ভালোবাসা এখন ‘ভার্চুয়াল’, আবেগেও পড়েছে টান : তবুও বসন্ত জেগেছে বনে

আগের সংবাদ

সংস্কৃতির চর্চা জোরদারের তাগিদ > বাঙালির প্রাণের মেলার উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী : হাতে নিয়ে বই পড়ার আনন্দ অনেক

পরের সংবাদ

নতুন আলোর নিউ-মিডিয়া বদলি হাওয়ার অবারিত দ্বার

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নতুন মাধ্যম। আজব এক দুনিয়া। যে জগতে কল্পনা আর বাস্তব হাত ধরাধরি করে চলে। যেখানে ‘আমরা সবাই রাজা’। রয়েছে ইচ্ছে পূরণের অপার স্বাধীনতা। ভাবনারা যেখানে ইচ্ছেমতো পাখনা মেলতে পারে। ‘যুক্ত করো হে সবার সঙ্গে, মুক্ত করো হে বন্ধ’। মূলমন্ত্র যেন এটাই। যার ছোঁয়ায় ভাবনার ব্যাপ্তিটাই বদলে গেছে। যাপিত জীবনেও এসেছে বড় ধরনের পরিবর্তন। বদলি হাওয়ায় গণমাধ্যমকেও তাই নতুন করে সব ভাবতে হচ্ছে। বলছি নিউ-মিডিয়ার কথা। এই মাধ্যমটি নতুন এক আলোয় আমাদের ভুবনকে ভরিয়ে দিয়েছে।

নিউ-মিডিয়া কী
নিউ-মিডিয়া হলো নয়া গণমাধ্যম। পুরাতন বা মূলধারার গণমাধ্যমের পাশাপাশি নতুন ধারার যে গণমাধ্যমের পথ চলা শুরু হয়েছে সেটার নামই নিউ-মিডিয়া। মূলধারার গণমাধ্যম হলো সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও বেতার। একই সঙ্গে রয়েছে হালের অনলাইনগুলো। এগুলো ছাড়াও অন্য যে মাধ্যমগুলো থেকে তথ্য মিলছে বা যে মাধ্যমগুলো আমরা তথ্য আদান-প্রদানে ব্যবহার করছি, সেগুলোই হলো নিউ-মিডিয়া। আর তাই নিউ-মিডিয়াকে বিকল্প গণমাধ্যমও বলা হয়। নিউ-মিডিয়াতে কাজ করা হয় ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এটি ডিজিটাল মিডিয়া এবং অবশ্যই ইন্টারনেট-নির্ভর। সেই কারণেই কোনো মাধ্যমকে নিউ-মিডিয়া বলতে হলে প্রথমেই বিবেচনায় আনা হয় এর ইন্টারনেট সংযুক্তির বিষয়টি। এটিই হলো নিউ-মিডিয়ার প্রধান শর্ত বা অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
তথ্য-প্রযুক্তির উৎকর্ষে বদলে যাচ্ছে গণমাধ্যমের চেনা চেহারা। যোগ হচ্ছে নতুন নতুন বিষয়। পাল্টে যাচ্ছে গতানুগতিক সাংবাদিকতার ধারা। আগে যেটাকে সাংবাদিকতার বিষয় হতে পারে বলে কেউ মনেই করেনি, সেটাই এখন নতুন সংবাদ উপাদান। ফলে তৈরি হয়েছে সাংবাদিকতার নতুন প্ল্যাটফর্ম। যেখানে প্রচলিত ধারা থেকে বেরিয়ে নতুন আঙ্গিকে পরিবেশন করা হচ্ছে সংবাদ। এই নতুন ধারাই হচ্ছে নয়া গণমাধ্যম বা নিউ-মিডিয়া। আর এ ধরনের সাংবাদিকতাকে এখন অনেক নামে অভিহিত করা হচ্ছে। নামগুলোতেও বেশ চমক রয়েছে। নাগরিক সাংবাদিকতা, সামজিক সাংবাদিকতা, পথ-সাংবাদিকতা, গণতান্ত্রিক সাংবাদিকতা, অংশগ্রহণমূলক সাংবাদিকতা, সাইবার সাংবাদিকতা, কমিউনিটি সাংবাদিকতা। এ যেন একই অঙ্গে অনেক রূপ।
এক কথায় সহজ করে বলতে গেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং ইন্টারনেট বা অনলাইনভিত্তিক যোগাযোগ পরিসরই হলো নিউ-মিডিয়া।
ফেসবুক ও টুইটার হালের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বেশি ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। নিউ-মিডিয়া হিসেবে এই দুটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের খুব ব্যবহার হচ্ছে। পাশাপাশি রয়েছে লিঙ্কডইন, ইনস্টাগ্রাম, ওয়েব, ইউটিউব এবং ব্লগ।

নিউ-মিডিয়ার গতিবিধি
