ভালোবাসা এখন ‘ভার্চুয়াল’, আবেগেও পড়েছে টান : তবুও বসন্ত জেগেছে বনে

আগের সংবাদ

সংস্কৃতির চর্চা জোরদারের তাগিদ > বাঙালির প্রাণের মেলার উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী : হাতে নিয়ে বই পড়ার আনন্দ অনেক

পরের সংবাদ

সাংবাদিকতার প্রতিপক্ষ এবং বিবর্তন

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বর্তমান যুগে সাংবাদিকতার ব্যাপ্তি ও প্রভাব বিস্ময়করভাবে বিস্তৃত। মিডিয়া বা সংবাদপত্র আজ কেবলই ইন্ডাস্ট্রি বা শিল্প নয়- মিডিয়া আজ অসীমান্তিক- আন্তর্জাতিক- যা সব জাতি, সমাজ ও বিশ্বপরিমণ্ডলকে প্রকাশ করে, অনেক ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করে এবং প্রভাবিত করে। এই কিছুকাল আগেও সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমের প্রকাশনা ছাপাখানায় কেন্দ্রিক ছিল; আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির বিস্ময়কর অগ্রগতিতে সে ব্যাপ্তি আজ রাষ্ট্রের সীমানাই কেবল ছাড়েনি- সম্প্রসারিত হয়েছে অভূতপূর্ব; যুগের গতির সাথে পাল্লা দিয়ে ছড়িয়েছে গোলার্ধের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। দৈনিক ও সাপ্তাহিকের ‘অনলাইন এডিশন’ আজ এমন নতুন সংযোজন- যা গণমাধ্যমের পাঠক সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে।
এছাড়া সংযোজিত হয়েছে স্যাটেলাইট টিভি, অনলাইন টিভি, এফএম রেডিও, কমিউনিটি ও সিটিজেন রেডিও এবং ব্লগ- যা গণযোগযোগের ক্ষেত্রে বিপ্লব এনেছে, একই সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের পূর্বেকার নিয়ন্ত্রণ ও কণ্ঠরোধের পুরনো মানসিকতাগুলোকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অসাড় প্রমাণিত করেছে।
মোটকথা, উগ্র-ধর্মকেন্দ্রিক বা অগণতান্ত্রিক, স্বৈরতন্ত্রী কিছু রাষ্ট্র ও অঞ্চল বাদে, সংবাদমাধ্যম আজ সার্বিকভাবে পূর্বেকার যে কোনো সময়ের চাইতে স্বাধীনতামুখী এবং সার্বভৌমত্ব প্রত্যাশী- যা এক তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি। সংকট, সীমাবদ্ধতা শেষ হয়েছে, নিগ্রহ-নিপীড়ন মুক্ত হয়ে সাংবাদিকতার পেশা রাহুমুক্ত হয়েছে- এমনটি বলার অবকাশ অবশ্য নেই। তবে পরিস্থিতির তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি স্বীকার করা সঙ্গত হবে বলে আমার বিশ্বাস।
এত সব সাফল্য বা অগ্রগতি তুলে ধরেও বর্তমান যুগের সাংবাদিকতার কিছু সবল প্রতিপক্ষ আছে। আমার বিশ্বাস- এসবের আলোচনা বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার স্বার্থে প্রাসঙ্গিক হবে।
আমরা সকলেই জানি স্বাধীন সাংবাদিকতার মূল প্রতিপক্ষ এককালে ছিল (১) রাষ্ট্র। বেশিরভাগ রাষ্ট্রশক্তি বা শাসক গোষ্ঠী তাদের সমালোচনা, অপকর্ম, দুর্নীতি বা অপশাসন উদঘাটন কিংবা অগণতান্ত্রিক বা অমানবিক কর্মকাণ্ডগুলোর প্রচার সইবার মানসিকতা রাখে না। কাজেই স্বাধীন সাংবাদিকতা তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিগণিত হবে- এটিই স্বাভাবিক।
