জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : ১০ বছরেও ক্লাসরুম আইন অনুষদ

আগের সংবাদ

প্রতিযোগিতার বাজারে ডলার : দাম নিয়ন্ত্রণ থেকে পিছু হটল কেন্দ্রীয় ব্যাংক > টাকার মান কমল ৯০ পয়সা

পরের সংবাদ

নানা পদক্ষেপের পরও বাড়ছে আমদানি

প্রকাশিত: জুন ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দেশে পণ্য আমদানির ঋণপত্র বা এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েই চলেছে। আমদানির লাগাম টানতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপেও কাজ হচ্ছে না। এমনকি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে এলসি খোলার পরিমাণ। করোনা সংকট কেটে যাওয়ার পর থেকেই আমদানিতে উল্লম্ফন শুরু হয়, যা এখনো অব্যাহতভাবে বেড়েই চলেছে। এতে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের ওপর চাপ পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ৭ হাজার ৬৬৫ কোটি ১৫ লাখ (৭৬.৬৫ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খুলেছেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা, যা গত অর্থবছরের পুরো সময়ের (২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন) চেয়েও ১৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি। আর একই সময়ের চেয়ে বেশি ৪৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৯ টাকা) টাকার অঙ্কে চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে ৬ লাখ ৮২ হাজার ১৮৫ কোটি টাকার এলসি খুলেছেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। এই অঙ্ক চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি। আর নতুন বাজেটের চেয়েও বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের আকার হচ্ছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। ৯ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের যে বাজেট উপস্থাপন করবেন তার সম্ভাব্য আকার পৌনে ৭ লাখ কোটি টাকার মতো হবে বলে গণমাধ্যমে সে তথ্য এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার পণ্য আমদানির এলসি-সংক্রান্ত হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, এই ১০ মাসে গড়ে ৭ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছে।
অস্বাভাবিক এই আমদানির লাগাম টেনে ধরতে বিলাসপণ্য আমদানিতে অতিরিক্ত এলসি মার্জিন আরোপসহ নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপরও তেমন ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। বেড়েই চলেছে আমদানি। বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। সামাল দিতে সবশেষ সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার মান আরেক দফা কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ দফায় এক ধাক্কায় টাকার মান ১ টাকা ১০ পয়সা কমিয়ে সব ব্যাংকের জন্য ডলারের একক দর ৮৯ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই পণ্য আমদানির এলসি খুলতে এমন উল্লম্ফন দেখা যায়নি। আর এতে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভও চাপের মধ্যে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বেশ কিছুদিন ধরেই আমদানির লাগাম টানার পরামর্শ দিচ্ছিলেন অর্থনীতিবিদরা।
আমদানি কমাতে প্রথম পদক্ষেপ নেয়া হয় ১৭ এপ্রিল। ওই দিন এক সার্কুলারের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শিশুখাদ্য, জ্বালানিসহ অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, স্থানীয় ও রপ্তানিমুখী শিল্প এবং কৃষি খাত সংশ্লিষ্ট পণ্য আমদানি ছাড়া অন্য সব পণ্য আমদানির বিপরীতে ঋণপত্র স্থাপনের (এলসি) নগদ মার্জিন হার ন্যূনতম ২৫ শতাংশ সংরক্ষণের জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়। এরপর ১০ মে বিলাসপণ্য আমদানি কমাতে আরো কড়াকড়ি আরোপ করে আরেকটি সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই সার্কুলারে বলা হয়, সব ধরনের মোটরকার, হোম অ্যাপ্লায়েন্স হিসেবে ব্যবহৃত ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে হবে। একই সঙ্গে অতি জরুরি পণ্য ছাড়া অন্য সব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে হবে। একই সঙ্গে আমদানি ব্যয়ের লাগাম টানতে ব্যয় সংকোচনের পথ বেছে নেয় সরকার। অতি প্রয়োজন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের কর্তাদেরও বিদেশ সফর বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কম গুরুত্বপূর্ণ আমদানিনির্ভর প্রকল্পের বাস্তবায়ন আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। এসব পদক্ষেপের বেশির ভাগই নেয়া হয়েছে চলতি মাসে। সে হিসাবে মে মাসের এলসির তথ্য পাওয়া গেলে বোঝা যাবে আমদানি কমার ক্ষেত্রে এসব পদক্ষেপ কতটা কাজে দিয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, লাগামহীন আমদানিতে বেশ চাপে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। বৈদেশিক লেনদেনের চলতি ভারসাম্যের ঘাটতি (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) ১৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। অস্থির হয়ে উঠেছে ডলারের বাজার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এই অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ৬ বিলিয়ন ডলার বাজারে ছাড়া হয়েছে। কিন্তু আমদানি বাড়ায় তারপরও চাহিদা মিটছে না। অর্থনীতিবিদরা অনেক দিন থেকেই আমদানি ব্যয়ের লাগাম টানার কথা বলে আসছিলেন। কিন্তু কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে কিন্তু দেরিতে। সে কারণেই ডলারের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। এখন দেখা যাক, সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপে আমদানি কমে কিনা বলেও মন্তব্য অর্থনীতিবিদদের।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার ইউক্রেনে হামলার পর থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল তেলের দাম, একপর্যায়ে প্রতি ব্যারেলের দর ১৩৯ ডলারে গিয়ে ঠেকেছিল। গত দুই মাস বিশ্ববাজারে তেলের দর নি¤œমুখী ছিল ১১০-১১৪ ডলারের মধ্যে ছিল। কিন্তু সপ্তাহখানেক হলো তা ফের বাড়তে শুরু করেছে। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায় আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেল ১২৪ ডলারে বিক্রি হয়েছে।
আর ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট তেল বিক্রি হয়েছে ১১৮ দশমিক ২০ সেন্টে।
বেশি ব্যয় পোশাক শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে : করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যেও গত ২০২০-২১ অর্থবছরে পণ্য আমদানির জন্য ৬ হাজার ৭০৪ কোটি (৬৭.০৪ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খুলেছিলেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। ওই অঙ্ক ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৯ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে জুলাই-এপ্রিল সময়ে এলসি খুলতে সবচেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা খরচ হয়েছে রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল কাপড় ও অন্য পণ্য আমদানিতে। এর পরিমাণ ১ হাজার ৮২ কোটি ১০.৮২ বিলিয়ন ডলার, গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে যা ৪২ শতাংশ বেশি। সুতা আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ৪২২ কোটি ডলারের; প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ, ৮২ শতাংশ। তুলা ও সিনথেটিক ফাইবার আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ৩৭৪ কোটি ডলারের। বেড়েছে ৩৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। রাসায়নিক দ্রব্য ও সার আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে ৪৬৫ কোটি ২৮ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এছাড়া ওষুধের কাঁচামালের এলসি খোলা হয়েছে ১০০ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের; বেড়েছে ১৫ দশমিক ১৪ শতাংশ। শিল্পের মধ্যবর্তী কাঁচামাল আমদানির জন্য ৬৯৬ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের এলসি খুলেছেন ব্যবসায়ীরা, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪২ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেশি। মূলধনি যন্ত্রপাতি বা ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানির জন্য ৫৫৭ কোটি ১৫ লাখ ডলারের এলসি খুলেছেন ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা। বেড়েছে ৪৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। জুলাই-এপ্রিল সময়ে জ্বালানি তেল আমদানির জন্য ৩৪৮ কোটি ৬৪ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি, ১৩১ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
খাদ্যপণ্যের মধ্যে চাল আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ৩২ কোটি ৮২ লাখ ডলারের; কমেছে ৬১ শতাংশ। গম আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ২০০ কোটি ৩৩ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি ৪৬ শতাংশ। চিনি আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ৯২ কোটি ৬৯ লাখ ডলারের, প্রবৃদ্ধি ৭৮ শতাংশ। ভোজ্যতেল আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ১৮৫ কোটি ডলারের, বেড়েছে ৫০ দশমিক ৮২ শতাংশ। এছাড়া অন্যান্য পণ্য ও শিল্প যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ২ হাজার ১১৮ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের, বেড়েছে ৩৯ শতাংশ।
গত ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে ৫৩ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য আমদানির জন্য মোট ৫৬ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল, যা ছিল আগের (২০১৮-১৯) অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ২১ শতাংশ কম।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়