ভালোবাসা এখন ‘ভার্চুয়াল’, আবেগেও পড়েছে টান : তবুও বসন্ত জেগেছে বনে

আগের সংবাদ

সংস্কৃতির চর্চা জোরদারের তাগিদ > বাঙালির প্রাণের মেলার উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী : হাতে নিয়ে বই পড়ার আনন্দ অনেক

পরের সংবাদ

শিশুদের বন্ধু শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা তাঁকে বলি জননেত্রী। গণতন্ত্রের মানসকন্যা। বিশ্বের কাছে তিনি মানবতার মা নামে পরিচিত। মাদার অফ হিউমিনিটি। শেখ হাসিনা নামের সাথে এত বিশেষণ কেন? সহজ প্রশ্ন। আবার উত্তরটাও সহজ। জনগণের সেবা করেন তিনি। আপামর জনসাধারণকে ভালোবাসেন। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে সাধারণ মানুষ সুখের মুখ দেখেছে। তাই তিনি জননেত্রী। তিনি স্বপ্ন দেখতেন, বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র ফিরে পাবে। এই স্বপ্ন তিনি কখন দেখতেন? যখন আমাদের এই দেশ, বাংলাদেশ খুব খারাপ অবস্থায় চলছিল। মানুষের মুখে হাসি নেই, মনে সুখ নেই, শান্তি নেই। কারো ঘরে খাবার নেই, কাপড় নেই। দুঃখ-দুর্দশা লেগেই আছে। তখন শেখ হাসিনা স্বপ্ন দেখতেন। ভাবতেন, কী করে এইসব মানুষের মুখে হাসি ফোটানো যায়। কী করে সুখ ফিরিয়ে আনা যায়। কী করে শান্তি ফিরিয়ে আনা যায়। কী করে সকল দুঃখ-কষ্ট লাঘব করা যায়। আর তা করতে হলে প্রয়োজন গণতন্ত্র। অর্থাৎ জনসাধারণের পছন্দের প্রতিনিধি দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা। এইসব ধারণা বা চিন্তা মনে পোষণ করতেন। এটা নিয়ে আন্দোলন করতেন। বক্তব্য রাখতেন। এজন্যই তিনি গণতন্ত্রের মানসকন্যা। তাঁর ‘মানবতার মা’ উপাধি পাওয়াটা বড় গর্বের। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। সুখ এনে দিয়েছেন, শান্তি এনে দিয়েছেন। প্রতিটি মানুষের জন্য তাঁর ভালোবাসার তুলনা হয় না। তিনি প্রধানমন্ত্রী হবার পর অনেক কাজ করেছেন, মানুষের জন্য কাজ করেছেন। যে স্বপ্ন একদিন তিনি দেখেছেন, সেটা বাস্তবায়ন করেছেন। এজন্যেই তো তিনি ‘মানবতার মা’ খেতাব পেয়েছেন। এবার প্রশ্ন করতে পারি, শেখ হাসিনা এত ভালো কেন?
এই প্রশ্নটাও সহজ হয়ে গেল। সহজ প্রশ্নের কঠিন উত্তর হতে যাবে কেন? আমরা সবাই জানি, শেখ হাসিনা আমাদের জাতির পিতার কন্যা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। আমরা এটাও জানি বঙ্গবন্ধু হলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি পিতার কন্যা মন্দ হতে পারেন কি?- কখনোই না। তাই তো শেখ হাসিনা তাঁর পিতার সব আদর্শ আর গুণাবলি বুকে ধারণ করে আছেন। বঙ্গবন্ধু যেমন শিশুদের ভালোবাসতেন শেখ হাসিনাও তেমনি বাসেন। বঙ্গবন্ধু যেমন বাংলার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করেছেন, শেখ হাসিনাও তেমনি করছেন। বঙ্গবন্ধু যেমন জেল-জুলুম-অত্যাচার সহ্য করেছেন, শেখ হাসিনাও তেমনি সহ্য করেছেন। বাংলাদেশের মানুষের জন্য যে-কোনো কষ্ট স্বীকার করতে রাজি তিনি। ফলেই তিনি ভালো মানুষ। শুধু ভালো মানুষ নন, প্রধানমন্ত্রী হিসাবেও ভালো। সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। আমরা আমাদের চারপাশে তাকালে বুঝতে পারি, চারদিকে শুধু উন্নয়ন। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে মন্দির-মসজিদ-স্কুল-কলেজ। কলকারখানা থেকে শুরু করে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল। ব্রিজ-কালভার্ট থেকে শুরু করে উড়াল সেতু, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল প্রভৃতি। এসব উন্নয়নে শেখ হাসিনার অবদান জাতি চিরস্মরণীয় করে রাখবে। বাংলাদেশ এখন উন্নত রাষ্ট্রের স্বীকৃতি লাভ করেছে। বাংলাদেশে এত উন্নয়ন আর কোনো সরকার করতে পারেনি। শেখ হাসিনা মানুষকে কতটা ভালোবাসেন তার একটি প্রমাণ, গৃহহীন মানুষের জন্য জায়গাসহ পাকা ঘর অনুদান। ভাসমান কত মানুষ আজ পাকা ঘরে বসবাস করছে। শিশুদের তিনি কতটা ভালোবাসেন, সেটারও প্রমাণ আছে হাজার হাজার।
