করোনার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে বেইজিংয়ে ফের স্কুল বন্ধ

আগের সংবাদ

রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১৯ দফা নির্দেশনা : ঝুঁকি মোকাবিলায় নজরদারিতে চাকরিচ্যুত পুলিশরা

পরের সংবাদ

আমি তোমার প্রেমে হব কলঙ্ক ভাগী

প্রকাশিত: মে ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অপু ব্যাগ গুছিয়ে বরিশাল লঞ্চঘাটে পৌঁছে গেল! উদ্দেশ্য ঢাকাতে বাড়িফেরা! অপু ইন্টার্নি করছে বরিশাল মেডিকেল কলেজ থেকে। ছাত্রলীগের সে ভালো নেতা! ভালো বক্তা! কলেজের না শুধু বরিশালের অনেকেই তাকে সমীহ করে চলে তার বাকপটুতার জন্য। মেডিকেল কলেজের সবাই অপু ভাই বলতে অজ্ঞান!
-অপু তড়িঘড়ি করে লঞ্চে উঠে ব্যাগ গুছিয়ে ডেকে এসে দাঁড়ালো খোলা বাতাসে হাতে একটি বেনসন সুইস সিগারেট নিয়ে। লঞ্চ ছেড়ে দিয়েছে হু হু বাতাসের দাপট। অপু তার অবিন্যাস্ত চুল ঠিক করতে করতে পিছন ফিরে তাকালো। দূর থেকে ও মিথিলাকে দেখতে পেল। মিথিলা ৩য় বর্ষের ছাত্রী। অপুর সাথে মাঝে মাঝে দেখা হলে কথা হয়। তেমন একটা ঘনিষ্ঠতা নেই। মিথিলাই সবসময় এগিয়ে এসে কথা বলেছে। অপু বরাবর ভদ্রতার খাতিরেই কথা বলেছে। মিথিলার মতো সুন্দরী নারীদের ইচ্ছে করলেই এভয়েড করা যায় না। তাদের আঁতে ঘা লাগে। মিথিলাও একই সময় অপুকে দেখেছে। পরস্পরের ভিতর দৃষ্টি বিনিময় হলো! অপু মৃদু হেসে সিগারেট টানায় মনোযোগ দিল।
-মিথিলাই এক পা এক পা করে মন্ত্রমুগ্ধের মতো অপুর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। খুব কাছে এসে বলল, অপু ভাই কেমন আছেন?
-অপু পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখল মিথিলা বলল ভালো আছি!
-কোথায় যাচ্ছেন? ঢাকায়! জাহাজে উঠে আর কই যাব? ঢাকাতেই তো যাব।
-তুমি ও তো যাচ্ছ! ঢাকায় তোমাদের কোথায় বাসা?
-সেগুনবাগিচা!
-একা না সাথে আছে কেউ?
-না আমি একাই সব সময় যাওয়া আসা করি!
-মিথিলা নিষ্পলক দৃষ্টিতে অপুর দিকে তাকিয়ে আছে। যেন কিছু বলতে চায়!
-অপু সাবলীলভাবেই বলল তুমি কি কিছু বলবে?
-হুম, কীভাবে যে বলব বুঝতে পারছি না, অনেকদিন ধরেই ভাবছি! তবে আজ আপনাকে দেখেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি, আজই বলব না হয় কখনো বলা হবে না।
-অপু নারী, প্রেম এসব নিয়ে কখনো ভাবে না, মাথায় সব সময় রাজনীতি দেশ উদ্ধার এই সব ঘুরে। তাই মিথিলা কী বলতে পারে এই সব তার বোধেরও অগম্য! খুব স্বাভাবিকভাবেই বলল কী কিছু সমস্যা?
-না,
-তাহলে চটপট বলে ফেল, যদি সাহায্য লাগে যতটুকু পারি করব।
-আপনি পারবেন!
-আচ্ছা বলো
-মিথিলা কোনো রকম ভনিতা না করে সোজা সাপ্টাভাবে অপুর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে দিল, আমি আপনাকে ভালোবাসি!
-অপু তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গীতে হা হা করে হেসে উঠে বলল, আরে ধুর আমি এই সব ভালোবাসতে পারি না উফ তুমি ভুল জায়গায় নক করেছ! মিথিলার কথাটা শোনার পর মনে হলো সারা পৃথিবীটা যেন দোলে উঠল তার, পা-টা যেন কেমন কাঁপছে! মিথিলা আর এক মুহূর্ত দাঁড়াল না, মৃদু পায়ে খুব কষ্ট করে কেবিনের দিকে এগোচ্ছে। অপু তাকিয়ে আছে গমন পথের দিকে। হঠাৎ অপু দেখল মিথিলার পা দুটো এলোমেলোভাবে পড়ছে। ড্রিংক করে মাতালরা যে ভাবে হাঁটে সেইভাবে। অপু দ্রুত এগিয়ে গেল মিথিলার কাছাকাছি। মিথিলা অপ্রকৃতিস্থ। কেমন একটা ঘোরের ভিতর হাঁটছে মনে হচ্ছে! মাথা ঘুরে পরে যাওয়ার আগেই অপু দ্রুত গিয়ে ধরে ফেলল। অপুর হাতে মিথিলার পুরো অবশ শরীর। মিথিলা জ্ঞান হারিয়েছে! অপু কিংকর্তব্যবিমুঢ়! তাড়াতাড়ি পাঁজাকুলা করে অপুর কেবিনে নিয়ে এলো আলো আধারির মাঝে। মিথিলার কেবিন নাম্বার ও জানে না। অপু ভয় পেয়ে গেল! এই অবস্থায় কী করবে। তাড়াতাড়ি মিথিলার চোখে মুখে হালকা করে পানির ঝাপটা দিল! ওরা দুজনই শিক্ষানবিশ ডাক্তার! অপু তাড়াতাড়ি পালস দেখলো! পালস ঠিক আছে। ঠোঁটটা ফাঁক করে দেখে দাঁত দুপাটি শক্ত হয়ে লেগে আছে পরস্পরের সাথে। অপু ওর চাবি দিয়ে দাঁতটা ফাঁক করে মুখটা হা করালো তারপর নিজের মুখ দিয়ে মিথিলার ফুসফুসে বাতাস ভরে দিল। মিথিলা নড়েচড়ে উঠল। আস্তে আস্তে মিথিলা চোখ খুলল। অপু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। মিথিলার মাথায় হাত রেখে আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে দিল। কিছুক্ষণের মধ্যে মিথিলা ধাতস্ত হয়ে উঠল। অপু ঘটনার আকস্মিকতায় সব তালগোল পাকিয়ে ফেলল। মিথিলা উঠে বসার চেষ্টা করতেই অপু থামিয়ে দিল তাকে। একদম নয় ফুল রেস্ট। আবার ঘুমিয়ে থাকো। মিথিলা আবার ঘুমিয়ে পরতে পরতে চোখের কোণ ছলছল করে উঠল। অপু বুঝতে পারল মিথিলা ছোটখাটো একটা মানসিকভাবে ধাক্কা খেয়েছে, অপু সেই মুহূর্তেই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল!
