পদ্মা সেতুর উদ্বোধন : সারাদেশে উৎসব হাতিরঝিলে হবে লেজার শো

আগের সংবাদ

সর্বনাশা ধ্বংসযজ্ঞের দায়ভার কার : নিহত অর্ধশত, দগ্ধ-আহত আড়াইশর বেশি, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মজুতের অনুমতি ছিল না, ২৫ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে

পরের সংবাদ

আমলা-পেশাজীবী দ্বন্দ্ব প্রকট : আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে পেশাজীবী নেতাদের বৈঠকে উঠে আসে ক্ষোভের কথা

প্রকাশিত: জুন ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৫, ২০২২ , ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য : আমলাতন্ত্র বনাম পেশাজীবী! দেশের ক্ষমতা কাঠামোয় একচেটিয়া প্রভাবশালী হয়ে ওঠা আমলাদের বিরুদ্ধে এবার মুখ খুললেন পেশাজীবীরা। ইঙ্গিত দিলেন একজোট হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার। গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে এক বৈঠকে এমন ইঙ্গিত দিয়ে পেশাজীবীরা বলেছেন, ‘এক অদৃশ্য দেয়াল’ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে পেশাজীবীদের দূরত্ব তৈরি করে রেখেছে। আমলাতন্ত্রের প্রাধান্যে পদে পদে পেশাজীবীদের অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী নির্বাচনে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে ক্ষমতাসীনদের সতর্ক করেছে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ। সব মিলিয়ে আমলাদের চলমান কার্যক্রমে প্রতিটি সেক্টর ক্ষুব্ধ। তবে এ নিয়ে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের (বাসা) কেউ কথা বলতে চাননি।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, গত কয়েক বছর ধরে আমলারা নিজেদের সবকিছুর ঊর্ধ্বে নিয়ে গেছেন। এতে ধীরে ধীরে অন্য পেশাজীবদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে আমলারা একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী না হতে পারেন সেজন্য নির্বাচনের আগেভাগেই সরকারকে চাপে রাখার কৌশল নিলেন পেশাজীবীরা। এর মাধ্যমে পেশাজীবীরা চাইছেন সরকারপ্রধানের সঙ্গে দেখা করে নিজেদের ক্ষোভ-দুঃখের কথা জানাতে। তবে এও ঠিক, সরকারের সঙ্গে আলোচনায় পেশাজীবীরা সন্তুষ্ট না হলে বেতন বাড়ানো, শ্রমিক স্বার্থসহ বেশকিছু ইস্যুকে সামনে এনে তারা মাঠ গরমের চেষ্টা করতে পারেন। তেমন পরিস্থিতি হলে বেকায়দায় পড়তে পারে সরকার।
তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, গত মাসে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, মাঠ পর্যায়ে প্রকৌশলীদের কাজ তদারক করবেন জেলা প্রশাসকরা। মূলত, এই চিঠিকে কেন্দ্র করেই আমলাদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হন প্রকৌশলীরা। ঘটনার একপর্যায়ে প্রকৌশলীদের সঙ্গে যোগ দেন অন্য পেশাজীবীরাও। এরপর তারা জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন ও সচিব কে এম আলী আজমের সঙ্গে বৈঠক

