কাগজ ডেস্ক : ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শিল্প নগরী সেভেরোদোনেৎস্কের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে রুশ বাহিনীর তীব্র আক্রমণের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, মস্কোকে যুদ্ধ শেষ করে আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য করতে তারা ইউক্রেনকে উন্নত রকেট বা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ইউক্রেন যেন আরো নিখুঁতভাবে মূল লক্ষ্যগুলোয় আঘাত হানতে পারে, সেজন্য ওয়াশিংটন দেশটিকে আরো উন্নত রকেট সিস্টেম ব্যবস্থাপনা দিতে যাচ্ছে। নিউইয়র্ক টাইমসে এক নিবন্ধে বাইডেন জানান, ইউক্রেনকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাঠাতে যাচ্ছি আমরা, যেন তারা যুদ্ধের ময়দানে লড়তে পারে এবং আলোচনার টেবিলে সম্ভাব্য শক্তিশালী অবস্থানে থাকতে পারে। খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বাইডেন প্রশাসনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ইউক্রেনকে যেসব অস্ত্র দেয়া হবে, তার মধ্যে আছে এম১৪২ হাইমোবিলিটি রকেট সিস্টেম (এইচআইএমএআরএস); যা রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকাতে ‘খুবই কার্যকর’ হবে বলে মাসখানেক আগে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী প্রধান মন্তব্য করেছিলেন। এই ধরনের অস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে নামিয়ে দিতে পারে- এ উদ্বেগের ব্যাপারে মার্কিন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলায় ব্যবহৃত হবে না বলে ইউক্রেন আশ্বাস দিয়েছে।
ইউক্রেনে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দেয়া নিয়ে মার্কিন সিদ্ধান্ত জানানোর কিছুক্ষণ পরই রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে ইন্টারফ্যাক্স জানায়, তাদের পারমাণবিক বাহিনী মস্কোর উত্তর-পূর্বে ইভানভো প্রদেশে মহড়া চালাচ্ছে। এ মহড়ায় হাজারখানেক সৈন্য এবং জার আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের লঞ্চারহ শতাধিক যান অংশ নিচ্ছে, বলে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ইন্টারফ্যাক্সের ওই প্রতিবেদনে অবশ্য ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন অস্ত্র সরবরাহের কোনো উল্লেখ ছিল না। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দনবাস অঞ্চল দখলে রাশিয়ার হামলার ধার বাড়ার পর কিয়েভকে এ দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দেয়ার কথা জানাল ওয়াশিংটন। রাশিয়ার বাহিনী এখন পূর্বাঞ্চলীয় শিল্প নগরী সেভেরোদোনেৎস্কের বেশির ভাগ অংশেরই নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন আঞ্চলিক গভর্নর সেরহি গাইদাই।
গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে এবং আবাসিক সম্পত্তির ৬০ শতাংশের এমন ক্ষতি হয়েছে, যা মেরামতের বাইরে, বলেছেন তিনি। রাশিয়ার টানা গোলাবর্ষণের কারণে শহরটিতে ত্রাণ পাঠানো কিংবা লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া যাচ্ছে না।

সেভেরোদোনেৎস্ক ও লিসিচানস্ক দখলে নিতে পারলে তা রাশিয়াকে লুহানস্কের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এনে দেবে। মস্কোপন্থি এক বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা বলেছেন, শহরের ‘স্থাপনাগুলো টিকিয়ে রাখতে’ এবং রাসায়নিক কারখানাগুলোর ব্যাপারে সাবধানতার কারণেই তারা সক্ষমতার চেয়েও ধীর গতিতে অগ্রসর হচ্ছেন। মস্কোপন্থি লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকের নেতা লিওনিদ পাসেচনিক রুশ বার্তা সংস্থা তাসকে বলেন, আমরা বলতে পারি, সেভেরোদোনেৎস্কের এক-তৃতীয়াংশ এই মধ্যে আমাদের কব্জায় এসে গেছে। পাসেচেনিকের এ মন্তব্যের পর ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানান, সেভেরোদোনেৎস্ক থেকে তাদের বাহিনী আরো খানিকটা পিছু হটেছে এবং শহরটির বেশির ভাগ অংশই ‘দখলদার বাহিনীর’ হাতে চলে গেছে।