ভারতের গমে রুবেলা ভাইরাস : অর্ধলাখ টন ফেরত দিল তুরস্ক

আগের সংবাদ

কিশোরগঞ্জে মানববন্ধন : ভোরের কাগজের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার দাবি

পরের সংবাদ

নওগাঁয় গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে খামারিরা

প্রকাশিত: জুন ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নওগাঁ প্রতিনিধি : গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন নওগাঁর খামারি ও কৃষকরা। ফলে জেলার হাজার হাজার খামারি তাদের গবাদিপশু নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। খামারিরা বলছেন, পশু-খাদ্যের দাম বাড়লেও বাড়ছে না দুধের দাম। খাবারের সঙ্গে দুধের দামের সামঞ্জস্য না থাকায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। পশুদের পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০ দিনের ব্যবধানে দাম বেড়ে পশু-খাদ্যের নারিশ ফিড বর্তমানে ২৫ কেজি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২৯৫ টাকা। যা আগে ছিল ১ হাজার ২৩০ টাকা। বস্তায় বেড়েছে ৬৫ টাকা। ভুসি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ টাকা, আগে ছিল ৫০ টাকা। মাষকলাইয়ের খুদ ও খৈল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ৪০ টাকা। প্রতি কেজি চালের খুদ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা, আগে ছিল ৩০ টাকা। আটা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি, আগে ছিল ৩৮-৪০ টাকা। গুঁড়া ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা, আগে ছিল ৬০০ টাকা। রাইস পালিস বিক্রি হচ্ছে ৩২ টাকা কেজি। এছাড়া ভুট্টার আটা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ৩০ টাকা।
খামারি ও কৃষকরা বলছেন, গত ২০ দিনের ব্যবধানে প্রকারভেদে পশু-খাদ্যের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০-২০ টাকা। দফায় দফায় দাম বেড়েই চলছে। খাবার জোগান দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। খাবারের দাম বাড়ায় দুধ উৎপাদন ও মোটাতাজাকরণ ব্যাহত হচ্ছে। এভাবে পশু-খাদ্যের দাম বাড়তে থাকলে খামার বন্ধ করে দেয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
বদলগাছী উপজেলার চাকরাইল গ্রামের দুগ্ধ খামারি রুস্তম আলী আজাদুল বলেন, আমি পড়াশোনা শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে ২০১০ সালে ৫টি গাভী দিয়ে খামার শুরু করেছিলাম। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে বেড়ে আমার খামারে এখন ছোট-বড় মিলিয়ে গরুর সংখ্যা ২৩টি। এর মধ্যে ১৫টি দুধেল গাভী এবং ৮টি বাচ্চা গরু।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ২৫ লিটার দুধ পাওয়া যায়। এ পরিমাণ দুধের দাম পাওয়া যায় ১ হাজার ২০০ টাকা। বাড়ির খড় ও ঘাস ছাড়াও এতগুলো গরুর পেছনে দানাদার খাবারের খরচ পড়ে প্রায় ১ হাজার ৮০০ টাকার মতো। গত এক মাস থেকে দানাদার খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের মতো খামারিদের খামার চালাতে কষ্টকর হয়ে উঠেছে। পশু-খাদ্যের দাম বাড়লেও বাড়েনি দুধের দাম। এতে করে লোকসান গুনতে হচ্ছে।
একই উপজেলার পয়নারি গ্রামের খামারি শাহিনুর রহমান বলেন, দেশি-বিদেশি মিলে সাতটি গরু আছে। ৪৫ টাকা কেজির খৈল এখন ৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। পশু খাবারের দাম যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে করে আমাদের মতো ছোট খামারিদের পুষিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। খাবারের দাম বাড়ার কারণে ২০ দিন আগে ৫টি গরু বিক্রি করে দিয়েছি।
নওগাঁ শহরের আটাপট্টি এলাকার মেসার্স আলহাজ ফিড এবং চিকস সেন্টারের স্বত্বাধিকারী বজলুর রহমান একজন নারিশ ফিড ডিলার। তিনি বলেন, কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি গো-খাদ্যের ফিডের দাম আড়াই থেকে তিন টাকা বেড়েছে। বর্তমানে ফিড ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। যা আগে ছিল ৪৭ টাকা কেজি। এছাড়া আটা, খৈল ও ভুসিসহ অন্যান্য খাবারের দাম প্রতি কেজি ১০-২০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে কৃষক ও খামারিদের গো-খাদ্য কেনার আগ্রহ ২৫ শতাংশ কমে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে খামার ধ্বংস হয়ে যাবে।
নওগাঁ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মহির উদ্দীন বলেন, প্রতিটি দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ার পাশাপাশি গো-খাদ্যের দামও বেড়েছে। এতে প্রান্তিক খামারি ও কৃষকরা অনেকটা বিপাকে পড়েছেন। খামারিরা এসে বিভিন্নভাবে অভিযোগও করছেন খাদ্যের দাম বাড়ায় লাভ না হয়ে তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। খামারিদের বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা বিশ্বাস করি সরকারও খামারিদের বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করবে। কুরবানি উপলক্ষে খামারিদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জেলার পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া যাবে। তিনি আরো জানান, গো-খাদ্যের দাম না কমলে আসন্ন কুরবানি ঈদের বাজারে প্রভাব পড়বে এবং গরুর দাম বৃদ্ধি পাবে, এতে করে মধ্য আয়ের মানুষ গরু কিনতে হিমশিম খাবে বলে তিনি জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়