পদ্মা সেতুর উদ্বোধন : সারাদেশে উৎসব হাতিরঝিলে হবে লেজার শো

আগের সংবাদ

সর্বনাশা ধ্বংসযজ্ঞের দায়ভার কার : নিহত অর্ধশত, দগ্ধ-আহত আড়াইশর বেশি, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মজুতের অনুমতি ছিল না, ২৫ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে

পরের সংবাদ

সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা ব্যাহত : বখাটেদের দখলে চেরাগী পাহাড়

প্রকাশিত: জুন ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্র নগরীর চেরাগী পাহাড় এক সময় ছিল কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী, পাঠক-লেখক ও সংগঠকদের মিলনস্থল। সেই চেরাগী পাহাড় এখন অনেকটাই বখাটেদের দখলে। আগে এই চেরাগীতে প্রগতিশীল লোকজনের আনাগোনায় সুস্থধারার সংস্কৃতি চর্চা হতো। কিন্তু চিত্র এখন একেবারেই ভিন্ন। চেরাগীতে আড্ডায় বসে বিপথগামী বখাটে প্রকৃতির কিশোর-তরুণরা। তারা প্রায়ই মারামারি ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
সর্বশেষ গতকাল শনিবার দুপুরে নগরীর চেরাগী পাহাড় এলাকায় যুবলীগের ২টি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি শেষে আসন্ন মহানগর কমিটিতে পদপ্রত্যাশী দুই যুবলীগ নেতার অনুসারীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। বিবাদে জড়িয়ে পড়া ২টি পক্ষের একটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি গোলাম রসুল নিশান আর অন্যটি সিআরবি জোড়া খুনের মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি ও বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল আলম লিমনের অনুসারী। দুজনই চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের কমিটিতে পদপ্রত্যাশী। এছাড়া তারা সাবেক সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এর আগে ২২ এপ্রিল শুক্রবার রাতে চেরাগী পাহাড়ে কিশোর গ্যাংয়ের ২টি গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনার পর ছুরিকাঘাতে আসকার-বিন তারেক ইভান (১৮) নামে এক তরুণ নিহত হয়।
চট্টগ্রামে বইপড়–য়া, সিনেমাপ্রেমী, জ্ঞানমনস্ক ও প্রগতিশীলদের আড্ডাস্থল চেরাগী পাহাড় থেকে বিভিন্ন সামাজিক, মানবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হতো। চেরাগীকেন্দ্রিক ফেসবুক গ্রুপ ‘চেরাগী আড্ডা’, ‘চট্টলার চেরাগী’ পেজের মাধ্যমে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড হতো। সেই চেরাগীর বর্তমান পরিস্থিতিতে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সচেতন নাগরিকরা। সংস্কৃতিপ্রেমীরা বলছেন, ইট-পাথরের নগরায়নে যখন নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চায়, তখনই স্বস্তি মিলত চেরাগী মোড়ের আড্ডায়। কিন্তু এখন বখাটেদের কারণে সেই প্রাণময় আড্ডা আর হয় না। রাস্তার ওপর মোটরসাইকেল রেখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, পত্রিকা অফিসের সিঁড়িতে বসে আড্ডা দেয়া, চেরাগী গলিতে বেপরোয়াগতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসে বেশ কয়েকজন বখাটে। কেউ প্রতিবাদ করলেই তার ওপর হামলে পড়ে বখাটে তরুণদের দল। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে অনেক সাংবাদিককে তাদের হাতে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে। মাঝেমধ্যে চেরাগী পাহাড় এলাকায় কিরিচ, হকিস্টিক এবং লাঠিসোঁটা নিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসব কারণে প্রগতিশীল সংস্কৃতিকর্মীরা চেরাগী আড্ডা প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন। এক সময় এই চেরাগীতে চট্টগ্রামের যেসব সাংস্কৃতিক, নাট্য ও আবৃত্তিসহ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা হতো, এখন আর হয় না। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো তাদের প্রাক-প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম চালাত, এখন তাও বন্ধ হতে বসেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চেরাগী এলাকার এক বাসিন্দা জানান, উঠতি বয়সি বখাটেরা মোটরসাইকেলে এসে দোকানের সামনে ভিড় করে। তারা উচ্চস্বরে কথা বলে এবং অনেক সময় খেয়ে টাকা না দিয়ে চলে যায়। খাবারের টাকা চাইলে দোকানিদের নাজেহাল হতে হয়। ছুরি দেখিয়ে মারার ভয় দেখায় তারা। কয়েকটি দোকানে এর আগে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। বখাটে তরুণরা অনেক সময় আসা-যাওয়ার পথে নারীদের উত্ত্যক্ত করে। পুলিশের অভিযানে কয়েক বছর আগে এখানে টং-দোকান থেকে দেশীয় অস্ত্রও উদ্ধার হয়েছে। মাঝেমধ্যে টহল পুলিশ অভিযান চালালেও ঘুরে-ফিরে বখাটেরা আবারো দখলে নেয় চেরাগী পাহাড় এলাকা। স্থানীয়দের একটি সূত্র জানায়, চেরাগীতে বখাটে কিশোর-তরুণের আড্ডা, মাদক সেবন এবং তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে বিভিন্ন সময় এলাকার কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনের কাছে অভিযোগ করেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি। বরং কাউন্সিলরের সঙ্গে বিভিন্ন সময় তাদের দেখা যায় বলে স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ।
দীর্ঘ সময় ধরে চেরাগী পাহাড়ে অবস্থানকারী নাট্যজন সাংবাদিক প্রদীপ দেওয়ানজী ভোরের কাগজকে বলেন, চেরাগী পাহাড় মোড়ে এক সময় আমরা সংস্কৃতি চর্চা করতাম। কিন্তু এখন এলাকাটি বখাটেদের দখলে চলে গেছে। বখাটেরা শিল্পী-সাংবাদিকদের লাঞ্ছিত করেছে এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনাও

ঘটাচ্ছে। তিনি বলেন, চেরাগী পাহাড়কে ঐতিহ্যে ফিরিয়ে আনতে হলে বখাটেদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করতে হবে। শিল্পী-সাহিত্যিক-সাংবাদিকরা সব সময় বখাটেদের ভয়ে থাকে। আমাদের দাবি, চেরাগী পাহাড় এলাকায় বখাটেদের প্রবেশাধিকার পুরোপুরি বন্ধের পর সংরক্ষণ করা হোক।
কোতোয়ালি থানার ওসি জাহেদুল কবির বলেন, চেরাগী পাহাড়ে বখাটেদের আড্ডা হয়। উশৃঙ্খল কিশোর-তরুণদের আড্ডা থেকে নানা ধরনের অপরাধের সৃষ্টি হয়। আমরা চেরাগী পাহাড়ে বখাটেদের আড্ডা বন্ধের চেষ্টা করছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়