ভালোবাসা এখন ‘ভার্চুয়াল’, আবেগেও পড়েছে টান : তবুও বসন্ত জেগেছে বনে

আগের সংবাদ

সংস্কৃতির চর্চা জোরদারের তাগিদ > বাঙালির প্রাণের মেলার উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী : হাতে নিয়ে বই পড়ার আনন্দ অনেক

পরের সংবাদ

করোনায় অর্থনীতি সচলে আমাদের ব্যাংক ব্যবস্থায় নতুন অভিজ্ঞতা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কোভিড-১৯ মহামারি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নজিরবিহীন বিরূপ প্রভাব ফেলেছে, যা থেকে বাংলাদেশও মুক্ত নয়। তবে শুরু থেকেই বাংলাদেশ সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে চলেছে। যার ফলে এ পর্যন্ত কোভিড আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা, মৃত্যুর হার এবং মহামারির কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ অধিকতর সাফল্য দেখাতে পেরেছে। করোনাকালীন ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারসহ অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে আমাদের ব্যাংক ব্যবস্থা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের পেছনে দেশের ব্যাংকিং খাতের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাংকিং খাত নিজেই ধুকছে। যার নেতিবাচক প্রভাব সামগ্রিক আর্থিক খাতের ওপরেই পড়েছিল। এর মধ্যে দেশের অর্থনীতির জন্য বড়সড় ধাক্কা হয়ে আসে করোনা মহামারির প্রকোপ। করোনা এখনো বিদায় নেয়নি পৃথিবী থেকে। কিন্তু তারপরও একে মোকাবিলা করেই আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। তেমন পরিস্থিতিতে আমাদের ব্যাংকিং খাতকে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হচ্ছে সামনের দিকে। অদৃশ্য এক ভাইরাস রাতারাতি বদলে দিয়ে সারা বিশ্বের চেহারা। করোনা দুনিয়াজুড়ে ব্যবসা-বাণিজ্য, আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক, সমাজনীতি কিংবা লাইফস্টাইল সবকিছুই বেমালুম পাল্টে দিয়েছে কিংবা দিচ্ছে এখনো। করোনাকালীন সবখানেই বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশিত ও সরকার কর্তৃক বাস্তবায়িত নির্ধারিত সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সেবা গ্রহণের এবং প্রদানের বিষয়টি পথেঘাটে, দোকানে, হাসপাতালে, গাড়িতে, অফিস আদালতে, ব্যাংকসহ সবখানে প্রয়োজ্য হলেও আজকাল তাতে অনেকটা শিথিলতা চলে এসেছে। করোনাকালীন দেশের বিভিন্ন অফিস-আদালত, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, শপিংমল, মার্কেট দীর্ঘ ৬৫ দিন সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বন্ধ থাকলেও ব্যাংকিং কার্যক্রম সীমিত আকারে শুরু করে পুরোপুরিভাবে শুরু হয়ে গিয়েছিল ১৫ দিনের মধ্যে। ঐ সময়ে রাস্তায় যানবাহন, লোকজনের চলাচল নিয়ন্ত্রিত ছিল কঠোরভাবে। কিন্তু তার মধ্যেও মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে ব্যাংক কর্মীরা তাদের কর্মস্থলে গেছেন এবং ব্যাংকে আগত গ্রাহকদের প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করেছেন। এভাবে ব্যাংকিং সেবা অব্যাহত রাখতে গিয়ে প্রচুর ব্যাংক কর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন। যদিও করোনাকালীন মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থলে সেবা দিতে আসা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকগুলো বিশেষ প্রণোদনা ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করেছিল।
করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবে বিশ্ব অর্থনীতির পাশাপাশি দেশীয় অর্থনীতিতে চরম স্থবিরতা নেমে এসেছিল। এর ফলে আমাদের ব্যাংকিং খাত অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একদিকে ব্যাংকগুলোকে ঋণ বিতরণের জন্য চাপ দেয়া হলেও খেলাপি কিংবা নিয়মিত ঋণ কোনোটিরই আদায় হয়নি। ফলে ব্যাংকের আয় অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। তাছাড়া খেলাপি ঋণ, তারল্য সংকট, মুনাফা কমে যাওয়াসহ নানা ধরনের সংকট মোকাবিলা করতে হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। একটি দেশের ব্যাংকিং খাত যদি বিপর্যয়ের মুখে পড়ে তাহলে গোটা অর্থনীতিতেই চরম বিপর্যয় নেমে আসে অবশ্যম্ভাবীভাবে। করোনা মহামারির মত বড় ধরনের সংকটে দেশের ভঙ্গুর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে পুনর্গঠনের জন্য শক্তিশালী ব্যাংকিং খাতের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তাই সম্ভাব্য সংকট থেকে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত উত্তরণের উপায় হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকার ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে অর্থনীতির চাকা চলমান রাখতে জরুরি সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ চালু হয়েছে। মোট প্রণোদনা সহায়তার উল্লেখযোগ্য একটি অংশ গেছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো অর্থনীতির জরুরি অবস্থার সময় চ্যালেঞ্জ উত্তরণে মূল ভূমিকা পালন করেছে বৈকি। করোনাকালীন লকডাউন সময়ে সব ব্যবসা-বাণিজ্য কমবেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানের কাছেই এই ধাক্কা সামলানোর মতো প্রয়োজনীয় সঞ্চয় কিংবা অর্থের সংস্থান ছিল না। ব্যাংকের মাধ্যমে দেয়া সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ চলতি মূলধন সুবিধা ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর লকডাউন পূর্ববর্তী ও লকডাউন পরবর্তী সময়ের দুই ভিন্নতর আর্থিক অবস্থার মাঝখানে সেতুর মতো কাজ করেছে।
করোনাকালীন লকডাউনের সময় যখন সারাদেশ বলতে গেলে বন্ধ, অফিস-আদালত সব অচল তখনো হাসপাতাল ও আরো কিছু জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি জনগণের জন্য নিজেদের দরজা পুরো খোলা রেখেছিল ব্যাংকগুলো। সরকারের এই সিদ্ধান্ত দারুণ সাহসী ছিল এবং সময়ের বিবেচনায় তা সঠিকও ছিল। ব্যাংক খোলা রাখার কারণে সেভাবে হোঁটচ খায়নি দেশের ভেতরের ব্যবসা-বাণিজ্য, উৎপাদন প্রক্রিয়া কিংবা আমদানি-রপ্তানি। বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান দুই স্তম্ভের একটি তৈরি পোশাক রপ্তানি ও রেমিট্যান্স- দুই খাতেই ব্যাংক পালন করেছে সবচেয়ে বড় অনুঘটকের ভূমিকা- ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমেই বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে ভোক্তার কাছে, আবার ব্যাংক থেকে এলসি খুলেই বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছে তৈরি পোশাক। করোনাকালীন সাবধানতা অবলম্বন করতে মানুষ ডিজিটাল লেনদেনে অধিক হারে আকৃষ্ট হয়েছে। করোনার সময়ে বিভিন্ন ব্যাংক গ্রাহকের সুবিধার জন্য চালু করেছে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের নানা সুবিধা। বিমাযুক্ত আমানত পণ্য চালু, সহজে অনলাইনে টাকা স্থানান্তর, ঘরে বসে সহজে দ্রুত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, অনলাইনে কেনাকাটাসহ বিশেষ কিছু নতুন পদ্ধতি যুক্ত হয়েছে দেশের কয়েকটি ব্যাংকে। এভাবে বিভিন্ন ব্যাংক করোনাকালীন গ্রাহকদের ব্যাংকে না এসে কীভাবে সেবা দেয়া যায় তা উদ্ভাবনের নানা প্রক্রিয়া চালু রেখেছে। করোনাকালীন সংকটময় পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো শিখেছে কীভাবে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে প্রযুক্তির মাধ্যমে ভার্চুয়াল মিটিং, ট্রেনিং, ওয়ার্কশপ, কনফারেন্স ইত্যাদি সম্পন্ন করা যায়। করোনাকালীন ব্যাংকগুলো তাদের বোর্ড মিটিংসহ বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) সম্পন্ন করেছে। ভার্চুয়ালি বোর্ড মিটিং, ট্রেনিং, ওয়ার্কশপ, কনফারেন্স ইত্যাদি সম্পন্ন করার কারণে ব্যাংকগুলোর ব্যয় তুলনামূলকভাবে কমে গেছে। করোনার মন্দা সামাল দিতে বেশ কিছু ব্যাংক তাদের কর্মী ছাঁটাই করেছে, আবার কোনো কোনো ব্যাংক কর্মকর্তাদের বেতনভাতা কমিয়েছে। সাধারণত এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি আগে কখনো আমাদের দেশের ব্যাংক কর্মকর্তারা। এটাও আমাদের ব্যাংক ব্যবস্থায় নতুন এক তিক্ত অভিজ্ঞতা।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালে বিশ্বের দেশে দেশে যখন অর্থনীতিতে ভাটার টান, তখন সময়োপযোগী কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থনীতিকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে। দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মোবাইল ব্যাংকিং অসামান্য সাফল্য দেখিয়েছে। দেশের আর্থিক খাতে ছোট-খাট ত্রæটি বিচ্যুতি থাকলেও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ কাজ করছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। করোনা মহামারির ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা ও দেশের ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও বর্গাচাষিদের শস্য ও ফসল চাষে ঋণ প্রদানে গুরুত্বারোপ প্রশংসা কুড়িয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং ও অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিয়েছে গ্রাম, দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায়। এছাড়া ক্রেডিট কার্ড, এটিএম বুথসহ দিনদিন ডিজিটাল লেনদেনের পরিমাণ বাড়ছে। করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে