ঢাকায় সিপিবির সমাবেশ কাল

আগের সংবাদ

টার্গেট এবার রাজপথ দখল : পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ ও প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি

পরের সংবাদ

মালয়েশিয়ায় কর্মী যাবে জুনেই, ফের ‘সিন্ডিকেট’

প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দফায় দফায় চিঠি চালাচালি আর বৈঠকের পর চূড়ান্ত হলো মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর বিষয়টি। তবে আবারো ‘সিন্ডিকেটের’ মাধ্যমে দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মী পাঠানোর চেষ্টা চলছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী ইমরান আহমদ জানিয়েছেন, চলতি জুন মাসেই কর্মী পাঠানো শুরু হচ্ছে দেশটিতে। এ বছর বাংলাদেশ থেকে যেতে পারবেন মোট দুই লাখ কর্মী। আর প্রত্যেকের অভিবাসন ব্যয় থাকবে দেড় লাখ টাকার মধ্যে। এর আগে মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিদলের সঙ্গে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক হয়। বৈঠকে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানান ও দেশটির প্রতিনিধিদল অংশ নেন। পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন জানান, মালয়েশিয়া পাঁচ বছরে পাঁচ লাখ কর্মী বাংলাদেশ থেকে নেবে। তারা ভবিষ্যতে নিরাপত্তাকর্মী ও গৃহকর্মী নিতে আগ্রহী। কর্মীর বেতন হবে দেড় হাজার রিঙ্গিত। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএমইটি মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম প্রমুখ।
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে আর কোনো বৈঠকের হয়তো প্রয়োজন হবে না। সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী, সব শর্ত মেনেই দেশটিতে কর্মী পাঠানো হবে। আমরা আশা করছি, জুনের (চলতি মাস) মধ্যেই কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করতে পারব। সরকারের ডাটা ব্যাংক থেকে কর্মী পাঠানো হবে। তার আগে সংবাদপত্র ও টিভিতে বিজ্ঞাপন দেয়া হবে। কোন প্রক্রিয়ায় কর্মী পাঠানো হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, দেশে সরকারিভাবে বৈধ ১ হাজার ৫২০টি এজেন্সি রয়েছে। তাদের তালিকা আমরা আগেই পাঠিয়েছি। সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী, তালিকা থেকে বাছাই করার অধিকার মালয়েশিয়ার রয়েছে। কারণ তারা বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেবে। তারাই তা ঠিক করবে। তবে সিন্ডিকেটের কথা সমঝোতা চুক্তিতেও নেই, আজকের আলোচনাতেও ছিল না। মালয়েশিয়ার বাছাই করা এজেন্সির বাইরে যেসব এজেন্সি থাকবে, তারা কী করে ব্যবসা করবে- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, মানুষ ব্যবসার চিন্তা করেই লাইসেন্স নেয়। তারা নিজ নিজ ব্যবসা খুঁজে নেবে। এ সময় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব মুনিরুছ সালেহীন বলেন,

সমঝোতা সইয়ের বাস্তবায়নের বিষয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ তাদের তালিকা দেবে। সে অনুযায়ী তারা বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলেন, আগামী ১ বছরে দেশটির অর্থনৈতিক খাতে দুই লাখ কর্মী বাংলাদেশ থেকে নেবে। মালয়েশিয়ার মন্ত্রী বলেছেন, চুক্তি অনুযায়ী কম খরচে কর্মী নেবে। পাশাপাশি সিকিউরিটি পারসোনাল এবং ডোমেস্টিক ওয়ার্কার্স পদে লোক নেবে। এসব খাত এখনো বাংলাদেশের জন্য উন্মুক্ত হয়নি। এছাড়া মন্ত্রণালয় থেকে যারা তালিকাভুক্ত হবেন, এমন তালিকা থেকেই মেডিকেল সেন্টারও তারা ঠিক করবেন। আমরা চাই কর্মীদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে। তাদের বেতন হবে ১ হাজার ৫০০ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত। তাদের সব নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে মালয়েশিয়ার আইনে। সচিব আরো বলেন, সমঝোতা চুক্তি অুনযায়ী নির্ধারণ করা হবে। মালয়েশিয়ার মন্ত্রী আমাদের অভিবাসন খরচ ‘জিরো’তে রাখার কথা বলেছেন। কোনো রিক্রুটিং এজেন্সি নিয়ম ভঙ্গ করলে তারা আইনি ব্যবস্থা নেবেন। আমরা একটি খরচ নির্ধারণ করে দেব, এর বাইরে কোনো বাড়তি টাকা নিলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। কর্মীদের সুরক্ষার জন্যই এসব উদ্যোগ। সমঝোতা অনুযায়ী, মালয়েশিয়াতে পৌঁছানোর পর কোয়ারেন্টাইন খরচ কর্মীকে বহন করতে হবে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পাসপোর্টসহ কিছু খরচ কর্মীকেই বহন করতে হবে। তবে যাওয়া-আসার টিকেটের খরচ দেবে মালয়েশিয়া। এর আগে ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে সমঝোতা চুক্তি হয়। চুক্তির এক মাসের মধ্যেই কর্মী পাঠানোর কথা থাকলেও সিন্ডিকেট ইস্যুতে তা গত ছয় মাস ধরে ঝুলে থাকে।

