ডিএমপি কমিশনার : জীবনে সফলতার শর্টকাট কোনো রাস্তা নেই

আগের সংবাদ

বিপজ্জনক জেনেও সংরক্ষণে ত্রæটি

পরের সংবাদ

ঝড়ের ভেতর তাজিমের মা

প্রকাশিত: জুন ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রচণ্ড গরম ও প্রখর রৌদ্রের পর সূর্যটা মেঘের ভেতর লুকিয়ে গেল হঠাৎ। এই দুপুর বেলায়ও হালকা অন্ধকারে ঢেকে গেল চারপাশ। কিছুক্ষণ পরই ঘন-কালো-গাঢ় মেঘ আকাশে ভেসে বেড়াতে থাকল। সেই সঙ্গে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বাতাসও কেমন বুনো ষাঁড়ের মতো ক্ষেপে উঠল। পুরো আকাশটা এখন ভয়ংকর কালো মেঘের দখলে। এলোপাতাড়ি বাতাস রাস্তার ধুলোবালি উড়িয়ে ধোঁয়া-ধোঁয়া করে ফেলেছে চারিদিক!
মাঠ থেকে রাখাল গরু নিয়ে ছুটছে বাড়ির দিকে। চাষিরাও কাজ বন্ধ করে বাড়ির দিকে দৌড়াচ্ছে। হাট-বাজারের মানুষও ছোটাছুটি করছে এদিক-সেদিক। খেয়াঘাটের মাঝি, নৌকাটা ঘাটে বেঁধে জলদি করে বাড়ির দিকে ছুটেছে। উঠোনে মেলে দেয়া পাকা ধান মা-চাচিরা তাড়াতাড়ি বারান্দায় উঠাচ্ছে। সবাই ভাবছে, আল্লাহই জানে আজ কী আছে কার কপালে!
এমন ভয়ংকর সময়ে তাজিম বাড়িতে নেই। পাড়ায় খেলতে গেছে সেই কখন! এখনো এলো না। তাজিমের মার খুব চিন্তা হচ্ছে। কী যে করি! এই বলে ঝড়ের ভেতরেই তাকে খুঁজতে বের হলো। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। মেঘ ডাকছে গুড়ুম গুড়ুম। সাদা সাদা শিলাও পড়ছে। সঙ্গে হালকা বৃষ্টি। কিন্তু বাতাস খুব ভয়ংকর! গাছের ডালাপালা সব মড়াৎ মড়াৎ করে ভেঙে ফেলছে। গাছের একটি ডাল তাজিমের মার একেবারে পায়ের কাছে এসে পড়ল। একটুর জন্যে রক্ষা। তাজিমের মা চমকে উঠল। কেঁদে কেঁদে বলল- হে আল্লাহ! আমার তাজিমের কী হবে! তুমি তাকে দেখো মালিক।
এই বলছে আর দোয়া-দুরুদ পড়ছে। পড়তে পড়তে বাড়ি থেকে একটু দূরে প্রাইমারি স্কুল মাঠে এসে পড়ল। দেখে কেউ নেই সেখানে। তাজিমের মা আরো ভয় পেয়ে গেল। আমার তাজিম যে কোথায় গেল! ভাবতে ভাবতে এক ভয়ংকর বজ্রপাত ঘটে গেল একটু দূরে। তাজিমের মা ভয়ে দৌড়ে গিয়ে স্কুলের বারান্দায় উঠল। ঝড়ের গতি আরো প্রচণ্ডরূপে বেড়ে গেল। তাজিমের মা হাও-মাও করে কান্না আরম্ভ করল। আর আল্লাহ পাকের কাছে দোয়া করতে লাগল- হে আল্লাহ! আমার তাজিমকে দেখ। আমার তাজিমের যেন কোনো ক্ষতি না হয়।
কিন্তু ঝড় আর থামে না। ক্রমে বেড়েই চলছে। স্কুল মাঠের একটা নারিকেল গাছ হঠাৎ ভেঙে পড়ল। কার যেন টিনের চালা উড়ে এসে পড়ল স্কুলের পুকুরে। পাশের বাগানের ডালপালা-পাখির বাসা উড়ে এসে পড়ছে এই স্কুল মাঠে। এসব দেখে তাজিমের মার আর সহ্য হলো না। এমন ভয়ংকর ঝড়ের মধ্যেই ‘তাজিম! তাজিম!’ বলে বের হয়ে গেল তাকে খুঁজতে।
চলে গেল মোল্লাদের আমবাগানে দৌড়াতে দৌড়াতে। বন্ধুদের সঙ্গে আম কুড়াতে হয়তো সেখানে যেতে পারে তাজিম। গিয়ে দেখে সেখানেও তাজিম নেই, গাছের তলায় ডালপালা আর কাঁচা-পাকা অসংখ্য আম পড়ে আছে। সেখান থেকে আবার দৌড়ে চলে গেল তাজিমের বন্ধু রাতুলদের বাড়ি। সেখানেও তাজিমকে পেল না। আর পরাণে সহ্য হচ্ছে না তাজিমের মার। সন্তানের চিন্তায় সে কালবৈশাখীর মতো ঝড়কেও মালুম করল না। কেঁদে-কেঁদে প্রচণ্ড ঝড়ের ভেতরেই নিরুপায় হয়ে ফিরে এলো বাড়ি; যদিও রাতুলরা তাকে আসতে অনেক নিষেধ করেছিল। বাড়ি এসে দেখে ঘরের এক কোণে কেমন জড়সড় হয়ে কাঁপছে তার ছেলেটি। তাকে খুঁজতে বের হওয়ার পরপরই সে দৌড়ে বাড়িতে এসে পড়েছিল। ছেলেটিকে দেখেই পরম আদরে বুকে জড়িয়ে নিল তাজিমের মা। ঝড়ের ভেতর তুই কোথায় ছিলি বাজান!- একথা বলে অনেকক্ষণ ধরে তাজিমকে বুকে জড়িয়ে রাখল তার মা।

:: শালিখা, মাগুরা

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়