ভালোবাসা এখন ‘ভার্চুয়াল’, আবেগেও পড়েছে টান : তবুও বসন্ত জেগেছে বনে

আগের সংবাদ

সংস্কৃতির চর্চা জোরদারের তাগিদ > বাঙালির প্রাণের মেলার উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী : হাতে নিয়ে বই পড়ার আনন্দ অনেক

পরের সংবাদ

ডিজিটাল বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুর ভাবনা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পলাশীর আ¤্রকাননে বাংলার স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তমিত যায়, এরপর প্রায় ২০০ বছরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন; ’৪৭-পরবর্তী দেশভাগ। পাকিস্তানের শোষণ-নিপীড়ন। সেই শোষণ থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্তির দিশা দেখান এক আকাশসম ব্যক্তিত্বের অধিকারী এক বাঙালি।
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাক, বাঙালির যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া, নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম এবং আত্মত্যাগের বিনিময়ে বিশ্বের মানচিত্রে লাল-সবুজের বাংলাদেশের জন্ম।
স্বাধীনতা, অধিকার আদায়ের প্রশ্নে পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন যে মহানায়ক, তিনি আমাদের জাতির পিতা, বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে গড়ে তোলার কাজে হাত দেন। তিনি বুঝতেন বাঙালির মনের কথা, না বলা কথা। মনের ভাষা ও তাদের আশা আর কষ্টের কথা।
নিজের মধ্যে ধারণ করেছিলেন একটি জাতির দুঃখ-সুখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, স্বপ্ন ও সাহস। পিছিয়ে পড়া এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর মনে তিলে তিলে বড় করে তুলেছেন একটি স্বপ্নের চারাগাছ, যে গাছ বড় হয়ে বাঙালিকে অধিকার আদায় শিখিয়েছে, দীক্ষা দিয়েছে স্বাধীনতার।
৭ মার্চ ১৯৭১, সামনে লাখো জনতা। তিনি তর্জনি উঁচিয়ে শিরদাঁড়া হয়ে একনাগাড়ে বলে দিলেন বঞ্চিত বাঙালির অন্তরের গহীনে থাকা দুঃখ, বঞ্চনা, অপমান ও স্বপ্নের কথা। একই সঙ্গে শিখিয়ে দিলেন সংগ্রাম এবং ভবিষ্যতের মুক্তির কাফেলায় গেরিলা যুদ্ধের কৌশল।
‘রাজনীতির কবি’ বঙ্গবন্ধুর সেই অমর কবিতাই আমাদের জাতীয়তার উন্মেষের সুসংহত উচ্চারণ। সেই উচ্চারণেই নিহিত রয়েছে বাঙালির মুক্তির বার্তা। এরপর থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের, বাঙালির। আজ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সেই ভাষণ বিশ্বঐতিহ্যের অংশ।
মুক্তভূমিতে ফিরে বিধ্বস্ত দেশকে একটি শান্তি, প্রগতি ও সমৃদ্ধির ‘সোনার বাংলা’য় রূপান্তরিত করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। লন্ডন থেকে দিল্লি হয়ে শেখ মুজিব ঢাকায় পৌঁছান দিনের শেষ বেলায়। তাকে সাদরে গ্রহণ করতে বিমানবন্দরসহ আশপাশে জমায়েত হয়েছিল লাখ লাখ মানুষ।
আমরা তখন স্কুলে পড়ি, স্পষ্ট মনে আছে সেদিনের কথা। ওইদিন বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানাতে আসা লাখো মানুষকে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু।
সেখান থেকে সরাসরি যান ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান), যেখানে ৭ মার্চে আপামর বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্র শুনিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।
এর দুদিন পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশটিকে পুনর্গঠনে জনগণ ও সরকারি কর্মচারীদের কঠোর পরিশ্রম করার আহ্বান জানান তিনি। নিজেও রাত-দিন এক করে দেশ গড়ার কাজ করেন।
মুক্তিযুদ্ধের পর বিপর্যয়কর অবস্থা থেকে দেশকে উত্তরণের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের কথা ভেবেছিলেন বঙ্গবন্ধু। প্রথমেই প্রজাতন্ত্রের জন্য রচনা করেন সংবিধান। রাষ্ট্র-পরিচালনা সংক্রান্ত এই দলিলেও তার দেশগঠনে প্রগতিশীল চিন্তার ছাপ ও দর্শন প্রতিফলিত হয়।
বঙ্গবন্ধু পেরেছেন, স্বাধীনতার অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার অনেকটাই বাস্তবায়ন করেন। ১৯৭২ সালে আমাদের অর্থনীতির আকার ছিল মাত্র ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কোনো রিজার্ভ ছিল না। চারদিকে শুধু রোগ-শোক ও হাহাকার। আন্তর্জাতিকভাবেও চলছিল নানা সংকট।