নিউ-মিডিয়ার দ্বার অবারিত। আগ্রহী যে কেউ এখানে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারেন। আগে যারা শ্রোতা, দর্শক কিংবা পাঠক ছিলেন, প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখন তারাই সাংবাদিক। সাধারণ মানুষ যা দেখছে, যেভাবে দেখছে সেটাই তুলে ধরছে নিউ-মিডিয়ায়। শুধু তাই নয়, তারাই বিশ্লেষণ করছে, তারাই মতামত দিচ্ছে। মূলধারার সাংবাদিকতায় এ সুযোগ প্রায় ছিল না বললেই চলে। নিউ-মিডিয়া, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সাংবাদিকতার বিবর্তনে নতুন মাইলফলক তৈরি করেছে। আর বিভিন্ন ঘটনায় এটা প্রমাণ হয়েছে যে প্রচলিত সাংবাদিকতার চেয়ে নিউ-মিডিয়া বেশি কার্যকর ও ফলপ্রসূ।
আগে বিভিন্ন বিষয়ে মানুষ গণমাধ্যমের ওপর নির্ভর করত। করতে বাধ্য হতো। কিন্তু এখন চিত্র ভিন্ন। নিউ-মিডিয়ার কারণে মানুষ এখন নিজেরাই তাদের এজেন্ডা নির্ধারণ করে নেয়। ফেসবুক, টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তাদের সেই স্বাধীনতা ভোগ করার সুযোগ এনে দিয়েছে। নিজেদের প্রয়োজন, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য প্রচারে তারা আর এখন মূলধারার গণমাধ্যমের ওপর তেমন নির্ভরশীল নয়। যে কেউ চাইলেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরাসরি নিজের মতামত, ছবি বা কোনো খবর প্রচার করতে পারে।
নিউ-মিডিয়ার আরেক মস্ত সুবিধা হচ্ছে পারস্পরিক যোগাযোগ ও অংশগ্রহণের সুযোগ। মূলধারার গণমাধ্যমে সাধারণ মানুষ মানে পাঠক-দর্শক-শ্রোতাদের সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ তেমন ছিল না। নিউ-মিডিয়া সেই সুযোগ এনে দিয়েছে। মূলধারার গণমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন আসছে এই নিউ-মিডিয়ার কারণে। সময়ের দাবি পূরণে বাধ্য হচ্ছে তারা। টিভি চ্যানেলগুলোর বিভিন্ন টকশো ও অনুষ্ঠানে দর্শককে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হচ্ছে। ফেসবুক, টুইটার ও ইউটিউবে তাদের আধেয় প্রকাশ করতে হচ্ছে। আসতে হচ্ছে অনলাইন সংস্করণে। নাগরিক সাংবাদিকতাকে সাদরে গ্রহণ করতে হচ্ছে। এ ধরনের সাংবাদিকতার সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হচ্ছে। নিউ-মিডিয়ার সম্ভাবনা বিশাল। এর কার্যকারিতা ও প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে।
নিউ-মিডিয়ার উত্থান আরো বেগবান হচ্ছে স্মার্টফোনের ছোঁয়ায়। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। খবর জানা বা পাওয়ার কাজ আগের চেয়ে সহজ হয়েছে স্মার্টফোনের কারণে। হাতে একটা স্মার্টফোন থাকার অনেক সুবিধা। ছবি তোলা, ভিডিও ধারণ, কথা রেকর্ড করা যায় সহজেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুহূর্তে সেগুলো ছড়িয়ে দেয়া যায়। এখন তো মূলধারার গণমাধ্যমের বার্তাকক্ষে সংবাদ পৌঁছে দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে স্মার্টফোন। হালের বেশ কিছু আলোচিত ঘটনা ও দুর্ঘটনার বিশেষ মুহূর্ত স্মার্টফোনে ধারণ করেন উপস্থিত স্থানীয়রা। মুহূর্তেই সেগুলো ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেই ফুটেজ বা ছবিই ব্যবহার করা হয় মূলধারার গণমাধ্যমে। শিশু রাজন হত্যা, পিনাক-৬ লঞ্চডুবি, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার কথা উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। এই ধরনের সাংবাদিকতাকেই বলা হচ্ছে নাগরিক সাংবাদিকতা।
