ভালোবাসা এখন ‘ভার্চুয়াল’, আবেগেও পড়েছে টান : তবুও বসন্ত জেগেছে বনে

আগের সংবাদ

সংস্কৃতির চর্চা জোরদারের তাগিদ > বাঙালির প্রাণের মেলার উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী : হাতে নিয়ে বই পড়ার আনন্দ অনেক

পরের সংবাদ

সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষার বেদনা-বিহ্বল পরিস্থিতি

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী আমরা পালনও করলাম, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীও অতিবাহিত হলো, ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছরও পার করছি, তারপরও বাংলা ভাষার জন্য কোনো সুখবর কি আছে? নেই! সর্বদিক থেকে বাংলা ভাষার জন্য এক বেদনা-বিহ্বল পরিস্থিতি! সরকার বা সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে কি আমাদের ভাষা নিয়ে কোনো জরিপ হয়েছে? হয়নি! আমাদের ভাষা-বিষয়ক কোনো জরিপ থাকলে বাংলা ভাষার বর্তমান পরিস্থিতি আমরা আরো পরিষ্কারভাবে জানতে পারতাম, বাংলা ভাষা প্রচলন ও অন্যান্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আমাদের সুবিধে হতো। বাংলা ভাষা আজ বিভিন্ন পর্যায়ে অবহেলার শিকার হয়ে কাতরাচ্ছে! ব্যক্তি, গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম, সরকার ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন পরিধিতে চোখ মেললেই তা সহজে অনুমেয় হয়।
ভাষাবিজ্ঞানে ভাষা জরিপের বিষয়টি আছে, এই জরিপ অন্যান্য জরিপের মতোই। আমরা তো জরিপ বলতে বুঝি- কোনো কিছু পরিমাপ বা ধারণা করার জন্য উপাত্ত সংগ্রহ করা। বিভিন্ন দেশে এই ভাষা জরিপ হয়ে থাকে। ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের ভাষা জরিপ ২০০২ সালে সমাপ্ত হয়, প্রায় ১০ বছরের প্রচেষ্টার ফলে। ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও ভাষা জরিপের কর্মকাণ্ড লক্ষ করা যায়। অথচ প্রধানত বাংলা ভাষা অধ্যুষিত ও ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গড়ে ওঠা মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন করা একটি দেশে আজ পর্যন্ত কোনো ভাষা জরিপ হয়নি! একুশে ফেব্রুয়ারি এলে আনুষ্ঠানিকভাবে মেতে উঠলেও ভাষা বিষয়ে ভাবনা, বিবেচনা ও উদ্যোগের কথা বছরের অন্যান্য সময়ে বেমালুম আমরা ভুলে যাই। ভাষা জরিপ থাকলে রাষ্ট্র, সরকার, শিক্ষা, প্রযুক্তি ও সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রে ভাষার উন্নয়নে ভূমিকা রাখা আমাদের জন্য অনেক সহজ হতো।
শুধু ভাষা জরিপ কেন? ভাষা ব্যবহারের জন্য হঠাৎ করা কিছু পদক্ষেপ ও ঘোষণা এসেছে কিন্তু একটি জাতীয় ভাষানীতি আমরা ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর পার হওয়ার পরও প্রণয়ন করতে পারেনি! এর ফলে বাংলা ভাষা নিয়ে বেদনা-বিহ্বল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে, বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে বিভিন্ন অরাজক পরিস্থিতিরও মুখোমুখি হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আমাদের দেশে শিক্ষানীতি, কৃষিনীতি, খাদ্যনীতি, ক্রীড়ানীতি, বাল্যবিয়েনীতি এবং আরো কত নীতি আছে! কিন্তু ভাষানীতি নেই! একটি ভাষানীতি থাকলে- শিক্ষার মাধ্যম কী হবে, প্রশাসনের ভাষা কী হবে, বানান রীতি কী হবে, আদিবাসীদের ভাষা কী পর্যায়ে থাকবে, ইংরেজিসহ বিদেশি ভাষার অবস্থান কী হবে, কম্পিউটারে ভাষার পরিস্থিতি কী হবে, পরিভাষা কী হবে, রাষ্ট্র ও সরকারের ভূমিকা কী হবে- এগুলো নিয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা ও দিক-নির্দেশনা থাকত। কিন্তু সে দিকে খেয়াল নেই সংশ্লিষ্ট কারোরই! ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, রাশিয়া, চীন, জাপান, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার রাষ্ট্রগুলোর ভাষানীতি আমরা বিবেচনায় নিতে পারি। তারা তো জাতীয় ভাষা ত্যাগ করে ইংরেজি গ্রহণ করছে না। আমরা উল্লিখিত দেশের কথা বাদই দিলাম, পাশের দেশ নেপালের কথাই বলি, সে দেশেও একটি ভাষানীতি আছে, তারা উচ্চ আদালতে মাতৃভাষা ব্যবহারে সক্ষম হয়েছে অথচ আমরা এখনো আমাদের উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষা ব্যবহার করছি না!
