প্রশ্নফাঁস : মাউশির অফিস সহকারী নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল

আগের সংবাদ

জীবনযাত্রায় চাপ আরো বাড়বে : গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব : শিল্প ও কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হবে > সব পণ্যেরই দাম বাড়বে

পরের সংবাদ

বর্ষার আগেই ভাঙন শুরু বেড়িবাঁধে আতঙ্কে মাতারবাড়ী-ধলঘাটাবাসী

প্রকাশিত: মে ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এম বশির উল্লাহ, মহেশখালী (কক্সবাজার) থেকে : জেলার সবচেয়ে আলোচিত ইউনিয়ন মাতারবাড়ীসহ ধলঘাটাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল স্থায়ী একটি বেড়িবাঁধ। কিন্তু সে আশা গুড়েবালি। প্রতি বছর মাতারবাড়ী-ধলঘাটার অরক্ষিত বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে শত শত একর আবাদি ফসলি জমি নষ্ট হয়। গৃহহীন হয়ে পড়ে বেড়িবাঁধ সংলগ্ন শতাধিক বাড়িঘর। গত বর্ষা মৌসুমে মাতারবাড়ীর প্রায় এক কিলোমিটার অরক্ষিত বেড়িবাঁধ একেবারে বিলীন হয়েছিল। সেই বিলীন হওয়া বেড়িবাঁধ সংস্কারের নামে হয়েছে লুটপাট। স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, ঠিকাদার বেড়িবাঁধসংলগ্ন চর থেকে বালি নিয়ে নামমাত্র জিও ব্যাগ দিয়েছে। সে সময় স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলেও কোনো কর্ণপাত করেননি ঠিকাদার। ফলে জিও ব্যাগের নিচে বালির স্তর না থাকায় বর্ষা আসার আগেই বেড়িবাঁধে ভাঙন শুরু হয়ে গেছে। ফলে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন লক্ষাধিক মানুষ। বুক চাপা কষ্ট নিয়ে এদিক-ওদিক ঘুরলেও কোনো সুরাহা মিলছে না তাদের।
স্থানীয়রা বলেন, বেড়িবাঁধ নির্মাণের শুরু থেকে আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বরং আমাদের উচ্ছেদ ও মামলার ভয় দেখানো হয়েছে। নকশা অনুয়ায়ী কাজ না করে বেড়িবাঁধের বিভিন্ন জায়গায় মাটি কম দেয়া থেকে শুরু করে বসতভিটা থেকে মাটি নেয়ার কারণে বর্ষাকালে পানি জমে থাকার পাশাপাশি পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু হবে। কর্তৃপক্ষ বেড়িবাঁধ ঘেঁষে বালু উত্তোলন করার কারণে বেড়িবাঁধটি পুনরায় ধসে পড়ছে। এর আগেও এমন অনিয়ম হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। ফলে বারবার সরকারের কোটি কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে। সঠিকভাবে সংস্কার করা না হলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে আরো বড় ধরনের ভাঙন দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয়রা আরো বলেন, জোয়ারের পানি বৃদ্ধি হলে লোকালয়ে এখনো পানি প্রবেশ করছে। ঠিকাদাররা প্রভাবশালী হওয়ায় তদারকির দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিও কোনো কথা বলছেন না। ঠিকাদার দায়সারাভাবে কাজ করে এভাবে অর্থ লুট করছেন। এভাবে চললে অস্তিত্ব সংকটে পড়বেন মাতারবাড়ীর মানুষ। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ঘূর্ণিঝড়ে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ কোটি টাকা। ৮০০ মিটারের বেড়িবাঁধটি নির্মাণের জন্য ৮ প্যাকেজের মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন এলাকা নির্ধারণ করে কাজ বণ্টন করা হয় ঠিকাদারদের। চলতি বছরের জুন মাসে এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। সম্পূর্ণ কাজ হওয়ার পর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে টাকা দেয়া হবে। কিন্তু জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা অস্বীকার করে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেছেন, প্রথম কাজ আমরা সম্পন্ন করেছি। এখন নতুন করে কাজ করা হচ্ছে।
অন্যদিকে ধলঘাটা ইউনিয়নের হামিদখালী নতুন ঘোনা (আঞ্চলিক) এলাকার বেড়িবাঁধের একই অবস্থা। বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে যে কোনো মুহূর্তে বড় ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারেন স্থানীয়রা। দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান এলাকাবাসী। সরজমিন বেড়িবাঁধ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ৮০০ মিটারের বেড়িবাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের ফলে এক ঠিকাদারের কাজের সঙ্গে অন্য ঠিকাদারের কাজের কোনো মিল নেই। আঁকাবাঁকা বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে কেউ কোনো জায়গায় মাটি, কেউ কোথাও জিও ব্যাগ বেশি বা কম দিচ্ছেন। দেখলে বোঝা যায়, কী রকম অনিয়ম হচ্ছে! শর্ত অনুয়ায়ী প্রস্থ ১০ মিটার হওয়ার কথা থাকলেও অনেক জায়গায় ৮-৯ মিটার। অনেকে দিচ্ছে না নিয়মমাফিক জিও ব্যাগ। তাছাড়া নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধের ৫টি স্থানে জিও ব্যাগসহ মাটি ধসে পড়ে গেছে। অনেক জিও ব্যাগ সমুদ্রসৈকতে চলে গেছে। আরো ১০টি জায়গায় বড় ফাটল ধরেছে বেড়িবাঁধের। ফলে যে কোনো মুহূর্তে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হতে পারে গ্রামের পর গ্রাম। শুধু তাই নয়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়মের কারণে ৯ মিটার বেড়িবাঁধে কোনো জিও ব্যাগ দেয়নি ঠিকাদার। বরং খোলা অংশে মাটি দেয়ায় মাটিগুলো নিয়ে গেছে এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও নির্মাণের সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো বেড়িবাঁধ ঘেঁষে বালু উত্তোলন করার ফলে এই বেড়িবাঁধটি আবারো ধসে পড়ছে বলে স্থানীয়রা জানান।
মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আবু হায়দার বলেন, মাতারবাড়ীর বেড়িবাঁধ টেকসই হওয়া দরকার। টেকসই বেড়িবাঁধ না হলে মাতারবাড়ীকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। তিনিও দ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি জানান।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ জানান, মাতারবাড়ীতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য নকশা পাঠানো হয়েছে। স্থানীয়দের রক্ষা করার জন্য বর্তমানে জিও ব্যাগ দিয়ে অস্থায়ী বাঁধ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু পানির ধাক্কায় বেড়িবাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। বেড়িবাঁধ নির্মাণে ৯ মিটার খালি অংশের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, নকশাতে ভুলক্রমে এটা হিসাব করা হয়নি। তাই খালি পড়ে আছে। কয়েক দিনের মধ্যে ঠিক করে দেয়া হবে তিনি জানান।
বেড়িবাঁধের কাছ থেকে বালি উত্তোলন করলে বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এতে কোনো ক্ষতি হয় না। মানুষ আমাদের (পানি উন্নয়ন বোর্ডের) জায়গায় ঘরবাড়ি গড়ে তুলেছেন, এখান থেকে বালি নেয়ার নিয়ম আছে। বেড়িবাঁধ নির্মাণে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না বলে তিনি জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়