ছন্দপতন ঘটেছে। এ কারণে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ কারণে ব্যাংক নীতিমালার আওতায় থেকে ব্যাংক অনেক ছাড় দিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সচল রাখার সুযোগ দিচ্ছে। কেননা এই সময়ে সুযোগ না দিলে তারা প্রতিষ্ঠান চালু রাখতে পারবে না। সব দেশেই এটি দেয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার সেগুলো আদায় করে নেয়া হচ্ছে। করোনাকালেও ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের জয়জয়কার। কেনাকাটা থেকে শুরু করে দৈনন্দিন যাবতীয় আর্থিক লেনদেন হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। সরকার অসহায় মানুষকে আর্থিক অনুদান দিচ্ছে এই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। করোনায় গরিব মানুষ প্রধানমন্ত্রীর সাহায্যের টাকা পাচ্ছেন হাতে হাতে এবং ঘরে বসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। এছাড়া করোনাকালীন শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কার্যক্রম সচল রাখতে নীতি সহায়তায় বিশেষ ছাড়ের পাশাপাশি গ্রাহকভেদেও বড় ছাড় দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আওতায় ঋণের কিস্তি পরিশোধে বাড়তি সময়, প্রয়োজনের চেয়ে কম কিস্তি নিয়ে ঋণ নিয়মিত রাখা, বিভিন্ন নীতি সহায়তা একাধিকবার পাওয়া, এলসির পণ্য ও রপ্তানি আয় দেশে আনার বাড়তি সময় দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক সেবাদাতাদের মানবিক ব্যাংকিংয়ে উৎসাহিত করছে। সিএসআর নামে ব্যাংকিং খাতের অর্জিত মুনাফার একটি অংশ জনকল্যাণে ব্যয় করার কড়াকড়ি নিয়ম চালু করেছে। করোনার কারণে বিপর্যস্ত স্বাস্থ্যসেবা পুনরুদ্ধারে স¤প্রতি স্বাস্থ্য খাতে সিএসআর ব্যয়েও নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া ঋণের শর্ত পুরোপুরি পরিপালনে ব্যর্থ হলেও বিশেষ ক্ষেত্রে ঋণ ছাড় করছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম ত্বরান্বিত এবং পল্লী এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ বিতরণে গুরুত্বারোপ এবং দেশের কৃষকদের কৃষি পুনঃঅর্থায়ন ঋণ বাস্তবায়নে চাপ প্রয়োগ ও সফলতা ভালো ব্যাংকিংয়ের নিদর্শন। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক প্রশংসার দাবিদার।
করোনার সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর গত ২০২১ এপ্রিলে কৃষি খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ তহবিল থেকে গত ৩০ জুন পর্যন্ত ৪ হাজার ২৯৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়। এছাড়া করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর কৃষি খাতের জন্য দ্বিতীয় মেয়াদের প্রণোদনার ঋণ চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার কৃষি খাতের জন্য আরো ৩ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই তহবিল থেকে ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও বর্গাচাষিদের শস্য ও ফসল চাষের জন্য এককভাবে জামানত ছাড়াই ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারবে ব্যাংকগুলো। ঋণের সুদের হার আগের মতো ৪ শতাংশই থাকছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের এই তহবিলের অর্থও বাংলাদেশ ব্যাংক তার নিজস্ব উৎস থেকে সরবরাহ করবে। তহবিলের মেয়াদ আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত। এছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম ত্বরান্বিত এবং পল্লী এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সরকারের দ্বিতীয় দফার প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জন্য বরাদ্দকৃত ২০০ কোটি টাকা নির্ধারিত সময়ের ৬ মাস আগেই বিতরণ করা হয়েছে। দুই দফায় মাত্র সাড়ে ৪ মাসে ৩০০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর অর্থাৎ মাত্র ৩ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় ১৯টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২ হাজার ১৮১ জন উদ্যোক্তার মধ্যে ২০০ কোটি টাকা বিতরণ করে এসএমই ফাউন্ডেশন।