ভাষা জরিপ ও জাতীয় ভাষানীতির কথা আমরা বাদই দিলাম, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পার হওয়ার পরও আমরা নিদেনপক্ষে একটি ভাষা কমিশনও গঠন করতে পারিনি! ভাষা কমিশন থাকলেও বর্তমান অবস্থায় বাংলা ভাষার উন্নয়ন ও বিকাশে কিছু পর্যালোচনামূলক সুপারিশ পাওয়া যেত, প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু দিক-নির্দেশনাও পাওয়া যেত।
সরকারের দুটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, একটি হলো বাংলা একাডেমি আর একটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। এই দুটি প্রতিষ্ঠান বাংলা ভাষা প্রচলনে কতটুকু জোরালো ভূমিকা পালন করছে, তা মূল্যায়ন করা আজ জরুরি। এদের ওপর যে অর্পিত দায়িত্ব রয়েছে, সে-বিষয়ে তারা কতটুকু ভূমিকা পালন করছে? বাংলা একাডেমির কথাই ভাবি- তারা কি ভাষানীতি প্রণয়নে কোনো বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছে? কিংবা বাংলা ভাষা সর্বস্তরে প্রচলনে কোনো বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে? বা সরকারকে উদ্বুদ্ধ করেছে? না, এ-রকম কোনো দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে না! এমনকি এই পর্বে আওয়ামী লীগ সরকারের ১২ বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও, এই ১২ বছরে বাংলা একাডেমি বাংলা ভাষা বিষয়ে কোনো উল্লেখযোগ্য সেমিনার বা কর্মশালা করার পর কোনো সুপারিশ সরকারের কাছে উপস্থাপন করেছে? আর আছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশের সংস্কৃতির যে মূলভিত্তি, যে ভাষা, সেই মন্ত্রণালয় কি বাংলা ভাষা প্রচলন ও বিকাশে গতানুগতিক কার্যক্রমের বাইরে জাতীয় দিক-নির্দেশনামূলক ও বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে?
বাংলাদেশের সংবিধানে বাংলা ভাষার উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার দিক-নির্দেশনা থাকলেও প্রায় পাঁচ দশক পার হওয়ার পরও বাংলা দাপ্তরিকসহ রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে আবশ্যিক ভাষা হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে না! এই সময়ে এসেও দেখা যায় সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার, নামফলক, দেয়াল লিখন হচ্ছে ইংরেজিতে; সরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন বিলের ভাষা বাংলা নয়, ইংরেজিতে। গণমাধ্যমের বিভিন্ন পর্যায়েও বাংলা ভাষার করুণ পরিস্থিতি। ঘরে ও বাইরে অন্ধকার ঘনীভূত হচ্ছে- বাংলা ভাষার আলোটুকু গ্রাস করার জন্য। যা ইচ্ছে তাই ভেবে যুক্তিহীনভাবে এক ধরনের হীনম্মন্যতার বশে যেখানে প্রয়োজন নেই, সেখানেও ইংরেজি ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। টিভি ও পত্রপত্রিকায় ইংরেজি বিজ্ঞাপনের জয়জয়কার! ঢাকা নগরের অনেক দোকানপাট, প্রতিষ্ঠানের নাম শুধুই ইংরেজিতে লেখা হচ্ছে!
