কাতারকে পারিবারিক ভিসা সহজ করতে অনুরোধ

আগের সংবাদ

কারা এই মগ লিবারেশন আর্মি

পরের সংবাদ

দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর : আলোর পথে যাত্রা শুরু

প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সোমবার দেশের বৃহত্তম ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধনের পর দেশের শতভাগ জনগণকে বিদ্যুতের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন। এ সময় তিনি বলেন, মুজিববর্ষে দেশের প্রত্যেকটি ঘর আলোকিত করেছে সরকার, এটাই সব থেকে বড় সাফল্য। ওয়াদা করেছিলাম, প্রতিটি মানুষের ঘর আলোকিত করব। প্রতিটি মানুষ আলোকিত হবে। আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছি। গতকাল পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন শেষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি (প্রা.) লিমিটেডের মহাপরিচালক (ডিজি) ইঞ্জিনিয়ার এ এম খুরশেদুল আলম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষে বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে আমরা আলো জ্বালাতে পারলাম এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। আজকের দিনটা সেই আলোর পথে যাত্রা শুরু যে সফল হয়েছে সেই দিন। এজন্য সবাইকে তিনি সহযোগিতার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
দুর্গম এলাকাতেও বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি আমরা সোলার প্যানেল করছি। যে সমস্ত এলাকা দ্বীপাঞ্চল-ইতোমধ্যে আমরা রাঙাবালি, নিঝুম দ্বীপ, স›দ্বীপসহ বিভিন্ন এলাকায় নদীর নিচ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবল করে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। আর যেখানে গ্রিড লাইন নাই সেখানে আমরা সোলার প্যানেল করে দিচ্ছি। আমাদের পাহাড়ি অঞ্চল, আমাদের হাওর-বাঁওড় অঞ্চল, আমাদের দুর্গম এলাকা প্রতিটি জায়গায় কিন্তু আমরা সোলার প্যানেল দিয়ে বিদ্যুৎ দিয়ে দিচ্ছি। অর্থাৎ কোনো ঘর অন্ধকারে থাকবে না। প্রতিটি মানুষের জীবন আলোকিত থাকবে। এটাইতো আমাদের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