এরপরও বঙ্গবন্ধুর সুদূরপ্রসারী নেতৃত্বের কল্যাণে দেশ ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। সীমিত সম্পদ নিয়েই তার শক্তিশালী এবং অনুপ্রেরণাদায়ী নেতৃত্বের গুণে এদেশের মানুষও আস্থাশীল হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশকে গড়ে তোলার জন্য জাতির পিতা বেশিদিন সময় পাননি। তবে এই অল্প সময়েই তিনি সরকার ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে অনেক কিছু শুরু করেছিলেন এবং সেসবের ভিত্তিও রচনা করেছিলেন।
কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা জাতির পিতাকে ধরে রাখতে পারিনি। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের কালরাতে সপরিবারে তাকে হত্যা করা হয়। থমকে যায় দেশের এগিয়ে চলা। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু দেশগঠনে উচ্চশিক্ষাকে গুরুত্ব দেন।
তিনি ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি)। যা কিনা বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার প্রতি জোর দিতে শিক্ষক-গবেষকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। প্রাথমিক থেকে শুরু করে কারিগরি শিক্ষার প্রতিও গুরুত্ব দেন তিনি।
১৭৬০ সালে বাষ্পীয় ইঞ্জিনের আবিষ্কারের মাধ্যমে বিশ্বে প্রথম শিল্পবিপ্লব ঘটে। পানি আর বাষ্পের ব্যবহার করে উৎপাদন বৃদ্ধি; এর মধ্য দিয়ে এক নতুন যুগে প্রবেশ করে বিশ্বসভ্যতা।
দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লবের আবির্ভাব হয় বিদ্যুৎ উদ্ভাবনের মাধ্যমে। বিদ্যুৎ ব্যবহার করে গণউৎপাদন শুরু হয়। আর ইলেক্ট্রনিকস আর তথ্যপ্রযুক্তিকে কেন্দ্র করে গেল শতকের মাঝামাঝি সময়ে ট্রানজিস্টার আবিষ্কারের পর শুরু হয় তৃতীয় শিল্পবিপ্লব।
১৯৬০ সালে ইন্টারনেটের আবিষ্কারের ফলে বিশ্বজুড়ে সৃষ্টি হয় নতুন উন্মাদনা। তৈরি হয় নিত্যনতুন কর্মকাণ্ডের, নতুন গতি পায় বৈশ্বিক অর্থনীতি।
স্বাধীনতার পর পাট ও চিনিকল এবং টেক্সটাইল কারখানা রাষ্ট্রীয়করণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। এটি ছিল ন্যায়সঙ্গত সিদ্ধান্ত। এর প্রাথমিক ফলাফলও ছিল সত্যিই চমকপ্রদ। স্বাধীনতার প্রথম বছরের মধ্যেই দেশের পাটকলগুলো তাদের সক্ষমতার ৫৬ শতাংশ উৎপাদন করতে শুরু করেছিল।
মানবসভ্যতার তৃতীয় শিল্পবিপ্লবে প্রবেশের এক দশক পরই স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্ম। এ সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে তৃতীয় শিল্পবিপ্লবের প্রধান শক্তি বা হাতিয়ার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারে উদ্যোগী হন বঙ্গবন্ধু।
পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে বিজ্ঞানমনস্ক জাতি হিসেবে গড়ে ওঠে সে উদ্যোগও নেন তিনি। এ ক্ষেত্রে তাঁর দুটি উদ্যোগ ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ ও লক্ষণীয়।
এর একটি হচ্ছে আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নে (আইটিইউ) বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভ এবং অন্যটি হচ্ছে বেতবুনিয়ায় ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন।
তার প্রচেষ্টায় ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ আইটিইউর সদস্যপদ পায়। আইটিইউ স্যাটেলাইট অরবিট বা ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক বিধিমালা তৈরি এবং এর বরাদ্দে সহযোগিতা দেয়া ও সমন্বয়ের কাজ করে থাকে।
১৯৭৫ সালের ১৪ জুন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ উদ্বোধন করেন। বর্তমানে এই কেন্দ্রের মাধ্যমে সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, হংকং, ওমান, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, জাপান, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা হচ্ছে।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থেকে বঙ্গবন্ধু জেনেছেন যে, ব্রিটিশ কলোনিভুক্ত অঞ্চল বা দেশগুলো প্রথম এবং দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লবের সুফল ঘরে তুলতে পারেনি। এ দেশগুলোর সামনে তৃৃতীয় শিল্পবিপ্লব সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে।
পৃথিবীকে মানুষের হাতের মুঠোয় এনে দেয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। এটি কালক্রমে হয়ে উঠেছে মানবসভ্যতায় অনন্য এক হাতিয়ার; যা উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতা দূর করায় দারুণভাবে শক্তি জোগায়। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, সম্ভাবনা জাগায় নতুন শিল্পের।
এখন বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকেই ঘরে বসে অঙ্গুলির ইশারায় প্রয়োজনীয় কাজটা সেরে নেয়া যায়। বিভিন্ন অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কেনা যায় আমেরিকা কিংবা রাশিয়া অথবা জাপান মার্কেটের পণ্যও। এটা সম্ভব হয়েছে কেবল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষতার ফলেই।