বিশ্বের প্রায় সব দেশেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নাগরিক সাংবাদিকতা। আন্তর্জাতিকভাবে নাগরিক সাংবাদিকতার মঞ্চ তৈরির জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে ওপেন গেøাব, দ্য থার্ড রিপোর্ট, নিমবাস, অলভয়েস নামের ওয়েবসাইটগুলো। এই ধারার পথচলা সময়ের সঙ্গে আরো গতিময় হবে।
নিউ-মিডিয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য যে বিষয়টা ছিল তা হলো স্বাধীনতা। কিন্তু সেখানেও আগ্রাসন শুরু হয়ে গেছে। বিষয়টা সূ², তবে খেয়াল করার মতো। নিউ-মিডিয়ায়ও শুরু হয়েছে বিজ্ঞাপন-যন্ত্রণা। ইউটিউবে আগে ভিডিও দেখার সময় বিজ্ঞাপন এলেও একটা বিকল্প ছিল। পাঁচ সেকেন্ড পরই সেটাকে থামিয়ে দেয়ার একটি সুযোগ পেতেন ব্যবহারকারী। কিন্তু এখন সেই সুযোগ নেই। আর তাই বিজ্ঞাপন দেখতে বাধ্য হতে হচ্ছে। কমতে শুরু করেছে নিউ-মিডিয়ার স্বাধীনতা। ব্যবহারকারীরা সেটা অল্প হলেও বুঝতে শুরু করেছেন। আরেকটা বিষয় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ-নির্ভর ছোট ছোট নিউ-মিডিয়া কিনে নিচ্ছে বড় ও খ্যাতনামা নিউ-মিডিয়াগুলো। যার ফলে গুটি কয়েক হাতে নিউ-মিডিয়ার কর্তৃত্ব চলে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
নিউ-মিডিয়ার বর্তমান অবস্থাকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথম পর্যায় হলো মানুষ নিজের হাতে একটি গণমাধ্যম পেয়েছে। যেটাকে নিজের মতো করে ব্যবহার করা যায়। নিজের মতামত অন্যদের কাছে সহজে পৌঁছে দেয়া যায়। অন্য মতকে সহজে প্রশ্ন করা যায়। মূলধারার গণমাধ্যমে মানে সংবাদপত্র, টেলিভিশন, রেডিওতে এটা করা যেত না বললেই চলে। দ্বিতীয় পর্যায় হলো নিউ-মিডিয়ার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে অনেক বড় বড় কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলা যায়। এমন কী সরকার পতনও। উদাহরণ মধ্যপ্রাচ্য। ফলে ক্ষমতাসীন মহল নিউ-মিডিয়াকে ভয় পেতে শুরু করেছে। আর তাই তৃতীয় পর্যায় হলো : বিশ্বজুড়ে ক্ষমতাধর গোষ্ঠী নিউ-মিডিয়ার ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে।
নিউ-মিডিয়ার ব্যাপ্তি
বিকল্প গণমাধ্যম নিউ-মিডিয়ার ব্যাপ্তি এখন সমাজের অনেক গভীরে পৌঁছে গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন মানুষের স্বচ্ছন্দ বিচরণ। দিনের অনেকটা সময় তারা কাটায় এ মাধ্যমে। গোটা বিশ্বে এখন নিউ-মিডিয়ার বিস্তৃতি বাড়ছে ঝড়োগতিতে। আমাদের দেশের তরুণরাও নিউ-মিডিয়ায় যুক্ত হয়ে নিজেদেরকে গড়ে তুলছে বিশ্বনাগরিক হিসেবে।
কেবল নগর বা শহরে নয়, নিউ-মিডিয়ার সুফল পৌঁছে গেছে অজপাড়াগাঁয়েও। ফলে রাজনৈতিক আলোচনা এখন কেবল ক্লাব কিংবা চায়ের দোকানে নয়, হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। সাধারণ একজন নাগরিকের জন্য নিউ-মিডিয়া নিয়ে এসেছে রাজনৈতিক অংশগ্রহণের সুযোগ। সহজেই যে কেউ দিতে পারছে তার রাজনৈতিক বক্তব্য বা মতামত। রাজনৈতিক যোগাযোগ ও সমমনাদের মেলবন্ধনও তৈরি হচ্ছে নিউ-মিডিয়ার মাধ্যমে। এটি হয়ে উঠছে সাধারণ মানুষের মতপ্রকাশের জায়গা। যেখানে জমে উঠছে ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির আলোচনা, সংগঠনের সঙ্গে সংগঠনের আলাপ। স্পষ্ট হচ্ছে দলের সঙ্গে দলের মতবিভেদ।
