সোনালী ব্যাংক (ইউকে) লিমিটেড : বড় মুনাফা এনেছিলেন আতাউর রহমান প্রধান

আগের সংবাদ

ভরা মৌসুমেও চালে অস্থিরতা : খুচরা বাজারে মোটা চাল ৫০ টাকা, পিছিয়ে নেই সরু চালও > কুষ্টিয়া ও নওগাঁয় বাড়ছে দাম

পরের সংবাদ

ছাত্ররাজনীতি হঠাৎ উত্তপ্ত কেন > জাতীয় রাজনীতির ষড়যন্ত্রের অংশ : ক্ষমতাসীন দল > নির্বাচনের পথ পরিষ্কার করতেই এই হামলা : বিএনপি

প্রকাশিত: মে ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুহাম্মদ রুহুল আমিন ও রাফিউজ্জামান লাবীব (ঢাবি) : হঠাৎ অশান্ত শিক্ষাঙ্গন। উত্তাপ ছড়াচ্ছে ছাত্র রাজনীতি। এর আঁচ ছড়িয়ে পড়ছে দেশের নানা প্রান্তে। প্রায় এক যুগ পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাত্রীপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল। গত কয়কদিন ধরে প্রতিদিনই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটছে সংগঠন দুটির নেতাকর্মীদের মধ্যে। সংঘর্ষে দুই পক্ষের আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক। পরিস্থিতি সামাল দিতে ৪০০ জনকে আসামি করে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেছে ঢাবি প্রশাসন। এরপরও গতকাল বৃহস্পতিবার কয়েকদফা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে গিয়ে ছাত্রলীগের বাঁধার মুখে পড়ে ছাত্রদল। এভাবে হঠাৎ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশ কিছুটা বিঘিœত হচ্ছে। যা ভাবিয়ে তুলেছে রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদেরও। ক্ষমতাসীন দল বলছে, নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় রাজনীতির ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ছাত্রদলকে ক্যাম্পাসে ঢোকানো হচ্ছে পরিবেশ অস্থির করতে। আর বিএনপি বলছে, আগামী নির্বাচনের পথ পরিস্কার করতে ছাত্রদলের ওপর হামলা করা হচ্ছে।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, সামনে জাতীয় নির্বাচনের মওসুম। এ সময়ে রাজনীতির যে স্বাভাবিক উত্তাপ, ছাত্র রাজনীতিতেও তার প্রতিফলন ঘটছে। এই পরিস্থিতিতে দুটি প্রধান ছাত্র সংগঠনেরই নিজস্ব এজেন্ডা আছে। স্বাভাবিকবাবেই ছাত্রদল চাইবে, ক্যাম্পাসে অবস্থান ধরে রেখে দলীয় নীতি অনুযায়ী সরকারবিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা করতে চায় তারা। অন্যদিকে, দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে আধিপত্য করে আসা ছাত্রলীগও চাইবে না কোনোভাবেই তাদের একাধিপত্য খর্ব হোক। ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে ব্যবহার করে সরকারবিরোধী আন্দোলন করবে- এটা তারা হতে দিতে চাইবে না। ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের এই সংঘাত আসলে জাতীয় রাজনীতিরই অংশ- যা আগামীতে আরো তীব্র হবে- এমনই আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।
আড়াই বছর পূর্বে ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর পর ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে

ছাত্রদল। এরপর থেকে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে সংগঠনটি। আড়াই বছরে উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। মধুর কেন্টিনেও যাতায়াত ছিল ছাত্রদলের। গত মাসে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয়সহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মহানগরীর নতুন কমিটি ঘোষণা হয়। ১৮ মে আওয়ামী লীগের এক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি পদ্মা সেতু তৈরির বিরোধীতার কথা মনে করিয়ে দিয়ে খালেদা জিয়াকে পদ্মা নদীতে ‘টুস করে’ ফেলে দেয়ার কথা বলেন। এর প্রতিবাদে ২২ মে ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল। এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রীকেও কটাক্ষ করে বক্তব্য দেন। এর ফলে ক্ষুব্ধ হয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তারা ছাত্রদলকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় উত্তপ্ত হয়ে উঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস- যার রেশ ছড়িয়ে পরে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও।
এর পর থেকে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের হামলা, ধাওয়া পালটা ধাওয়া যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সরব উপস্থিতিও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না। প্রশাসন বলছে পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা নষ্ট, সিনেট শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা, জাতীয় সম্পদ নষ্ট করা হচ্ছে। এসব অভিযোগে সংঘর্ষে জড়িত অজ্ঞাতনামা ৪০০ জনকে আসামী করে মামলা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
২৫ মে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে আসতে চাইলেও তা পারেনি। গতকাল বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট এলাকা থেকে ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা চালালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রতিরোধ গড়ে তুলে। এ সময় দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে দুই পক্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালীন ছাত্রদল কর্মী ভেবে ছাত্রলীগ কর্মীরা একটি অনলাইন পোর্টালের এক সাংবাদিককে মারধর ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সময় সন্দেহভাজন চিহ্নিত করে দুজনকে হেফাজতে নিয়েছে শাহবাগ থানা পুলিশ।
তবে হঠাৎ করেই কেন একটি বক্তব্যের অজুহাতে ক্যাম্পাস অশান্ত? এর পেছনে কী রয়েছে? এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ভোরের কাগজকে বলেন, ডাকসু নির্বাচনের পর থেকেই ছাত্রদল নিয়মিত ক্যাম্পাসে যাতায়াত করছে। তারা তাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালাচ্ছে। তাদেরকে কোনো বাঁধা দেয়া হয় না। কিন্তু ছাত্রদলের নতুন কমিটি হওয়ার পর থেকেই তারা ক্যাম্পাসে একটা অস্থির পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। তাদের কর্মকান্ডগুলো খুবই প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের এসব কর্মকান্ডে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভালভাবে নেয়নি। তারাই তাদের প্রতিহত করেছে। ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নিজের হাতে অস্ত্র (পিস্তল) নিয়ে ক্যাম্পাসে মিছিল করেছে। কোনো ছাত্র সংগঠনের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ্যে হাতে অস্ত্র নিয়ে মিছিল করেছে- এরকম নজীর এই ক্যাম্পাসে নেই। আমরা ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্ট হতে দেব না। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, সন্ত্রাসীদের গডফাডার তারেক জিয়ার সরাসরি নির্দেশে ছাত্রদল ক্যাম্পাসগুলোতে লাশের রাজনীতি করার প্রবণতা দেখাচ্ছে। যার ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে ছাত্ররাজনীতি অস্থিতিশীল হচ্ছে। দেশের জনগণের প্রত্যাশাগুলো যখন পূরণের পথে; তখন ক্যাম্পাসগুলোর পরিবেশ গরম করে ছাত্রদল ফায়দা লুটতে চায়। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের উপস্থিতি মানেই সন্ত্রাসের উপস্থিতি। ছাত্রদল ঢাবি ক্যাম্পাসকে বেছে নিয়েছে কারণ এই ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল তৈরি করে তারা দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ যেকোনো মূল্যেই শিক্ষাঙ্গণকে সন্ত্রাসমুক্ত রাখবে। যারা ক্যাম্পাসে লাশের রাজনীতি কায়েম করতে চায়, ক্যাম্পাসে ‘কিলিং মিশন’ নিয়ে আসে তাদেরকে আমরা ক্যাম্পাস থেকে স্থায়ীভাবে প্রত্যাখ্যান করবো।