করেন। বৈঠকে প্রতিমন্ত্রী ও সচিব অস্বীকার করে বলেন, তাদের দপ্তর থেকে এ রকম কোনো চিঠি দেয়া হয়নি। তখন পেশাজীবীরা প্রশ্ন তুলে বলেন, তাহলে কারা এই ষড়যন্ত্র করছে। এরপরই তারা ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এর আগে সমস্যা সমাধানে প্রকৃচির (প্রকৌশলী-কৃষিবিদ-চিকিৎসক) কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা বহুবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আবেদনও করেছেন। কিন্তু এখনো তার সূচি চূড়ান্ত হয়নি। এর আগে বিভিন্ন দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রকৃচির নেতাদের সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল ২০১৩ সালে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন আন্তঃক্যাডারে বৈষম্য নিরসনের জন্য সব ক্যাডারে প্রথম গ্রেডের পদ সৃষ্টি, সুপারনিউমারারি পদোন্নতি ও পদসোপান তৈরির নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। এছাড়া সম্প্রতি জাতীয় সংসদে একাধিক প্রবীণ সংসদ সদস্য সরকারের ‘আমলাতন্ত্র-নির্ভরতা’ এবং আমলাদের ‘কর্তৃত্বপরায়ণ’ হয়ে ওঠার সমালোচনা করায় তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা হচ্ছে।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার পেশাজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময়ে বসে ‘অভিযোগের পাহাড়, ক্ষোভ আর অসন্তোষ’ ছাড়া কিছুই পেলেন না আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এর বিপরীতে তাদের আশ্বস্ত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, তিনি পেশাজীবীদের সব কথা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে দেবেন। আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সুবিধা মতো সময়ে পেশাজীবীদের সঙ্গে বৈঠকটি হবে বলে জানা গেছে।
আইইবি সভাপতি প্রকৌশলী নূরুল হুদা জানান, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাক্ষাৎ চেয়ে ৪টি চিঠি পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, কিন্তু একটি অদৃশ্য দেয়াল সেটা বন্ধ করে রেখেছে। সব কাজ ডিসিদের হাতে দিয়ে প্রকৌশলীদের দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে অভিযোগ করে নূরুল হুদা বলেন, বাংলাদেশের এক লাখ প্রকৌশলী করোনা ভাইরাসের মধ্যে কাজ করেছি, আর তাদের দূরে সরিয়ে দিয়ে ডিসিদের হাতে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এর প্রতিকার চাই। আমলাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এখন যদি ডিসিরাই সব বাংলাদেশের কাজ করে, তাহলে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, আমাদের মেডিকেল কলেজ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেন। আজকে ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ ডিসিদের দিয়ে করাচ্ছেন। আজকে একটা পদ্মা ব্রিজের মধ্যে কী সিমেন্ট লাগবে, রড ও বালু কতটুকু লাগবে সেটা কী পদ্মা ব্রিজের পিডি শফিক জানবেন? না মুন্সীগঞ্জের ডিসি বলবেন। পেশাজীবীদের দূরে সরিয়ে রাখলে আগামী নির্বাচনে তার প্রভাব পড়বে বলেও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদককে সতর্ক করেন তিনি।
বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, গত তিন বছরে আমাদের শিক্ষামন্ত্রী একদিনের জন্যও আমাদের সঙ্গে দেখা করেননি, বসেননি। তিনি সব শিক্ষা কারিকুলাম পরিবর্তন করে দিলেন। আমরা জানিও না। আমাদের বাদ দিয়ে কী কারিকুলাম তিনি করলেন, আর চালাবেন, তিনিই জানেন। এই শিক্ষক নেতা বলেন, শিক্ষকদের কিছু জিনিস জানলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। আমাদের বেসরকারি শিক্ষকরা কলেজের ভাইস প্রিন্সিপালও হতে পারবেন না, সরকারি কলেজ থেকে ডেপুটেশনে দায়িত্ব নিয়ে এসে বসবেন। আন্দোলনের হুমকি দিয়ে এই শিক্ষক নেতা বলেন, আজকে আমলাতন্ত্র, যারা মন্ত্রণালয়ে আছেন, তারা আমাদের বিড়ালের মতো মনে করে।
বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যেন জামায়াত-বিএনপির অভয়ারণ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বিশেষ করে সিভিল সার্জন, পরিচালক এবং অন্য পদে প্রশাসন ক্যাডারের আশীর্বাদপুষ্ট কিছু ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটেছে, যারা আমাদের চেতনাকে লালন করে না। সংসদে পেশাজীবীদের অংশীদারত্বও দাবি করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা বলেন, এমন সব লোকদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, যারা মেডিকেলের একটা বইয়ের নামও উচ্চারণ করতে পারে না। আইইবির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন বলেন, আমলাতন্ত্র আজকে আমাদের নিষ্পেষিত করছে। শোষণ করছে। ডিসিরা আমাদের শাসন করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমাদের মানববন্ধনে নামতে হয়েছে। তাই আজ প্রধান অতিথির (ওবায়দুল কাদের) কাছে আহ্বান জানাব, আমাদের আমলাতন্ত্র থেকে রক্ষা করবেন। যার যা পেশা, মন্ত্রণালয় তাদেরই হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন গঠন করা হয় পাঁচজন সদস্য ও একজন চেয়ারম্যান নিয়ে। তখন বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ছয়টি। এখন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ৫২টি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১০৫টি। কিন্তু কমিশন ওই সংখ্যা দিয়েই চলছে। মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অনেক বিষয় শিক্ষকদের ওপর চাপিয়ে দেয়। সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই শিক্ষকদের কাজটি করবেন। কিন্তু আমরা আমলাতন্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, সরকার নতুন যে গণমাধ্যম আইন করছে, সেটার খসড়ায় সাংবাদিকদের আরো হেয় করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়