আজকাল বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কর্মসূচি, দাওয়াত ও ভেন্যু জানিয়ে দেয়া হচ্ছে নিউ-মিডিয়ার মাধ্যমে। জানানো হচ্ছে শুভেচ্ছা ও শুভকামনা। কোন একটা বিশেষ বিষয়ে আগ্রহীরা সামজিক যোগাযোগমাধ্যমে গ্রুপ তৈরি করে নিজেদের মধ্যে পরিচয় ও যোগাযোগ গড়ে তুলছে। জড়ো হচ্ছে একটা ছাতার নিচে।
নিউ-মিডিয়া অনেক দূরত্ব ও ব্যবধানকে ঘুচিয়ে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ফলে উন্নত দেশের একজন তরুণের মনোজগতের সঙ্গে বাংলাদেশের একজন তরুণের চিন্তাচেতনার পার্থক্য অনেকটাই কমে এসেছে। বিজ্ঞানের সবশেষ আবিষ্কার, তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে তারা প্রায় একই সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে যোগাযোগটাও সহজ হয়েছে এই নিউ-মিডিয়ার কারণে।
বদলে গেছে মানুষের তথ্য চাহিদার ধরন। সময়ের খবর এখন সবাই সময়ে চায়। সঙ্গে সঙ্গে চায়। এই চাহিদার দাবি নিউ-মিডিয়া খুব ভালোভাবেই মেটাতে পেরেছে এবং পারছে। সেই কারণেই নিউ-মিডিয়ার প্রতি কমবেশি সবাই আকৃষ্ট হচ্ছে। দৈনন্দিন জীবনে এর প্রতি মানুষের নির্ভরশীলতাও বাড়ছে। ফলে হু-হু করে বাড়ছে নিউ-মিডিয়ার ব্যাপ্তি।
মূলধারার গণমাধ্যম ও পুরাতন যোগাযোগ ব্যবস্থায় যেসব ঘাটতি ছিল তা অনেকটাই পূর্ণ করে দিয়েছে নিউ-মিডিয়া। এক্ষেত্রে নতুন এই মাধ্যমটি ভীষণভাবে সফল। সহজ ও কার্যকর যোগাযোগের সুযোগ থাকায় অনন্য হয়ে উঠেছে নিউ-মিডিয়া। ব্যাপ্তির বিশালতার কারণে মূলধারার গণমাধ্যমকেও এখন নিউ-মিডিয়ায় জায়গা খুঁজে নিতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে দিনকে দিন নিউ-মিডিয়া আরো বেশি করে গণমানুষের যোগাযোগমাধ্যম হয়ে উঠছে।
নিউ-মিডিয়া কেন এত জনপ্রিয়
নিউ-মিডিয়ার জনপ্রিয়তার পারদ প্রতিদিনই বাড়ছে। কিন্তু কেন? কী কারণ আছে এর পেছনে? তাহলে শুরুতেই বলতে হয় আমাদের আত্মপ্রেমের কথা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সহজেই আত্মপ্রচারণা ও আত্মবিজ্ঞাপন করা যায়। আমার কী পছন্দ, আমি কী করতে চাই, এ মুহূর্তে আমার কী ইচ্ছে করছে। বেশ একটা তারকা-তারকা ভাব। নিজেকে উপস্থাপনের সুযোগ কে হাতছাড়া করতে চায়? নিজের একটা প্রোফাইল। তাতে নিজের ছবি, যোগ্যতা, বিশেষত্বের কথা তুলে ধরার সুযোগ। শুধু কি তাই? না, সঙ্গে আরো অনেক বিষয় আছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রয়েছে অসম্ভবকে সম্ভব করার হাতছানি। নিজেকে আড়াল করার সুযোগ। আমি যা নই তা দেখানোর সুযোগ। মোটা হয়ে গেছেন, চিন্তা নেই, অনায়াসে আগের হালকা পাতলা গড়নের একটা ছবি দিয়ে দেয়া যায়। চেহারা সুন্দর দেখাতে ছবি সম্পাদনা করে দেয়া যায়। মনের ভেতরে অন্ধকার, সংকীর্ণতায় ভরা, অথচ প্রোফাইলে নিজেকে উপস্থাপন করা যায় উদার ও আলোকিত একজন হিসেবে। ভালো ভালো কথামালায় অনেককে মুগ্ধ করা যায়। বাস্তব জীবনের সঙ্গে যার কোনো মিল নেই। মিল থাকার দায়ও নেই। নিজেকে সুন্দর ও বিশেষ একজন হিসেবে উপস্থাপন করার সুপ্ত আকাক্সক্ষা এখানে পূরণ করা সম্ভব।
আর চাইলেই দ্রুত, সহজে ও গোপনে কারো সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। দূরের কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব করা যায় সহজেই। সমমনাদের আলাপ করা যায়, নিজের আনন্দ-বেদনা ভাগাভাগি করা যায়। প্রয়োজনে বাড়িয়ে দেয়া যায় সহযোগিতার হাত। পাল্টা প্রয়োজনে অন্যদের সহযোগিতা মেলে। প্রকাশ করা যায় নিজের অনুভূতি। নিজের সৃজনশীলতাকে তুলে ধরে সেটা যাচাইয়ের একটা সুযোগ ঘটে। নিউ-মিডিয়ার জনপ্রিয়তা তাই এত বেশি।
