ভালোবাসা এখন ‘ভার্চুয়াল’, আবেগেও পড়েছে টান : তবুও বসন্ত জেগেছে বনে

আগের সংবাদ

সংস্কৃতির চর্চা জোরদারের তাগিদ > বাঙালির প্রাণের মেলার উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী : হাতে নিয়ে বই পড়ার আনন্দ অনেক

পরের সংবাদ

প্রেক্ষিত সীতাকুণ্ড অঞ্চল : কমিউনিটিভিত্তিক ইকো-ট্যুরিজম সম্ভাবনা গুরুত্ব ও অগ্রগতি

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

একবিংশ শতাব্দীর দ্রুত বিকাশমান একটি অনবদ্য ও অগ্রসরমান শিল্প পর্যটন। চট্টগ্রাম জেলার পর্যটক-আকর্ষক উপজেলাগুলোর মধ্যে সীতাকুণ্ড উপজেলা অন্যতম। এলাকাটি পাহাড়, সমুদ্র, ছড়া/ঝর্ণা, জলাধার/লেক ইত্যাদি বিশেষ আকর্ষণীয় স্থান পরিবেষ্টিত। আশির দশক থেকে সমগ্র বিশ্বে ইকো-ট্যুরিজম বা পরিবেশবান্ধব ভ্রমণ ব্যাপক প্রসার জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ইকো-ট্যুরিজম বা পরিবেশবান্ধব ভ্রমণ বলতে বোঝায় পরিবেশ, প্রতিবেশ এবং তার পারিপার্শ্বিকতাকে অটুট রেখে বেড়াতে যাওয়া। পরিবেশবান্ধব ভ্রমণ এর অন্যতম কয়েকটি শর্ত হলো; পরিবেশ, প্রতিবেশের কোনোরূপ ক্ষতি না করে একেবারে কাছাকাছি চলে যাওয়া, ভ্রমণস্থানের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হওয়া ও সেটিকে যথাযথ সম্মান দেখানো এবং স্থানীয় মানুষের আর্থিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখা। ইকো-ট্যুরিজম বা পরিবেশবান্ধব ভ্রমণের জনপ্রিয়তা বাংলাদেশেও প্রসার ঘটেছে। সেই প্রেক্ষাপটে পরিবেশের ভারসাম্য, ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের চাহিদা ও স্থানীয় মানুষের সার্বিক কল্যাণ ও উন্নয়নের কথা চিন্তা করে সীতাকুণ্ড এলাকায় ইকো-ট্যুরিজম বা পরিবেশবান্ধব ভ্রমণের ব্যাপক সম্ভাবনা, গুরুত্ব এবং চাহিদা রয়েছে।

সীতাকুণ্ডে কমিউনিটিভিত্তিক ইকো-ট্যুরিজমের সম্ভাব্য
পর্যটন স্থান ও গুরুত্ব :
সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ পাহাড়
সীতাকুণ্ডের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি পর্যটনকেন্দ্র হলো ‘চন্দ্রনাথ পাহাড়’। চট্টগ্রাম মহানগর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৩৭ কিমি.। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে ৪ কি.মি. পূর্ব দিকে চন্দ্রনাথ পাহাড় অবস্থিত। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে সর্পিল আঁকা-বাঁকা একটি সড়ক চলে গেছে সোজা চন্দ্রনাথ পাহাড়ের দিকে। এই স্থানটি হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর সর্বোচ্চ চূড়াটির উচ্চতা প্রায় ৩৬৫ মিটার বা ১২০০ ফুট প্রায়। চূড়ায় ওঠার পথটি বেশ দুর্গম। পর্যটকদের পাহাড়ে ওঠার জন্য এখান থেকে শান বাঁধানো সিঁড়ি তৈরি করা আছে। এ পথে রয়েছে শংকর মঠ, শ্মশান, গিরিশ ধর্মশালা, সৎসংঘ আশ্রম, জগন্নাথ আশ্রম, ননী গোপাল সাহা তীর্থ মন্দির, ভৈরব ধর্মশালাসহ আরো অনেক দেবালয়। আরো কিছুটা পথ ওঠার পরে দেখা যাবে ভবানী মন্দির। ভবানী মন্দির ছেড়ে আরেকটু পথ এগোলেই শম্ভুনাথ মন্দির, ছোট্ট একটি পাহাড়ি ঝর্ণা। আর এখান থেকেই চন্দ্রনাথ মন্দিরের দিকে উঠতে হয়। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়া থেকে দক্ষিণ পশ্চিম দিকে নিচে নামলেই ইকোপার্কের শুরু।

সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ ধামে শিব চতুর্দশী মেলা উপভোগ
উপমহাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম তীর্থস্থান সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ ধাম। প্রতি বছর শিব চতুর্দশী তিথিতে সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ ধামে শিব চতুর্দশী মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে সবচেয়ে বড় মেলা হচ্ছে সীতাকুণ্ডের এই শিব চতুর্দশী মেলা। এই মেলা উপলক্ষে লাখ লাখ হিন্দু পুণ্যার্থী সারাদিন উপবাস থেকে পাহাড়ের ওপর অবস্থিত মন্দিরগুলোতে দুধ ও ডাবের জল দিয়ে শিবকে স্নান করান। মেলা উপলক্ষে দেশীয় পণ্য ও হস্তজাত শিল্পের সামগ্রী উপকরণাদির বিশাল বাজার সৃষ্টি হয়।

সীতাকুণ্ডের ইকোপার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেন
সীতাকুণ্ডে ঐতিহাসিক চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে দেশের প্রথম এবং এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম ইকোপার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেন অবস্থিত। সীতাকুণ্ড বাজারের ২ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত ১৯৯৬ একরের ওপর এই গার্ডেনটি অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের প্রথম ইকোপার্ক। চট্টগ্রাম মহানগর থেকে এর দূরুত্ব প্রায় ৩৫ কিমি। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও প্রাণিকুলের অভয়ারণ্য গড়ে তোলা এবং চিত্তবিনোদনের জন্য বন বিভাগ এ পার্ক প্রতিষ্ঠা করে। এখানে বিরল প্রজাতির গাছপালা, সৌন্দর্যবর্ধক ফুলের বাগান, কৃত্রিম লেক, পিকনিক স্পট, গ্রিন হাউস এবং বিরল প্রজাতির পশুপাখি সংরক্ষণ করা হয়েছে। এছাড়াও এখানে রয়েছে তিনটি প্রাকৃতিক ঝর্ণা এবং ঐতিহাসিক চন্দ্রনাথ মন্দির, যেগুলো দর্শকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। এখানে রয়েছে দুর্লভ প্রজাতির গোলাপ বাগান, অর্কিড হাউস, গ্রীন হাউস, পদ্ম পুকুর, বেইলি ব্রিজ, প্রাকৃতিক লেক, নয়নাভিরাম ঝর্ণা, আর হাজারো পাখির কলতান। ভাগ্য ভালো হলে দেখা যেতে পারে বানর, নানারকম মায়া হরিণসহ অনেক বণ্য প্রাণীর। তাছাড়া পার্কের চূড়া থেকে সোজা পশ্চিমে তাকালে দেখা যায় বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউ ও নয়নাভিরাম সূর্যাস্ত।

সীতাকুণ্ডের প্রাকৃতিক ঝর্ণাগুলো
সীতাকুণ্ড থেকে ৫ কি.মি. উত্তরে রয়েছে লবণ পানির উষ্ণ ঝর্ণা, যা স্থানীয় ভাষায় লাবনাক্ষ্য ঝর্ণা নামে পরিচিত। এখানে রয়েছে সহস্রধারা আর সুপ্ত ধারা নামের দুটি জলপ্রপাত। তাছাড়াও বর্ষাকালে আরো অনেক নাম না জানা ঝর্ণার দেখা পাওয়া যায়।