ভাষার প্রধান বাহন হিসেবে বাংলা ভাষাকে আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি, শুধু পারিনি তা তো নয়, বিশেষত শিক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ে বাংলা ভাষাকে আমরা পরিত্যাগ করছি। আজ বাংলাদেশে ৪২টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও সমাজবিদ্যায় যতটুকু বাংলা ব্যবহার হয়ে থাকে, বিজ্ঞানে ততটুকু তো নয়, বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রবেশাধিকার একদম নেই। বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিগুণের বেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, যেগুলোর দু-একটি বাদে বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা অচ্ছুৎ শ্রেণির ভাষা হিসেবে দূরবর্তী অবস্থানে রয়েছে।
শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে একমাত্র মাতৃভাষার মাধ্যমেই শিক্ষা দেয়া উচিত। এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত থাকা উচিত নয়। প্রায় সব এগিয়ে থাকা দেশে প্রাথমিক শিক্ষা মাতৃভাষায় বা একমাত্র ভাষার মাধ্যমে দেয়া হয়ে থাকে। উন্নত দেশ হিসেবে পরিচিত দেশগুলো- বিশেষত ইংল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, জাপান, ফ্রান্স, জার্মানিতে প্রাথমিক স্তরে প্রথম ভাষা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো ভাষায় শিক্ষা দেয়া হয় না। অথচ আমাদের দেশে ভাষা বিষয়ে বিভিন্নমুখী বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বাংলা ভাষাকে সর্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত না করার মানসিকতা অনেক ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ করছি। এর ফলে প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রেও বাংলা ভাষাকে কোণঠাসা করার প্রক্রিয়া লক্ষ করা যাচ্ছে। এ এক বেদনা-বিহ্বল পরিস্থিতি। এ পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা।
প্রাথমিক শিক্ষায় মাতৃভাষাকে গুরুত্বহীন করে কোথাও কোথাও ইংরেজি ও আরবি ভাষাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বেশি। নানা রকমের প্রাথমিক-শিক্ষা বাণিজ্যের আওতায় টেনে নিয়ে বাজারজাত করা হচ্ছে। ‘ইংরেজি মাধ্যম’, ‘কিন্ডারগার্টেন’, ‘প্রি-ক্যাডেট মাদ্রাসা’ নামের তথাকথিত প্রাথমিক শিক্ষালয় নগরে-শহরে-বন্দরে ব্যবসায়ী মনোবৃত্তিতে গড়ে উঠেছে। যার বেশির ভাগই প্রাথমিক শিক্ষার মূল দর্শন থেকে বহু দূরবর্তী অবস্থানে রয়েছে। এসব শিক্ষালয়ের পাঠ্যসূচির কোনো সামঞ্জস্য নেই, নেই শিশু মনস্তত্ত্বের প্রতি লক্ষ রেখে শিক্ষায় গুরুত্ব প্রদান। এসব তথাকথিত শিক্ষালয়ে বাংলা ভাষাকে অনেকাংশে অবজ্ঞা আর অবহেলায় টেনে নিয়ে এক কোনায় ফেলে রাখা হচ্ছে। শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে বাংলা ও ইংরেজির মধ্যে দ্ব›দ্ব সৃষ্টি করে এক উদ্ভট পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এর জন্য দায়ী আমাদের অবৈজ্ঞানিক এবং অযুক্তিপূর্ণ মন-মানসিকতা।
বাংলাদেশের সংবিধানের মোট চারটি স্থানে ভাষা প্রসঙ্গটি উল্লেখিত হলেও ৩নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে : ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা।’ আর ২৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে : ‘রাষ্ট্র জনগণের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার রক্ষণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন এবং জাতীয় ভাষা, সাহিত্য ও শিল্পকলাগুলোর এমন পরিপোষণ ও উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন এবং যাহাতে সর্বস্তরের জনগণ জাতীয় সংস্কৃতির সমৃদ্ধিতে অবদান রাখিবার ও অংশগ্রহণ করিবার সুযোগ লাভ করিতে পারেন।’