তথ্য ভাগাভাগি আর নাগরিক সাংবাদিকতা করার সুযোগও নিউ-মিডিয়ার জনপ্রিয়তার নেপথ্যে জোরালো ভূমিকা রেখেছে।
নিউ-মিডিয়ার সুফল
গণমানুষের অংশগ্রহণ নিউ-মিডিয়ার অন্যতম শক্তিশালী দিক। আর তাই এর সুফল দিন দিন বাড়ছে। ইতিবাচক ব্যবহারের মাধ্যমে এটি আরো বেশি কার্যকর হচ্ছে। মোবাইল ফোন এখন শুধু প্রয়োজনে ব্যবহারের বস্তু নয়, বরং প্রতিবাদের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। কোনো অন্যায় হলেই ধারণ করা হচ্ছে সেটা। উৎসাহী মানুষের মোবাইল ফোনে তোলা এই ঘটনা ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর সেটা নিয়ে কথা বলতে বাধ্য হচ্ছে বড় বড় সংবাদ মাধ্যম। পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। সামাজিক চাপের মুখে পড়ছে সেই অপরাধী। তাকে দাঁড়াতে হচ্ছে বিচারের কাঠগড়ায়। প্রশাসনের অন্যায়ও ক্ষেত্রবিশেষ ধরা পড়ছে মোবাইল ফোনের ক্যামেরায়। বিভাগীয় শাস্তির মুখোমুখি হতে হচ্ছে দোষী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।
আজকের দিনে নতুন এক বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বিশ্ব। আর সেটা হলো নিউ-মিডিয়া সচল থাকলে কমবেশি গণতন্ত্র থাকবে। কোনো দেশে গণতন্ত্র নেই, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হয়ে আছে। তারপরও নিউ-মিডিয়ার কল্যাণে খানিকটা গণতন্ত্র চর্চা করা সম্ভব হয়। এমনকি কারফিউ থাকলেও কথা বলা ও যোগাযোগের সুযোগ থাকে।
এ কথা তো আমরা কমবেশি অনেকেই জানি, তিউনেশিয়ায় আরব বসন্তের অগ্নিশিখা ছড়িয়ে পড়েছিল নিউ-মিডিয়াকে ব্যবহার করেই। ২০১৩ সালে আমাদের দেশের গণজাগরণ মঞ্চের কথাও এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যায়।
অনেক ক্ষেত্রে শিশু নির্যাতনকারীদের শনাক্ত ও বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হয়েছে এই নিউ-মিডিয়ার কারণে। রাজন, রাকিবের ঘটনা সেটার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে মূলধারার গণমাধ্যম অনেক কিছুই প্রকাশ করতে পারে না। নিউ-মিডিয়ায় সেসব অনায়াসে প্রকাশ হয়ে পৌঁছে যায় মানুষের কাছে।
নিউ-মিডিয়ার ম্যাজিক আরো আছে। ধরুন, প্রতিভাবান অখ্যাত কোনো শিল্পী নিজের গান প্রকাশ করলেন ইউটিউবে। দর্শক-শ্রোতারা সাদরে গ্রহণ করল তার গান। রাতারাতি আলোচিত ও বিখ্যাত হয়ে গেলেন তিনি। এমন নজির অনেক আছে। প্রচলিত তারকা তকমার বৃত্তকেও ভেঙে দিয়েছে নিউ-মিডিয়া। প্রত্যন্ত এলাকার অনেকেই এখন নিউ-মিডিয়ার কল্যাণে জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন। বনে যাচ্ছেন তারকা।
চ্যালেঞ্জের মুখে মূলধারার গণমাধ্যম
নিউ-মিডিয়ার দাপটে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে মূলধারার গণমাধ্যম। সামাজিক মাধ্যম থেকে দ্রুত মিলছে সবকিছু। সংবাদ, তথ্য, বিনোদন যাবতীয় উপাদান ঝটপট পেয়ে যাচ্ছেন ব্যবহারকারীরা। ফলে আবেদন হারিয়ে ফেলছে মূলধারার গণমাধ্যম। সংবাদপত্র তো বটেই, রেডিও ও টেলিভিশনেও প্রভাব ফেলেছে নিউ-মিডিয়া। অনেকেই এখন ল্যাপটপে বা স্মার্টফোনে সুবিধামতো সময়ে দেখে নিচ্ছে টিভি অনুষ্ঠান।

