেউ

প্রকাশিত: জুন ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রীতম দাশ, চট্টগ্রাম অফিস : একের পর এক মরদেহ আসছে অ্যাম্বুলেন্সে করে। নিহতদের স্বজনদের আহাজারি, বাতাসে লাশপোড়া গন্ধ। বিস্ফোরণে-আগুনে দগ্ধ ও আহতদের যন্ত্রণার আর্তনাদ। নিখোঁজের স্বজনদের দুশ্চিন্তা, ছোটাছুটি। শনিবার রাত থেকে গতকাল রবিবার বিকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের চিত্র ছিল এমনই।
চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগীদের ভিড় ও স্বজনদের আহাজারি নতুন নয়। কিন্তু এত মৃতদেহ আর স্বজনদের আহাজারি পুরো পরিবেশ বদলে দিয়েছে। চমেক হাসপাতালের এমন পরিবেশ আগে দেখেনি কেউ। স্বজনদের চিৎকার ও কান্নায় হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে, হাসপাতালে শোকের মাতম। সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুন লাগার পর কন্টেইনারে থাকা রাসায়নিক পদার্থের কারণে বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত অর্ধশত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বিস্ফোরণে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে মানুষের দেহ এবং আগুনে ঝলসে যাওয়া আহতদের নিয়ে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে থাকে হাসপাতালে। হাসপাতালের ভেতরে দগ্ধরা আর্তনাদ করছেন। হতাহতদের স্বজনদের কান্নার রোল হাসপাতালজুড়ে। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিবেশ। হাসপাতাল এলাকায় অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন শুনলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন হতাহতদের স্বজনেরা। নিখোঁজ স্বজনদের খুঁজতে তারা ভিড় করছেন হাসপাতালে।
এদিকে বিএম ডিপোসহ ওই এলাকা থেকে নিখোঁজ কর্মকর্তা-কর্মচারী, চালক-হেলপার ও নিরাপত্তা প্রহরীর সন্ধানে চমেক হাসপাতালে ভিড় করছেন স্বজনরা। গতকাল রোববার সকাল থেকে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে ঘুরে খোঁজ করতে দেখা যায় স্বজনদের। আবার কেউ ছবি ও আইডি কার্ড দেখিয়ে প্রিয়জনের মরদেহ শনাক্ত করার চেষ্টায় আছেন। আব্দুস সোবহান ওরফে আব্দুর রহমান (২৮) নামে একজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি শেখেরখীল

এলাকার বাসিন্দা সোবাহান ২০১৪ সালে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে যোগ দেন। তার এক বছরের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।
নিখোঁজ আব্দুস সোবহানের মামা মো. হেফাজ উদ্দিন বলেন, আমার ভাগিনা বিএম কনটেইনার ডিপোয় যখন আগুন লাগে, তখন তার মা ও স্ত্রীকে ভিডিও কল করে ফোনে আগুন জ্বলার দৃশ্য দেখান। এর কিছুক্ষণ পর তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার মৃত্যুর গুজব শোনা যাচ্ছে। তবে আমরা এখন পর্যন্ত তার কোনো সংবাদ পাইনি।
এই ডিপোতে কাজ করতেন ভোলার ফারুক। তার মেয়ে ফাতেমা বেগম গতকাল সকাল থেকে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরছিলেন। ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি কেয়ারের সামনে তিনি বলেন, বাবা ইপিজেড থেকে আসা-যাওয়া করে বিএম ডিপোতে কাজ করতেন। শনিবার সন্ধ্যায় বাসা থেকে বের হয়ে কাজে গেছেন। কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।
নিখোঁজ মনির হোসেনের ভাই আব্দুল হান্নান বলেন, মনির বিএম ডিপোতে কাজ করতেন। রাতে পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছিল। এরপর আর খবর নেই। বাঁশখালীর পুঁইছড়ি এলাকার রিদওয়ান ও রবিউলকে খুঁজতে এসেছেন প্রতিবেশী আমির আলম। তিনি বলেন, সীতাকুণ্ডে আগুনের সংবাদ পেয়ে শনিবার রাতে রবিউল ও রিদওয়ান ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। এরপর থেকে তাদের কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।
বিএম কন্টেইনার ডিপোতে কর্মরত ১৮ বছর বয়সী শ্রমিক শহীদুলকে খুঁজে পাচ্ছে না তার পরিবার। শনিবার রাতে অগ্নিকাণ্ডের সময় শহীদুল ডিপোতে কর্মরত ছিল বলে জানায় তার পরিবার। গতকাল রোববার সকাল থেকেই চট্টগ্রাম মেডিকেলের প্রতিটি ইউনিটে শহীদুলকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন তার মামা শাহজাহান। তিনি বলেন, গত রাতে বিএম ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের সময় কাজ করছিল আমার ভাগিনা শহিদুল। বিস্ফোরণের পর দ্রুত সেখানে গিয়ে খোঁজ করলে তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি আরো বলেন, সারা রাত ডিপোতে তাকে খুঁজেছি। লাশঘরে গিয়েও খোঁজ করেছি, কিন্তু পাইনি। জানি না, আমার ভাগিনা আদৌ বেঁচে আছে নাকি পুড়ে ছাই হয়েছে।
বিএম কনটেইনার ডিপোর এস্কেলেটর অপারেটর তৌফায়েল আহমদকে খুঁজছিলেন তার স্বজন মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, বিস্ফোরণের পাঁচ মিনিট আগে ফেসবুক লাইভে ছিলেন তৌফায়েল। লাইভ শেষ হওয়ার আগেই বিকট শব্দ হয়। তার লাইভে অন্ধকার নেমে আসে। এরপর থেকে আর তৌফায়েলকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তৌফায়েলের বাড়ি বাঁশখালীর পুঁইছড়ি ইউনিয়নের নাপোড়া গ্রামে। দুই বছর আগে তিনি ওই কন্টেইনার ডিপোতে চাকরি নেন।
বিএম কন্টেইনার ডিপোর ক্রেন চালক মনির হোসেন (২৮)। শনিবার সন্ধ্যায় রাত্রীকালীন ডিউটিতে যোগ দিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু রাত ১১টার দিকে এই ডিপোতে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনার ১৪ ঘণ্টা পার হলেও এখনো খোঁজ পাওয়া যায়নি মনির হোসেনের। সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়নের উত্তর সলিমপুর ফকিরপাড়া গ্রামের মো. হান্নানের ছেলে নিখোঁজ মনির হোসেনের স্বজন মো. কুরবান আলী বলেন, শনিবার রাত থেকেই তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা চমেকে গিয়েও তাকে পাইনি। ডিপোতেও অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। কেউ সঠিক তথ্য দিতে পারছে না। আমরা চিন্তায় আছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়