আমরা যদি কেবল দক্ষিণ এশীয় রাষ্ট্রগুলোর সাংবাদিকতার সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করি, দেখতে পাই, অনেক রাষ্ট্রই নিবর্তনমূলক আইন প্রবর্তন করেছে, নির্যাতনমূলক মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। কিছু রাষ্ট্র সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মকে রাষ্ট্রের চালিকাশক্তি বা মূল নীতি বিবেচনা করায় গণমাধ্যমের স্বাধীন বিচরণ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সুখের বিষয় গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও সিভিল সোসাইটির বিকাশ, তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত এবং অগ্রযাত্রা এবং প্রতিটি জনগোষ্ঠীর মুক্তবুদ্ধিবৃত্তি ও তার মনোজাগতিক বিকাশ- এ প্রবণতার বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ নিয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধ বা মুক্ত তথ্যপ্রবাহ থেকে মানুষকে আর বঞ্চিত রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তথ্য লাভের অধিকার আজ মানুষের স্বীকৃত ব্যক্তিক, সামাজিক ও নাগরিক অধিকার- যুগের দাবি।
এরপরও বলতে হবে যুগের বিবর্তনে রাষ্ট্রশক্তিই স্বাধীন সাংবাদিকতার একমাত্র প্রতিপক্ষ থাকেনি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বহুবিধ নতুন প্রতিপক্ষ- যারা শক্তিধর এবং কার্যকরভাবে মুক্ত, স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধ করার ক্ষমতা রাখে, নিয়ন্ত্রণ ও বিধিনিষেধে আবদ্ধ করে। এসব প্রতিপক্ষ কখনো (২) অগণতান্ত্রিক শাসক, (৩) কখনো ক্ষমতার অবৈধ দখলদার, (৪) কখনো প্রতাবশালী করপোরেট পুঁজি বা ‘বিগ বিসনেস’, (৫) কখনো সুসংঘবদ্ধ চোরাচালানিচক্র, (৬) কখনো উগ্রধর্ম বা অসহিষ্ণু আদর্শবাদী গোষ্ঠী আবার কখনো (৭) উগ্রবাণিজ্যবাদী।
সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠানের অবমূল্যায়ন (৮) বা মালিক-সম্পাদকের দুর্ভাগ্যজনক বিকাশও বস্তুনিষ্ঠ বা বলিষ্ঠ সাংবাদিকতার এক নতুন প্রতিবন্ধকতা।
কিছুকাল আগে সংবাদমাধ্যমের অধিকার সংরক্ষণকারী একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন বিশ্ব সংবাদ মাধ্যমের ৪০টি ‘শত্রæ তালিকা’ প্রকাশ করেছে- তাতে যেমন আছে নানা দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতার নাম, তেমনি আছে জঙ্গি ধর্মীয় নেতা ও চরমপন্থি গোষ্ঠীর নাম। নিউইয়র্কভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট’ এমন ১২টি দেশের নাম প্রকাশ করেছে, যেখানে সাংবাদিক হত্যার বিচার হয়নি। গত দুই দশকে কমপক্ষে ১ হাজার সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন! একের পর এক নিহত, নিগৃহীত হয়েছেন বহু সাহসী সম্পাদক ও সংবাদকর্মী- যা এক বেদনাদায়ক অধ্যায়।
