নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের গণবিজ্ঞপ্তি

আগের সংবাদ

অনুমোদনহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার : অভিযানে বন্ধ অনেক প্রতিষ্ঠান

পরের সংবাদ

ভরা মৌসুমেও চালে অস্থিরতা : খুচরা বাজারে মোটা চাল ৫০ টাকা, পিছিয়ে নেই সরু চালও > কুষ্টিয়া ও নওগাঁয় বাড়ছে দাম

প্রকাশিত: মে ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আলী ইব্রাহিম : অতিপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যে সিন্ডিকেটবাজী এখন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আজ তেল তো কাল চিনি, পরশু আরেক মসলা- এমনি চলছে। ভোজ্যতেল নিয়ে তেলেসমাতির রেশ কাটতে না কাটতেই এবার ভরা মৌসুমে চালের বাজারে শুরু হয়েছে অস্থিরতা। বোরো মৌসুমে উৎপাদিত চাল দিয়ে দেশের মোট চাহিদার ৫৪ শতাংশ মেটানো হয়। সেই বোরো ধানের নতুন চাল বাজারে আসতে শুরু করেছে। এ সময় দাম কমার পরিবর্তে আরো বেড়েছে। মাত্র পনের দিনের ব্যবধানে গরিবের চাল বলে খ্যাত মোটা চালের দাম খুচরা বাজারে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শুধু মোটা চাল নয়; সরু চাল থেকে শুরু করে সবধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি ৫-১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে দেশের চালের জন্য বিখ্যাত কুষ্টিয়া ও নওগাঁয় চালের দাম বেড়েই চলেছে। এসব বাজারে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। গত সপ্তাহেও নওগাঁ এবং কুষ্টিয়ার মোকামে চালের দাম কেজিপ্রতি ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে। পনের দিন আগে ৩৮-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া মোটা চাল এখন বাজারে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চালের দাম বাড়ার বিষয়ে কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ীরা কথা বললেও নওগাঁর ব্যবসায়ীরা খাদ্যমন্ত্রীর ভয়ে কথা বলতে অনাগ্রহী। তবে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ঠিকমতো চাল সংগ্রহ করতে না পারায় সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে বড় ধরনের ফারাক তৈরি হয়েছে। এছাড়া প্রাণ, এসিআই, মেঘনাসহ কয়েকটি শিল্পগ্রুপ চাল সংগ্রহ করায় চালের সংকট তৈরি হয়েছে বলেও মনে করেন অনেক ব্যবসায়ী। গত এক সপ্তাহে পাইকারি বাজারে সব ধরনের চালের দাম ৫০ কেজির বস্তায় ১৫০ টাকা থেকে প্রায় ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বড় বড় শিল্পগ্রুপ ধান কিনে মজুত করছে। আবার ছোট ও মাঝারি মজুতদাররা ধান মজুত করছেন। সঙ্গে আছেন মিল মালিকরাও। এতে চালের

বাজারে অস্থিরতা আরো প্রকট আকার ধারণ করছে। এর প্রমাণ মিলেছে সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির হিসাবেও। খুচরা বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম কেজিতে তিন টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
এসব বিষয় নিয়ে কথা হয় বগুড়া চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শাহ মো. আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, সরবরাহ ও চাহিদায় বড় ধরনের ফারাক তৈরি হয়েছে। এতে বাড়ছে চালের দাম। এবার ফলন হলেও সঠিক সময়ে ধান সংগ্রহ না হওয়াও এর একটি অন্যতম কারণ। তবে চালের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে বড় বড় কারবারিদের কারণে। এই ব্যবসায়ী নেতা আরো বলেন, পনের দিন আগে যে চাল ৩৮-৪০ টাকায় বিক্রি করেছি; এই চাল এখন ৫০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কৃষক ও ব্যবসায়ীর কাছে প্রায় সোয়া কোটি টন চাল রয়েছে। হাওরে আগাম পানি এসে যাওয়া ও অতিবৃষ্টির কারণে ৮০ হাজার টন চাল নষ্ট হয়েছে। কিন্তু এরপরও এবার বোরোতে ২ কোটি ৭ লাখ টনের ওপরে চাল উৎপাদিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা কনসাস কনজুমার সোসাইটির (সিসিএস) নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ ভোরের কাগজকে বলেন, দেশে মুক্তবাজার অর্থনীতির নামে সিন্ডিকেট বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এই সময়ে তাদের তৎপরতা সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ার পিছনে সিন্ডিকেটকে দায়ী করেন তিনি। পলাশ মাহমুদ আরো বলেন, সরকারের উচিত মনিটরিং বাড়িয়ে এসব সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়া। না হলে সামনে সংকট আরো ঘনীভূত হবে।
রাজধানীর পাইকারি বাজারে নাজিরশাইল ৫০ কেজির বস্তা গত সপ্তাহে ৩১০০ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু গতকাল ১৫০ টাকা বেড়ে ৩২৫০ টাকা বস্তা বিক্রি হয়েছে। আর ভালো মানের মিনিকেট ৫০ কেজির বস্তা গত সপ্তাহে ২৮০০ থেকে ৩০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গতকাল ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়ে ২৯৫০ থেকে ৩০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ব্রি-২৮ চালের ৫০ কেজির বস্তা ২০০ টাকা বেড়ে ২৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
যাত্রাবাড়ীর মায়ের দোয়া স্টোরের স্বত্বাধিকারি মো. আব্দুল কাইয়ুম এ প্রতিবেদককে বলেন, পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় মোটা চালের কেজি ৫০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। দুসপ্তাহ আগে কত বিক্রি করেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে এই ব্যবসায়ী বলেন, পনের দিন আগেও ৪০-৪২ টাকা বিক্রি করেছি। বিআর-২৮ বিক্রি করেছি ৪৮ টাকা, এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ৫৩-৫৫ টাকা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়