ভারতের গমে রুবেলা ভাইরাস : অর্ধলাখ টন ফেরত দিল তুরস্ক

আগের সংবাদ

কিশোরগঞ্জে মানববন্ধন : ভোরের কাগজের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার দাবি

পরের সংবাদ

নগরবাসীর দুর্ভোগ চরমে : বন্দরনগরীতে অল্প বৃষ্টিতে ফের জলাবদ্ধতা

প্রকাশিত: জুন ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : একটুখানি বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় চট্টগ্রাম শহরের অনেক জায়গা, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় প্রায় নগরজুড়ে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ নানা সেবা সংস্থা বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের গল্প বলেন। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নাকি জলাবদ্ধতা থাকবে না। কিন্তু বছরের পর পর বছর যায়, জলবদ্ধতা যায় না। প্রকল্পও শেষ হয় না। বরং চলমান প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পায়।
গতকাল শুক্রবার সকালে মাত্র আধা ঘণ্টার বৃষ্টিতেই নগরের নিচু এলাকায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। নগরের চকবাজার, ডিসি রোড, বাকলিয়া, দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, আগ্রাবাদ, চান্দগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে থাকায় পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২৬ দশমিক ৬ মিলিমিটার এবং দুপুর ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি উঠেছে। নগরীর ছোট-বড় নালাগুলোর আবর্জনা অপসারণ না করায় সামান্য বৃষ্টিতে এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ নগরবাসীর। নালা পরিষ্কার না করার জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন-চসিক’কে দায়ী করছেন নগরবাসী। তবে চসিক কর্মকর্তারা জানান, চলমান জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন খাল ও ড্রেনে দেয়া বাঁধের কারণে বৃষ্টিতে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে জমে যায়। তবে বৃষ্টি থেমে যাওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পানি সরে যায়। চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি প্রকল্পের কাজ চলছে। তবে প্রকল্পগুলোর কাজের ধীরগতির কারণে জলাবদ্ধতার এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না নগরবাসী।
পতেঙ্গা আবহাওয়া কার্যালয় থেকে জানানো হয়, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। সাধারণত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশে মৌসুমি বায়ু আসে। আর তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত গড়িয়ে যায়। তবে এবার মে মাসের শেষেই বাংলাদেশের সীমানায় আগাম চলে এসেছে মৌসুমি বায়ু। এটি এখন মিয়ানমারের আরাকান ও বাংলাদেশের কক্সবাজারে অবস্থান করছে। মৌসুমি বায়ু শুরুতে উপকূলে এসে কয়েক দিন স্থির থাকে। তারপর তা ধীরে ধীরে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। পর্যায়ক্রমে তা সারাদেশে ছড়িয়ে বৃষ্টি ঝরায়। বর্তমানে জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের

বাস্তবায়নাধীন মেগা প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা। প্রকল্পটির কাজ চলছে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়ে ২০২০ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল প্রকল্পটির কাজ। এরপরও কাজ শেষ না হওয়ায় এক বছর সময় বাড়িয়ে ২০২১ সাল পর্যন্ত করা হয় প্রকল্পের মেয়াদ। বর্ধিত সময়েও কাজ শেষ না হওয়ায় আরো দুই বছর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় অনেক স্থানে খাল-নালার কাজ চলছে। মেগা প্রকল্পের কাজের জন্য খালের মুখে যে বাঁধ দেয়া হয়েছে সেগুলো অপসারণ না করলে চট্টগ্রাম নগরীতে বুক সমান পানি হবে বলে সম্প্রতি আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। খাল-নালার এসব বাঁধ অপসারণের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে সময়ও বেঁধে দেন তিনি। অন্যদিকে নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, খালে বাঁধ ও স্লুইস গেটের (রেগুলেটর) কাজ শেষ না হওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে সিডিএ বলছে, মেগা প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে খালের মধ্যে যে বাঁধ দেয়া হয়েছে সেগুলো খুলে দেয়ার জন্য। এ ছাড়া পানি দ্রুত নামার জন্য ড্রেন ও নালাকে দ্রুত পরিষ্কার করতে বলা হয়েছে।
অল্প বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দেওয়ানবাজার এলাকায় বাসিন্দার মোমিনুর রহমান বলেন, নগরীর বেশির ভাগ নালা-ড্রেন অপরিষ্কার থাকায় অল্পবৃষ্টিতেও হাঁটু পানি জমে যাচ্ছে। বর্ষার আগে পরিষ্কার করা না হলে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হবে।
চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মোবারক আলী বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের জন্য খালগুলোতে বাঁধ দেয়া হয়েছে। সেজন্য পানি যেতে পারেনি। বাস্তবায়নকারীরা বলেছেন, বর্ষার আগে বাঁধ খুলে দেয়া হবে। আশা করি তখন এই পরিস্থিতি থাকবে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়