এর আগে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদের আমন্ত্রণে বুধবার মধ্য রাতে ঢাকায় আসেন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানান। মালয়েশিয়ার সরকারের ‘আশীর্বাদপুষ্ট’ এবং বাংলাদেশের জনশক্তি ব্যবসায়ীদের একাংশ ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠাতে চায়। এই ২৫টি এজেন্সি ‘সিন্ডিকেট’ নামে পরিচিত। জিটুজি প্লাস নামে পরিচিত ২০১৫ সালের চুক্তিতে বাংলাদেশের মাত্র ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে পৌনে তিন লাখ কর্মী নেয় মালয়েশিয়া। এ পদ্ধতিতে প্রথমে ৩৭ হাজার এবং পরে ১ লাখ ৬০ হাজার কর্মী নেয়া হয়। অভিবাসন ব্যয় ধরা হলেও কর্মীপ্রতি সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা নিয়েছে এজেন্সিগুলো। এতে অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে অভিযোগ করে ২০১৮ সালে ক্ষমতায় ফিরে মাহাথির সরকার জিটুজি প্লাস বাতিল করে।
সম্প্রতি প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী পাঠাতে খোদ প্রধানমন্ত্রীকে চাপ দেয়া হয়েছে। মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম ও বাংলাদেশের জনশক্তি ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, দেশটিতে বিদেশি কর্মীর তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। ইন্দোনেশিয়া থেকে কর্মী পায়নি তারা। বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে নিয়োগকারীদের চাপ রয়েছে মালয়েশিয়ার সরকারের ওপর। ২৫ এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে আসেন মালয়েশিয়ান মন্ত্রী। জনশক্তি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বায়রার সাবেক মহাসচিব শামীম আহমদ চৌধুরী নোমান বলেছেন, তারা জানতে পেরেছেন, মালয়েশিয়ার মন্ত্রিসভা ‘সিন্ডিকেটের’ মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ পদ্ধতি অনুমোদন করেনি। তারপরও এ প্রস্তাব বাংলাদেশকে দেয়া হচ্ছে।
ব্র্যাকের কর্মকর্তা ও শ্রম অভিবাসন বিশেষজ্ঞ শরিফুল হাসান জানান, বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর আগে বাংলাদেশকে অভিবাসন খরচসহ বেশ কিছু বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তিনি জানান, অভিবাসন খরচ কখনোই কর্মীর ৩ মাসের বেতনের চেয়ে বেশি হওয়া চলবে না। এ মুহূর্তে একজন বাংলাদেশি পুরুষ অভিবাসী কর্মীর অভিবাসন খরচ পুনরুদ্ধার করতে এখন প্রায় দেড় বছরের বেতন প্রয়োজন হয় বলেও জানান তিনি। এছাড়াও অভিবাসী কর্মীদের বিভিন্ন ধরনের অধিকার, যেমন- থাকা ও কাজের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ ও সুনির্দিষ্ট কর্মঘণ্টার মতো বিষয়গুলোর দিকেও খেয়াল রাখা উচিত। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানের পর মালয়েশিয়াই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। ১৯৭৮ সাল থেকে প্রায় ১০ লাখ ৫৭ হাজার কর্মী কাজ করার জন্য বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় গেছেন। বিএমইটির তথ্যে আরো জানানো হয়েছে- ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে, সে বছরই ১ লাখ ৭৫ হাজার কর্মী গেছেন মালয়েশিয়ায়। এর আগের ৩ বছরে মালয়েশিয়ায় কাজ নিয়ে ১ লাখ ৭০ হাজার কর্মী গেছেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘অভিবাসনের খরচ সমীক্ষা-২০২০’ অনুযায়ী, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীর গড় অভিবাসন খরচ ৪ লাখ ৪ হাজার টাকা এবং গড় মাসিক আয় ২৫ হাজার ৬০০ টাকা। এই হারে একজন কর্মীর অভিবাসন খরচ তুলতে প্রায় দেড় বছর সময় লাগে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশি অভিবাসীরা প্রায় ৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়