পদ্মা সেতুর উদ্বোধন : সারাদেশে উৎসব হাতিরঝিলে হবে লেজার শো

আগের সংবাদ

সর্বনাশা ধ্বংসযজ্ঞের দায়ভার কার : নিহত অর্ধশত, দগ্ধ-আহত আড়াইশর বেশি, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মজুতের অনুমতি ছিল না, ২৫ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে

পরের সংবাদ

বরিশালে সহসাই কাটছে না জলাবদ্ধতার ভোগান্তি

প্রকাশিত: জুন ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এম কে রানা, বরিশাল থেকে : বরিশালে ছোট বড় মিলিয়ে ২৩টি খাল থাকলেও ১৫টির অস্তিত্ব নেই। বাকি ৮টি খালও মৃতপ্রায়। ফলে বর্ষা মৌসুমে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এবারো নগরীর বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কেননা বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে গত ঈদের পরপরই নগরীর ৭টি খাল খনন কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখনো শুরু হয়নি। এছাড়া বর্ষা শুরু হওয়ায় খনন কাজে বিঘœ ঘটতে পারে। আর তেমনটি হলে খনন কাজ পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে এ মৌসুমেও জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাবে না নগরবাসী। আর পাউবোর কর্মকর্তারা বলছেন, আগে প্রকল্পের কাজতো শুরু হোক।
সূত্রমতে, বরিশাল নগরীর ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে ২৩টি খাল। রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং দখলে-দূষণে বেশির ভাগ খাল এখন নর্দমায় পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু খাল সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। অনেক খালের অস্তিত্ব আর নেই। যেসব খাল এখনো টিকে আছে, সেগুলো গত দুই দশকে বিভিন্ন সময়ে খননের নামে বরিশাল সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসন বিপুল অর্থ ব্যয় করেছে। তবে কাজের কাজ তেমন কিছু হয়নি। কয়েক বছর ধরে বর্ষায় ২-৩ ফুট পানি জমছে নগরীর বিভিন্ন এলাকায়। এবারো একইভাবে প্লাবিত হওয়ার শঙ্কায় নগরবাসী। নগরীর মৃতপ্রায় ৭/৮টি খাল উদ্ধারে কার্যক্রম শুরু করেছে নগর ভবন। তবে সেই কাজ শেষ পর্যন্ত কতটুকু করা যাবে তা নিয়েও আছে সংশয় রয়েছে। কারণ এমনিতেই অর্থাভাবে আটকে আছে নগরীর সিংহভাগ উন্নয়ন কাজ।
নগরীর বুক চিরে ২৩টি খাল প্রবাহমান থাকায় এক সময় যত ভারি বর্ষণই হোক বরিশাল নগরীতে কখনোই সৃষ্টি হতো না জলাবদ্ধতা। বৃষ্টির পানি খুব সহজেই ড্রেন হয়ে খাল ও কীর্তনখোলা নদীতে গিয়ে নামত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে গেছে সেই নিরাপত্তার আবহ। বিভিন্ন সময় নগর পিতার দায়িত্বে থাকা রাজনৈতিক নেতাদের ভুল সিদ্ধান্ত আর দখলদারদের কবলে

পড়ে হারিয়ে গেছে অধিকাংশ খাল। ১৫টি খালের কোনো অস্তিত্বই নেই। বাকি ৮ খালের মধ্যে ৪টিতে জোয়ার ভাটা থাকলেও বাকি ৪টি মৃতপ্রায়। কোনোভাবে বেঁচে থাকা এসব খালের দুপাড় দখল হয়ে গেছে বহু আগেই। ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হওয়া খালগুলো ভরাট হয়ে পানিপ্রবাহ থমকে গেছে।
অবশ্য ২০১৬ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামানের নেতৃত্বে খালগুলোর দুইপাড়ের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ হওয়ায় নগরবাসী আশায় বুক বেঁধেছিল আবার খালে প্রাণ ফিরবে বলে। তবে নানা জটিলতায় আটকে থাকে খাল খনন ও সংস্কার কার্যক্রম। সম্প্রতি বরিশাল নগরের ৭টি খাল খননের উদ্যোগ নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। দখলে-দূষণে মৃত প্রায় খালগুলো খননের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি টাকা।
পাউবো সূত্র জানায়, গত ১৪ এপ্রিল দরপত্র বাক্স খোলা হয়েছে। ৭ কোটি টাকায় শুধু খালগুলো খনন হবে। এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে সাগরদী খাল, চাঁদমারী খাল, ভাটার খাল, জেল খাল, আমানতগঞ্জ খাল, পলাশপুর খাল ও রূপাতলী খাল। এসব খালের উৎসমুখ হচ্ছে নগরের পূর্ব পাশ দিয়ে প্রবাহিত কীর্তনখোলা নদী। ৭টি খালের ১৮ কিলোমিটার খনন হবে এই প্রকল্পের আওতায়।
এদিকে বর্ষা মৌসুম কাছাকাছি চলে আসায় খাল খনন কার্যক্রম নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঈদের পরপরই বর্ষা শুরু হয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে খালে পানি থাকবে এবং খনন কাজে ব্যাঘাত ঘটবে। একদিকে খালগুলোর সংস্কার না হওয়া অন্যদিকে খাল খনন প্রকল্পের কাজে দেরি, দুইয়ে মিলে এবারের বর্ষায় ফের ভোগান্তির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। ফলে এবছরও নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা দেখতে হবে।
নদী-খাল বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পগুলো সাধারণত যে সময় অনুমোদন হয় তাতে কিছু করার থাকে না। তবে গ্রীস্ম কিংবা শীত মৌসুমে খাল খনন কার্যক্রম শুরু হলে ভালো হতো। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু দীর্ঘদিন পর মৃতখাল খনন প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে তাই আপাতত শুরুটা হোক। আর শুরু হলে প্রকল্প শেষও হবে বলে আশা করেন তিনি।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রাকিব জানান, গত কয়েক বছর নগরীর জলাবদ্ধতার কথা বিবেচনায় রেখে মাননীয় পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী খাল খনন প্রকল্পে গুরুত্ব দিয়েছেন। মন্ত্রণালয় থেকে ৭টি খাল খনন প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। ইতোমধ্যে খাল খনন প্রকল্পের টেন্ডার খোলা হয়েছে। শিগগিরই মাঠ পর্যায়ের কাজ শুরু হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়