এসবই একমাত্র নয়, মুক্ত ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার আরো একটি (৯) প্রতিপক্ষ আছে- যা পাঠককে সত্য জানা থেকে বঞ্চিত করে। সংবাদমাধ্যমের সাথে জড়িতদের গোষ্ঠীস্বার্থ, ভিন্নধর্মী রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও বিভেদ আমাদের দেশীয় সাংবাদিকতার প্রেক্ষাপটে খুব ছোট প্রতিপক্ষ বিবেচনা করা সঠিক হবে না।
সংবাদমাধ্যম আজ বড় পুঁজির বড় শিল্প। রাশি রাশি টাকা ছাড়া কোনো মিডিয়া বা সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠা বা পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তবে পুঁজির পূজাতেই যদি সাংবাদিকতা নিয়ন্ত্রিত হয় তাহলে তা হয় দুর্ভাগ্যজনক। ব্যবসা বা তেজারতি সংবাদমাধ্যমের মূল লক্ষ্য হলে সাংবাদিকতার বৃন্তচ্যুত, লক্ষ্যচ্যুত হয়। (১০) এ প্রবণতা সৎ বা বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার এক বড় প্রতিপক্ষ। কারণ সংবাদপত্র বা সংবাদমাধ্যম সঠিক তথ্য সরবরাহে সমাজকে চলমান ঘটনা ‘এন্টারটেইন’ করে, ‘ইনফর্ম’ করে, ‘এজুকেট’ করে, সে কারণে নিছক ব্যবসার স্বার্থে এর লক্ষ্য নির্দিষ্ট হলে তা হয় দুর্ভাগ্যজনক।
সাংবাদিকতা সত্যকে প্রচার করে, সামাজিক দায়বদ্ধতা, মানবাধিকার সংরক্ষণ, অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধাচারণ, দুর্বল জনগোষ্ঠীর পক্ষধারণসহ নৈতিকতার ভিত্তি আছে বলে এ পেশা সামাজিক ও মানবিক উন্নয়নের পথে সমাজকে এগিয়ে নেয়, অনুপ্রাণিত করে। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় দেশগুলোতে মানুষে মানুষে, গোত্রে গোত্রে, বর্ণে বর্ণে, ধর্মে ধর্মে বিভেদকারীর সংখ্যা নগণ্য নয়। এ বিভেদ কখনো ইতিহাস আশ্রিত, কখনো ভূখণ্ডগত, ধর্মগত কখনো আবার লিঙ্গ ও ভাষাগত। অবশ্য কারো কারো কাছে এ বিভেদ তেজারতি বা রাজনীতি। ‘আমরা’ এবং ‘ওরা’- দুর্ভাগ্যক্রমে এটিই কারো কারো দৃষ্টিভঙ্গি! অথচ কে না জানি, এ বিভেদ যত বাড়ে ততই ব্যক্তিক, সামাজিক, রাষ্ট্রিক প্রগতি বিনষ্ট হয়- মানবতা ততই প্রার্থিত প্রগতি থেকে পিছিয়ে পড়ে।
আমার বিশ্বাস, বস্তুনিষ্ঠ ও শান্তিবাদী সাংবাদিকতা এ প্রেক্ষাপটে যোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ নৈতিকতাসম্পন্ন বলিষ্ঠ সাংবাদিকতা একদিকে যেমন বিশ্বাসযোগ্য তথ্য সরবরাহ করে, নেতিবাচক বিষয়েই কেবল সীমাবদ্ধ থাকে না, থাকতে হয় তাকে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন এবং নিরপেক্ষ পর্যালোচনায় সমাজকে শিক্ষিত ও দায়িত্ববান করার দায়িত্বেও। অন্যসব পেশা থেকে সাংবাদিকতা পেশার স্বাতন্ত্রতা এখানেই।
