কাগজ ডেস্ক : পাকিস্তানের একটি সংবাদমাধ্যমে গত বুধবার দেয়া সাক্ষাৎকারে গত এপ্রিল মাসে পাক-পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের ঘটনাপ্রবাহ দিয়ে মুখ খুললেন ইমরান। প্রধানমন্ত্রিত্বের শেষলগ্নে তার সরকারের বিরুদ্ধে বিদেশি চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছিলেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এবার সরাসরি পাক সেনার বিরুদ্ধে আক্রমণ শানালেন তিনি। বললেন, আমাদের হাত বাঁধা ছিল। সর্বত্রই আমাদের সরকারের সঙ্গে তঞ্চকতা করা হয়েছে। হুমকি দেয়া হয়েছে। সরকারে থেকেও আমরা ক্ষমতার অধিকারী ছিলাম না। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, দেশের সুরক্ষার স্বার্থে শক্তিশালী সেনাবাহিনী থাকা অবশ্যই জরুরি। তবে শক্তিশালী সেনার সঙ্গে ক্ষমতাসীন মজবুত সরকারের ভারসাম্য বজায় রাখা ততটাই আবশ্যক। তেহরিক-ই-ইনসাফের নেতা বলেন, আমাদের সরকার যখন ক্ষমতায় এলো, তখন আমরা সত্যিই দুর্বল ছিলাম। সেই সময় বিভিন্ন দলের সাহায্য নিতে হয়েছিল আমাদের। কিন্তু আমাদের হাত বাঁধা ছিল। আমরা সবাই জানি, পাকিস্তানে কাদের হাতে সব চেয়ে বেশি ক্ষমতা। তাই তাদের উপরেই নির্ভর করতে হয়েছিল আমাদের। তারা সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করলে তিন টুকরো হয়ে যাবে পাকিস্তান।
যদিও কাদের উদ্দেশে এই মন্তব্য, স্পষ্ট করেননি সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সব সময়েই ওদের ওপর ভরসা করতে হতো আমাদের। ওরা অনেক ভালো কাজ করেছে। আবার এমন অনেক কিছুই ওরা করেনি, যা করা উচিত ছিল। ওদের হাতে ক্ষমতা রয়েছে কারণ জাতীয় জবাবদিহিতা ব্যুরোর মতো প্রতিষ্ঠান ওদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। প্রসঙ্গত, দুর্নীতি আর অর্থনৈতিক সন্ত্রাস রুখতে সংবিধান মেনে ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরো (ন্যাব) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে পাকিস্তানে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, গত বছর পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর শীর্ষপদে লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাদিম আনজুমের নিয়োগে প্রাথমিকভাবে সবুজ সংকেত দিতে রাজি হননি ইমরান। তার পর থেকেই পাক সরকার ও পাক সেনার মধ্যে সম্পর্কে ফাটল ধরা শুরু হয়। যদিও পরে নাদিমের নিয়োগে অনুমোদন দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। ইমরান জানালেন, প্রতিষ্ঠান যদি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়, তা হলে নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, এই সেনাও ধ্বংস হয়ে যাবে। পাকিস্তানের অর্থনীতি শেষ হয়ে যেতে বসেছে। এ ভাবে চলতে থাকলে কারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে? সেনা। তার পরিণাম হবে, আমরা পারমাণবিক শক্তিধরের তকমা হারাব। এই মুহূর্তে সঠিক সিদ্ধান্ত না নেওয়া হলে দেশ ও জাতির মৃত্যু অবধারিত।
ইমরানকে শেহবাজের হুঁশিয়ারি : পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খানকে সতর্ক করে দিলেন দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। গতকাল বৃহস্পতিবার জিও নিউজের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়। শেহবাজ বলেন, তিনি রাজনীতি করতে পারেন কিন্তু পাকিস্তানের বিভাজন নিয়ে কথা বলার সাহস পান না। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলে পাকিস্তান ভেঙে তিন টুকরো হতে পারে- ইমরানের এমন বক্তব্যের পরই শেহবাজ এই হুঁশিয়ারি দিলেন। শেহবাজ শরিফ টুইটারে বলেন, ইমরান খান সা¤প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সরকারি পদে তার অযোগ্যতার প্রমাণ। শেহবাজ বলেন, দেশের ভালোর জন্য তিনি যখন তুর্কির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন তখন পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান দেশকে নিয়ে ‘নির্লজ্জ হুমকি’ দিচ্ছে। বর্তমানে তিন দিনের সফরে তুরস্ক সফরে আছে শেহবাজ শরিফ। শেহবাজ আরো লেখেন, আমি যখন তুরস্কে চুক্তি স্বাক্ষর করছি, তখন ইমরান দেশের বিরুদ্ধে নগ্ন হুমকি দিচ্ছেন। ইমরানকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে তিনি বলেন, আপনারা রাজনীতি করুন, কিন্তু সীমা অতিক্রম করার সাহস করবেন না। পাকিস্তান ভাগের কথা বলবেন না।