অপু পুরোটা রাত ডেক আর কেবিন করে কাটিয়ে দিল! খুব ভোরে লঞ্চ এসে থামলো সদরঘাটে!
অপু কেবিনে ঢোকে মিথিলা উঠে বসেছে। তাকে খুব ঝরঝরে লাগছে। কাল যে এতবড় একটা ধকল কাটিয়ে উঠল চেহারা দেখে মনেই হচ্ছে না।
অপু বলল তোমার কেবিন নাম্বার কত? তোমার লাগেজ আনতে হবে।
মিথিলা বলল আমি যাচ্ছি!
আচ্ছা ওয়েট করো। আমি ব্যাগটা গুছিয়ে নিই। তোমার কেবিন থেকে লাগেজ নিয়ে একসাথে নেমে যাব।
মিথিলা মন্ত্র মুগ্ধের মতো অপুর সব কথাই শুনে যাচ্ছে। দাঁড়িয়ে রইল ঠায় অপুর গুছগাছের দিকে অপলক তাকিয়ে। মিথিলার কাছে সব স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। কাল রাত থেকে আজ ঘটে যাওয়া সব ঘটনাগুলো একে একে সাজিয়ে।
অপু সব গুছিয়ে বলল চলো যাওয়া যাক। মিথিলা কেবিনে ঢুকে ব্যাগটা নিয়ে রওয়ানা হলো অপুর পিছন পিছন।
সদর খাট নেমে অপু উবার ডেকে চেপে বসল মিথিলাকে নিয়ে, উদ্দেশ্য মিথিলাকে বাসায় পৌঁছে দেয়া। অপুর মনে হলো এই মেয়েটাকে এই অবস্থায় একা ছেড়ে দেয়া যাবে না। তাকে বাসায় পৌঁছে দেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
মিথিলা ও অপু বাসায় পৌঁছে গেল!
তিন তলার বাসার দু তলায় থাকে মিথিলারা! কলিংবেল বাজতেই মিথিলার আম্মু দরজা খোলে অপুকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। মিথিলা তাড়াতাড়ি করে বলল আম্মু অপু ভাইয়া! আমরা একি মেডিকেলে পড়ছি। আমি কাল একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম তাই অপু ভাইয়া আমাকে একা আসতে দিলেন না, বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে গেলেন।
অপু ভিতরে ড্রয়িং রুমে এসে বসল। বেশ গোছানো ছিমছাম বাড়ি। দেখে মনে হচ্ছে বেশ সৌখিন ওরা।
এমন সময় মিথিলার আব্বু ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করলেন। মিথিলা অপুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। প্রাথমিক পরিচয় পর্বে মনে হলো মিথিলার আব্বু রব্বানি সাহেব খুব একটা খুশি হলেন না অপুর উপস্থিতিতে। অপু এসবে পাত্তা দিল না।
সে বলল আমরা দুই ভাই। আমি বড় ছোট ভাই বুয়েটে পড়ছে। আম্মু আছেন। আব্বু মারা গেছে বছর পাঁচেক আগে। ধানমন্ডিতে আমাদের নিজেদের একটা বাড়ি আছে। আমি ইন্টার্নি করছি। পাস করার পর ঢাকায় সেটেল্ড হব। একদমে কথাগুলো বলে থামলো।
পরবর্তী বোমটা ফাটাল অপু, যা কিনা মিথিলা স্বপ্নেও ভাবেনি।
আমি সরাসরি আজ একটা কথা বলতে এসেছি। আপনাদের যদি আপত্তি না থাকে আমি মিথিলাকে বিয়ে করতে চাই। আমার সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়ে দেখেন যদি হয় এই আমার ফোন নাম্বার তাহলে যোগাযোগ করবেন।
মিথিলার দিকে চেয়ে আসি বলে হন হন করে চলে গেল সিঁড়ি দিয়ে নেমে।
মিথিলার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল! বাসায় এখন সে কীভাবে সামলাবে বুঝতে পারছে না কিছু। মিথিলা তাড়াতাড়ি ড্রয়িং রুম থেকে পালিয়ে বাঁচল।
মিথিলা কিছুই বুঝতে পারছে না অপু ভাই কীভাবে দুম করে গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা এভাবে অনায়াসে কোনো ভূমিকা ছাড়া বলে দিতে পারল?
ঘুণাক্ষরেও মিথিলা বুঝতে পারেনি অপু ভাই এমন করতে পারে। মনে মনে খুশীও হয় মিথিলা। মিথিলা তো চেয়েইছিল অপুকে সারাজীবনের জন্য নিজের আঁচলে বেঁধে রাখতে। এই স্বভাবের জন্যই মিথিলার নজরকাড়ে অপু ভাই। কেমন জানি একটু অন্যরকম। তবে যেটা পছন্দ না মিথিলার অপুভাইর গাঁজার নেশা।
মিথিলার ধারণা এই গাঁজার জন্যই মনে হয় প্রেম ভালোবাসা তার ভিতর দানা বাঁধতে পারে না। মিথিলা এসব ভাবতে ভাবতে এক সময় ঘুমের অতলে ডুব দিল!