বস্তুনিষ্ঠ, যা সত্য, তাই সুন্দর। সৎ সাংবাদিকতা এ সত্যেরই আরাধনা করে। সত্যবিরোধী অবস্থান নিলে; পুঁজি, রাজনীতি বা যে কোনো কোটারি স্বার্থের নামেই সে অবস্থান হোক না কেন- যথার্থই তা সত্য, সুন্দর ও মঙ্গলের বিপরীতে দাঁড়ায়। এতে সমাজ প্রতারিত হয়, বিভাজিত হয়, সংকট দীর্ঘায়িত হয় এবং উন্নয়ন ও অগ্রগতি ব্যাহত হয়।
সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় উদার গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক ও অসাম্প্রদায়িক ব্যবস্থা সর্বজন স্বীকৃত। সৎ, স্বাধীন সাংবাদিকতা কেবল এসবের পরিপূরক নয়- পৃষ্টপোষকও। রাষ্ট্রশক্তি বা রাষ্ট্রক্ষমতা প্রত্যাশী রাজনৈতিক শক্তির সমালোচনা, সামাজিক অপশক্তিগুলোর অবিচার, দুষ্কর্ম, দুর্নীতিসহ নানাবিধ অনিয়মতান্ত্রিকতা জনসম্মুখে প্রকাশ বা দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রচার করা- সাংবাদিকতার আরাধ্য দায়িত্ব। কিন্তু এসব করতে গিয়ে অনৈতিকতার অভিযোগ বর্তালে- তা পেশার মহত্ত্ব ও গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
প্রাচ্য ও পাশ্চত্যের সাংবাদিকতায় ওপরে আলোচিত সংকটগুলো কমবেশি বিদ্যমান। অবশ্য অবস্থানগত কারণে এর তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। বিশ শতকে এবং বহু দেশে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বা পশ্চিমি রাষ্ট্র শক্তির বহুবিধ আগ্রাসনের পরিপূরক ভূমিকা রেখেছে পশ্চিমি দেশের একশ্রেণির গণমাধ্যম। এতে সাংবাদিকতার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, সাংবাদিকতা রাষ্ট্রকৌশলের সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।
বিশ্বের নানা অঙ্গনে ‘পিস জার্নালিজম’ বা শান্তিবাদী সাংবাদিকতার বিষয়টি বহুবারই আলোচিত হয়েছে। সংঘাত ও দ্ব›েদ্ব সাংবাদিকতা সত্য ও শান্তির পক্ষে কতটা ভূমিকা রাখতে পারে- সে নিয়েই এ আলোচনা চলে আসছে। পক্ষ-বিপক্ষের নানা মতো সত্ত্বেও, লক্ষ্য করেছি, শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সংঘাত নিরসনে সাংবাদিকতার প্রার্থিত ভূমিকার পক্ষে মতবাদ ক্রমশই জোরদার হচ্ছে। যুদ্ধবাজ বা সংঘাতবাজ নয়, মানুষ শান্তি ও সৌহার্দবাদী হবে- মানব সভ্যতার এটিই স্বাভাবিক প্রত্যাশা। কাজেই যে সাংবাদিকতা সমাজের প্রভূত প্রভাব বিস্তার করে, যা মানুষকে নানা তথ্যে সমৃদ্ধ করে, শিক্ষিত করে- তার শান্তিবাদী ভূমিকা গুরুত্বের গ্রহণ করাই সঙ্গত কাজ।
পাশ্চাত্যের কেউ কেউ এভাবেই শান্তিবাদী সাংবাদিকতার ব্যাখ্যা দিতে চেয়েছেন- চবধপব ঔড়ঁৎহধষরংস রং যিবহ বফরঃড়ৎং ধহফ ৎবঢ়ড়ৎঃবৎং সধশব পযড়রপবং – ড়ভ যিধঃ ঃড় ৎবঢ়ড়ৎঃ, ধহফ যড়ি ঃড় ৎবঢ়ড়ৎঃ রঃ – ঃযধঃ পৎবধঃব ড়ঢ়ঢ়ড়ৎঃঁহরঃরবং ভড়ৎ ংড়পরবঃু ধঃ ষধৎমব ঃড় পড়হংরফবৎ ধহফ াধষঁব হড়হ-ারড়ষবহঃ ৎবংঢ়ড়হংবং ঃড় পড়হভষরপঃ.