২০১৬ সালের কথা। পটুয়াখালী থেকে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শীর্ষেন্দু বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠি লিখে পাঠায়। খর¯্রােতা পায়রা নদীতে জনসাধারণের চলাচলের ঝুঁকি। ফলে সেখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শীর্ষেন্দুর চিঠির উত্তর দেন। ব্রিজ নির্মাণের আশ্বাস দিয়ে তিনি চমৎকার ভাষায় লেখেন, ‘¯েœহের শীর্ষেন্দু, তুমি শুধু দেশের একজন সাধারণ নাগরিক নও, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেয়ার অগ্রজ সৈনিক। আমি জানি পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার পায়রা নদীটি অত্যন্ত খর¯্রােতা। নিজের পিতামাতাসহ অন্যান্য পরিবারের সদস্যকে নিয়ে এই নদীকেন্দ্রিক তোমার নিরাপত্তা সচেতনতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি বুঝতে পারি তোমার বীর মুক্তিযোদ্ধা দাদুর প্রভাব রয়েছে তোমার ওপর। মির্জাগঞ্জের পায়রা নদীতে একটি সেতু নির্মাণ করা হবে বলে তোমাকে আশ্বস্ত করছি।’
২০১৮ সালে নারায়ণগঞ্জ থেকে চিঠি লেখে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সৈয়দা রওনক জাহান সেঁজুতি। দাদি মারা যাওয়ায় সেঁজুতি লেখে, ‘দাদুকে হারিয়ে আমি ভালো নেই। তোমার মুখ আমার দাদুর মুখের মতো। বিশেষ করে তোমার নাক আমার দাদুর নাকের মতো। তাই আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তোমাকে টিভিতে দেখলে আমার দাদুর কথা মনে পড়ে।’ সেঁজুতির এই চিঠিরও উত্তর লিখে পাঠান শেখ হাসিনা। তিনি শিশুদের কতটা ভালোবাসেন তা বলে শেষ করা যাবে না।
আগেই বলেছি, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার কথা। তার একটি হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্প। ১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনা যখন প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হলেন, তখনকার কথা। কক্সবাজার জেলার পার্শ্ববর্তী এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী ঐ এলাকা পরিদর্শনে যান। মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দেখে তিনি সহানুভূতিশীল হয়ে পড়েন। সকল গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেন। সেই সময়েই ‘আশ্রয়ণ’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ পর্যন্ত ভূমিহীন, গৃহহীন, দুর্দশাগ্রস্ত ও ছিন্নমূল পরিবারের মধ্যে প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ১০ বছরে ২ লাখের অধিক পরিবার এই সুবিধা পেয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধুও ঘূর্ণিঝড় উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শনে যেতেন। তিনিও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সাহায্য করতেন।
তাহলে বুঝতেই পারছি, শেখ হাসিনা কত উদার মানুষ। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না।’ তিনি বলেছেন, ‘ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলাই লক্ষ্য।’ এরকম চিন্তা আরও একজন মানুষ করেছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু যে-সব স্বপ্ন দেখেছিলেন, কিন্তু বাস্তবায়ন করতে পারেননি। কারণ, স্বপ্ন পূরণের আগেই তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। সপরিবারে হত্যা করেছিল বাঙালি নামধারী কিছু নরপশু। দশ বছরের ছোট্ট রাসেলকেও তারা রেহাই দেয়নি। শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় তাঁরা প্রাণে বেঁচেছেন। সেই পাষণ্ড হত্যাকারী নরপশুদের বিচার করেছেন শেখ হাসিনার সরকার। অনেকেরই ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।
বলছিলাম বঙ্গবন্ধুর কথা। বঙ্গবন্ধুর সব স্বপ্ন একে একে পূরণ করে চলেছেন শেখ হাসিনা। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, ‘যে স্বপ্ন আমার বাবা দেখেছিলেন সেই স্বপ্ন পূরণ করাই হবে আমার লক্ষ্য। সেজন্যেই কাজ করে যাচ্ছি।’ বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ। তিনি দৃপ্তকণ্ঠে বলেছিলেন, বাংলার মানুষ যাতে খাদ্য পায়, বস্ত্র পায়, বাসস্থান পায়, বাঁচার মতো

