ঢাকায় সিপিবির সমাবেশ কাল

আগের সংবাদ

টার্গেট এবার রাজপথ দখল : পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ ও প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি

পরের সংবাদ

নওগাঁয় ১৯ হাজার কোটি টাকার আম বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ

প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. আবু বকর সিদ্দিক, নওগাঁ থেকে : আমের নতুন রাজধানী হিসেবে সম্প্রতি খ্যাতি অর্জন করেছে সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁ। এটেল মাটির কারণে নওগাঁর আম সুস্বাদু হওয়ায় দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে ইউরোপেও এ জেলার আমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে ভরা মৌসুমে জেলায় আম সংরক্ষণের ব্যবস্থা গড়ে না তোলায় ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না প্রান্তিক চাষিরা। নওগাঁয় গুটি আম নামানো শুরু হয়েছে। তবে উন্নত জাতের আম বাজারে আসবে অল্প সময়ের মধ্যে।
চলতি বছর জেলা থেকে প্রায় ১ হাজার ৮৪২ কোটি টাকার আম বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ১১ উপজেলায় ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় ৩ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমিতে বেশি বাগান গড়ে উঠেছে। ৫ হাজার ৮০০ আম চাষির প্রায় সাড়ে ৯ হাজার বাগান রয়েছে।
চলতি মৌসুমে সম্ভাব্য আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৫ টন। যেখানে প্রতি হেক্টরে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৫০ টন। প্রতি কেজি আম ৫০ টাকা হিসাবে এ বছর প্রায় এক হাজার ৮৪২ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
উপজেলাভিত্তিক আম বাগানের পরিমাণ- পোরশা উপজেলায় ১০ হাজার ৫২০, সাপাহারে ১০ হাজার, পতœীতলায় ৪ হাজার ৮৬৫, নিয়ামতপুরে এক হাজার ১৩৫, সদর উপজেলায় ৪৪৫, রানীনগরে ১১০, আত্রাইয়ে ১২০, বদলগাছীতে ৫২৫, মহাদেবপুরে ৬৮০, মান্দায় ৪০০ এবং ধামইরহাটে ৬৭৫ হেক্টর। জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা সাপাহার, পোরশা, ধামইরহাট ও নিয়ামতপুর উপজেলার কিছু অংশ বরেন্দ্র এলাকা হিসেবে পরিচিত। পানি স্বল্পতার কারণে অন্যান্য ফসল চাষ করা সম্ভব হতো না এমন জমিতে ধান চাষ কমিয়ে আম চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা।
সাপাহার উপজেলার ফুটকইল গ্রামের আম চাষি রমজান আলী বলেন, উপজেলা বরেন্দ্র বহুমুখী অফিস থেকে রাস্তার গাছ এ বছর ৩ লাখ টাকায় ইজারা নেয়া হয়েছে। প্রশাসনের বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী আম পাড়া শুরু করেছি। গুটি আমের গাছ সাধারণত বড় হয়। ঝড়ে প্রায় অর্ধেক আম নষ্ট হয়েছে। গুটি আম বাজারে ৪০০-৫০০ টাকা মণ। প্রতিজন ৪০০ টাকা মজুরি ও একবেলা খাবারসহ পাঁচজন শ্রমিক দিয়ে আম নামানো হচ্ছে। এবার ঝড়ে পড়ে যাওয়ায় আমে তেমন লাভ হবে না।
একই উপজেলার ঘাটনগর গ্রামের আম চাষি মজিবুর রহমান বলেন, গুটি আম পাড়া শুরু হলেও অন্যান্য জাতের আম বাজারে আসতে এখনো প্রায় ১ মাস লাগবে। পোকামাড়ক দমনে এবং আমের রং ভালো রাখতে পরিচর্যার পাশাপাশি কীটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। সাপাহার উপজেলার তিলনা ইউনিয়নের আম চাষি লিয়াকত সরদার জানান, আম একটি পচনশীল ফল। জেলায় যদি আম সংরক্ষণের জন্য হিমাগারের ব্যবস্থা থাকত তাহলে সেখানে রেখে কিছুদিন পর বিক্রি করে লাভবান হতে পারতাম। উপজেলার আরেক আম চাষি মেহেদী হাসান জানান, আম সংরক্ষণাগার না থাকায় আম পাকা শুরু হলে দ্রুত আমাদের আম বিক্রি করে দিতে হয়। এজন্য বাগান মালিকদের বাজারে কম দামে বিক্রি করতে হয়। এতে করে মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভের অংশ নিয়ে নেয়। তাই তিনি দ্রুত আম সংরক্ষণাগার স্থাপনের জোর দাবি জানান।
এ ব্যাপারে নওগাঁ আম চাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, কয়েক দফা বৈরী আবহাওয়া হওয়ায় কারণে আমের ফলন কম এবং কালবৈশাখীতে আম নষ্ট হলেও এখনো আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে আমের দাম ভালো পাওয়ার আশা করছেন আম বাগান মালিকরা। এছাড়া আমের আড়তদারদের সিন্ডিকেটের কারণে ৪০ কেজিতে মণ হলেও আমাদেরকে ৪৫ থেকে ৫০ কেজি আম মণ হিসাবে বিক্রয় করতে হয়, যদি প্রশাসন এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে তাহলে আম চাষিরা লাভবান হবেন বলে তিনি জানান। সাপাহার উপজেলার আম বাজারের আড়তদার সমিতির সভাপতি কার্ত্তিক সাহা বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবারো সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে আম বেচাকেনা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান ভোরের কাগজকে বলেন, জেলায় প্রচুর পরিমাণ জমিতে আম চাষ হয়েছে। চাষিদের উৎপাদিত আম সংরক্ষণের জন্য একটি আম সংরক্ষণাগারের প্রয়োজন। জেলার কৃষি বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শামছুল ওয়াদুদ বলেন, আম সংরক্ষণাগারের এখনো কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে জেলায় আম চাষ হচ্ছে। যদি একটি হিমাগার স্থাপন করা যায় তাহলে আম সংরক্ষণ করে চাষিরা সুবিধা মতো সময়ে আম বিক্রি করতে পারবেন। এতে করে চাষিরা লাভবান হবেন। তিনি আরো বলেন, বিষয়টি নিয়ে কৃষি অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে নওগাঁ জেলায় আম সংরক্ষণাগার স্থাপনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়