গত ১৩ বছরে দেশকে এগিয়ে নেয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ১৩ বছর একটানা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অব্যাহত রয়েছে। এর মাঝে ঝড়ঝঞ্ঝা অনেক এসেছে, বাধা এসেছে। কিন্তু সেসব বাধা আমরা অতিক্রম করেছি। অতিক্রম করেও আমরা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে পেরেছি বলেই আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।
কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে দেশে একশ স্থানে অর্থনৈতিক অঞ্চল করার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই এই দেশ এগিয়ে যাক। আজকে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। একশ অর্থনৈতিক অঞ্চল আমরা গড়ে তুলেছি। দক্ষিণাঞ্চল সবসময় অবহেলিত। রাস্তাঘাট, পুল-ব্রিজ ব্যাপকভাবে করে দিয়েছি।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল সেন্টার তৈরি করে দিয়েছি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান সবদিকেই আমরা ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি, যা জাতির পিতা করতে চেয়েছিলেন।
দেশের দক্ষিণাঞ্চল যে এক সময় অবহেলিত ছিল, সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এ অঞ্চলের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব এলাকায় এক সময় ঝড়, জলোচ্ছ¡াসে পানি এদিক থেকে ওদিকে বয়ে যেত, মানুষের একটা মাত্র ফসল, তাও নষ্ট হলে দুর্ভিক্ষে পড়তে হতো। আল্লাহর রহমতে আর সেই দুর্ভিক্ষ হবে না। আর সেই মানুষের কষ্ট থাকবে না। আজকে মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচতে পারবে, উন্নত জীবন পাবে। জাতির পিতার স্বপ্ন আমরা পূরণ করব। এটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।
যুবসমাজের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে উল্লেখ প্রধানমন্ত্রী বলেন, লেখাপড়া শিখে নিজেরাও উদ্যোক্তা হতে পারবে। নিজেরা উদ্যোক্তা হয়ে নিজেরাই ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে। সেইভাবে যুবসমাজকে চিন্তা করতে হবে। তবেই দেশ এগিয়ে যাবে। মহৎ কাজের জন্য মহান ত্যাগ প্রয়োজন। এটাও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কথা। সেই কথাটা স্মরণ রেখেই- যে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে গিয়ে আমার বাবা জীবন দিয়ে গেছেন, মা জীবন দিয়ে গেছেন, ভাইয়েরা জীবন দিয়েছে। আমি তাদের স্বপ্নপূরণ করে এই বাংলাদেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা।
তিনি বলেন, জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর তার নাম মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। ইনশাআল্লাহ আর সেই নাম কখনো কেউ মুছে ফেলতে পারবে না। খুনি আর ওই যুদ্ধাপরাধীরা আর কখনো এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। মানুষ নিজেই আজকে জেগেছে, উঠে দাঁড়িয়েছে এবং এগিয়ে যাবে।
এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগসূত্র জানায়, ২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী ছিল ৪৭ শতাংশ। গত ১৩ বছরে ৫৩ শতাংশ বেড়ে এখন শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। সম্ভাব্য সব এলাকায় সঞ্চালন লাইন স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে সরকার। একেবারে দুর্গম এলাকাগুলোতে সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। ২০০৯ সালে গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৮ লাখ। গত ১৩ বছরে ৩ কোটি ১৩ লাখ বেড়ে বর্তমানে বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ৪ কোটি ২১ লাখ।
২০০৯ সালে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট, বর্তমানে এ ক্ষমতা ২৫ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াট। ২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিল ২৭টি, বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্র ১৫০টি। ১৩ হাজার ২১৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরো ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। ২০০৯ সালে বিদ্যুতের বিতরণ লাইন ছিল ২ লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটার, বর্তমানে ৬ লাখ ২১ হাজার কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। দুর্গম এলাকার মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনতে ৬০ লাখের বেশি সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে।
এর আগে বেলা পৌনে ১১টার দিকে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। করোনা মহামারি শুরুর পর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ছাড়া দেশের অন্য কোথাও এটিই তার প্রথম সফর। কলাপাড়ায় পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুলিশ সদস্যরা গার্ড অব অনার দেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কোল জেটিতে যান। রামনাবাদ নদীর মোহনায় বর্ণিল সাজে সজ্জিত ২২০ রঙিন পাল তোলা নৌকা থেকে পতাকা নাড়িয়ে ও সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করে নেয় পটুয়াখালীবাসী। এরপর প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষসহ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিদর্শন করেন। প্রধানমন্ত্রী পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন এবং নাম ফলক উন্মোচন করেন। এ সময় বেলুন উড়ানোর পাশাপাশি এ বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন উপলক্ষে এক হাজার ৩২০টি পায়রা উড়ানো হয়। উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী আলোচনা পর্বে অংশ নেন।
দেশের সবচেয়ে বড়, সর্বাধুনিক প্রযুক্তির পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র : কলাপাড়ার ধানখালীর পায়রাতে নির্মিত সর্বাধুনিক আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির কয়লাভিত্তিক এ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। পায়রায় কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালুর মধ্য দিয়ে ২০২০ সালেই বাংলাদেশ আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল ক্লাবে প্রবেশ করে। আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশ বিশ্বের ১৩তম দেশ। এশিয়ায় সপ্তম ও দক্ষিণ এশিয়াতে বাংলাদেশ ছাড়া শুধু ভারতে এ ধরনের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিকানায় যৌথভাবে রয়েছে বাংলাদেশ ও চায়না পাওয়ার কোম্পানি (বিসিপিসিএল)। বাংলাদেশের নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল) ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি এক্সপোর্ট এন্ড ইমপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সমান অংশীদারে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়