বাঁচতে পারে- সেটাই হবে তাঁর পরম পাওয়া। তিনি শুধু বাংলার মানুষকে নিয়ে ভেবেছেন, কখনো নিজের কথা ভাবেননি। মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সারাজীবন কাজ করে গেছেন। পঞ্চান্ন বছরের জীবনে চৌদ্দ বছর জেলে কাটাতে হয়েছে। বাংলার মানুষের জন্য তিনি জীবন দিতেও প্রস্তুত ছিলেন সবসময়। এমন একজন মহান মানুষের কন্যা শেখ হাসিনা। তিনিও বাবার আদর্শ নিয়ে বড় হয়েছেন। মহান হয়েছেন। তিনিও জীবন বাজি রেখে বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁকে হত্যার জন্যও দুষ্কৃতকারীরা অনেক পরিকল্পনা করেছে, ষড়যন্ত্র করেছে। তাঁকে বারবার হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করেছে। যারা এদেশের মঙ্গল চায় না, তারাই শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কয়েকবার বোমা হামলা করা হয়। একবার তো অল্পের জন্য প্রাণ রক্ষা হয়েছে। তবে তাঁর দলীয় অনেক নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। এভাবে মৃত্যুর দুয়ার থেকে বেঁচে ফিরে এসেছেন শেখ হাসিনা। তবুও তিনি দেশ আর দেশের মানুষের কথা ভাবেন। কোনো রক্তচক্ষুকে কখনো ভয় পান না। বাবার মতোই উচ্চারণ করেন, ‘কোনোদিন আমি ভীত হইনি, আমি ভীত হব না।’
আবার একটু শিশুদের কথায় ফেরা যাক। শিশুর সুরক্ষায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে শিশুদের জন্য প্রচুর কাজ করা হচ্ছে। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি চর্চায় শিশুদের ভূমিকাকে অগ্রগণ্য করে তোলা হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর থেকে শিশুদের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। শুধু শিশুদের সুরক্ষা নয়, শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ করা হচ্ছে। অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সুবিধা দেয়া হচ্ছে। বিনামূল্যে পড়ালেখার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। বিনামূল্যে বই বিতরণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রতিবন্ধী শিশুদের সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। শিশুদের মন প্রফুল্ল রাখার জন্য নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় শিশু দিবসে শিশু সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। নানা কর্মসূচি থাকে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনন্দদান ছাড়াও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
প্রতি বছর ১ জানুয়ারি শিশুদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়া হচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি শিশুদের এতটাই ভালোবাসেন, শিশুদের মাঝে গেলেই তাঁর মুখে হাসি ফোটে। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা যখন প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হলেন, তখনকার কথা। কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠান হলো সেগুনবাগিচায়, শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে। সেই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁকে এর আগে কখনো এতটা উৎফুল্ল দেখিনি। কারণ তাঁর মনে অনেক দুঃখ। মা-বাবা-ভাই ছাড়াও প্রিয় স্বজনদের হারিয়ে তিনি শোকে শোকাতুর থাকেন। আর ছোট্ট রাসেলের কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কিন্তু সেদিন তিনি শিশুদের মাঝে অনেক আনন্দে সময় কাটালেন। কথা বললেন হেসে হেসে। তিনি বললেন, ‘আমি যখন তোমাদের মতো ছোট ছিলাম, তখন আমিও ইত্তেফাকের কচি-কাঁচার আসরের সদস্য ছিলাম।’ এই কথা শুনে উপস্থিত অনেক শিশু হেসে ফেলল। তারা হয়তো ভাবল, প্রধানমন্ত্রীও একদিন তাদের মতো ছোট ছিলেন। মঞ্চে উপবিষ্ট কচি-কাঁচার মেলার পরিচালক রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই হেসে কুটি কুটি। গর্বে তাঁর বুক যেন ভরে গেল। তিনি অবশ্য বলতেন, শিশুরা যদি সুন্দর পরিবেশে বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়, তারা সুনাগরিক হিসাবে গড়ে উঠবে। পরবর্তীতে তারাই রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। এর প্রমাণ হিসাবে আমরা দেখতে পাচ্ছি, শেখ হাসিনা। তিনি একটি ভালো পরিবারে বেড়ে উঠেছেন, তাই নয়- শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির সাথেও নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। তিনি চমৎকার কবিতা আবৃত্তি করতে পারেন। মাঝে মাঝে সংসদেও তিনি কবিতা পড়েছেন। তিনি চমৎকার গান গাইতে পারেন। এবার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন অনুষ্ঠানে তাঁকে গান গাইতে দেখেছি। অনেকের সাথে তাঁর বোন শেখ রেহানাও গেয়েছেন।