রব্বানী সাহেব খুব হিসাবি মানুষ। সারা জীবন হিসাব করে পা ফেলেছেন। অপু নামের ছেলেটির এইসব ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ তিনি একদম বরদাস্ত করতে পারছেন না। তিনি সবসময় কল্পনা করেছেন তার মেয়ের জামাই হবে ভদ্র, নম্র ও শান্ত। সেই রকম খানদানি পরিবারের। সবাই যেন খানদান আর জামাই দেখে ধন্য ধন্য করে। আর সেখানে কিনা এমন এক উটকো ছেলে এসে তার একমাত্র মেয়েকে বিয়ের জন্য সরাসরি প্রস্তাব দেয়?
উনি ভাবলেন এর একটা বিহিত করা উচিত! মেয়েটাকে একটা সৎপাত্রে দান করার ব্যবস্থা করতে হবে। এতবড় অঘটনের পর আর হাত-পা ছেড়ে বসে থাকা যায় না। তিনি ঘটক নিয়োগ করলেন তার মেয়ের জন্য উপযুক্ত ছেলে নির্বাচন করার।
এক সকালে ছুটির দিনে রব্বানী সাহেব তার মেয়েকে ডেকে পাঠালেন। তিনি সকালে চা খেতে খেতে খবরের কাগজ পড়ছিলেন, ভোরের কাগজ। মিথিলা ধীর পায়ে ঘরে ঢোকে বলল আব্বু আমাকে ডাকছিলে?
রব্বানী সাহেব খুব গম্ভীরভাবে বললেন তোমার সাথে জরুরি কিছু কথা ছিল। ঠিক এই সময়ে মিথিলার মা ও হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকলেন।
রব্বানী সাহেব মিথিলার মাকে উদ্দেশ্য করে বললেন ভালোই হয়েছে তুমিও চলে এসেছ।
রব্বানী সাহেব মুখে রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে মিথিলাকে উদ্দেশ্য করে বললেন তুমি ওই ছেলেটা তপু না অপু কি জানি নাম ওকে কতদিন ধরে চেন?
মিথিলা কেন আব্বু? মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তো চিনি!
কতদিনের পরিচয়? কতদিনের সম্পর্ক তোমাদের?
মিথিলা আকাশ থেকে পড়ল! আমার সাথে অপু ভাইয়ের সম্পর্ক হতে যাবে কেন?
উনার সাথে তো আমার ভালো করে কথাই হয়নি কখনো!
তাহলে ছেলেটি কেন বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে?
আমি কি জানি? কেন দিয়েছেন? উনিই ভালো বলতে পারবেন!
তুমি কি ছেলেটিকে পছন্দ কর?
হুম করি!
কবে থেকে?
অনেক দিন থেকেই তবে দিন তারিখ মনে নেই! কাল উনাকে বলেছি যে আমি উনাকে পছন্দ করি! তবে উনি আমাকে পছন্দ করেন না!
রব্বানী সাহেব গম্ভীর মুখে বললেন এইসব হেঁয়ালিপূর্ণ কথা বলবে না এখন যাও।
মিথিলার আম্মু লীনা কিছুই বললেন না শুধু রব্বানী সাহেবকে বললেন এত প্রশ্ন করছ কেন?
রব্বানী সাহেব রাগতস্বরে বললেন প্রশ্ন না করলে আমি জানব কীভাবে? ব্যাপারটা কতদূর গড়িয়েছে।
তোমার মতো করে সব ভাসা ভাসা জানলে তো আমার হবে না। চলো তো হাওয়ায় গা ভাসিয়ে! মেয়ে বড় হয়েছে মেয়েটার মতিগতি কখনো বোঝার চেষ্টা করো কখনো?
লীনা চুপ করে আছেন। আসলে মিথিলা অপু নামের এই ছেলেটির কথা কখনো ভুলেও কথার ছলে গল্প করেনি। মেয়েটার মনে মনে যে এত কিছু তিনি জানবেনই বা কেমন করে?
উনি তো আর অন্তর্যামী নন। লীনা নিজেকে বাঁচাতে রব্বানী সাহেবের সামনে থেকে চলে এলেন! এসে মিথিলার ঘরে ঢুকলেন।
পায়ে পায়ে মিথিলার কাছটিতে এসে বসলেন। বসে আস্তে আস্তে করে বললেন কিরে মিতুল তোরা কি পরস্পরকে ভালোবাসিস? মিথিলা ক্রুদ্ধচোখে তাকিয়ে বলল পরস্পর না আম্মু!
আমি বাসি উনি নন!
মিথিলার আম্মু যেন আকাশ থেকে পড়লেন! উনি অবাক বিস্ময়ে বললেন তুমি ভালোবাসো উনি নন?
তুমি কী করে জানলে?
আমি কাল উনাকে বলেছি যে আমি আপনাকে ভালোবাসি তখন জানতে পারি।
লীনা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন উত্তেজনায়। কী বললে? তুমি এতটা বেহায়া আর নির্লজ্বের মতো করে বললে, তুমি ভালোবাস?
মিথিলা মোবাইলে ক্রল করতে করতে খুব নির্লিপ্তভাবে বলল তো কী হয়েছে?
সব সময় ছেলেদেরই বলতে হবে কেন?
মেয়েদেরও তো কাউকে ভালো লাগতে পারে! প্রপোজ করতেই পারে! এতে কী হয়েছে? মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে নাকি? শুধু ছেলেরাই প্রপোজ করবে মেয়েরা প্রপোজ করতে পারবে না এমন কোনো হাদিস আছে নাকি?
লীনা ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, তুমি আমার মেয়ে হয়ে এতটা নীচে নেমে যাবে ভাবতেও পারি না। আধুনিকতার নাম করে এসব কি বেলাল্লাপনা?
