প্রশ্নফাঁস : মাউশির অফিস সহকারী নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল

আগের সংবাদ

জীবনযাত্রায় চাপ আরো বাড়বে : গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব : শিল্প ও কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হবে > সব পণ্যেরই দাম বাড়বে

পরের সংবাদ

গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চমেক হাসপাতালে ভর্তি : পুলিশের কব্জি কেটে নেয়া সেই আসামি গ্রেপ্তার

প্রকাশিত: মে ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : পুলিশ কনস্টেবলকে দা দিয়ে কুপিয়ে হাত থেকে কব্জি বিচ্ছিন্ন করে পালিয়ে যাওয়া সেই আসামি কবির আহমেদকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। ভূমিদখল ও মাদক কারবারসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত লোহাগাড়া এলাকার ত্রাস কবির আহমেদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় রয়েছে অবৈধ অস্ত্র, হত্যাচেষ্টা ও মারধরসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৬টি মামলা। র‌্যাব জানিয়েছে, পুলিশ সদস্যের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে পালিয়ে যাওয়ার পর পাঁচ দিন ধরে বিভিন্ন পাহাড়ে এক সহযোগীকে নিয়ে আত্মগোপনে ছিল কবির। তার কাছ থেকে সেই দা উদ্ধার করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টায় নগরের চান্দগাঁওয়ে র‌্যাব-৭ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া এলাকায় গহিন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে কবির আহমদ ও তার সহযোগী কফিল উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানের সময় বন্দুকযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয় কবির আহমেদ। বন্দুকযুদ্ধে তার বাম পায়ে মারাত্মক জখম হয়েছে। এ ঘটনায় র‌্যাবের এক সদস্যও আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ সদস্যকে জখমে ব্যবহৃত দা, একটি ওয়ান শুটার গান, তিন রাউন্ড তাজা গুলি ও তিন রাউন্ড খোসা, ধারালো অস্ত্র ও ১৮০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। কবির আহমদ লোহাগাড়ার পদুয়া ইউনিয়নের লালারখিল গ্রামের মৃত আলী হোসেনের ছেলে। কফিলের বাড়িও একই এলাকায়।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ মে সকাল পৌনে ১০টার দিকে লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের ৯

নম্বর লালারখিল ওয়ার্ডে আসামি ধরতে গিয়ে হামলার শিকার হন পুলিশ কনস্টেবল জনি খান। আসামি কবির আহমদ কনস্টেবল জনিকে ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে তার বাম হাত থেকে কব্জি বিচ্ছিন্ন করে পালিয়ে যায়। পুলিশ অভিযানে নিয়ে গিয়েছিল কবিরের বিরুদ্ধে মারামারির ঘটনায় দায়ের করা মামলার বাদী আবুল হোসেন কালুকেও। পালিয়ে যাওয়ার সময় কবির বাদী কালুকেও কুপিয়ে আহত করে। আহত জনি খান ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে লোহাগাড়া থানায় কবির ও তার স্ত্রী রুবি আক্তার এবং কবিরের মাকে আসামি করে মামলা দায়ের করে। ঘটনার পরদিন রুবিকে বান্দরবান জেলার লামা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ঘটনার পর থেকে কবিরের অবস্থান নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার আল মঈন বলেন, ‘ঘটনার পরই কবির পালিয়ে বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা দক্ষিণ হাঙ্গরে অবস্থান নেয়। দুই দিন পর সেখান থেকে চলে আসে লোহাগাড়ার বড়হাতিয়া এলাকায়। পাঁচ দিন ধরে পাহাড়েই সহযোগী কফিলকে নিয়ে ছিল কবির। মাদক চোরাচালান ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে কবিরের বিরুদ্ধে ৬টি মামলা আছে। কফিলও প্রতিবেশী দেশ থেকে ইয়াবা এনে বিক্রি করে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তার বিরুদ্ধেও মাদক আইনে ৬টি মামলা আছে। দুজন একই চক্রের সদস্য।’
অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া র‌্যাব চট্টগ্রাম জোনের কোম্পানি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান বলেন, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার ভেতরে বড়হাতিয়া এলাকায় একেবারে দুর্গম পাহাড়ে কবির ও তার সহযোগী কফিল অবস্থান নিয়েছিল। সেখানে যাওয়ার কোনো রাস্তা ছিল না। জমির আইল ধরে আমরা প্রথমে একটি পাহাড়ে পৌঁছাই। কিন্তু সেখানে তল্লাশি করে তাকে পাওয়া যায়নি। তখন আরেকটি পাহাড় থেকে গুলিবর্ষণ করা হয়। প্রথম পাহাড় থেকে নেমে ওই পাহাড়ের কাছাকাছি যেতেই আবার আমাদের লক্ষ্য করে গুলি করে। তখন আমরাও পাল্টা গুলিবর্ষণ করি। আমরা ওই পাহাড় কর্ডন করে ফেলি। প্রায় ১৫-২০ মিনিট গোলাগুলির পর আমরা গিয়ে কবিরকে বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেপ্তার করি। কফিলকেও গ্রেপ্তার করা হয়। বন্দুকযুদ্ধে র‌্যাবে কর্মরত সিপাহী আকরামও আহত হয়েছেন। কবির ও কফিলের বিরুদ্ধে র‌্যাবের ওপর হামলা, অস্ত্র ও মাদক আইনে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আহত কবির আহমদকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পুলিশ কনস্টেবলকে কুপিয়ে কব্জি বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে মেজর মেহেদী হাসান বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে কবির যেসব তথ্য দিয়েছে, তাতে মনে হয়েছে এটি একেবারেই পূর্ব-পরিকল্পিত। সে জানত, মামলা যেহেতু হয়েছে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। গ্রেপ্তার করতে এলেই কোপাবে- এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সে। পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় দা-ও সঙ্গে নিয়েছিল কবির। পরে কফিল যখন তার সঙ্গে যোগ দেয়, তখন সেও কিছু অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যায়। পাহাড়ে গাছপালা ও জঙ্গল কেটে আস্তানা গেড়েছিল তারা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়