এর পেছনেও কারণ আছে। একটি অনুষ্ঠান টেলিভিশনের পর্দায় দেখতে যে সময় খরচ করতে হয় ল্যাপটপ বা স্মার্টফোনে তার চেয়ে কম সময়ে সেটা দেখে নেয়া যায়। বিজ্ঞাপনের ফাঁকে একটুখানি করে অনুষ্ঠান দেখার থেকেও মুক্তি মেলে। টিভি দর্শক হয়তো এ কারণেই কমে যাচ্ছে। আর তাই টিভি চ্যানেলগুলোকে ইউটিউবে তাদের চ্যানেল খুলতে হচ্ছে। বিনোদন দুনিয়ায় নতুন করে যোগ হয়েছে ওয়েবসিরিজ। বলা হচ্ছে, এই ওয়েবসিরিজই বিনোদন জগতের ভবিষ্যৎ। ছোটপর্দার প্রচলিত অনেক কিছুকে যা ভেঙে দেবে।
সংবাদপত্র উন্নত দেশগুলোতে বড়জোর ২৫ বছর টিকে থাকবে বলে মনে করছেন মিডিয়া বিশেষজ্ঞরা। তাদের এই অভিমত দিন দিন যেন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে বন্ধ হয়ে গেছে বেশ কয়েকটি নামি সংবাদপত্র। সংবাদপত্র কেন যেন প্রযুক্তির সঙ্গে ঠিক তাল মিলিয়ে উঠতে পারছে না। পাঠক সংখ্যা দিন দিন কমছে। অনেকটা বাধ্য হয়েই প্রিন্ট মিডিয়াকে ঝুঁকতে হয়েছে অনলাইন সংস্করণের দিকে। একসময়ে রেডিও ছিল সবার প্রিয় গণমাধ্যম। রেডিওর শ্রোতা কমে গেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। বলতে গেলে এফএম ও কমিউনিটি রেডিও কোনো রকমে টিকিয়ে রেখেছে এই সম্প্রচার মাধ্যমটিকে।
নিউ-মিডিয়ার ঝুঁকি ও নেতিবাচক দিক
সবকিছুরই ভালো-মন্দ দুটো দিক থাকে। নিউ-মিডিয়ারও নেতিবাচক কিছু দিক সামনে চলে এসেছে। আসলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিজ থেকে কিছু করে না। ব্যবহারকারীরাই যা করার করেন। তাদের সবার, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান, মন-মানসিকতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা সমান নয়। ফলে নীতি-নৈতিকতায়ও থাকে বিস্তর ব্যবধান। সমস্যাটা তৈরি হচ্ছে সেখানেই। নিউ-মিডিয়ার বিস্তৃত সুবিধার অপব্যবহার করছেন অনেকেই।
বাস্তব জীবনের পাশাপাশি আমরা এখন আরেকটা জীবনযাপন করছি। সেটা হলো ‘ভার্চুয়াল জীবন’। এখানে অনেকেই সৎ থাকছেন না। দ্বৈত চরিত্রে অবতীর্ণ হচ্ছেন। কে জানে, আমাদের পাশের পরিচিত মানুষটিই হয়ত ভার্চুয়াল জীবনে দ্বিচারিতায় মেতেছেন। মাঝে-মধ্যে তেমন বিচ্ছিন্ন কিছু খবর তো আমরা পেতে শুরু করেছি। সমাজে আদর্শবাদী হিসেবে পরিচিত বিখ্যাত একজন মানুষ হয়তো ভার্চুয়াল জীবনে নারীকে উত্ত্যক্ত করছেন। আপত্তিকর প্রস্তাব দিচ্ছেন, অশ্লীল কথাবার্তা বলছেন। আবার উল্টো ঘটনাও ঘটছে। অসৎ ও ধান্ধাবাজ একজন মানুষ ভার্চুয়াল জীবন নিজেকে মহৎ ও ভালো একজন হিসেবে পরিচিত করে তুলছে। নিজের আসল পরিচয় লুকাচ্ছেন অনেকে। এর ফলে বাস্তবে ও সামাজিক জীবনে একধরনের জটিলতা তৈরি হচ্ছে। মিথ্যা ভিত্তির ওপর সম্পর্ক তৈরি করে অনেকেই প্রতারিত হচ্ছেন, ঠকে যাচ্ছেন। মানুষ মানুষের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছে। বিভিন্ন বিপত্তি ও অঘটন ঘটছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যক্তিগত ও সামাজিক নিরাপত্তা।
নিউ-মিডিয়া এখন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক নেতারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনসংযোগ করছেন। নির্বাচনের আগে জনমত যাচাই ও প্রচারণা চালচ্ছেন। তবে নিউ-মিডিয়ায় রাজনৈতিক অংশগ্রহণও সবসময় ভালো ফল বয়ে আনছে না। অসত্য ও অসুস্থ প্রচারণা অনেক ক্ষেত্রে অস্থিতিশীলতার জন্ম দিচ্ছে। ফলশ্রæতিতে সহিংসতা ও সাম্প্রদায়িক হামলার মতো ঘটনাও ঘটছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কখনো কখনো বিদ্বেষের ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে।