বলে উনি দুম করে ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন।
মিথিলা বুঝতেই পারছে না এখানে বেলাল্লাপনার কী হলো? আমি না বললে উনি বুঝবেন কীভাবে? উনাকে আমি দিনের পর দিন একা একা ভালোবেসে যাচ্ছি। একটা ফয়সালা করতে হবে তো। মিথিলা এমনি স্পষ্টবাদি। কোনো কিছু রাখঢাক করে না বা কখনো কিছু লুকায় না। আজ ও সবকিছু গোপন করলেও পারত। ও তা করেনি। সবই খুলে বলেছে।
রব্বানী সাহেব ঘটক ডেকে পাঠালেন। তার মেয়ের জন্য উপযুক্ত পাত্রের সন্ধানে। উনি মনস্থির করতে পারছেন না। ওই দিনের ঘটনার পর থেকে। কোথাকার কোন উটকো ছেলে বংশ পরিচয় নেই তার মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারে এসে বাড়ি বয়ে?
ইত্যবসরে উনি অপু নামের ছেলেটির খোঁজ-খবর নিতে লাগলেন গোপনে।
তারপর বার্তাবাহক তাকে যে খবর পৌঁছালো শুনে রব্বানী সাহেবের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লেও মনে হয় এতটা অবাক হতেন না। অপু চেইন গাঁজাখোর! যখন বরিশাল থেকে ফিরে তখন তার কয়েকজন বন্ধু মিলে চারুকলার ভিতর গাঁজার আসর বসায়! কোনো দিন ঢাকা ভার্সিটির ভিতর সবুজ ঘাসের ওপর রাত নেমে এলো। এই সব কথা শোনার পর তিনি অপু নামের ছেলেটিকে সামনাসামনি গুলি করতে চাইলেন। গাঁজাখোর একটি ছেলে নাকি রব্বানী সাহেবের মেয়েকে বিয়ে করতে চায়। কতবড় আস্পর্ধা।
এ দিকে মেঘ না চাইতেই জল। রব্বানী সাহেবের ছোটবেলার বন্ধু আরিফুল ইসলাম এসে হাজির এক সন্ধ্যায়। মিথিলার বিয়ের প্রপোজাল নিয়ে। উনার ছেলে ইমতিয়াজের সাথে। ইমতিয়াজ থাকে আমেরিকায়। পেশায় সফট ওয়ার ইঞ্জিনিয়ার। ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান থেকে পড়ালেখা শেষ করেছে। মোটা বেতনে সেখানে ভালো জব করছে। রব্বানী সাহেব এই রকম পাত্রই চাইছিলেন তার একমাত্র মেয়ের জন্য। আর আরিফুলকে চেনেন তিনি স্কুলজীবন থেকে। আরিফুলই বন্ধুদের ভিতর সবার আগে বিয়ে করে ফেলে ছাত্র অবস্থায় প্রেম করে। ইমতিয়াজকেও তিনি দেখেছেন ছোটবেলায়। আরিফুল ইসলাম তার ব্যাগ থেকে ইমতিয়াজের ছবি বের করে দেখালেন রব্বানীকে! ছবি দেখিয়ে সহাস্যে বললেন আমার ছেলে কিন্তু ফেলনা নয়। দেখো একবার ভালো করে! সুদর্শন টল ফিগার নিজের ছেলে বলে নয়। লাখে একটা হয় কিনা সন্দেহ। রব্বানী সাহেব হাতে ছবিটা নিয়ে দেখে চোখ দুটি আনন্দে চকচক করে উঠল। এই না মেয়ের জামাই! ঠিক তেমনি। যেমনটি উনি চাইছিলেন। আপাদমস্তক পরিপাটি। তিনি মনে মনে দাঁতে দাঁত বিরবির করলেন কোত্থেকে উটকো অগোছালো চালচুলোহীন একটা ছেলে এসে বলল আপনার মেয়েকে আমি বিয়ে করতে চাই। বললেই হলো আর কি?
মনে মনে বললেন মিথিলারও পছন্দ হবে। এমন সুদর্শন ছেলে পছন্দ না হওয়ার মতো নয়। রব্বানী সাহেব বাসায় হইচই ফেলে দিলেন। লীনাকে ডেকে পাঠালেন। ছবি দেখিয়ে বললেন দেখো দেখো আরিফের ছেলে কত বড় হয়ে গেছে। রব্বানী সাহেব এই বলে লীনার হাতে ছবিটা ধরিয়ে দিলেন।
লীনা হাতে ছবি নিয়ে বললেন, মাশাল্লা ছেলে তো দেখতে রাজপুত্রের মতো হয়েছে আরিফ ভাইয়ের। এর মধ্যে মিথিলা মিথিলা বলে ডেকে মিথিলাকেও হাজির করলেন আরিফের সামনে।
মিথিলাও দেখতে মায়াবী। মিষ্টি চেহারা। গায়ের রং ধবধবে ফর্সা নয় একটু চাপা। তার জন্যই মনে হয় আরো বেশি আকর্ষণীয়া। চোখ দুটি অসাধারণ একেই বলে হরিণ চোখের মেয়ে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় মিথিলার দীঘল কালো চুলের বাহার। এই যুগে এমন চুলের অধিকারিণী খুব কম মেয়েরই হয়! মিথিলার উচ্চতা ৫ ফিট চার ইঞ্চি।
মিথিলা ঘরে ঢোকা মাত্র আরিফুল ইসলামের মনে হলো ঘর খানিতে মনে হয় মোমের স্নিগ্ধ আলো ছড়িয়ে পড়ল!
আরিফুল ইসলাম মুগ্ধতায় হা হয়ে গেলেন। এমন একটি মেয়েই তো উনি খুঁজছিলেন উনার একমাত্র ছেলের জন্য। মিথিলা বসল আরিফুল ইসলামের মুখোমুখি। আরিফুল ইসলাম যেন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলেন হাত, পা, নখ! আর মাঝে মাঝে টুকটাক কথা বলে জানতে চাচ্ছিলেন। এমন শান্ত আর ভদ্র মেয়ে এখনকার সময়ে তিনি কমই দেখেছেন। মনে মনে তিনি আল্লাহর কাছে শোকরিয়া আদায় করলেন।
মিথিলা স্বস্তি পাচ্ছিল না বসে। ভিতরে ভিতরে উসখুস করছিল। সুযোগ পেয়ে আস্তে করে তার মাকে বলল আম্মু আমি আসি। লীনা বললেন ঠিক আছে যাও। মিথিলা আরিফুল ইসলামের কাছে বিদায় নিয়ে উঠে দাঁড়াল। আরিফুল ইসলাম মিথিলার গমন পথের দিকে স্নেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। রব্বানী সাহেব আর আরিফুল ইসলামের ভিতর কথা হলো এই সেপ্টেম্বরেই ইমতিয়াজ আসলেই শুভ কাজটা সেরে ফেলবেন। ইমতিয়াজেরও মিথিলাকে দেখে পছন্দ হবে আরিফুল ইসলাম শতভাগ নিশ্চিত!
