জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : ১০ বছরেও ক্লাসরুম আইন অনুষদ

আগের সংবাদ

প্রতিযোগিতার বাজারে ডলার : দাম নিয়ন্ত্রণ থেকে পিছু হটল কেন্দ্রীয় ব্যাংক > টাকার মান কমল ৯০ পয়সা

পরের সংবাদ

আশাহত নীলফামারীবাসী : চিলাহাটি-হলদিবাড়ি পথে যাত্রীবাহী ট্রেন ৫৭ বছর পর

প্রকাশিত: জুন ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দীর্ঘ ৫৭ বছর পর চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলরুটে নতুন স্পন্দন তুলে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে এলো যাত্রীবাহী ট্রেন ‘মিতালী এক্সপ্রেস’। গতকাল বুধবার দিল্লীতে ভারতের রেলওয়ে বোর্ডের সম্মেলন কক্ষ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নিউ জলপাইগুড়ি জংশনে মিতালী এক্সপ্রেসের যাত্রার উদ্বোধন করেন ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ও বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহাম্মদ ইমরান এবং উভয় দেশের রেল মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, চিলাহাটিতে মিতালী এক্সপ্রেসের টিকেট কাউন্টার না থাকায় আশাহত হয়েছেন নীলফামারীবাসী। উত্তরাঞ্চলের মানুষের সুবিধার্থে তারা চিলাহাটিতে একটি টিকেট কাউন্টার স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।
দুই দেশের রেলমন্ত্রীরা পতাকা নেড়ে সংকেত দিলে হুইসেল বাজিয়ে চলতে শুরু করে সুসজ্জিত মিতালী এক্সপ্রেস। এরপর বেলা ২টা ৫ মিনিটে চিলাহাটি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ট্রেনটি। এর কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই ট্রেনটি দেখতে উৎসুক জনতার ভিড় জমে চিলাহাটি স্টেশন এলাকায়। চিলাহাটি স্টেশনে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে মিতালী এক্সপ্রেসকে ভারত ও বাংলাদেশের পতাকা নেড়ে স্বাগত জানান রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ট্রেনটি প্রায় ৩০ মিনিট যাত্রাবিরতি করে চিলাহাটিতে। পরে ইঞ্জিন পরিবর্তন করে স্টেশন ত্যাগ করে মিতালী এক্সপ্রেস।
ব্রিটিশ আমল থেকেই চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর তা বন্ধ করে দেয়া হয়। ২০২১ সালের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরে দুই দেশের মধ্যে তৃতীয় আন্তঃদেশীয় ট্রেন মিতালী এক্সপ্রেসের উদ্বোধন করা হয়। করোনাভাইরাস মহামারীর ধাক্কা পেরিয়ে ১৪ মাসের মাথায় তা চালু হল। মিতালী এক্সপ্রেসের পতাকা ওড়ানোর অনুষ্ঠানে ভারতের রেলমন্ত্রী বলেন, একীভূত ঐতিহ্য, একীভূত বর্তমান ও একীভূত ভবিষ্যতের উপর গড়ে উঠেছে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক। সর্বোচ্চ থেকে সর্বনিম্ন- সব পর্যায়ে দুদেশের সম্পর্ক বর্তমানে বেশ বেগবান। এই সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিতে এবং এই বন্ধনকে আরও জোরালো করার ক্ষেত্রে মিতালী এক্সপ্রেস গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকের ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক রক্তের অক্ষরে লেখা। বর্তমানে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অনেক বেশি গভীর হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ খাতগুলোর মধ্যে রেলওয়ে তালিকার শুরুতেই ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, রেললাইন, রেলব্রিজ ও রেলের বিভিন্ন কারখানা সব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তিনি বলেন, ভারতের সহযোগিতায় সেসময় আমরা রেলব্যবস্থাকে পুনর্গঠন করেছিলাম। এ সময় রেলখাতে ভারতের জোরালো সহযোগিতা চান তিনি।
আশাহত নীলফামারীবাসী : পাঁচ দশকেরও বেশি সময় পর চিলাহাটি হয়ে ভারতের সঙ্গে আন্তঃদেশীয় যাত্রীবাহী ট্রেন ‘মিতালী এক্সপ্রেস’ চালু হওয়ায় নীলফামারীবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হলো। কিন্তু স্থানীয়ভাবে টিকিট কেটে ট্রেনে চড়ার সুযোগ না মেলায় তারা আশাহত ও হতবাক।
রেলওয়ে জানিয়েছে, চিলাহাটিতে এই ট্রেন থামলেও সেখান থেকে কোনো যাত্রী উঠতে পারবেন না। তাদেরকে ঢাকা থেকেই ট্রেনে চড়তে হবে। আর টিকিট কাটতে হবে ঢাকা বা চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে। ট্রেনের আসন বিন্যাসও হবে সেখান থেকেই।
স্থানীয় বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি চিলাহাটিতে যেন ট্রেনটি থামানো হয়। সেখান থেকে এ অঞ্চলের মানুষ যেন সহজেই ভারত যেতে পারেন। চিলাহাটি থেকে যাত্রী ওঠানামা করা হলে এ এলাকার মানুষকে আর ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।’
রতন রায় নামের আরেক স্থানীয় অধিবাসী বলেন, ‘মিতালী এক্সপ্রেস’ চলাচল শুরু আমাদের জন্য সুখবর হলেও বর্তমানে হতাশা বিরাজ করছে। কারণ আমরা চিলাহাটি থেকে ট্রেনে চড়ে ভারত যেতে পারবো না। ভারত যেতে হলে আমাদের কয়েকশ’ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে গিয়ে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়তে হবে। ডোমার শহরের বাসিন্দা আব্দুল্লাহ ইবনে খালিদের দাবি, এ অঞ্চলের মানুষের কথা মাথায় রেখে চিলাহাটিতে ইমিগ্রেশন চালু করে যাত্রী উঠানো হোক। তাহলে এ এলাকার মানুষের সময় ও খরচ দুটোই বাঁচবে। চিলাহাটির বাসিন্দা লিজন বলেন, এই ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় আমরা খুশি। আপাতত চিলাহাটি থেকে ট্রেনে যাত্রী ওঠানো সম্ভব না হলেও আশা করছি একসময় আমাদের সেই স্বপ্নও পূরণ হবে।
প্রসঙ্গত, মিতালী এক্সপ্রেসের পরিচালন সময় ৯ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট। ট্রেনটি নিউ জলপাইগুড়ি ছাড়বে সকাল ১১টা ৪৫ মিনিট (আইএসটি), ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে পৌঁছাবে রাত ১০টা ৩০ মিনিট (বিএসটি)। অনুরূপভাবে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে ছাড়বে রাত ৯টা ৫৯ মিনিটে এবং নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছাবে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে (আইএসটি)। ট্রেনটি সপ্তাহে দুই দিন চলাচল করবে। ভারত থেকে রবি ও বুধবার ছেড়ে আসবে এবং বাংলাদেশ থেকে সোম ও বৃহস্পতিবার ছেড়ে যাবে। এই ট্রেনের ভাড়া এসি বার্থ পাঁচ হাজার ২৫৫ টাকা, এসি সিট তিন হাজার ৪২০ টাকা এবং এসি চেয়ার দুই হাজার ৭৮০ টাকা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়