জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : ১০ বছরেও ক্লাসরুম আইন অনুষদ

আগের সংবাদ

প্রতিযোগিতার বাজারে ডলার : দাম নিয়ন্ত্রণ থেকে পিছু হটল কেন্দ্রীয় ব্যাংক > টাকার মান কমল ৯০ পয়সা

পরের সংবাদ

গবেষণার তথ্য : কিশোর-কিশোরীদের সংকটে ফেলেছে করোনা মহামারি

প্রকাশিত: জুন ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : করোনাকালীন সংকটে দীর্ঘসময় স্কুল বন্ধ থাকায় কিশোর-কিশোরীদের জীবনে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন এসেছে। শিক্ষাগ্রহণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা, মনোসামাজিক টানাপড়েন, সহিংসতার ঝুঁকি বৃদ্ধি, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই কর্মক্ষেত্রে প্রবেশসহ বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাদের। এ সময়ে শিক্ষার ব্যাপারে অভিভাবক ও কিশোর-কিশোরীদের নেয়া সিদ্ধান্তও তাদের ভবিষ্যতের পথকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। শুধু তাই নয়, তাদের জীবিকা এবং প্রজনন স্বাস্থ্যও এর দ্বারা প্রভাবিত।
গতকাল বুধবার সকালে মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘অ্যাডোলেসেন্ট গার্লস ভালনারাবিলিটিজ এন্ড ট্রানজিশান ইন দ্য কনটেক্সট অফ কোভিড-১৯’ শীর্ষক এক গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন অনুষ্ঠানে এমন তথ্য উঠে এসেছে। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং জিআইজেডের রুল অল প্রোগ্রাম যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব গোলাম সারওয়ার। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্ন্যান্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি)-র নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব উম্মে কুলসুম, ব্রিটিশ ডেপুটি হাই কমিশনার জাভেদ প্যাটেল, জিআইজেডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. অ্যাঙ্গেলিকা ফ্লেডারমান, জার্মান দূতাবাসের উন্নয়ন সহযোগিতা বিভাগের উপপ্রধান ক্যারেন ব্লুম।
আলোচক ছিলেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক এম এম মাহমুদুল্লাহ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, ব্র্যাক শিক্ষা বিভাগের সাবেক পরিচালক ড. শফিকুল ইসলাম এবং টেরে দেস হোমসের ক্ল্যারিসা কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর ড. জিনিয়া আফরোজ।
অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত গবেষণার তথ্য বলছে, ৩৫ শতাংশ কিশোর-কিশোরী মহামারির আগে ৩ থেকে ৫ ঘণ্টা পড়াশোনা করত। মহামারির সময়ে কিশোর-কিশোরীদের এই হার ১৪ শতাংশে নেমে গেছে। যদিও কোভিড-১৯ এর কারণে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার খুব একটা বেশি নয় তবুও, অন্তত ৩৫ শতাংশ ঝরে পড়া শিক্ষার্থী জানিয়েছে, কোভিড-১৯ এর কারণে তারা লেখাপড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। অন্যদিকে ১৬ শতাংশ ঝরে পড়া কিশোর-কিশোরী জানিয়েছে, তারা পড়াশোনার খরচই আর চালাতে পারছে না।
মহামারির আগে ও পরে বাল্যবিয়ের হারে সামান্য ব্যবধান হয়েছে বলেও গবেষণায় তথ্য পাওয়া গেছে। গবেষণায় অংশ নেয়া প্রায় ৫০ শতাংশ পিতামাতা জানিয়েছেন, মেয়েকে বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তের পেছনে েেকাভিড-১৯’র প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা ছিল। মেয়েদের ও তাদের পরিবারের সম্মানকে সুরক্ষিত রাখতে দ্রুত বিয়ে দিতে হবে- কোভিডের সময়ে প্রতিনিয়ত এমন সামাজিক চাপের মুখে ছিল কিছু পরিবার। ফলে সেসব পরিবারের পিতামাতারা তাদের মেয়েদের বিয়ের বয়স হওয়ার আগেই বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
আয়োজকরা জানিয়েছে, মিশ্র পদ্ধতির এই গবেষণাটি করা হয়েছিল ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত। কোভিড-১৯’র সংকট কিশোর-কিশোরীদের জীবনে কীভাবে পরিবর্তন এনেছে তা বিশ্লেষণ করা ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে এদেশের নারী ও কিশোরীদের অবস্থা কেমন, বিশ্লেষণের মাধ্যমে তা বোঝাই ছিল গবেষণার লক্ষ্য।