বঙ্গবন্ধু এটা উপলব্ধি করেই নিয়েছিলেন এসব উদ্যোগ, যা খুবই বাস্তবসম্মত ও যুগোপযোগী। এর মধ্য দিয়েই বাংলাদেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ভিত্তি রচিত হয়।
সর্বোপরি ডিজিটাল বিপ্লবে শামিল হওয়ার পথ সুগম হয়। বিশ্ব এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো এ শিল্পবিপ্লব মোকাবেলায় এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। এই বিপ্লবটি হবে মূলত ইন্টারনেট অব থিংস বা আইওটির মতো বিষয়সমূহের মাধ্যমে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিকস, ইন্টারনেট অব থিংস, নিজে চলা গাড়ি, ত্রিমাত্রিক প্রিন্টিং, ন্যানো টেকনোলজি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োটেকনোলজি, ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স, শক্তি সঞ্চয় কিংবা কোয়ান্টাম কম্পিউটিং।
বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। বঙ্গবন্ধু ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধ তথা ডিজিটাল বাংলাদেশের যে বীজ বপন করেছিলেন তাঁর কন্যার নেতৃত্বে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে। এর স্থপতি হিসেবে রয়েছেন তারই দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়।
বৈশ্বিক অর্থনীতি এখন ডিজিটালনির্ভর। এ অবস্থায় জি-২০ভুক্ত দেশে যখন ডিজিটাল অর্থনীতির আকার ২০১৬ সালেই ৪.২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার (বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের জরিপ অনুসারে) ছাড়িয়েছে।
আর গুগলের রিপোর্ট অনুযায়ী,
দক্ষিণ এশিয়ায় ডিজিটাল অর্থনীতির আকার ২০১৮ সালের ৭২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে গত ৭ বছরে ২৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হতে যাচ্ছে।
২০১৫ সালেই বিশ্বে স্পেস অর্থনীতির আকার ৩৩৫.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছায়। এক্ষেত্রে আমাদের ডিজিটাল বিপ্লবে শামিল হওয়াও বেশ সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ।
বঙ্গবন্ধু যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তাকে হত্যার পর অর্থাৎ ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত প্রযুক্তির উন্নয়নে দেশে তেমন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ১৯৯২-৯৩ সালে বাংলাদেশকে বিনামূল্যে সাবমেরিন ক্যাবল লাইনে অর্থাৎ সাউথ ইস্ট এশিয়া-মিডল ইস্ট-ওয়েস্ট এশিয়ায় (সিমিইউই) সংযুক্ত করার একটি সুযোগ আসে।
তবে তৎকালীন সরকার তা করতে দেয়নি। ফলে দেশ পিছিয়ে যায় ১৪ বছর। সেই সাবমেরিন ক্যাবল লাইনে আমরা যুক্ত হই ২০০৬ সালে। সেই হিসেবে বলা যায়, তৃতীয় শিল্পবিপ্লবের ছোঁয়ায় বিশ্বব্যাপী যখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নবীনতম আবিষ্কার কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার তুঙ্গে, তখন ঢেউয়ের অনেক দূরে অবস্থান করে বাংলাদেশ।
আগেই বলেছি, বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। তবে বস্তুত প্রকৃত এটা দৃশ্যমান হয় শেখ হাসিনা যখন ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর।
১৯৯৮-৯৯ সালের বাজেটে শেখ হাসিনা কম্পিউটারের ওপর থেকে শুল্ক ও ভ্যাট সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করেন, মোবাইল ফোনের একচেটিয়া ব্যবসা ভাঙেন। পাশাপাশি ইন্টারনেট ব্যবস্থাকে সচল করেন। ওই সময়ই দেশে প্রোগ্রামার তৈরির উদ্যোগ নেন তিনি।
বাংলাদেশ থেকে সফটওয়্যার রপ্তানির উপায় উদ্ভাবনের জন্য টাস্কফোর্স গঠন করেন। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু পরের সরকার তা বাতিল করে দেয়।
২০০৮ সালে দেশবাসীকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’র স্বপ্ন দেখান বঙ্গবন্ধুকন্যা। ২০০৯ সালের শুরুতেই সরকার গঠন করে ঘোষণা করেন ভিশন-২০২১ ও ২০৩১। উন্নয়নকে টেকসই করতে ভিশন-২০৪১ এবং শতবর্ষব্যাপী ডেল্টা প্ল্যান ২১০০-এরও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
ভিশন ২০২১-এর মূল উপজীব্য ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’। এর বাস্তবায়নে বিগত ১১ বছরে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথেই ঠিক ৪৩ বছর পর ২০১৮ সালের ১২ মে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করে বাংলাদেশ।
এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের ১৯৮টি দেশের মধ্যে ৫৭তম দেশ হিসেবে মহাকাশে জায়গা করে নিল লাল-সবুজের এই দেশটি। ২০১৮ সালের ৯ নভেম্বর স্যাটেলাইটটি বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
দেশের স্যাটেলাইট টেলিভিশনসহ সম্প্রচার মাধ্যম এখন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ব্যবহার করছে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ বাংলাদেশের জন্য শুধু গৌরবেরই নয়, এটি মহাকাশ গবেষণা, স্পেস অর্থনীতি ও ডিজিটাল অর্থনীতি গড়ে তোলার পথকে আরো সুগম করেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।
আমরা যেহেতু উন্নত বিশ্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে সেক্ষেত্রে আমাদের এ সংক্রান্ত দক্ষ জনবলও গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের আইসিটি বিভাগ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এই সুযোগটি আমাদের তরুণরা নিতে পারেন।
বঙ্গবন্ধু পথ দেখিয়ে গেছেন। সদ্য স্বাধীন দেশে যেখানে জনগণের অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থানই মুখ্য হয়ে ওঠে; এ অবস্থায় ভবিষ্যতের চিন্তা তো অনেকটা বিলাসিতা হয়ে যায়!
কিন্তু বঙ্গবন্ধু তাঁর দুরদর্শিতা ও চিন্তাশক্তির মাধ্যমে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করেছেন, পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে বিশ্বের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে যেতে পারে সেজন্য নিয়েছিলেন নানা পদক্ষেপ।
আজ তিনি থাকলে অনেক আগেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষকে কাজে লাগিয়ে ডিজিটাল বিপ্লবের সুফল ঘরে তুলতে পারতো বাংলাদেশ। কিন্তু তা হয়নি, নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে তাঁর স্বপ্ন অনুযায়ী বাংলাদেশকে ‘সোনার বাংলা’য় রূপান্তর করছেন শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের এক আলোচনায় তিনি বলেছেন, “জাতির পিতা বেঁচে থাকলে ২৫-৩০ বছর আগেই বাংলাদেশ উন্নত দেশ হতো। সে অনুযায়ী তাঁর পরিকল্পনাও ঘোষণা করেছিলেন। দেশে ফিরে তাঁর প্রথম ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার দেশের প্রতিটি মানুষ খাদ্য, আশ্রয় পাবে, উন্নত জীবন পাবে, এই আমার স্বপ্ন’।”
একাত্তরে রক্ত দিয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে দেশটাকে আমরা গড়েছি সেই বাংলাদেশ বিশ্বদরবারে উন্নত দেশ হবে, এটিই জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল। এ বছর আমরা তাঁর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করতে যাচ্ছি। এ উপলক্ষে সরকার ২০২০-২১ সালকে ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করেছে। বর্ষটি উদযাপনে থাকছে দেশে-বিদেশে নানা অনুষ্ঠানমালা।
এই সময়ে আমাদের উচিত হবে তাঁর আদর্শে দেশের কল্যাণে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা। এর মাধ্যমে দেশ হবে সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ। তবেই তাঁর প্রতি সম্মান জানানো হবে।
বঙ্গবন্ধু প্রকৃত অর্থেই ছিলেন একজন বাস্তববাদী নীতিনির্ধারক। তিনি বাস্তবতার নিরিখেই দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ শুরু করেছিলেন। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের মর্যাদা অর্জনের যে স্বপ্ন প্রধানমন্ত্রী আমাদের দেখিয়েছেন তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
এই অভিযাত্রায় এগিয়ে যেতে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। প্রযুক্তির উৎকর্ষ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সর্বোপরি ই-কমার্স ও এফ-কমার্সের জন্য প্রয়োজনীয় ডিজিটাল অবকাঠামোর জন্য বড় বড় উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।
আমাদের শিক্ষিত তরুণদের মাঝে বিরাজমান বেকারত্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য দক্ষতা উন্নয়ন এবং ডিজিটাল উদ্যোক্তা তৈরির দিকেও বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।
দেশ এখন বিনিয়োগের অন্যতম গন্তব্য। হাইটেক পার্ক তৈরি করা হচ্ছে, নির্মিত হচ্ছে অত্যাধুনিক ল্যাব। যেখানে বিনিয়োগে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও আকৃষ্ট হচ্ছে। এভাবেই বাংলাদেশ হয়ে উঠবে বিনিয়োগের অন্যতম হাব। গড়ে উঠবে সত্যিকারের সোনার বাংলা। যে স্বপ্ন দেখেছেন জাতির পিতা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়