ভাটিয়ারী লেকে নৌ বিহার ও মৎস্য শিকার
সীতাকুণ্ডের কৃত্রিম লেক ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের রূপে ও মাধুর্যে মুগ্ধ করেছে। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম কৃত্রিম লেক হলো ভাটিয়ারীর লেক। প্রায় ৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ লেকটি চট্টগ্রাম শহর থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তরে সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী ইউনিয়ন থেকে এক-দুই কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত ভাটিয়ারী লেক অন্যতম আকর্ষণ নৌকা করে বেড়ানো ও বড়শি দিয়ে মাছ ধরা। স্বচ্ছ পানির জলাধারের চার পাশ সবুজ চাদরে মোড়া। ভাটিয়ারী লেকের চারপাশে পাহাড়ের বুক চিরে ছুটে চলা পর্যটককে বিমুগ্ধ করবে। সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী হলো বাংলাদেশের একমাত্র স্থান যেখান থেকে পাহাড়ি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়। আর এই দুই দৃশ্য অবলোকন করা যায় সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী থেকে। ভাটিয়ারী লেকের পাশেই বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমি অবস্থিত। প্রাসঙ্গিক কারণে এখানে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত। পর্যটকদের খাবারের জন্য দিনের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এখানে কিছু ক্যাফে ও স্ন্যাকস বার রয়েছে, যা সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত।

নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর জীবন যাত্রার সঙ্গে পরিচয়
সীতাকুণ্ডের দুর্গম পাহাড়ে দুটি নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর (মারমা ও ত্রিপুরা) বসবাস। নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী বসবাসরত এলাকায় পর্যটকদের ভ্রমণ উপযোগী অবকাঠামো নির্মাণ বা তাদের বসবাসরত স্থানে পর্যটকদের জন্য সাময়িক আবাসন নির্ধারণ করতে পারলে অনেক ভ্রমণপিপাষু পর্যটকরা আকৃষ্ট হবে এবং যার ফলে পরিবেশবান্ধব পর্যটনের প্রসার ঘটবে।

কুমিরা ফেরিঘাট ও সমুদ্র বিহার (সীতাকুণ্ড থেকে স›দ্বীপ)
সীতাকুণ্ডে তিনটি ঘাট রয়েছে যেখান দিয়ে মুল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ১৮ কি.মি পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় অবস্থিত স›দ্বীপে যাওয়া যায়। সীতাকুণ্ডের সবচেয়ে সুন্দরতম ঘাটটি হলো কুমিরা ঘাট। এখান থেকে প্রায় প্রতি আধ ঘণ্টা পরপর স্পিডবোটে ২০ মিনিটে স›দ্বীপ যাওয়া যায়। কুমিরা ঘাট থেকে সমুদ্রে সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করা যায়।

বাঁশবাড়িয়া ও মুরাদপুর সমুদ্রসৈকত
বাঁশবাড়িয়া ও মুরাদপুর বেড়িবাঁধ পেরিয়ে সমুদ্রসৈকতের দিকে যেতেই বাম দিকে ঝাউ বাগান। এখানে ফেরি ঘাট রয়েছে, এর পাশে কেওড়া গাছের বাগান, এর পর রয়েছে বিশাল সমুদ্রসৈকত, যা কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকত দেখার স্বাদ মেটাবে। চট্টগ্রাম শহর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে সীতাকুণ্ড উপজেলা থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে এই সুন্দর বালুকাময় সমুদ্রসৈকত।

সীতাকুণ্ডের বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যান
সীতাকুণ্ডের বারৈয়াঢালায় রিজার্ভ ফরেস্ট রয়েছে। সীতাকুণ্ড থেকে ৫ কি.মি. উত্তর-পূর্বে ও ছোট দারোগারহাটের সন্নিকটে এই বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যান অবস্থিত। সেখানে রয়েছে নানা প্রজাতির উদ্ভিদ ও বন্যপ্রাণী। দূর থেকেই নজরে পড়বে বিভিন্ন প্রজাতির উঁচু বৃক্ষ (শাল, সেগুন, আকাশমণি, চাপালিশ) ও গুল্ম প্রজাতি। পথের ধারে ছোট-ছোট বসতবাড়ি। পথ পেরুতে পেরুতে চোখে পড়বে উঁচু উঁচু টিলা ও পাহাড়। ঢাকা থেকে সড়ক পথে পাঁচ ঘণ্টায় সীতাকুণ্ডে আসা যায়, আর রয়েছে রেল পথ।

