ভারতের গমে রুবেলা ভাইরাস : অর্ধলাখ টন ফেরত দিল তুরস্ক

আগের সংবাদ

কিশোরগঞ্জে মানববন্ধন : ভোরের কাগজের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার দাবি

পরের সংবাদ

‘৩ মিনিটের চলচ্চিত্র উৎসব’ : শিল্পকলায় মুগ্ধতা ছড়াল ৬৪ তরুণের নির্মাণ

প্রকাশিত: জুন ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৪, ২০২২ , ১:৩৩ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ১৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১। ইরতাজ উদ্দীন সাহেব বঙ্কিমের ‘বিষবৃক্ষ’ পড়ছিলেন। এমন সময় দরজায় শব্দ। ছিটকিনি খুলতেই দেখলেন মাঝবয়সী কালো গোঁফওয়ালা গড়নের একজন, নাম সালাউদ্দিন। ইরতাজ উদ্দিন সাহেবের বয়স হয়েছে। তাই চিনতে পারছিলেন না। তবে এতটুকু বুঝতে পেরেছেন ছেলেটি তার ছাত্র ছিল। ইরতাজ উদ্দীন সাহেব করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছেন। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সঙ্গে আপস করে ওইখানে চাকরি করা যায় না। দমটা বন্ধ হয়ে আসছিল। তাই দেশ মাতৃকার টানে তিনি দেশে ফিরে এসেছেন। একজন পাকিস্তানি মিলিটারি সালাউদ্দিনকে পাঠিয়েছে। তিনি ইরতাজ উদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে চান। একটু অবাক ইরতাজ উদ্দিন। একটু হাসিমুখে সালাউদ্দিন বলল, ‘সমস্যা নেই স্যার, আসলে হয়েছে কি স্যার, সেও আমার মতোই করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল।’ পরের দিন ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১, সালাউদ্দিন ইরতাজ উদ্দিন সাহেবকে নিয়ে পুরনো জমিদার বাড়ির পেছনের বাগান বাড়িতে যায়। সেখানে গ্রামের আলবদর বাহিনীর প্রধান জহিরুল চৌধুরী চোখ বাঁধা অবস্থায় থাকা ইরতাজ সাহেবকে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বলতে বলে। কিন্তু হাসতে হাসতে ইরতাজ উদ্দীন সাহেব বলেন, জয় বাংলা।
এমনই শ্বাসরুদ্ধকর এবং হৃদয়স্পর্শী ঘটনাটি মাত্র ৩ মিনিটে চিত্রায়িত করেছেন তরুণ চলচ্চিত্রকার মো. মুক্তাদির করিম কুয়াশা তার ‘নিরাসক্তি’ শিরোনামের চলচ্চিত্রে। এমন ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্মিত ৩ মিনিটের ৬৪টি চলচ্চিত্র প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় দর্শকের মুগ্ধতা আদায় করে নিলেন ৬৪ জন তরুণ নির্মাতা। গতকাল শুক্রবার বিকালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করে ‘৩ মিনিটের চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতা ও উৎসব ২০২২’। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উৎসবটির উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান। আরো উপস্থিত ছিলেন উৎসবের জুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও চলচ্চিত্র নির্মাতা মানজারে হাসীন মুরাদ এবং চলচ্চিত্র অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ। সন্ধ্যায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রতিযোগীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির সচিব মো. আছাদুজ্জামান।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কে এম খালিদ বলেন, শিল্প-সংস্কৃতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম চলচ্চিত্র। এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে সংস্কৃতির নানা

উপাদান এবং একটি দেশের সংস্কৃতির নানা বিষয় প্রতিনিধিত্ব করে চলচ্চিত্র। শিল্পকলার শক্তিশালী বিনোদন মাধ্যম এবং শিক্ষার অন্যতম সেরা উপকরণ হিসেবে খ্যাতি রয়েছে চলচ্চিত্রের।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে বর্তমানে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছেন। চলচ্চিত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র নির্মাণে নানাভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধক মো. আবুল মনসুর বলেন, চলচ্চিত্র একটি শক্তিশালী মাধ্যম, যেখানে জীবনবোধ আর জীবনের গল্প গতিময় হয়ে ফুটে ওঠে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে এবং বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে চলচ্চিত্র জাতিকে নানাভাবে উদ্দীপ্ত করেছে।
উৎসবে শিশু বিভাগ থেকে ৩টি, যুব বিভাগ থেকে ৫টি এবং উন্মুক্ত বিভাগ থেকে ৫টি মোট ১৩টি চলচ্চিত্রকে পুরস্কৃত করা হয়। প্রথম পুরস্কার ৫০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার ৪০ হাজার টাকা ও তৃতীয় পুরস্কার ৩০ হাজার টাকা এবং যুব ও উন্মুক্ত বিভাগে ২টি করে মোট ৪টি জুরি পুরস্কার দেয়া হয়। যার মূল্য ২০ হাজার টাকা।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পীরা। লিয়াকত আলী লাকীর ভাবনা ও পরিকল্পনায় একাডেমির নৃত্যশিল্পীরা ভুপেন হাজারিকার ‘মঙ্গল হোক এই শতকে’ শিরোনামে গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন। স্নাতা শাহরীন পরিচালিত ও একাডেমির নৃত্যশিল্পীদের পরিবেশনায় ‘শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা’ শিরোনামে নৃত্য পরিবেশন করা হয়।
চলচ্চিত্রে শিশু বিভাগে প্রথম পুরস্কার পেয়েছে সৈয়দা আবরার তোয়াহা দ্রাহার ‘হেল্প’, দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছে অপরাজিতা পারিনের ‘রিক্ত’, তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছে মো. ফারহানুর ইমতিয়াজের ‘কেউ দায়ী নয়’। যুব বিভাগে প্রথম পুরস্কার পেয়েছে সুব্রত কুমার মুন্ডার ‘কপোতাক্ষের গান’, দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছে শরিফুল আবির ‘কালাচোর’ ও তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছে প্রাণ কৃষ্ণ বনিকের ‘এ ফোবিয়া’। উন্মুক্ত বিভাগে প্রথম পুরস্কার অর্জন করেছে মনির হোসাইনের ‘হিসাব বিজ্ঞান’, দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছে জায়েদ সিদ্দিকীর ‘ইন এক্সপিডিশন টু হ্যাপিনেস’, তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছে মো. আবিদ মল্লিকের ‘গায়েব’। জুরি পুরস্কার পেয়েছে নাশিবা সামারাতের ‘কেইস ১৯১১৯’, কনোজ কান্তি রায়ের ‘অমৃতের পুত্র’, জগন্ময় পালের ‘রকি দ্য সি কিড’, মো. জহুরুল ইসলাম পুলক রাজের ‘ললাট’। প্রায় ২০০টি চলচ্চিত্র থেকে বাছাইকৃত ৬৪টি চলচ্চিত্র নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় এ উৎসব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়