জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : ১০ বছরেও ক্লাসরুম আইন অনুষদ

আগের সংবাদ

প্রতিযোগিতার বাজারে ডলার : দাম নিয়ন্ত্রণ থেকে পিছু হটল কেন্দ্রীয় ব্যাংক > টাকার মান কমল ৯০ পয়সা

পরের সংবাদ

চিলমারীতেই হোক গবেষণানির্ভর কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: জুন ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

গত ২০২১ সালের ২৮ জুন ‘কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বিল-২০২১’ জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হয়। যাচাই-বাছাই ও আলোচনা শেষে একই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বিলটি সংসদে উত্থাপন করলে কণ্ঠভোটে পাস হয় এবং ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেটভুক্ত হয়।
গত ২৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে জারি করা এক আদেশে ৪ বছরের জন্য ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান এ কে এম জাকির হোসেনকে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ৮ মে তিনি উপাচার্য হিসেবে দাপ্তরিক কাজ শুরু করলেও এখনো নিশ্চিত করা হয়নি কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ঠিকানা। চিলমারী উপজেলার মাটি ও মানুষের বন্ধু, ৫ বারের নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান, মুক্তিযুদ্ধের জীবন্ত দলিল, শওকত আলী (বীর বিক্রম), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (চিলমারী উপজেলা শাখা) এবং জনসাধারণের দাবি মাছের রাজধানী চিলমারীর মাটিতেই হোক গবেষণানির্ভর কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ঠিকানা।
শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া জেলাগুলোর মধ্যে কুড়িগ্রাম অন্যতম। চরাঞ্চল বেষ্টিত চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুরসহ ৯টি উপজেলার সমন্বয়ে কুড়িগ্রাম জেলা। কুড়িগ্রাম জেলা সদর থেকে মাত্র ৩০ কিমি দক্ষিণে ব্রহ্মপুত্র নদীর মোহনায় অবস্থিত চিলমারী উপজেলা। ২২৪.৯৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের চিলমারী উপজেলায় লোকসংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪৯২ জন। চরাঞ্চল হলেও শিক্ষিতের হার পুরুষ ৬০.১১, মহিলা ৩৯.৮৯ শতাংশ। কৃষি আবাদযোগ্য জমি ৯ হাজার ৮৩০ হেক্টর। চরের প্রায় অর্ধেক মানুষ মাছ ধরে বিক্রি করতে অভ্যস্ত হলেও এখানকার মানুষের প্রধান পেশা কৃষি। এখানে কৃষি পরিবার ১৭ হাজার ৭৪৬টি।
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শুধু বিষয়ভিত্তিকই না, অঞ্চলভিত্তিকও বটে। অর্থাৎ কৃষিই শুধু তার গবেষণার বিষয় নয়; এ অঞ্চলের অসংখ্য নদ-নদী, খাল-বিল তার মধ্যকার মাছ, শুশুক, কাছিম-পাখি, অনুজীব ও খনিজসম্পদ গবেষণার বিষয়। এমনকি শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস, অর্থনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থাও। কুড়িগ্রামের বৈচিত্র্যময় কৃষি মূলত চিলমারীকেন্দ্রিক। কুড়িগ্রামের ৯৮ শতাংশ চরই চিলমারীর ব্রহ্মপুত্রে। সেগুলো আবার চিলমারী, রৌমারী ও রাজীবপুরকেন্দ্রিক। গোটা দেশের মধ্যে সবচেয়ে সুস্বাদু বাদাম ‘চিলমারীর বাদাম’ বলে বিখ্যাত। ইস্টার্ন বেঙ্গল এন্ড আসাম ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ারস : রংপুর ১৯১১-তে বলা হচ্ছে, পুরো প্রদেশের সমতল অংশের মধ্যে এখানে সবচেয়ে বেশি বৈচিত্র্যময় মাছ পাওয়া যায়। কয়েক ধরনের কার্প মাছ পাওয়া যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রুই, কাতলা, মৃগেল, চান্দা, চেলা ও পুঁটি। মসৃণ ও তৈলাক্ত চামড়ার মাছের মধ্যে আইড়, বাগাড়, পাঙ্গাশ, বাচা, রিটা ও ট্যাংরা। এছাড়া পাওয়া যায় বেলে, পাবদা ও শিঙ্গি। বিখ্যাত ইলিশের একটা জাত মাঝেমধ্যে ব্রহ্মপুত্রে ধরা পড়ে। এখন পর্যন্ত সর্বাধিক মাছ চিলমারীতেই ধরা পড়ে। গোটা উত্তরবঙ্গে নদীর মাছের রাজধানী চিলমারীকে বলা হয়।
কুড়িগ্রাম জেলার অন্যান্য উপজেলার তুলনায় চিলমারীতে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলে তৈরি হবে উচ্চশিক্ষার পরিবেশ, বাড়বে উচ্চশিক্ষার আগ্রহ ও শিক্ষিতের হার, তৈরি হবে গণসচেতনতা, কমবে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া ও বাল্যবিয়ের হার। এক সময়ের আমদানি-রপ্তানি কেন্দ্রিক প্রাচীন বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত চিলমারী নদীবন্দর ফিরে পাবে প্রাণ। বাংলাদেশের সবচেয়ে দরিদ্রতম এই চিলমারীতে তৈরি হবে হাজারো কর্মসংস্থান। দুঃখ খুচবে হাজারো বাসন্তীর। ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় চিলমারীতে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হতে পারে উন্নয়নের সারথি। পিছিয়ে পড়া চিলমারীও হতে পারে উন্নয়নশীল বাংলাদেশের অংশ।
এছাড়া একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস এমন একটি জায়গায় হওয়া উচিত, যাতে রেল, নৌ, সড়কসহ সব ধরনের যোগাযোগের স্টেশনগুলো ক্যাম্পাসের চারদিকে থাকে। চিলমারীর পেদী খাওয়ার বিল এমন একটি উপযুক্ত জায়গা, যে বিলের উত্তর মাথায় বাসস্ট্যান্ড, দক্ষিণ মাথায় রমনা রেলস্টেশন এবং পূর্ব প্রান্ত ধরে ব্রহ্মপুত্র আর এক কিলোমিটার দক্ষিণে চিলমারী বন্দর। সহজে পারাপারের জন্য চিলমারী থেকে গাইবান্ধার হরিপুর উপজেলায় তৈরি হয়েছে ব্রিজ। ক্যাম্পাসের সুউচ্চ হলগুলোর ছাদে দাঁড়ালেই আসাম আর মেঘালয়ের পাহাড়শ্রেণির আহ্বান আর কোথায় পাওয়া যাবে? এ রকম যোগাযোগ ও ভূসৌন্দর্যের অধিকারী ক্যাম্পাস বাংলাদেশে আর কোথায়? এমনি তো আর হাজার বছর ধরে চিলমারী তীর্থ হয়ে ওঠেনি!

আলমগীর হোসেন
ত্রিশাল, ময়মনসিংহ।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়