সমীক্ষা অনুসারে, বাল্যবিয়ে এবং স্কুল ছেড়ে দেয়ার পেছনে দারিদ্র্যের চেয়ে নিরাপত্তা এবং পারিবারিক সম্মান হারানোর ঝুঁকি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। স্কুল বন্ধের প্রেক্ষাপটে ছেলেদের কাজে পাঠাতে অভিভাবকরা সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিবেচনা এবং কেবল দারিদ্র্যই গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি গোলাম সারওয়ার বলেন, আমাদের নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে সমস্যা থেকে উত্তরণ এবং একই সঙ্গে মানুষের সক্ষমতা ও সুস্থতাকে সামগ্রিকভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। আরও স্থিতিস্থাপক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা প্রণয়নে সরকার, উন্নয়ন অংশীদার এবং সুশীল সমাজ একসঙ্গে কাজ করতে পারে। সেই ব্যবস্থাই আমাদের লিঙ্গ ও আর্থসামাজিক অবস্থা নির্বিশেষে ন্যায়বিচার প্রাপ্তিকে একটি মৌল মানবাধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
উম্মে কুলসুম বলেন, সরকার ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় কোভিড-১৯ থেকে পুনরুদ্ধারের কৌশল এবং লৈঙ্গিক সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন কাঠামোকে চিহ্নিত করেছে। কোভিড থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে লৈঙ্গিক সমতা এবং নারী ক্ষমতায়ন কাঠামোকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া দরকার।
জাভেদ প্যাটেল বলেন, গবেষণার মধ্য দিয়ে পরিষ্কার বোঝা যায় মহামারি কীভাবে কিশোর-কিশোরীদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে। কোভিড পরবর্তী সময়ে তাদের স্কুলে ফিরিয়ে নেয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে। বিশেষ করে কিশোরীদের শিক্ষায় ফিরিয়ে নেয়াটা হয়তো আরো অনিশ্চিত হবে।
তিনি বলেন, ইউকে সরকার সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করেছে। নারী ও কিশোরীরা তাদের সফলতার পথটি যাতে স্বাধীনভাবে বেছে নিতে পারে সে ব্যাপারে এই ধরনের গবেষণা আমাদের অনেক সহায়তা করবে।
ক্যারেন ব্লুম বলেন, এ বছর বাংলাদেশ-জার্মান অংশীদারিত্ব পঞ্চাশ বছরে পদার্পণ করল। আজকের গবেষণার মতো অন্যান্য গবেষণাগুলো উন্নয়ন অংশীদারিত্বের কেন্দ্রবিন্দু। উন্নয়ন উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হচ্ছে প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়ার জন্য সুযোগ তৈরি করা। এই গবেষণার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, কোভিডের কারণে কিশোর-কিশোরীদের সম্ভাবনা এবং সুযোগ কীভাবে সীমাবদ্ধ হয়েছে।
ড. অ্যাঙ্গেলিকা ফ্লেডারমান বলেন, কিশোর-কিশোরীদের ওপর করা গবেষণা আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ায় একটি অন্যতম ভূমিকা পালন করে, যেহেতু বাংলাদেশের জনগণের ২১ শতাংশই তরুণ। অর্থাৎ, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ তরুণ জনগোষ্ঠীর হাতে। শিশুদের জন্য সময়মতো এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে সেটা তাদের জীবন এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণ করবে।
ড. ইমরান মতিন বলেন, কোভিডের সময়ে কিশোর-কিশোরীদের ব্যাপারে খুব একটা গবেষণা এবং নীতিনির্ধারণী আলোচনা হয়নি। অর্থনৈতিক কারণ ও স্কুল বন্ধ থাকা- এই দুইয়ে মিলে তাদের জন্য আগে থেকেই চলমান ঝুঁকি বৃদ্ধি এবং নতুন ঝুঁকির ক্ষেত্র তৈরি করেছে। আমাদের গবেষণায় আমরা এটাই দেখার চেষ্টা করেছি এবং নীতিনির্ধারণে ও কর্মসূচি প্রণয়নে কীভাবে ব্যাপারটিকে তুলে ধরা যায়। বিশেষ করে অর্থনৈতিক সমস্যা পর্যালোচনা, শিক্ষার মানের ওপর গুরুত্বারোপ করা এবং সামাজিকীকরণের শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে স্কুলকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমাদের নীতিগত অগ্রাধিকার দেয়ার চেষ্টা করা।
গবেষণাটি জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি ফর ইকোনমিক কো-অপারেশান এন্ড ডেভেলপমেন্ট (বিএমজেড) এবং ইউকে ফরেন, কমনওয়েলথ এন্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় পরিচালিত হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়