মিথিলা মনে মনে প্রমাদ গুনল ও তো এ বিয়ে করবে না। অপু ভাইকেই ও বিয়ে করবে আর না করলে নয়। মনে মনে ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কিন্তু বাসায় টু শব্দ করা যাবে না। রব্বানী সাহেবের কথার বাইরে এই বাড়িতে কোনো কাজ আজ পর্যন্ত হয়নি। আর মিথিলার বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ তো ভাবাই যায় না। সৎ পাত্রে কন্যা দানই রব্বানী সাহেবের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। মিথিলা ভাবল ছোট ভাই মিঠুর সাথে কি কোনো ফন্দি আঁটা যায় কিনা? তারপর ভাবলো না মিঠুকে বিশ্বাস নেই। আম্মুকে বলে দিতে পারে। মিথিলা সাতপাঁচ ভেবে মনে মনে ঠিক করল অপু ভাইকে ফোন করে বলবে নাকি সব? ওই দিন সবার অলক্ষে অপু ভাইর ফোন নাম্বার লিখে রাখা কাগজটা ও সযতনে রেখে দিয়েছে। আর ফোন নাম্বার সেভ করেছে ‘জানবাজ’ দিয়ে। ভাবতে ভাবতে অপুকে কল দিয়ে দিল মিথিলা। ও পাশে ফোন বেজেই চলছে কোনো সারাশব্দ নেই রিসিভের।
অপু তখন ব্যস্ত মানিক, শুভ্র, জাহিদের সাথে গাঁজা নিয়ে। আজ একটু লিকারও গিলেছে, টাল হয়ে আছে।
অপু মানিককে বলছে আয়নায় তোর সুরত দেখেছিস? তুই কীভাবে মেহজাবীনের সাথে প্রেম করতে যাস? মেহজাবীন তোর সাথে কেন প্রেম করবে আমাকে বল? তখন মানিক খুব দুঃখ পায়! তখন সে চলে আসে একা একা হাঁটতে থাকে রাতের ফুটপাত ধরে! কখনো কখনো জাহিদ অথবা শুভ্রও পিছু পিছু চলে আসে মানিকের।
অপু টাল হলে প্রায়ই এই কথা বলে। আবার মাঝে মাঝে মানিকের জন্য কান্নাও করে মেহজাবীন কেন পছন্দ করে না মানিককে।
তখন হয়তো মানিকও অপুর সাথে কাঁদে। মানিকের সাথে শুভ্রর বোনের বিয়েতে মেহজাবীনের সাথে দেখা হয়েছিল। প্রথম দেখাতেই মানিক মেহজাবীনের প্রেমে পড়ে যায়। ডাকসাইটের সুন্দরী মেহজাবীন ও পাকিস্তানি বিহারী।
মানিক পড়ে বুয়েটে। কিন্তু মারাতিরিক্ত মোটা। এই সব ছেলেদের সাথে প্রেম করে খুব কম মেয়েই ছেলেটার কপাল যদি ভালো হয়। মানিকের কপাল সে রকম ভালো নয়। সমস্যা আরো আছে, মেহজাবীনরা হলো কাদিয়ানী সম্প্রদায়। এরা নিজেদের গোত্রের ভিতরই বিয়ে দেয়। ওরা অন্য সম্প্রদায়ে বিয়ে দেয় না। মানিক অনেকভাবে চেষ্টা করেছে দিনের পর দিন ঘুরেছে। মেহজাবীন কোনোভাবেই পাত্তা দেয়নি। তবে মেহজাবীন একদিন মানিককে ডেকে নিরালায় কথা বলে বুঝিয়েছে এ সম্ভব নয়। তাদের পরিবার ও সমাজ মেনে নিবে না। আর সে পরিবারের মতের বিরুদ্ধে যেতে পারবে না। তবুও মাঝে মাঝে মাসিক নেশা হলে কান্নাকাটি করে মেহজাবীনের জন্য।
অপু তখন ক্ষেপে যায় নেশার ঘোরে যাচ্ছেতাই বলে মানিককে। মানিকও তখন সেন্টু খায়। অপু রাগ হয়ে বলে তুই একটা ওগা। প্রেম আবার কিরে? সারাদিন একটা মেয়ের পিছনে লেগে থাকা। সময় নেই গময় নেই মেসেজ দেয়া, ফোন দেয়া, মন জুগিয়ে চলা উফ এসব আমি ভাবতেই পারি না।
এদের মাঝে শুভ্রই এগিয়ে, ও ছাত্রাবস্থায় বিয়ে করেছে। ওর সমস্যা নেই বাবার হিউজ টাকা। শুভ্রর বউ নীতা পড়ছে সলিমুল্লা মেডিকেলে! আরও দুবছর লাগবে শেষ হতে। নীতা খুব বাস্তববাদী মেয়ে। এত বাস্তববাদী মেয়েরা কীভাবে প্রেমে পড়ে বুঝা মুস্কিল। তবে নীতা অপু আর মানিককে তেমন ভালো চোখে দেখে না, ওর ধারণা ওর বর ভালো মানুষ। বরটাকে অপু নষ্ট করছে দিনে দিনে। শুভ্র যদি ওদের সঙ্গ ছেড়ে দেয় তাহলে গাঁজা, মদ এসব ছেড়ে দিয়ে নীতার মনের মতো হবে।