কেউ আবার বলার চেষ্টা করেছেন- ঞযব চবধপব ঔড়ঁৎহধষরংস ধঢ়ঢ়ৎড়ধপয ঢ়ৎড়ারফবং ধ হবি ৎড়ধফ সধঢ় ঃৎধপরহম ঃযব পড়হহবপঃরড়হং নবঃবিবহ লড়ঁৎহধষরংঃং, ঃযবরৎ ংড়ঁৎপবং, ঃযব ংঃড়ৎরবং ঃযবু পড়াবৎ ধহফ ঃযব পড়হংবয়ঁবহপবং ড়ভ ঃযবরৎ ৎবঢ়ড়ৎঃরহম – ঃযব বঃযরপং ড়ভ লড়ঁৎহধষরংঃরপ রহঃবৎাবহঃরড়হ.
এসব মন্তব্য সাধারণভাবেই শান্তিবাদী সাংবাদিকতার পদ্ধতিগত ব্যাখ্যা। তবে পদ্ধতি যাই হোক না কেন- এর প্রয়োগই মূল। বস্তুনিষ্ঠতা যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি সত্যাসত্য অনুসন্ধান, মূল উদঘাটন এবং তার নিরপেক্ষ প্রচার- যাতে মানুষ বিভ্রান্ত না হয়, বিভক্ত না হয়, সংকট বা সংঘাত প্রলম্বিত না হয়, সহনশীলতার সংস্কৃতি তৈরি হয়। আর এ কাজটি কার্যকরভাবে সম্পাদন করতে গিয়ে প্রয়োজন সংবাদমাধ্যমের নিজস্ব তথ্যসম্ভার, গবেষণা এবং প্রয়োজনীয় ‘রেফারেন্স’। এগুলো নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ- যা আমাদের মতো প্রাচ্য দেশে প্রায়ই উপেক্ষিত থাকে।
আরো একটি বিষয় ন্যায্য কারণেই আসবে। দেশপ্রেম, জাতিপ্রেম মানুষের অধিকার এবং গর্ব। রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে, গোত্রে গোত্রে, সংঘাত-সংঘর্ষ বা যুদ্ধে নাগরিক দেশ বা গোত্রভূত্র হবেন- এটিই মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে- যে সাংবাদিকতা মানুষকে শুভবুদ্ধি সম্পন্ন করে, যা বিবেক জাগ্রত করে, সঠিক সত্য উপস্থাপিত করে- সে সাংবাদিকতা নিছক ‘দেশ ও জাতিপ্রেমিকতার আবেগ’ আবদ্ধ হলে, পক্ষভুক্ত হলে- সত্যানুসন্ধান ও শান্তির স্বার্থে তা কতটা ভূমিকা রাখতে সক্ষম?

কাজেই সাংবাদিকতার দায়বদ্ধতা এবং পরিধি, দেশকালপাত্র নির্বিশেষে, নিরূপণের সুযোগ আছে।
আমাদের দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের অন্যতম প্রধান সংঘাতমুখর অঞ্চল। এ অঞ্চলের দেশে-দেশে, গোত্রে-গোত্রে, ধর্মে-ধর্মে, বর্ণে-বর্ণে, উগ্র জাতীয়তা, উগ্র ধর্ম ও রাজনৈতিক বিশ্বাস এবং সাংস্কৃতিক বিভাজনে নিরন্তর যে যুদ্ধ- তার মূল ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ। সত্য, শান্তি ও সমঝোতা এখানে প্রায় পরাভূত। যুগের পর যুগ এই যেন এ অঞ্চলের প্রায় অমোচনীয় বিধিলিপি! আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি- সত্য, শান্তি, সৌহার্দ ও মানবাধিকারের স্বার্থে সাংবাদিকতার যোগ্য ভূমিকা নিরূপণের যে সুযোগ বিদ্যমান- তার উপযুক্ত ব্যবহার প্রয়োজন। আমরা কে কতটা করব, কতটা পারব বা পারব না- তা চেতনা ও সামর্থ্যরে ব্যাপার। কিন্তু এ সত্য কখনোই অনস্বীকার্য নয় যে, সাংবাদিকতা সত্য ও শান্তির স্বার্থে ভূমিকা রাখার উপযুক্ত বাহন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়