এ বিষয়ে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব আমান উল্লাহ আমান ছাত্রলীগের পরমতসহিষ্ণুতা নেই উল্লেখ করে বলেন, ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কথা বললেই তারা সেটাকে নিতে পারেনা। যার কারণে ছাত্ররাজনীতি আজ উত্তপ্ত হয়ে গেছে। ছাত্রদল গত আড়াই বছরে ক্যাম্পাসে এসে শিক্ষার্থীবান্ধব যেসব কর্মসূচি নিয়েছে, এটা দেখে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ছাত্রদলে আসার প্রবণতা বেড়েছে। এই বিষয়টি দেখে ভয় পেয়ে ছাত্রলীগ মারমুখো অবস্থানে থেকে ছাত্রদলকে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করার লক্ষে পরিবেশ উত্তপ্ত করছে। এখন পর্যন্ত তারা আমাদের ১১৪ জন কর্মীকে আহত করেছে।
ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড এ কে এম গোলাম রব্বানী ভোরের কাগজকে বলেন, করোনায় আমাদের শিক্ষার্থীদের বড় রকমের ক্ষতি হয়েছে। করোনাকালীন ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দিনরাত কাজ করে চলছে। সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। যখন ক্যাম্পাসে একইসঙ্গে শান্তি ও অনেকগুলো শিক্ষার্থীবান্ধব কাজ বাস্তবায়িত হচ্ছে; তখন একটি মহল ক্যাম্পাসকে উত্তাল করার চেষ্টা করছে। কেউ লাঠিসোটা নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে নির্দেশনা দেয়া আছে যেন তাৎক্ষণিক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। কেউ যদি ক্যাম্পাসে বিশ্বিবদ্যালয়ের আইন ভেঙ্গে অরাজকতা করতে চায়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী যতটুকু কঠোর হওয়া যায়, প্রশাসন ঠিক ততটুকুই কঠোর হবে।
যা বলছেন সাবেক ছাত্র নেতারা : ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় আছে। এটাকে বিনষ্ট করতে চায় বিএনপি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে। তাই বিএনপি জাতীয় রাজনীতির ষড়যন্ত্র অংশ হিসেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ছাত্র রাজনীতিতে একটা অসুস্থ পরিবেশ তৈরী করতে চায়। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ, দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও উন্নয়ন এদের ভাল লাগে না। তারা অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, কোনো সাধারণ ছাত্রের কাম্য নয়, বাইরে থেকে কেউ মিছিল নিয়ে এসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অরাজক পরিস্থিতি তৈরী ও দখলবাজি করবে। এ ধরণের ঘটনা নিন্দনীয়। আসল কথা, তারা জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে পানি ঘোলা করতে চায়। সেই ঘোলা পানিতে তারা মাছ শিকার করতে চায়। তাদের এই ষড়যন্ত্র সাধারণ শিক্ষার্থী ও দেশের প্রতিটি মানুষ প্রত্যাখান করবে।
ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক জিএস খায়রুল কবির খোকন বলেন, ১৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে আছে। আগামী নির্বাচনে তাদের ক্ষমতায় আসার সুযোগ নেই। নানা অপকর্মের কারণে তারা এখন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাই পুলিশের সহযোগিতায় বিরোধী দলের নেতাদের প্রতি তারা জেল-জুলুম ও নির্যাতন চালিয়ে আসছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের প্রতি একের পর এক হামলা-মামলা করে আসছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরাও ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। জাতীয়বাদী ছাত্রদল দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশের দাবিতে ক্যাম্পাসগুলোতে অবস্থা নিচ্ছে। তারা শিক্ষার্থীবান্ধব কর্মসূচি নিচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রদলে আসছে। এতে বেসামাল হয়ে পড়েছে ছাত্রলীগও ক্ষমতাতাসীন দল। ফলে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা পুনরায় অতীতের দুটি নির্বাচনের মতো করে আবার নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসার পরিকল্পনা করছে। এজন্য ছাত্রদল যখন ক্যাম্পাসগুলোতে যাচ্ছে, তখন ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী কায়দায় সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের ওপর হামলা করছে। আমরা এ ঘটনার নিন্দা জানাই। দেশের জনগনেই তাদেরকে প্রতিহত করবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়