তবে শুভ্রর পক্ষে এই সব মেনে নেয়া সম্ভব নয়। নীতাকে ছেড়ে দিতে পারে। অপু আর মানিককে ছেড়ে দেয়া সম্ভব নয়। শুভ্র প্রকারান্তরে বলে দিয়েছে নীতাকে এইসব।
শুভ্র একদিন নীতাকে বলেছে তুমি খুব নিমকহারাম! অপু আর মানিক না থাকলে আমাদের বিয়েটা কখনো হত? অপুই তো সব ম্যানেজ করেছে। আজ যে আমাদের দুই পরিবারের মধুর সম্পর্ক এত শুধু অপু আর মানিকের জন্যই সম্ভব পর। এই একটি কারণেই নীতা বেশিদূর আগাতে পারে না শুভ্রর সাথে। তাই অনীহা সত্ত্বেও অপু আর মানিকক মাঝে মাঝেই রান্না করে খাওয়াতে হয়। অপু আর মানিক এ নিয়ে বেশ মজা করে। কারণ ওরা নীতা কি চায় সবই বুঝে! বুঝেও ওরা নীতাকে পাত্তা দেয় না। বয়স কম, একসময় ঠিক হয়ে যাবে ধরে নেয়। নীতা একটু স্বার্থপর টাইপের ওরা জানে।
তবে শুভ্র আগা-গোড়াই সহজ-সরল। তাই নীতা এত সহজেই বিয়ে করে ফেলতে পেরেছে। শুভ্রর বাবা একজন শিল্পপতি। নীতার ভালোবাসার মূল লক্ষ্যই ছিল শুভ্রর অগাধ সম্পত্তি আর অঢেল টাকা। সে তার লক্ষ্যে পৌঁছতে পেরেছে তার মিশন সাকসেসফুল। মোদ্দাকথা প্রেমে কেউ কেউ হিসাবী আর কেউ কেউ বেহিসাবী। তবে কে যে বেশি সুখী বলা মুস্কিল। তবে প্রেম তো প্রেমই। কখনো সুখী হওয়ার জন্য। কখনো দুঃখ পাওয়ার জন্য। কেউ প্রেমকে ধারণ করে একি প্রেমে থেকে যায় অনন্তকাল। আর কেউ কেউ অনবরত প্রেমকে বদলায়। তবে প্রেমে শরীর অপরিহার্য আর ভালোবাসায় হৃদয়। ভালোবাসার জন্য ভালোবাসার মানুষটিকে সারাক্ষণ জড়িয়ে থাকতে হয় না। কাছে কিংবা দূরে ভালোবাসা থেকে যায় একিরকমভাবে। আর প্রেমের জন্য চাই শরীরের নিবিড় ছোঁয়া। আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা!
মিথিলা মোবাইলটা হাতে নিয়ে ইতস্তত করল অপুকে ফোন করবে কিনা! ভাবতে ভাবতে একসময় ফোন দিয়েই দিল। ওপারে ফোন বেজেই চলছে রিসিভের কোনো সম্ভাবনা নেই। ফোনটা বেজে বেজে এক সময় ক্লান্ত হয়ে থেমে গেল। মিথিলাও আজ মরিয়া হয়ে উঠল ফোন না ধরা পর্যন্ত কল দিয়েই যাবে।
এক সময় অপু ফোন করে বলল হ্যালো!
অপু ভাই আমি মিথিলা।
ও মিথিলা কেমন আছো? সব ঠিক ঠাক?
না ঠিক নেই! অপু ভাই একটা সমস্যা।
বলো শুনি কী সমস্যা?
আমার বিয়ে ঠিক করেছে আব্বু! আমি এ বিয়ে করব না।
না না কেন? বিয়ে করবে না কেন?
তোমার আব্বু তো আমার সাথে বিয়ে মেনে নিবেন না। তুমি বিয়েটা করে ফেলো। দেখো বিয়ে হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। এই সব তোমার ঘোরের প্রেম ভুলে যাবে।
তো ছেলে কী করে?
আমেরিকা থাকে। সফট ওয়ার ইঞ্জিনিয়ার।
এই সামনের মাসে আসবে তবে আমি বিয়ে করব না! বিয়ে আমি আপনাকেই করব! কথাটি আপনাকে জানিয়ে রাখলাম।
আরে না না ছেলে তো দারুণ লোভনীয়। এই বিয়েটা মিস করোনা বোকামি হবে। আমি এমনিতেই ভ্যাগাবণ্ড। গাঁজা খাই চালচুলো নেই। তোমাকে বিয়ে করে আমি কোথায় রাখব? ছোট থেকে তুমি এত আদরে বড় হয়েছ আমার সাথে তোমাকে মানায় না।
সে আমি দেখব। শুধু আপনি হ্যাঁ বলেন। বাকিটা আমি ম্যানেজ করব।
কীভাবে? পালাবে? কিন্তু আমি তো পালাব না। বিয়ের আসর থেকে তুলে নিয়ে যেতে পারি বলে অপু তার স্বভাবসুলভ হাসিতে হেসে উঠল!
