জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : ১০ বছরেও ক্লাসরুম আইন অনুষদ

আগের সংবাদ

প্রতিযোগিতার বাজারে ডলার : দাম নিয়ন্ত্রণ থেকে পিছু হটল কেন্দ্রীয় ব্যাংক > টাকার মান কমল ৯০ পয়সা

পরের সংবাদ

ইভিএমেই হতে পারে নিরাপদ ভোট

প্রকাশিত: জুন ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

২০২৩ সালে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং ইতোমধ্যে রাজনৈতিক মাঠের চিত্র বদলাতে শুরু করেছে। নবনির্বাচন কমিশনের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু কোন পদ্ধতিতে সেটা হবে- ইভিএম নাকি প্রিন্ট ব্যালট পেপারে সেটাই এখন গুরুত্বপূূর্ণ আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। ইভিএমে ভোট নেয়ার বিষয়ে সরকারি দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ইঙ্গিত রয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন থেকে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসেনি। বিভিন্ন কারণেই ২০২৩ সালের নির্বাচন রাজনৈতিক দল তথা সমগ্র জাতির কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং একই সঙ্গে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়েও জনগণের আগ্রহ আছে। ইভিএমের খুঁটিনাটি বিষয়ে ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। ইভিএম বিশেষজ্ঞরা ভোট নেয়ার ক্ষেত্রে এই মেশিনটির প্রতি আশ্বস্ত হয়েছেন এবং সবাইকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন। ইভিএম যতই নিখুঁত ভোট করুক সেটার প্রতি যদি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্তা না থাকে তবে সেটা কোনো কার্যকর পদ্ধতিতে পরিণত হতে পারবে না। ইভিএমে ভোট হলে সময় সাশ্রয় হবে, জনবল কম লাগবে, কাগজের ব্যবহার কমবে এবং অনেকটা ঝামেলামুক্ত ভোটগ্রহণ সম্ভব হবে। কিন্তু যারা ভোটে দাঁড়াবেন তাদেরই যদি এই মেশিনের প্রতি আস্থা না থাকে তবে এর মূল্যটা কি? স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে ইভিএমের ব্যবহার করা হচ্ছে এবং ভোট নেয়া হচ্ছে। কিন্তু বিএনপিসহ বিরোধী জোট বরাবরই এর বিরোধিতা করে আসছে। বিএনপি স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে অংশ নেয়নি। তাদের সাফ কথা এই সরকারের অধীনে তারা কোনো নির্বাচনে যাবে না। নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না। বিএনপি স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে অংশ নেয়নি। আর এতে মনে হতে পারে স্থানীয় নির্বাচনের মতোই বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে এই সরকারের অধীনে যাবে না। কিন্তু রাজনৈতিক অস্তিত্ব বলে একটি কথা আছে। স্থানীয় আর জাতীয় নির্বাচন এক নয়। জাতীয় নির্বাচন রাজনৈতিক দলের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত। দলগুলো ইচ্ছা করলেই এখান থেকে সরে আসতে পারে না। তাই বিরোধী দলগুলোর অবস্থান বুঝার জন্য আরো অপেক্ষা করতে হবে। রাজনৈতিক মোড় কখন কোন দিকে নেয় সেটা আগেই অনুমান করা কঠিন। যা হোক বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর জন্য আপাতত দুটি চ্যালেঞ্জ দেখা যাচ্ছে। একটি হলো নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করা এবং অন্যটি হলো ইভিএমে ভোট না করা। এই দুটি দাবি আদায়ে বিরোধী শিবিরগুলো কতটা সক্ষম তা সময়, পরিস্থিতি, জনসমর্থন এবং তাদের রাজনৈতিক দক্ষতাই বলে দেবে। আমার প্রশ্ন হলো রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থাশীল করার দায়িত্ব কার? এই দায়িত্ব হলো নির্বাচন কমিশনের। কেননা নির্বাচন কমিশন শপথের মাধ্যমে এই দায়িত্ব নিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিয়ে নির্বাচন করা কমিশনের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব। নির্বাচন কমিশন অবশ্য ইভিএম বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসতে চায়। তাদের মতামত নিয়ে সামনে আগাতে চায়। কিন্তু কমিশনের জন্য কাজটি কি এতটাই সোজা? রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থার যে তীব্র সংকট সেটা মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। যা হোক সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন করার প্রধান দায়িত্ব কমিশনের। ইসির দায়িত্ব হচ্ছে এই মেশিন সম্পর্কে জনগণকে স্বচ্ছ ধারণা দেয়া। আসলে সদিচ্ছা থাকলে এই মেশিনটিরও সর্বোচ্চ ভালো ব্যবহার করা সম্ভব। কিন্তু আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আস্থার সংকট। আর এই আস্থার সংকট একদিনে তৈরি হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর নানাবিধ কর্মকাণ্ড এরূপ আস্থাহীনতার জন্য দায়ী। ধরে নিলাম ইসি রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিতে সক্ষম হলো। সেক্ষেত্রে ৩০০ আসনে নির্বাচন করতে কমিশনের তিন লাখ মেশিন প্রয়োজন হবে। কিন্তু‘ কমিশনের কাছে এর অর্ধেকটা রয়েছে। এই সংখ্যা পূর্ণ করতে হলে কমিশনের আরো ৮ হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হবে। খরচ বাড়বে সেটা বড় কথা না, বড় কথা হলো কমিশন নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অবাধ করতে পারবে কিনা? জনমুখে গুঞ্জন রয়েছে যে ২০১৮ সালের মতো আগামী নির্বাচন হবে না। আগামী নির্বাচন ভিন্ন ধরনের হবে। নির্বাচন নিরপেক্ষ করার জন্য বহুমাত্রিক চাপ রয়েছে। নবকমিশনকে সেসব চাপ সামাল দিয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে হবে। নবকমিশনের সেই সক্ষমতা কতটুকু তা জানার সুযোগ এখনো জনগণের হয়নি। তবে কমিশন প্রধানের বিভিন্ন বক্তব্য জনমনে আশার সঞ্চার করে। নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার কথা বহুবার বলা হয়েছে। কিন্তু সেটা এখনো আলোর মুখ পুরোপুরি দেখেনি। কমিশনের একার পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা অসম্ভব। এক্ষেত্রে নির্বাচনকালীন সরকারের একটি বড় দায় রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতিবাচক মনোভাব কমিশনের এগিয়ে যাওয়ার পথকে অমসৃণ করে তোলে।

মাজহার মান্নান
কবি ও লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়