ভাষা আন্দোলনের অন্যতম দাবি ছিল- সরকারের প্রশাসনিক কাজকর্মে বাংলা ভাষা মর্যাদার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। এই দাবি দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় কখনো কখনো জোরালো হয়েছিল, তা যেন আজ অমাবস্যার অন্ধকারে অন্তর্ঘাতমূলক অবস্থায় পতিত হচ্ছে, যার ফলে সরকারি পর্যায়ে বাংলা ভাষা ব্যবহারের শিথিলতা এখন আগের চেয়ে আরো বেড়েছে! বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার বলে বলে গর্ব করা- সরকারের আমলেও দেখছি, তারা সরকারি পর্যায়ে বাংলা ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে অন্যান্য শাসনামলের চেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারছে না! বরং এ সরকারের আমলে বাংলা ভাষা প্রচলনের পূর্ববর্তী নিয়ম-নির্দেশ অবজ্ঞা করা শুধু হচ্ছে না, বাংলা ভাষা প্রচলনের সম্ভাবনা ও শক্তিকে সংকুচিত করা হচ্ছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে। তাহলে আমরা কি ভাবব না- এই সরকার বাংলা ভাষার কাক্সিক্ষত মিত্র হয়ে উঠতে পারেনি! আমাদের প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে গিয়ে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলাকে গ্রহণ করার জন্য বলেছেন অথচ তার সরকারের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলা এখন কতটুকু গুরুত্ব পাচ্ছে, তা বিবেচনায় নেয়া জরুরি। শুধু দাপ্তরিক কাজে নয়, আইন-আদালতসহ প্রায় সর্বস্তরে আজ বাংলা ভাষার ব্যবহার কমছে, ইংরেজির ব্যবহার বাড়ছে।
১৯৭১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির এক সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দৃপ্ত উচ্চারণে ঘোষণা দিয়েছিলেন- ‘ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে আমি ঘোষণা করছি, আমার দল ক্ষমতা গ্রহণের দিন থেকেই সব সরকারি অফিস-আদালত ও জাতীয় জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে বাংলা চালু করবে। এ ব্যাপারে আমরা পরিভাষা সৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করব না। কারণ তাহলে কোনোদিনই বাংলা চালু করা সম্ভবপর হবে না। এই অবস্থায় হয়তো কিছু কিছু ভুল হবে, তাতে কিছু যায় আসে না। এভাবেই অগ্রসর হতে হবে।’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আকবর আলী খানের ভাষ্যানুযায়ী বঙ্গবন্ধু যেদিন দপ্তরে বসেছিলেন, সেদিনই ইংরেজিতে লেখা একটি নথি নিয়ে তাকে যেতে হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর কাছে। ইংরেজিতে লেখা নথি দেখে বঙ্গবন্ধু উষ্মা প্রকাশ করে প্রশ্ন করেছিলেন যে- এই স্বাধীন দেশেও কি তাকে ইংরেজিতে লিখিত নথি দেখতে হবে। অতঃপর তিনি তাকে এই মর্মে একটি প্রজ্ঞাপন জারির নির্দেশ দিয়েছিলেন যে- এখন থেকে সকল নথি বাংলায় লিখিত হতে হবে। আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করলাম, অথচ বঙ্গবন্ধুর ভাষা সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গিকে আমরা গুরুত্ব দিতে পারিনি এখনো।
আমরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী পার করছি, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীও অতিবাহিত করলাম, আমরা ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছরও পার করছি, তারপরও বাংলা ভাষার জন্য আমাদের জোরালো ও পরিপূরক ভূমিকার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আমরা দেখাতে পারিনি! এর ফলে বাংলা ভাষা নিয়ে বেদনা-বিহ্বল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে, বাংলা ভাষার বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন অরাজক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই অবস্থায় আমরা ভাষা আন্দোলন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গৌরবে নিজেদের অহং প্রকাশে আনুষ্ঠানিকভাবে তৎপর হলেও- বাংলা ভাষার বিকাশে তৎপর কতটুকু, তা বিবেচনায় টেনে আনা উচিত। শহীদ দিবসটি গতানুগতিক ও আনুষ্ঠানিকতায় শুধু পালন করব? আমাদের কি বাংলা ভাষার প্রতি আর কোনো দায় নেই? বিবেকতাড়িত সেইসব প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়