পদ্মা সেতুর উদ্বোধন : সারাদেশে উৎসব হাতিরঝিলে হবে লেজার শো

আগের সংবাদ

সর্বনাশা ধ্বংসযজ্ঞের দায়ভার কার : নিহত অর্ধশত, দগ্ধ-আহত আড়াইশর বেশি, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মজুতের অনুমতি ছিল না, ২৫ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে

পরের সংবাদ

ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন প্রসঙ্গে

প্রকাশিত: জুন ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শিশুর সুরক্ষা ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সরকারের বহুমুখী পরিকল্পনার একটি ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় পুষ্টিসেবা (এনএনএস) ও জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় আগামী ৫-৮ জুন ২০২২ তারিখ পর্যন্ত দেশব্যাপী “জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন” উদযাপিত হবে। উল্লেখ্য, সারাদেশে মোট ২ কোটি ২০ লাখেরও অধিক শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এই ক্যাম্পেইন পরিচালিত হবে।
ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে বাংলাদেশের লাখ লাখ শিশুর অনাকাক্সিক্ষত পরিণতি এড়ানোর কথা মাথায় রেখে সরকার শিশুদের জন্য ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন নামে বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে শিশুদের রাতকানা রোগ হয়। এই ভিটামিনের অভাবজনিত রোগের প্রথম উপসর্গ হলো রাতকানা। এ ধরনের রোগী মৃদু আলোতে কম দেখে, সময়মতো চিকিৎসা না হলে অন্ধ হয়ে যায়। এসব ছাড়াও ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে শিশুদের শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, হাম, ডায়রিয়াসহ নানা কারণে মৃত্যুহার বেশি হয়ে থাকে। তাই ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবজনিত সমস্যা প্রতিরোধে সরকারিভাবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বছরে দুবার জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন হয়ে থাকে। এতে ৬-১১ মাস বয়সি সব শিশুকে একটি নীল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল এবং ১২-৫৯ মাস বয়সি সব শিশুকে একটি করে লাল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। নীল রঙের ক্যাপসুলের মাত্রা ১ লাখ আইইউ (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট) এবং লাল রঙের মাত্রা ২ লাখ আইইউ।
দেশের সব ইপিআই কেন্দ্র এবং স্থায়ী স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোয় প্রতিদিন ক্যাম্পেইন পরিচালিত হবে। নির্ধারিত ইপিআই সিডিউল অনুযায়ী প্রত্যেক ওয়ার্ডের (পুরাতন) ৮টি সাব-ব্লকে সপ্তাহের ৪ কর্মদিবসে নির্ধারিত ইপিআই কেন্দ্রে পর্যায়ক্রমে স্বাস্থ্য সহকারী, পরিবার কল্যাণ সহকারী ও স্বেচ্ছাসেবী কর্তৃক সব শিশুকে ভিাটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। তাছাড়া কমিউটিটি ক্লিনিক ও অন্যান্য সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন এলাকায় ও ইপিআই কেন্দ্রগুলোয়ও এই কার্যক্রম পরিচালিত হবে। একইসঙ্গে কেন্দ্রে আগত শিশুদের মা-বাবা বা অভিভাবকগণকে পুষ্টিবিষয়ক বার্তা জানানো হবে।
ভিটামিন ‘এ’ মানবদেহের জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয় একটি পুষ্টি উপাদান। প্রাণিজ উৎস হিসেবে কলিজা, ডিমের কুসুম, মাখন, পনির, দুধ, মাছ, মাংস ইত্যাদিতে ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে। প্রাকৃতিকভাবে মাছের তেলে সবচেয়ে বেশি ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যায়। উদ্ভিজ্জ উৎসের মধ্যে সতেজ পাতাবহুল সবজি যেমন- পালং ও মেথিশাক, বাঁধাকপি এবং রঙিন সবজি যেমন গাজর, মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদিতে রয়েছে ভিটামিন ‘এ’। এছাড়াও বিভিন্ন ফল যেমন আম, পেঁপে থেকেও আমরা ভিটামিন ‘এ’ পেয়ে থাকি।
ভিটামিন ‘এ’ এর প্রধান কাজ দেহবৃদ্ধি এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো। চোখের দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক রাখতে ভিটামিন ‘এ’ কাজ করে। ভিটামিন ‘এ’ শিশুদের ম্যালেরিয়া, হাম এবং ডায়রিয়াজনিত জটিলতা কমিয়ে আনে। ডায়রিয়া হলে শিশুর দুর্বলতাসহ শরীরে পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি দেখা দেয়। কিন্তু ভিটামিন ‘এ’ ডায়রিয়ার ব্যাপ্তিকাল ও শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি কমায়। দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে এবং চোখের ছানি প্রতিরোধে ভিটামিন ‘এ’ এর ভূমিকা রয়েছে। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ভিটামিন ‘এ’ দেহের ত্বককে রক্ষা করে। ভিটামিন ‘এ’ ব্রণ, একজিমা, ফোঁড়া এবং ক্ষত সারাতেও কাজ করে।
ভিটামিন ‘এ’ এর অভাব পূরণে শিশুদের নিয়মিত ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ মাছ-মাংস, ফল, শাক-সবজি খাওয়ানো দরকার। শাক-সবজি অবশ্যই ভালো করে ধুয়ে তেল দিয়ে রান্না করতে হবে। শুধু পানি দিয়ে সিদ্ধ করলে ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যাবে না। পরিবারের রান্নায় ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ ভোজ্যতেল ব্যবহার করতে হবে। মা ও শিশুর পুষ্টির জন্য গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ রঙিন শাক-সবজি এবং হলুদ ফলমূল খাওয়া উচিত। শিশুর বয়স ৬ মাস পূর্ণ হলে মায়ের দুধের পাশাপাশি পরিমাণমতো ঘরে তৈরি সুষম খাবার খাওয়াতে হয়। বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও পুষ্টি উপাদানের অভাবে শিশুরা মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগে থাকে। অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুর বৃদ্ধি ধীরগতিতে হয়ে থাকে ও প্রায়ই নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়। কিন্তু সরকারের লক্ষ্য হলো আগামী প্রজন্মকে সুস্থ-সবল ও নিরোগ দেহের অধিকারী হিসেবে গড়ে তোলা। আর এ কারণেই ক্যাম্পেইনে পুষ্টি-বার্তা প্রচারের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করার এই প্রয়াস।

সেলিনা আক্তার
পিআইডি ফিচার
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়