পাহাড় আরোহণ ও ট্রেইল
ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের পাশেই সীতাকুণ্ডের পাহাড় ও বনাঞ্চলের অবস্থান। ছোট-বড় পাহাড়ের ঢালে ঢালে চিরসবুজ প্রকৃতি, ভ্রমণপ্রিয় যে কোনো পর্যটকের কাছে আর্কষণীয় ও উপভোগ্য হবে। এসব পাহাড়ি বনে রয়েছে শতবর্ষী গর্জন গাছ। এছাড়াও রয়েছে শাল, সেগুন, আকাশমণি, গর্জন, চাপালিশ, হরিতকি, বহেরা, বাঁশ, আকাশ লতা, ছন প্রভৃতি উদ্ভিদ। এখানে রয়েছে বেশকিছু ট্রেইল, এই সমস্ত ট্রেইলে চলতে চলতে দেখা মিলবে বেশ পুরনো বৃক্ষ, বাঁশঝাড়সহ নানান জাতের গাছপালা। ভাগ্য সহায় হলে দেখা মিলতে পারে বানর, বন্য শূকর, সজারু, শিয়াল ও খরগোশ। এই অঞ্চলটি নানান জাতের পাখির অভয়ারণ্য।

সীতাকুণ্ডের গ্রামীণ জীবনযাত্রা ও কৃষি কর্মকাণ্ড অবলোকন
গ্রামীণ জীবনযাত্রার এক অপরূপ চারণক্ষেত্র হলো সীতাকুণ্ডের গ্রামীণ জনপদ। এখানে রয়েছে গ্রামের মেঠোপথ, সুশীতল গাছের সারি, আঁকাবাঁকা পথঘাট, সবুজ প্রান্তর, সহজ-সরল জনগোষ্ঠী, লোকালয়ের প্রান্ত ঘেঁষে বাঁশঝাড়, দখিনা বাতাস, শীতের কুয়াশা ও বর্ষার ঝুম ঝুম বৃষ্টি। তাছাড়াও সীতাকুণ্ডের ঐতিহাসিক ক্ষেতের আইলে করা শিম চাষ।

জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প অবলোকন
সীতাকুণ্ডের সমুদ্র তীরে রয়েছে দেশের একমাত্র জাহাজ ভাঙন ও রিসাইক্লিং শিল্প। ইউরোপ ও আমেরিকার পুরাতন জাহাজগুলো এখানে ভাঙা হয়। এই জাহাজ ভাঙা শিল্পকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে ওঠেছে বিশাল শিল্প। জাহাজ ভাঙা শিল্প থেকে সংগ্রহকৃত লোহা বাংলাদেশের লোহার সিংহভাগ চাহিদা মেটানো হয়। প্রতি বছর হাজার হাজার দেশীয় ও স্থানীয় পর্যটক জাহাজ ভাঙা শিল্প দেখা ও পুরাতন ব্যবহার্য ও এন্টিক সামগ্রী সংগ্রহ করার জন্য সীতাকুণ্ডে আসেন।

ভারী শিল্প কারখানা দর্শন
বাংলাদেশের প্রধান প্রধান ভারী শিল্প কারখানাগুলো সীতাকুণ্ডে অবস্থিত। সম্প্রতি সরকার সীতাকুণ্ডের পার্শ্ববর্তী উপজেলা মীরসরাইকে অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করেছেন। যার ফলে ভারী শিল্প কারখানাগুলো এখানে গড়ে ওঠছে। এই ভারী শিল্প কারখানা দেখতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিভিন্ন পর্যটক, শিক্ষানুরাগী ও গবেষক এখানে আসতে পারেন।