শেখ হাসিনা শিল্প-সংস্কৃতিকে এতটা ভালোবাসেন বলেই কবি-সাহিত্যিক শিল্পীকে অনেক সম্মান দেন। যারা অসুস্থ এবং টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেন না, তাদের তিনি অর্থ সাহায্য করে থাকেন। কারো কারো ক্ষেত্রে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগও করে দিয়েছেন। মানুষের প্রতি এত ভালোবাসা কজনের থাকে?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দু’একটি অনুষ্ঠানে আমার উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়। একবার বাংলা একাডেমির বইমেলা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি বললেন, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারের মান এক লাখ টাকা কেন? এটা তিন লাখ করলে ভালো হয়। কবি-সাহিত্যিক একটু অবহেলায় থাকেন, এ দিকটাও তাঁর জানা। তিনি সবার জন্য কাজ করতে ভালোবাসেন।
শেখ হাসিনার পরিকল্পনা এবং কর্মদক্ষতায় স্বল্প আয়ের দেশ থেকে উন্নত দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। তিনি ২০৪১ সালের মধ্যে আরো কী রকমের উন্নত করতে চান, তার বর্ণনা দিয়ে তৈরি হয়েছে ‘রূপকল্প ২০৪১’। এই রূপকল্পের মধ্যে রয়েছে শিশুদের বিকাশে ও উন্নতিতে নানা পদক্ষেপ। শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে যেসব পদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়েছে, তার মধ্যে আছে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বাল্য বিয়ে মুক্ত হবে, ২০২৫ সালের মধ্যে কোনো শিশু-শ্রমিক থাকবে না, সকল শিশুকে সুরক্ষা দেয়া হবে ইত্যাদি। শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ করেছে। আমরা এখানেই থামব না, বাংলাদেশকে আরো এগিয়ে যেতে হবে। এখন আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ করা।’ শিশুরা যাতে উপযুক্ত শিক্ষা পায়, খেলাধুলা করতে পারে, শারীরিক ও সাংস্কৃতিক অনুশীলনের সুযোগ পায়, সুচিকিৎসা পায়, এ ব্যাপারে বিশেষভাবে নজর দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি থেকে অনেক শিশু নাচ, গান, আবৃত্তি, ছবি আঁকা প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ পাচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত বইগুলো শিশুদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। শিশুরা স্বল্পমূল্যে বই পড়ার সুযোগ পাচ্ছে, জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পাচ্ছে। সারাদেশে স্কুলগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে-কলমে কম্পিউটার ও ভাষা প্রশিক্ষণের জন্য ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। এটার নামকরণ করা হয়েছে, শেখ রাসেল ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব। গ্রামাঞ্চলের শিশুরাও প্রশিক্ষণের সুযোগ পাচ্ছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে কম্পিউটার সেবা চালু হয়েছে। সবই শেখ হাসিনার অবদান।
শেখ হাসিনা শিশুদের নিয়ে কত যে ভাবেন, বলে শেষ করা যাবে না। তিনি সব শিশুর সমঅধিকার নিশ্চিত করতে চান। শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ, এই কথাটি বারবার স্মরণ করিয়ে দেন। স্মরণ করিয়ে দেন, শিশুরাই একদিন দেশের নেতৃত্ব দেবে। ফলেই তাদের সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিশুদের নিয়ে ভাবতেন। ১৯৭৪ সালে তিনি ‘শিশু আইন’ প্রণয়ন করেছিলেন। প্রাথমিক শিক্ষাকে তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে করে দিয়েছিলেন এবং মাধ্যমিক শিক্ষাকে মেয়েদের জন্য বিনামূল্যে করে দিয়েছিলেন। ঠিক একই পথে এগিয়ে যাচ্ছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সকল শিশুকে সকল অধিকার নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। তিনি বলেছেন, ‘আমরা শিশুদের জীবন আরও রঙিন, সুন্দর, সফল এবং ফলপ্রসূ করতে চাই, এটি আমাদের লক্ষ্য।’
শিশুদের নিয়ে যাঁর এত মধুর কথা, এত গভীর চিন্তা, এত রঙিন স্বপ্ন, তাঁকে আমরা কী নামে ডাকতে পারি? এবারেও সহজ উত্তর, বন্ধু। শিশুদের বন্ধু শেখ হাসিনা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়