করোনা মহামারিতে বিশ্ব যখন বিপর্যস্ত, বিশ্ব অর্থনীতি যখন টালমাটাল তখন দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রশংসা পাচ্ছে। অর্থনীতির সব খাতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৫-৪৬ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। চলতি বছরের শেষ নাগাদ রিজার্ভ ৫০ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে পৌঁছাবে। আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার বেড়েছে। কোভিডের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা ভালো নয়, তারপরও বাংলাদেশ ভালো করছে। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত উচ্চ আয়ের দেশে রূপান্তরিত হবে। করোনাকালীন অর্থনৈতিক ক্ষতি যথাসম্ভব ক্ষতি কমিয়ে রাখার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ কৌশল নিয়েছে। সব শিল্প প্রতিষ্ঠান সচল থাকলে এবং যেসব প্রতিষ্ঠান চালুর অপেক্ষায় রয়েছে সেগুলোকে দ্রুত চালু করা সম্ভব হলে একদিকে যেমন কর্মসংস্থান বাড়বে, তেমনি বাড়বে উৎপাদন। কর্মচ্যুতি হওয়ার প্রবণতা কমবে। করোনার ক্ষতি মোকাবিলায় দ্বিতীয় দফায় প্রণোদনা প্যাকেজগুলোতে অর্থ বরাদ্দ করে চালু রাখা হয়েছে। বৈদেশিক খাতের চারটি প্যাকেজের মেয়াদ আগামী জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এর বাইরে গিয়ে গ্রাহকভেদে প্রয়োজন অনুসারে আরো ছাড় দেয়া হচ্ছে। ছোট আকারের শতাধিক গার্মেন্টের ক্ষেত্রে নতুন ঋণে ছাড় দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের ঋণেও বড় ছাড় এখনো দেয়া হচ্ছে। বিশেষ ছাড়ের পরও গ্রাহক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে আদায় করে নিচ্ছে। কিন্তু গ্রাহককে খেলাপি না করে নতুন ঋণের সুযোগ দিচ্ছে। প্রচলিত নিয়মে প্রণোদনার ঋণ ও অন্যান্য ছাড় এক দফা ভোগ করছে দ্বিতীয় দফায় আর করা যাবে না। এ ক্ষেত্রেও ছাড় দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিশেষ করে এলসির দেনা পরিশোধ করার পরও যেসব পণ্য দেশে আনা সম্ভব হয়নি সেগুলো দেশের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের প্রণোদনার আওতায় একাধিকবার ঋণ নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে। প্রণোদনার অর্থ যারা অপব্যবহার করেছেন সেগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ঋণকে শিল্পের কাজে ব্যবহারে বাধ্য করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের পর পরিদর্শনের সময়ও যদি কোনো গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের তথ্য পাওয়া যায় তাকেও বিশেষ বিবেচনায় নেয়ার জন্য নির্দেশনা রয়েছে। কারণ এখন কিস্তি দিতে না পারলে খেলাপি করা হলে প্রতিষ্ঠানটি সচল রাখা কঠিন হবে। এজন্য যথাসম্ভব খেলাপি না করার দিকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজর থাকবে। প্রান্তিক কৃষক, অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে নীতিমালায় আরো ছাড় দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ ছোট উদ্যোক্তা ও কৃষকদের ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতার কারণে খেলাপি না করে তাদের ছোট ছোট ঋণ দেয়া হবে। কেননা করোনার এবারের সংক্রমণে এ খাতে যাতে কোনো বড় ক্ষতি না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ও তারপর আরো অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংককে এই উন্নয়নমুখী নীতি ও কর্মসূচিগুলোর ধারাবাহিকতা বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন আর্থিকখাত সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো করোনার ক্ষতি পুষিয়ে আবার শক্তভাবে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টায় কাজ করে যাচ্ছে অবিরাম। ব্যাংকগুলো সুষ্ঠুনীতি প্রণয়ন ও গ্রাহকবান্ধব হওয়ার মাধ্যমে অর্থনীতিতে করোনার আঁচড়কে অবশ্যই দ্রুত উপশম করতে পারবে বলে আশা করি। করোনার অপ্রত্যাশিত ধাক্কা সামাল দিতে গিয়ে এর মধ্যে আমাদের ব্যাংক ব্যবস্থা অনেক নতুন কলাকৌশল আয়ত্ত করে নিয়েছে। বাস্তবতার মোকাবিলা করে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ উতরে সামনে এগিয়ে যেতে যে দক্ষতা ও সক্ষমতা অর্জন করেছে, সেটাও কিন্তু কোনোভাবেই কম অর্জন নয়। কোভিড-১৯ এর নেতিবাচক প্রভাব বৈশ্বিক ও দেশীয় অর্থনীতিতে প্রকট ও দীর্ঘস্থায়ী হবে- তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তেমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর নিজেদের ভূমিকাকে আরো গতিশীল করে তুলতে হবে। কোভিড-১৯ এর ক্ষতি কাটিয়ে আমাদের অগ্রগতি ও উন্নয়নের ধারাকে টেকসই করতে চাইলে প্রয়োজন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রচেষ্টা আরো জোরদার করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী গতানুগতিকতার বাইরে যাওয়া, তথা উদ্ভাবনীমূলক চিন্তাভাবনার বিকাশ সাধন। টেকসই ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে না পারলে পরিস্থিতি আমাদের গোটা অর্থনীতির জন্য চরম বিপর্যয় ডেকে আনবে- এটা আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়