স্থানীয় পর্যটন বাজার বিশ্লেষণ ও সম্ভাবনা
আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের পর্যটন খাতে অপার সম্ভাবনা দেখছে বিশ্ব ভ্রমণ ও পর্যটন কাউন্সিল (ডব্লিউটিটিসি)। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, পর্যটন খাত থেকে বাংলাদেশ ২০১৫ সালে আয় করেছে ১ হাজার ৮০ কোটি টাকা, যা মোট রপ্তানি আয়ের শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। এই আয় ২০২৬ সাল নাগাদ বেড়ে হবে ২ হাজার ২৪০ কোটি। ডব্লিউটিটিসির এক প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে- বিশ্বের যে ২০টি দেশ পর্যটন খাতে ভালো প্রবৃদ্ধি করবে, তার মধ্যে একটি বাংলাদেশ।

সীতাকুণ্ডে কমিউনিটি ভিত্তিক ইকো-ট্যুরিজম শিল্পের প্রসারে করণীয়
প্রাথমিক গবেষণায় দেখা যায় চট্টগ্রাম শহর থেকে সীতাকুণ্ডের পর্যটন স্থানগুলোয় একজন পর্যটক ভ্রমণ করলে তার খরচ হয় জন প্রতি ১৫০০ টাকা। আর রাজধানী ঢাকা থেকে ভ্রমণ করলে ব্যয় হয় জন প্রতি ৫০০০ টাকা। যদি পর্যটক, শিক্ষানুরাগী ও গবেষকদের জন্য মানসম্পন্ন দক্ষ গাইড, পরিবহন ব্যবস্থা, থাকা, খাওয়া, টুরিস্ট পুলিশ ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায় তবে এখানে দেশীয় পর্যটকের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যটকরাও ভিড় জমাবে এই অঞ্চলকে দেখতে ও গবেষণার জন্য।

সীতাকুণ্ডে কমিউনিটিভিত্তিক ইকো-ট্যুরিজম শিল্পের প্রসারে ইপসা কর্তৃক গৃহীত কার্যক্রম
সীতাকুণ্ডে কমিউনিটিনির্ভর ইকো-ট্যুরিজম শিল্পের বিকাশে স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য সংগঠন ইপসা ইতোমধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠান পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ‘চট্টগ্রামের মীরসরাই ও সীতাকুণ্ডে ইকো-ট্যুরিজম শিল্পের উন্নয়ন’ শীর্ষক ভ্যালু চেইন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো- পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে ইকো-ট্যুরিজমের মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান (ব্যবসায় মুনাফা বৃদ্ধি, আত্ম-কর্মসংস্থান ও মজুরি শ্রম সৃষ্টি এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত) উন্নয়ন। প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে; সার্ভিস প্রভাইডারদের ইকো-ট্যুরিজম এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট বিষয়ক প্রশিক্ষণের আয়োজন। ইতোমধ্যে প্রায় ৫০০ জন সার্ভিস প্রভাইডারকে এই ওয়ার্কশপের মাধ্যমে ইকো-ট্যুরিজম এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। যার ফলে স্থানীয় পর্যায়ে ইকো-ট্যুরিজম বিষয়ক অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। প্রকল্পের সহযোগিতায় স্থানীয় পর্যায়ে ১৮টি বাড়িকে হোম স্টে এন্ড সার্ভিসের মাধ্যমে ট্যুরিস্টদের জন্য থাকার উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে। পাশাপাশি প্রকল্প এলাকার আরো ৫০ জন নিজ উদ্যোগে হোস স্টে চালু করেছে। এসব বাড়িকে এয়ারবিএনবি, এগোডা, স্টে ইত্যাদি ওয়েবভিত্তিক সার্ভিস সাইটের সঙ্গে নিবন্ধন করে দেয়া হয়েছে, যাতে করে ট্যুরিস্টরা সরাসরি উক্ত বাড়ির সেবা গ্রহণের জন্য অনলাইনে বুকিং দিতে পারে। ভবিষ্যতে আরো বাড়ি হোম স্টে সার্ভিসের আওতায় আনা হবে। ট্যুর গাইড উন্নয়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে ১৫ জন সার্ভিস প্রভাইডারকে ট্যুরিস্ট গাইডিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় এবং প্রশিক্ষণ শেষে তাদেরকে অনুদান প্রদান করা হয়। হাউস কিপিং, ফুড এন্ড বেভারেজ সার্ভিস উন্নয়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে ২১ জনকে হাউস কিপিং, ১০ জনকে ফুড এন্ড বেভারেজ সার্ভিস ও ৪ জনকে ফটোগ্রাফি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। প্রশিক্ষণ শেষে প্রশিক্ষণার্থীদের অনুদান প্রদান করা হয়। পর্যটন এলাকায় ট্যুরিস্টদের জন্য টয়লেট ও বাথরুম সেবা প্রদানের নিমিত্তে পর্যটন এলাকায় ৫টি টয়লেট ও বাথরুম স্থাপন করা হয়। ইকো-ট্যুরিজম শিল্পের বিকাশ, সার্ভিস প্রভাইডারদের সেবার ধরন ও ট্যুরিস্টদের দৃষ্টি আর্কষণ করার জন্য একটি নান্দনিক তথ্যসমৃদ্ধ ওয়েবসাইট উন্নয়ন করা হয়েছে। তাছাড়া পর্যটন এলাকায় পর্যটকদের নিরাপত্তার সুবিধার্থে সীতাকুণ্ডে ট্যুরিস্ট পুলিশের সেবা অন্তর্ভুক্তকরণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এডভোকেসি করা হচ্ছে। এই কার্যক্রমগুলো ধারাবাহিকভাবে আরো বর্ধিত আকারে বাস্তবায়ন করা হবে।

