ভারতের গমে রুবেলা ভাইরাস : অর্ধলাখ টন ফেরত দিল তুরস্ক

আগের সংবাদ

কিশোরগঞ্জে মানববন্ধন : ভোরের কাগজের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার দাবি

পরের সংবাদ

নাগরিক সমাবেশে বক্তারা : আদিবাসীদের ভূমির অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে

প্রকাশিত: জুন ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : লামায় রাবার বাগানের নামে দখল করা জমিসহ আদিবাসীদের দখলীকৃত সব জমি ফিরিয়ে দেয়ার দাবি উঠেছে চট্টগ্রামের এক নাগরিক সমাবেশ থেকে। আদিবাসীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে চট্টগ্রামের রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীরা সমাবেশ থেকে এই দাবি জানান। পরিবেশবাদী নাগরিক সংগঠন পিপলস ভয়েস ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের যৌথ আয়োজনে গতকাল শুক্রবার বিকালে নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে এই নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে লামার ঢেংগেছড়া নতুনপাড়া, লাংকমপাড়া ও রেংয়েন ¤্রােপাড়ার কারবারিসহ বাসিন্দারা ঘটনার দিনের বর্ণনা দেন। তারা বলেন, জুম ভূমি পুড়িয়ে দেয়ায় তারা বর্তমানে কোনো চাষবাস করতে পারছেন না। তারা এখন ভূমি হারিয়ে ভবিষ্যতের চিন্তায় দিশাহারা। সমাবেশে বক্তারা বলেন, আদিবাসীদের জমি কেউ জবরদখল করতে পারবে না। দখলকৃত ভূমি অবশ্যই ফিরিয়ে দিতে হবে। জুম চাষের জমিতে আগুন দিয়ে যে ফসল পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সংকট মোচনে যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি প্রণয়ন করা হয়েছিল, তার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন চাই। চুক্তির অন্যতম শর্ত ভূমি বিরোধ নিরসন। ভূমি কমিশনের আজ পর্যন্ত কোনো কার্যক্রম নেই। অবিলম্বে কমিশনের কাজ শুরু করে তাদের জমি ফিরিয়ে দিতে হবে। আদিবাসীদের উচ্ছেদ করে কোনো শিল্পায়ন মেনে নেয়া হবে না।
সমাবেশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. আলাউদ্দিন বলেন, এ লজ্জা সরকারের, যারা দুই দশক আগে চুক্তি করেছে। যার জমি তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। সব অর্জন ব্যর্থ হবে যদি আদিবাসীদের অধিকার আমরা রক্ষা করতে না পারি। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, নিজ ভূমিতে পরবাসী পাহাড়ের মানুষরা। রাবার বাগানের নামে পাহাড়ের ভূমি বছরের পর বছর ধরে দখল করে চলেছে। কাউকে নিজ মাটি থেকে উৎখাত করা বর্বরতা। আর তারা প্রতিবাদ করলে হয়ে যায় সন্ত্রাস। সেখানে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা প্রভুর মতো আচরণ করে। পাহাড়ি জনপদের আত্মপরিচয় বিলীন করে দেয়া হচ্ছে। পাহাড়িদের স্বাধীন জীবনাচরণের অধিকার চাই। পাহাড়ে কেউ থাকতে চাইলে পাহাড়ের মানুষকে সম্মান করতে হবে।
সমাবেশে সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি অধ্যাপক অশোক সাহা বলেন, পাহাড়ে নানা নির্যাতন চলছে। ভূমি দস্যুতা, অপহরণ, খুন হচ্ছে। ভূমি দস্যুরা এখন রাজনীতি করে বড় চেয়ারে চলে যায়। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল বলেন, পাহাড়ের উন্নয়নের নামে পরিবেশ বিধ্বংসী কাজ হচ্ছে। ভূমির প্রকৃতি পাল্টে দেয়া হচ্ছে। পাঁচ তারকা হোটেল হচ্ছে। বুকের রক্ত দিয়ে ভাষা ও স্বাধীনতার অধিকার প্রতিষ্ঠা করা বাঙালি যদি কারো অধিকার হরণ করে তার থেকে খারাপ কিছু হয় না। প্রতিটি মানুষের জন্মভিটা, মাতৃভাষা রক্ষার অধিকার রয়েছে। সে অধিকার রক্ষার লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে পিপলস ভয়েস সভাপতি শরীফ চৌহান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো মানুষের অধিকারের কথা মুখে বললেও তারা পাহাড়ের মানুষের অধিকারের কথা বলেন না। পাহাড়ে যে অত্যাচার নিপীড়ন তা নিয়ে কিছু বলে না। এ সমস্যার সমাধান একমাত্র রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল। পাহাড়ে ও সমতলে মানুষের অধিকার রক্ষার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অব্যাহত সামাজিক রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকতে হবে।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি সুপ্রিয় তংচংগ্যার সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সভাপতি তাপস হোড়, নাট্যজন প্রদীপ দেওয়ানজি, পিসিপি ছাত্র পরিষদ মহানগরের সাধারণ সম্পাদক বিনিময় চাকমা, পাহাড়ি শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের সহসভাপতি অনিল চাকমা, সিআরবি রক্ষা মঞ্চের মহিম উদ্দিন, ব্রাইট ফোরাম ফর বাংলাদেশের উৎপল বড়–য়া, লেখক শিপ্রা দাশ, বাংলাদেশ ¤্রাে স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের তং প্রং ¤্রাে, ত্রিপুরা কল্যাণ ফোরামের সভাপতি সুরেশ ত্রিপুরা, ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফোরাম চট্টগ্রামের সভাপতি সুরেশ বরণ ত্রিপুরা, চবি ছাত্র নরেশ চাকমা, লাংকম পাড়ার কারবারি লাংকম, পাড়াবাসী ইয় চং ¤্রাে, ঢেংগেছড়া নতুনপাড়ার কারবারি রেংয়েন প্রমুখ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়