জাপানি ২ শিশুর জিম্মা : বাবার বিরুদ্ধে এবার আদালত অবমাননার অভিযোগ মায়ের

আগের সংবাদ

তৈরি হচ্ছে ঘনিষ্ঠদের তালিকা : পি কে হালদারের ডিভাইসে সাজানো নাম, ফোন নম্বর ও টাকার অঙ্ক

পরের সংবাদ

লোভী হুলো

প্রকাশিত: মে ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বড় গোল্ডফিশটা একুইরিয়ামের ওপরের দিকে উঠে এলো। দুই-তিন বার নিজের মতো ঘুর্ণী খেল। তারপর গøাসের সাথে পাখনা ছুঁইয়ে বলল- আচ্ছা, তুমি এখানে বসে বসে কী দ্যাখো?
হুলোর মুখের দুই পাশের গোঁফ নড়ে উঠল। মিথ্যে কথা বলার আগে তার গোঁফ নড়ে। ইঁদুর, তেলাপোকা এদের সাথে তার দুষ্টুমির শেষ নেই। মিথ্যে কথা বলে বলে সব সময় ইঁদুরদের বিপদে ফেলতে চায়। ধারীগুলোকে প্রায়ই কব্জা করতে পারলেও নেংটিগুলোর সাথে পেরে ওঠে না। নেংটিগুলোর বুদ্ধি অনেক বেশি। অনেক সময় নেংটিগুলো উল্টো হুলোকে নাকানি-চুবানি খাইয়ে দেয়। একবার তো এক নেংটির পেছনে ধাওয়া করে ভাতের গরম মাড়ের পাত্রে পড়ে হুলো মরতে বসেছিল।
হুলো বলল- আমি তোমাদের খেলা দেখি। তোমরা কেমন একে অপরের গা ঘেঁষে সাঁতার কাটো। একবার ওপরে ওঠো, আবার নিচে নামো, আবার পাথরে ঠোঁকর দাও। কত্ত আনন্দ করো তোমরা!
– তুমি যে শুধু আমাদের খেলা দেখতে এখানে বসে থাকো তা মনে হয় না।
– তাহলে কী মনে হয়?
– তুমি যখন এখানে বসে থাকো তখন তোমাকে খুব মন খারাপ দেখায়। বুঝতে পারি, মাঝে মাঝে তোমার ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে যায়। মনে হয়, কী যেন তোমার পাওয়ার ইচ্ছা, কিন্তু পাচ্ছো না। ব্যাপারটা কি তাই?
– আরে নাহ! আবার হুলোর গোঁফ নড়ে উঠল।
ছোট একটা গোল্ডফিশ বলল- আমরা বন্ধুরা এখানে নিজেদের মতো খেলা করি, আনন্দ করি। তুমি তো তোমার বন্ধুদের সাথে আনন্দ করতে পারো। তা না করে চোখে-মুখে রাজ্যের হতাশা মেখে এখানে বসে থাকো।
– তোমরা তো অনেক সুখী। আমি তোমাদের মতো অতো সুখী না। দুঃখে থাকলে আনন্দ করা যায়?
হুলোটা দুঃখী! এ কথা শুনে সবকটা গোল্ডফিশ ওপরে উঠে এলো। পরস্পরের গা ছুঁইয়ে টিপ্পনী কাটল। সবচেয়ে বয়সি গোল্ডফিশটা বলল- আমাদের কেন তুমি সুখী মনে করো? আর কেনই বা তুমি অসুখী?
– তোমাদের সকাল-বিকাল দুই বেলা খাবার দেয়া হয়। তোমরা পেট পুরে খাও। কিন্তু আমাকে তো কষ্ট করে আমার খাবার যোগাড় করতে হয়। হুলোর গোঁফ কেঁপে উঠল।
গোল্ডফিশ বলল- তুমি তো মিথ্যা বলায় ওস্তাদ। যারা তোমার প্রভু, তারা আমাদেরও প্রভু। তারা আমাদের যেমন যতœ-আত্তি করে তোমাকেও তেমন করে। আমাদের তো নিয়ম করে দুইবার খাবার দেয়, তাতেই আমরা সন্তুষ্ট। তোমাকে খাবার দেয় চারবার। কিন্তু তুমি তাতে সন্তুষ্ট নও। কারণ তুমি লোভী। লোভের কারণেই তুমি অসুখী।
হুলোটা মাথা নিচু করল। কিছুটা লজ্জা পেয়েছে। মনে মনে ভাবছে, একুইরিয়ামের ভেতর বাস করলেও গোল্ডফিশগুলোর বুদ্ধি আছে। অপরের মনের খবর রাখে।
বয়সি গোল্ডফিশটা বলল- প্রভুর বাড়ি থেকে মাছ, মাংস, দুধ ইত্যাদি ভালো ভালো খাবার পাবার পরও তোমার ইঁদুর খেতে ইচ্ছা হয়, তেলাপোকা, ফড়িং আরো কত্ত কিছু খেতে ইচ্ছা হয়। আরো খেতে ইচ্ছা হয় প্রভুর সখে পালিত প্রিয় গোল্ডফিশগুলোকে, তাই না?
হুলো মুখে কোনো ভাষা নেই। গোল্ডফিশটা একেবারে ভেতরের খবর টেনে বের করে এনেছে।
গোল্ডফিশটা আরো বলল- আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনো, তাতে তোমার উপকার হবে। ইঁদুর তেলাপোকা খাও ভালো কথা। তাতে প্রভুর উপকার হয়। প্রভু খুশি হয়। কিন্তু প্রভুর প্রিয় গোল্ডফিশগুলোর লোভ ছেড়ে দাও। একুইরিয়ামে হাত দিয়েছে তো মরেছো। একেবারে মেরেকেটে বাড়ি থেকে বের করে দেবে। আর কোনোদিন এই বাড়ির দরজার সামনে আসতেও পারবে না? কী করবে তখন? রাস্তায় থাকতে হবে। ডাস্টবিনের পচা, নোংরা খাবার খেতে হবে। মনে রেখো, লোভে পাপ পাপে মৃত্যু।
তারপর থেকে হুলোটা আর একুইরিয়ামের পাশে বসে না। আবার নিজের লোভও সামলাতে পারে না। পেটফোলা নরম নরম গোল্ডফিশগুলো খেতে কি যে মজা হবে! পাখনা, লেজসহ খেয়ে ফেলা যাবে।
হুলোটা দরজার আড়ালে বসে দরজার ফাঁক দিয়ে চেয়ে থাকে একুইরিয়োমের দিকে। গোল্ডফিশগুলো খেলা করে আর হুলোটা নিজের জিভ চাটে। তার জিভ দিয়ে টসটস করে জল ঝরে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়