উপসংহার
অতি সম্প্রতি গুলিয়াখালি সমুদ্রসৈকতকে পর্যটন সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করেছে সরকার। উপকূলীয় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ২৪৯ দশমিক ১০ একর জায়গা এই ঘোষণার আওতায় থাকবে। পরিকল্পিত টেকসই উন্নয়ন ও স্থানীয় জনগণের সমন্বিত অংশগ্রহণই একমাত্র নিশ্চিত করতে পারে ইকো-ট্যুরিজম বা পরিবেশবান্ধব পর্যটন। এর ফলে যেমন নিশ্চিত হবে পরিবেশের সংরক্ষণ ও স্থানীয় জনগণের উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন। সরকার ২০১০ সালে একটি পর্যটন নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, সেখানে বহুমাত্রিক পর্যটনের কথা বলা হয়েছে। বহুমাত্রিক পর্যটনশিল্পের সম্ভাবনার মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড। পর্যটন শিল্পের বিকাশের ওপর বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন নির্ভর করছে। দেশে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটলে কর্মসংস্থান ঘটবে ও বেকারত্ব দূরীকরণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন হবে এবং স্থানীয় জনগণের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। দারিদ্র্য বিমোচন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য সংগঠন ইপসার অন্যতম মূলনীতি। সেই মূলনীতিকে লালন করে ইপসা বিগত তিন দশকের অধিক সময় ধরে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম বিভাগে দারিদ্র্য বিমোচন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ, স্থানীয় জনগণের উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে উন্নয়ন কর্মসূচি সফলতার সহিত বাস্তবায়ন করে আসছে। পাশাপাশি সমস্ত সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই কমিউনিটিভিত্তিক ইকো-ট্যুরিজম বা পরিবেশবান্ধব পর্যটনের প্রসারে নেয়া হয়েছে ব্যাপক পরিকল্পনা। ইপসা বিশ্বাস করে, বাংলাদেশকে সত্যিকারের মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে কমিউনিটিভিত্তিক পরিবেশবান্ধব পর্যটন শিল্পকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা অত্যন্ত প্রয়োজন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়