অপু ভাই আমি কিন্তু সিরিয়াস। এভাবে হেসে উড়িয়ে দিবেন না। না হলে আমি কিন্তু মরে যাব এই আমার শেষ কথা। বলে মিথিলা ফোনটা কেটে দিল।
অপু মিথিলার কথা শুনে ভয় পেয়ে গেল। সত্যি সত্যি মেয়েটা আবার গলায় দড়ি টড়ি দিবে নাতো! সত্যি যদি হয় নিজেকে কি কখনো ক্ষমা করতে পারবে? অপু কখনো মেয়েদের হেন্ডেল করেনি কীভাবে কী করতে হবে বুঝতেও পারছে না। শুভ্র আর মানিকের সাথে সব খুলে বলতে হবে। অপু ব্যাপারটা মামুলি ভেবে আর এই ব্যাপারটা শেয়ার করেনি। অপু প্রেম নিয়ে কথাই বলেনি কখনো, সব সময় এড়িয়ে গেছে। এখন দেখছে ব্যাপারটা যতটা সহজ ভেবেছিল ততটা না। অপু ভেবেছিল মিথিলার খামখেয়ালিপনা ভুলে যাবে। ভুলে যাওয়ার বদলে আরও দেখছি জাঁকিয়ে বসছে। প্রেম কি এভাবেও হয় একতরফা? নাকি অপুরও মৌন সম্মতি আছে। অপু কী করবে বুঝতে পারছে না। শুধু কানে বাজছে ‘মরে যাব’। অপু উপায়ান্তর না দেখে শুভ্র ও মানিককে বিকেলে দেখা করতে বলল। ওদের সাথে কথা বলেই ঠিক করতে হবে যা করার। কথা নেই বার্তা নেই হুট করে কীভাবে বিয়ে করে মানসিক প্রস্তুতি ছাড়া? তাও আবার মিথিলার মতো মেয়েকে। সাহসী, একগুয়ে ঝিমঝাম অপুর সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। ঘটনা যেন ক্রমেই অপুর হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। মিথিলাই যেন অপুকে নিয়ন্ত্রণ করছে। অপু কি দুর্বল হয়ে পড়ছে? মিথিলা যা বলছে তাই যেন তাকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতে হচ্ছে। অপুও কি মিথিলার প্রেমে পড়েছে? না হলে ‘মরে যাব’ কথাটির এত গুরুত্ব দিচ্ছে কেন? অপুর শুধু মনে হচ্ছে না, না মরতে দেয়া যাবে না মিথিলাকে বাঁচাতে হবে যে কোনোভাবেই।
দেখতে দেখতে ইমতিয়াজের আসার সময় হয়ে গেল। মিথিলাদের বাসায় বিয়ের তোড়জোড় চলছে জোরেসোরে। রব্বানী সাহেবের ঘুম হারাম। জুলাইয়ের সাত তারিখ ছেলে দেশে আসবে। ১০ তারিখ দেখতে আসবে ইমতিয়াজ পারিবারিকভাবে মিথিলাকে। সব ঠিক থাকলে সে দিনই বিয়েটা সেরে ফেলতে চান রব্বানী সাহেব। তিনি কাজিকে বলে রেখেছেন গোপনে। শুভস্য শীঘ্রম। শুভ কাজে দেরী করা যাবে না। মিথিলা আবার বরিশাল যাওয়ার আগেই তিনি বিয়ের ঝামেলাটা চুকিয়ে ফেলতে চান। মিথিলা শুধু জানে ইমতিয়াজ তাকে ১০ তারিখ দেখতে আসবে। আর ওর আব্বাকে বিশ্বাস নেই ওই দিনই মিথিলাকে বিয়েও দিয়ে দিতে পারে। আগে থেকে কিছুই বলা যায় না। তবে রিস্কও নেয়া যাবে না। আর এমনটি হলে মিথিলা আব্বুর ভয়ে কবুল বলেও ফেলতে পারে। তাহলে সব শেষ। মিথিলা অস্থির। কিছু ভালো লাগছে না। আম্মু খালাদের নিয়ে শপিং করা শুরু করে দিয়েছে। শাড়ি গহনা রীতিমতো বিয়ের ব্যাপারস্যাপার মনে হচ্ছে মিথিলার কাছে। কিন্তু মিথিলাকে জানানো হচ্ছে শুধু দেখতে আসবে।
উপায়ান্তর না দেখে মিথিলা আবার অপুকে ফোন দিল। ফোনে জানাল ওরা ১০ তারিখ দেখতে আসবে। আমি কিন্তু চলে আসব। আমি এ বিয়ে কিছুতেই করব না।
অপু বুঝতে পারছে না কী বলবে? অপু বারবার বোঝানোর চেষ্টা করছে আরে না, না এভাবে পাগলামী করোনা ভীষণ বিপদ হয়ে যাবে। তা ছাড়া তোমার আব্বুর মান সম্মানও জড়িত। মিথিলা এবার খুব কঠিনভাবে জানতে চাইল আপনি শুধু বলেন আমাকে ভালোবাসেন কিনা? হ্যাঁ বা না! অপু ফাঁপড়ে পড়ে গেল, ও ভয়ে বলল হুম বাসিতো! তোমাকে ভালো না বাসার কোনো কারণ নেই। এতদিন আমি জানতাম না বিষয়টা নিয়ে ভাবিনি। বুঝছ আমি প্রেম-ট্রেম পারি না। ওইসব শুভ্র আর মানিক পারে। আমাকেও যে কেউ ভালোবাসতে পারে এমন উড়নচণ্ডিকে এ আমার চিন্তারও বাইরে। মিথিলা বলল আমি শুধু এটুকু কনফার্ম হতে চাইছি আপনি আমাকে ভালোবাসেন কিনা? যা জানার ছিল জেনে গেছি।
অপু ভয়ে ভয়ে বলল কী জানলে?