মূলধারার গণমাধ্যমের মতো নিউ-মিডিয়ায় তথ্য যাচাই, সম্পাদনা ও পরিমার্জনের ব্যবস্থা বা সুযোগ নেই। ফলে প্রাপ্ত তথ্যের যথার্থতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। পাশাপাশি প্রতিনিয়ত এতে যোগ হচ্ছে অবিশ্বাস্য পরিমাণ তথ্য। যেগুলোর মধ্যে রয়েছে অসত্য, অপ্রয়োজনীয় ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্যও। অভিজ্ঞমহল তাই প্রশ্ন তুলেছেন : আমরা কী তথ্য আবর্জনার যুগে চলে এসেছি? ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের (ডব্লিউডব্লিউডব্লিউ) উদ্ভাবক স্যার টিম বার্নার্স লি তো সম্প্রতি বলেই ফেলেছেন, ‘ইন্টারনেট-জগৎ এখন সমস্যায় ভরা। বিশেষ করে ভুয়া খবর ও সাইবার বুলিং পৃথিবীর অর্ধেক জনসংখ্যার বিচরণক্ষেত্র ইন্টারনেটকে সমস্যায় আক্রান্ত করেছে।’
নিউ-মিডিয়া পরোক্ষভাবে আমাদের সামাজিক জীবন ও পারিবারিক বন্ধনে প্রভাব ফেলছে। সম্পর্কের বুনন শিথিল হয়ে যাচ্ছে। আগে মানুষ পরিবারকে সময় দিতো, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দিত, গল্প করত। এখন সেই সময় কাটায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। মুখোমুখি বসার, আলাপ করার সময় কোথায়। আর ভার্চুয়াল জগতে যাদের সঙ্গে পরিচয়, আলাপ, আড্ডা ও মতবিনিময় হচ্ছে, তারাও যে ষোলআনা খাঁটি সেই কথাও তো হলফ করে বলা যাচ্ছে না। তারপরও অলীক এক জগতের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে অনেকেই।
যত দিন যাচ্ছে ততই আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে নিউ-মিডিয়া। অংশগ্রহণও বাড়ছে প্রতিনিয়ত। একসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডার্ক ওয়েবের তৎপরতা, হ্যাকারদের অপতৎপরতা। আর নিরপত্তার প্রশ্ন তো বরাবরই থেকে গেছে। কারণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো কিন্তু ব্যবহারকারীদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা দেয় না। কোনো গোপনীয়তা রক্ষার দায়ও তাদের নেই। ক্ষমতাধর কোনো শক্তি অনুরোধ করলে তারা ব্যবহারকারীর সব তথ্য দিয়ে দেয়। তাকে জিজ্ঞেস করে তার অনুমতি নেয়ারও প্রয়োজন বোধ করে না। সুতরাং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা সাবধান। যা করবেন জেনে বুঝে করবেন।
প্রয়োজন সচেতনতা ও সঠিক নিদের্শনা
নিউ-মিডিয়ার সঙ্গে আমাকে যুক্ত হতেই হবে। দেরি করলে পিছিয়ে পড়ব। আমাদের সমাজে বিশেষ করে তরুণদের মাঝে এ ধরনের একটা প্রবণতা তৈরি হয়েছে। এটা অনেকাংশে সত্যি এবং একইসঙ্গে সময়ের দাবি। তবে নিউ- মিডিয়াকে আমরা কীভাবে, কী কাজে, ঠিক কতটা ব্যবহার করব, সেই শিক্ষাটাও এখন ভীষণ প্রয়োজন। কারণ আমরা এখনো ভালো করে জানি না নিউ-মিডিয়ার বাস্তবতাকে কীভাবে সামাল দিতে হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো কিন্তু তাদের ব্যবহারের শর্তাবলীতে কী করা যাবে, কী করা যাবে না, কী কী মেনে চলা উচিত সেগুলোর একটা তালিকা দিয়ে রাখে। ব্যবহারকারীদের বেশিরভাগই সেসব নিদের্শনার কথা মনে রাখে না। হয়ত পড়েও দেখে না। আবেগের বশে বা নিজের অজ্ঞতার