কাতারকে পারিবারিক ভিসা সহজ করতে অনুরোধ

আগের সংবাদ

কারা এই মগ লিবারেশন আর্মি

পরের সংবাদ

বাজারের আগুনে গ্যাসের ইন্ধন : দাম বাড়ানোর প্রস্তাব অযৌক্তিক > নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে > জনজীবন হবে বিপর্যস্ত

প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দেব দুলাল মিত্র : নিত্যপণ্যের দাম চড়ছে অসহনীয়ভাবে। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সীমিত আয়ের মানুষ। বাজার সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। এর মধ্যেই গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলাসহ বিতরণ কোম্পানিগুলো। আবাসিকসহ সব খাতে ১১৭ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব তাদের। এ লক্ষ্যে গণশুনানিও শুরু করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। করোনা মহামারির রেশ কাটতে না কাটতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে এখন সারা বিশ্ব টালমাটাল। যুদ্ধের প্রভাবে সব পণ্যের দাম বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। এছাড়া রমজান মাস সামনে রেখে আমাদের দেশে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় নামেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। এই প্রেক্ষাপটে বাজারের আগুনে ঘি ঢালবে গ্যাসের বর্ধিত দাম। এই উদ্যোগ হবে ‘মড়ার উপর খাড়ার ঘা’য়ের সামিল- এমন মন্তব্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে নিতান্তই অযৌক্তিক। এতে নিত্যপণ্যের দাম আরো বাড়বে এবং জনজীবনে নেমে আসবে চরম বিপর্যয়।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, এই মুহূর্তে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব অগ্রহণযোগ্য এবং এটা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। এই প্রস্তাব আমলে না নেয়ার জন্য ক্যাবের পক্ষ থেকে কমিশনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি। পেট্রোবাংলা ও গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব পুরোপরি অযৌক্তিক। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত খতিয়ে দেখা গেছে, বিগত বছরগুলোয় পেট্রোবাংলা অনেক মুনাফা করেছে। রাজস্ব বকেয়া ছিল। কিন্তু বিইআরসির কাছে দেয়া তাদের প্রস্তাবে এসব তথ্যের বিশ্লেষণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তিনি আরো বলেন, স্পর্ট মার্কেট থেকে কেনা গ্যাসের দাম মাত্র ৫ থেকে ৬ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু তারা সব গ্যাসের দাম ১১৭ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে- এটা একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। তারা গোঁজামিল দিয়ে হিসাব দেখাচ্ছে, এসব হিসাব বাস্তবসম্মত নয়। প্রয়োজন হলে ওই পরিমাণ এলএনজি আমদানি না করার পক্ষে আমরা। তবুও দাম বাড়ানো উচিত হবে না।
জ¦ালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, এই মুহূর্তে গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগকে আমি মোটেই মেনে নিতে পারি না, আমি চাই না। করোনার দুই বছরে মানুষ অনেক বেশি দরিদ্র হয়েছে। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তেলের দাম আরো বেড়েছে। এখন গ্যাসের দাম বাড়ালে আমাদের প্রতিটি জিনিসের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। গ্যাসের দাম বাড়ালে পণ্য পরিবহন, বাস ভাড়া, সিএনজি ভাড়া বাড়ার আরো একটি বড় ঢেউ আসবে। সব জিনিসের দাম বাড়বে। জনগণের দুর্ভোগ আরো বাড়বে।
তিনি আরো বলেন, এই মুহূর্তে গ্যাসের দাম না বাড়িয়ে স্থানীয়

পর্যায়ে উত্তোলন বাড়ানোর চেষ্টা করা উচিত ছিল। এটা দুইভাবে করা যেতে পারে- প্রথমত, দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে। এতে একটু সময় লাগলেও গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। তাতে সমস্যার সমাধান হবে। দ্বিতীয়ত, অল্প সময়ের মধ্যে চাইলেও ব্যবস্থা আছে। অনেক কূপ আছে যেগুলো স্বাভাবিক উৎপাদনের পর বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু এ ধরনের কূপে আরো বাড়তি গ্যাস রয়ে গেছে। এগুলোকে ‘ওয়ার্ক ওভার’ বলা হয়। এ ধরনের ওয়ার্ক ওভার থেকে একত্রে বেশ ভালো পরিমাণ গ্যাস পাওয়া যাবে। পরিকল্পনা করে এগিয়ে গেলে এভাবেও সমস্যার সমাধান হবে। এছাড়া সিস্টেম লস কমাতে পারলে গ্যাসের সাশ্রয় হবে। সিস্টেম লস পুরোপুরি বন্ধ করতে পারলেতো সবচেয়ে ভালো হয়। এটা করতে পারলেও গ্যাসের স্বল্পতা হবে না। সেক্ষেত্রে এলএনজির ওপর এতোটা নির্ভরতা না করলেও হবে।
বাম জোটের সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, মানুষ যেখানে বাজারের আগুনে পুড়ে মরছে, তখন অন্যায়ভাবে গণশুনানির নামে গণনাটকের মাধ্যমে গ্যাসের দাম বাড়ানোকে জায়েজ করে নেয়া হচ্ছে। গ্যাস-বিদ্যুৎ খাতে চুরি, দুর্নীতি-অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার দায়ভার ভোক্তাদের ওপর চাপানোর চেষ্টা হচ্ছে। এছাড়া আছে বড় ধরনের সিস্টেম লস। ২৫ শতাংশ সিস্টেম লস হচ্ছে। এসব বিষয় তারা লোকসান দেখায়। সব জিনিসের অগ্নিমূল্যের মধ্যে গ্যাসের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা মানুষের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। এমন এক সময়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে, যখন ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লাভে আছে। করোনার কারণে সাড়ে ৩ থেকে ৪ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে এসেছে। ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। এই মুহূর্তে গ্যাসের দাম বাড়ানোর পরিবর্তে কমানোর জন্য গণশুনানি করার ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল।
তিনি বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থাপনাগত সংকট আছে। গ্যাস উত্তোলনের ক্ষেত্রে আরো বেশি গুরুত্বারোপ করা হলে আজ গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন হতো না। এখন যেটা করা হচ্ছে, এটা অন্যায়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়