মিথিলা বলল আপনি আমাকে ফাইনালি ভালোবাসেন। বলে ফোনটা কেটে দিল।
অপু শুভ্র আর মাণিকের সাথে সব খুলে বলল। শুভ্র আর মানিকতো সব শুনে লাফিয়ে উঠল। অপুর ঘাড়েও যে প্রেমের ভূত চাপতে মারে ওরা তো টাস্কি খেয়েছে শুনে। শুভ্র বলল এত দেখি মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি।
অপু বলল আমার ভয় হচ্ছে মিথিলা কী জানি কী করে বসে। যা পাগল আর ইমোশনাল! আমি কাল ভয়ে বলেছি ভালোবাসি! রীতিমতো আমাকে রিমান্ডে নিয়ে রাজি করিয়ে ছাড়িয়েছে।
মানিক হাসতে হাসতে বলে তুই আসলে চুপা রুস্তম। তুই সেদিন থেকেই ভালোবাসতে শুরু করেছিস যেদিন ও মাথাঘুরে পড়ে গিয়েছিল।
শুভ্র বলল দোস্ত তুই এমন একটা খবর কীভাবে চেপে গেলি? ভাবতেই পারছি না ইন্টারেস্টিং।
অপু বলল ধুর এসব বাদ দেতো। এখন আমাকে বল কী করতে হবে? ১০ তারিখ নাকি দেখতে আসবে। সেদিন বিয়ে হলে হয়েও যেতে পারে বলল মিথিলা। বিয়েটা হয়ে গেলেই ভালো সব দিক দিয়েই রক্ষা পাই।
মিথিলা তো আর বলেনি ১০ তারিখের আগেই বিয়ে করতে হবে। হয়তো ১০ তারিখের পর একটা সিদ্ধান্ত নিবে। আগে থেকে চিন্তিত হয়ে লাভ নেই! যখন যা হবে ফেস করা যাবে এ নিয়ে ভাবিস না।
আজ ১০ তারিখ। মিথিলাদের বাড়িতে একটা সাজ সাজ রব। সন্ধ্যায় ওরা আসবে। দুপুরের দিকেই মিথিলার আম্মু মিথিলার ছোট খালা ও খালাতো বোন মিতুকে সাথে পাঠিয়ে দিলেন। পেডিকিউর, মেনিকিউর, ফেসিয়াল সব করতে বেশ সময় লেগে যাবে! আম্মু বলেছেন চুল আজ ছাড়া রাখতে তাই শ্যাম্পুও করতে হবে। মিথিলা খুব আগ্রহ সহকারে ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো বাড়তি কিছু টাকা ও সাথে করে নিয়ে নিল। পার্লারে বসে সে খুব মনযোগ দিয়ে সাজলো আর মাঝে মাঝেই আয়নায় নিজেকে পরখ করে নিচ্ছে কেমন লাগছে। ড্রেসআপ এর পর ও বলল আমি একটু ওয়াশ রুম থেকে আসি। বলে সে ওয়াশ রুমে গিয়ে উবার কল করে সবার অলক্ষে পার্লার থেকে বেরিয়ে আসলো। উবারে বসেই অপুকে কল দিল। অপু ভাই আমি রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ছি আপনার প্রিয় জায়গায় চারুকলায় আসতেছি। এক্ষুনি চলে চলে আসুন কুইক বলেই মিথিলা ফোনটা কেটে দিল।

অপু লাঞ্চের পর ঘুমিয়েছিল। ঘুম থেকে উঠে এক লাফে কোনোরকম টি-শার্ট একটা পরে বাইকটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল চারুকলার উদ্দেশ্যে। অপু মনে মনে প্রমাদ গুনল আল্লাজানে কী আছে কপালে। মিথিলা কী করতেছে কে জানে? অপু শাহবাগের কাছাকাছি এসে ফোন দিল। মিথিলা বলল অপু ভাই আমি পৌঁছে গেছি চারুকলার ভিতরে আছি। অপু মিথিলাকে দেখে থ। বলে কী ব্যাপার সেজেগুজে যে। ও বলল মনে নেই? আজ ১০ তারিখ ওরা আসবে আজ আমাকে দেখতে। আমি পার্লার থেকে চলে আসছি। অপু বলল ও মাই গড! এখন কী হবে? মিথিলা বলল তাড়াতাড়ি কাজি অফিস। আব্বু ধরে নিয়ে গেলে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিবে।
অপু বলল আগে শুভ্রর বাসায় যাই। মিথিলা বলল না আগে কাজি অফিস! উপায়ান্তর না দেখে অপু শুভ্র আর মানিককে জানালো! ওরা বলল তুই যা আমরা আসছি। অপু মিথিলাকে নিয়ে কাজি অফিসে চলে গেল। অপুর গায়ে একটা টি-শার্ট আর পায়ে হাওয়াই চপ্পল।
শুভ্র আর মানিক হাওয়ার বেগে রওয়ানা হলো এলিফ্যান্ট রোড থেকে শেরওয়ানি, পাগড়ি ও নাগরা কিনে। ওরা পৌঁছে মিথিলাকে দেখে আত্মহারা। এতো দেখি চাঁদের মেয়ে চাঁদ সুলতানা চাঁদের চেয়েও সুন্দর। ওরা মিথিলার কথামতো অপুকে তাড়াতাড়ি পোশাক পাল্টিয়ে বিয়েটা সেরে নিল। মোবাইলেই কয়েকটি ছবি তোলা হলো ফটাফট সাক্ষি হিসেবে।
যার বিয়ে হওয়ার কথা রাজকীয়ভাবে মহা ধুমধামে সে কিনা চুপিসারে বিয়ে করছে কাউকে না জানিয়ে।
শুভ্র শুধু বলল কেউ এভাবেও একতরফা প্রেম করে বিয়ে করতে পারে এবসার্ড।
মানিক বলল ঢাকায় থাকা ওদের জন্য নিরাপদ না, ওদের দেশের বাইরে পাঠিয়ে দে হানিমুন করে আসুক। মানিক চলে গেল ট্রাভেলিং এজেন্সিতে। শুভ্র ওদের নিয়ে বাসায় চলে আসলো বনানীতে। শুভ্রর বউ নীতা অপু আর মিথিলাকে দেখে ভ্যাকাচ্যাকা খেয়ে গেল। ও ঘুণাক্ষরেও আগে থেকে কিছু জানল না হঠাৎ করে একেবারে বউ সমেত অপু ভাই। এও কি সম্ভব!
মানিক ২/৩ ঘণ্টা পর ফিরে এসে বলল টিকেট কনফার্ম থাইল্যান্ড। ব্যাংকক থেকে ফুকেট। কাল সকালেই ফ্লাইট।
নীতা খুব অল্প সময়ের ভিতরেই খাবার বাসরঘর সব সব রেডি করে ফেলল।
রাতে দুজনে তাদের জন্য নির্ধারিত ঘরে এসে ঢুকল। মিথিলা দেখেই মুগ্ধ। বাঃ নীতা ভাবিতো অল্প সময়ে খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে। আমার খুব ভালো লাগছে। অপু মৃদু হেসে একটা সিগারেট ধরাল। মিথিলা এক নিমিষে অপুর ঠোঁট থেকে সিগারেটটা নিজের হাতে নিয়ে মুচকি হেসে বলল আজ থেকে আমি আপনার পার্সোনাল সিগারেট এটা নয়। এখন থেকে আমিই সারাক্ষণ ঝুলে থাকব ঠোঁটে। বুঝলেন মিঃ অপু হাসান!

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়