কারণে অনেকেই আপত্তিকর কিংবা অন্যের মানহানি হয় এমন কাজ করে বসে। এক্ষেত্রে আমাদের সচেতন হতে হবে। আমাদের মনে রাখা উচিত দেশে কিন্তু আইসিটি বা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন রয়েছে। একটু ভুলের কারণে বড় ধরনের খেসারত দিতে হতে পারে। সাইবার অপরাধ দমনে সম্প্রতি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মানুষ বুঝে গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো খুব শক্তিশালী হাতিয়ার। সুযোগ বুঝে তাই এর অপব্যবহারও হচ্ছে। আমাদের দেশে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে গেছে। এক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের মধ্যে নীতি-নৈতিকতাবোধ তৈরি করা খুব জরুরি। সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ কথা মাথায় রাখতে হবে যে, ব্যক্তি সচেতনতা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সুষ্ঠু ব্যবহারই পারে নিউ-মিডিয়াকে আরো অধিক কার্যকরী করে তুলতে। রাষ্ট্রীয়ভাবেও ব্যবহারকারীদের প্রতি উদার দিকনির্দেশনা প্রদান ও সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও নিজস্ব নিউ-মিডিয়া নীতিমালা তৈরি করা যেতে পারে। অচিরেই এই নীতিমালা তৈরির প্রয়োজনীয়তা আমরা জোরালোভাবে অনুধাবন করতে শুরু করব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
উপসংহার
নিউ-মিডিয়া হচ্ছে অমিত সম্ভাবনার অপর নাম। তবে একে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে জানতে হবে। বিজ্ঞজনদের অভিমত, তারুণ্য আর ইন্টারনেট সব অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে পারে। নিউ-মিডিয়া হচ্ছে ইন্টারনেট-নির্ভর এবং তরুণরাই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে। আর তাই অসম্ভবকে সম্ভব করার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার এখন নিউ-মিডিয়া। গতিময় বিশ্বকে ভবিষ্যতে নিউ-মিডিয়া আরো বদলে দেবে। বৈশ্বিক গ্রাম (গেøাবাল ভিলেজ) ধারণাকে আরো বাস্তব, সত্যি ও সার্থক করে তুলবে।
তবে একটা প্রশ্ন প্রাসঙ্গিকভাবেই উঠে আসে, আর সেটা হলো নিউ-মিডিয়ার ভাষা কী হওয়া উচিত? আঞ্চলিক নাকি প্রমিত? শুধু বাংলা ভাষা দিয়ে তো বিশ্বের সব মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব না। তাহলে নিউ-মিডিয়ায় ভাষা কি একটা সীমাবদ্ধতা হয়ে দাঁড়াচ্ছে? অল্প কথায় এর জবাব দেয়া সত্যি মুশকিল। আমাদেরকে বিষয়টা নিয়ে অবশ্যই ভাবতে হবে। আর এক্ষেত্রে কী করণীয় সময়ই সেটা বলে দেবে।
মানবতা, গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মানুষের অধিকার রক্ষায় নিউ-মিডিয়া ভূমিকা রাখবে সেটাই আমাদের কাম্য। মঙ্গল-আলোকে বিশ্বকে আরো ভরিয়ে দেক নিউ-মিডিয়া। এই মাধ্যমটি নতুন এক জগৎ, আমাদের নতুন আরেক আকাশ। এই জগতে বিচরণ করতে, এই আকাশে ভাবনার পাখা মেলতে আমাদের যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গে চলতে হবে। আলোটুকু গ্রহণ করতে হবে, অন্ধকারকে দূরে সরিয়ে। আর তাতেই প্রকৃত মুক্তি নিহিত। ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে…’, নিউ-মিডিয়া ব্যবহারকারী প্রত্যেককে এই কঠিন সত্যটা উপলব্ধি করতে হবে। বোধকরি সেটাতেই সবার মঙ্গল, গোটা বিশ্বের মঙ্গল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়