ভালোবাসা এখন ‘ভার্চুয়াল’, আবেগেও পড়েছে টান : তবুও বসন্ত জেগেছে বনে

আগের সংবাদ

সংস্কৃতির চর্চা জোরদারের তাগিদ > বাঙালির প্রাণের মেলার উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী : হাতে নিয়ে বই পড়ার আনন্দ অনেক

পরের সংবাদ

অসীম স্বপ্নের বীজ বোনা তারুণ্যের হৃদয় ভূমিতে

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

‘সুজলা, সুফলা বাংলাদেশ সম্পদে ভর্তি। এমন উর্বর জমি দুনিয়ায় খুব অল্প দেশেই আছে। তবুও এরা গরিব। কারণ যুগ যুগ ধরে এরা শোষিত হয়েছে নিজের দোষে। নিজেকে এরা চেনে না, আর যতদিন চিনবে না এবং বুঝবে না ততদিন এদের মুক্তি আসবে না।’
(অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান।)

খুব বেশি নয়। মাত্র কয়েকটি লাইন। এর মধ্যেই লুকানো আছে অমিত সম্ভাবনার কথা। দেখানো আছে সমৃদ্ধির পথ। উন্নত দেশ গড়ার মন্ত্রও। স্বাধীনতার ৫০ বছর। দীর্ঘপথ? হয়তো হ্যাঁ। হয়তো না। বছরের হিসাবে পাঁচ দশক। মনে হতে পারে দীর্ঘপথই। কিন্তু যে চেতনায় স্বাধীন হয়েছিল দেশ, সেই পথে কতটা চলতে পেরেছে? আদৌ কি খুব বেশি সে সময়? যাদের মন ও মননে ছিল না স্বাধীনতা, দীর্ঘসময় চালকের আসনে ছিলেন তো তারাই। পঁচাত্তর থেকে শুরু। তারপর পার হতে হয়েছে কত চড়াই-উতরাই। কত বন্ধুর পথ। কণ্টকাকীর্ণ সেই পথের মাঝে এক ফালি মসৃণ পথরেখা। যে পথে মুক্তি সাধারণ মানুষের।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ স্বাধীনতা এসেছে। কিন্তু মুক্তি? শোষণ-বঞ্চনা দায় মুছে ফেলা, দারিদ্র্যের কশাঘাত, ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ, প্রকৃত মুক্তি তো সেখানেই। সেই পথেই হাঁটছিল দেশ। পঁচাত্তর-পূর্বেও। কেবল একটি মধ্য আগস্টের পর সব যেন আড়াল হলো রক্তের দাগে।
হারানো সেই পথ, যে পথে ছিল অর্থনৈতিক মুক্তি, ছিল সামাজিক সমৃদ্ধি, উন্নত বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার প্রেরণা- ধীরে ধীরে সে পথ খুঁজে পেয়েছে দেশ। তবে তার জন্য সইতে হয়েছে ঘাত-প্রতিঘাত-অভিঘাত।
‘বঙ্গীয়-সাহিত্য পরিষদ’ আয়োজিত এক সভায় ‘ছাত্রদের প্রতি সম্ভাষণ’ শিরোনামে লিখিত এক প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘শুধু বড় জিনিস কল্পনা করিলেও হইবে না, বড় দানভিক্ষা করিলেও হইবে না এবং ছোটমুখে বড় কথা বলিলেও হইবে না, দ্বারের পার্শ্বে নিতান্ত ছোট কাজ শুরু করিতে হইবে।’
যদি বলি কবিগুরুর এই কথার সূত্রে, আমরা কেবল বড় কল্পনাই এখন করি না। সেই কল্পনাকে দিতে পারি বাস্তবের রূপও। কেবল বড় দানভিক্ষা করি না, নিজেদের অর্থেই গড়তে পারি স্বপ্ন। গেঁথে দিতে পারি প্রমত্তা পদ্মার বুকে সমৃদ্ধির প্রস্তর-স্তম্ভ। ছোটমুখে বড় কথা বলার দিনও কার্যত শেষ বহু আগেই। ছোটরাও এখন বড়দের মতো কথাই বলে না, করেও দেখায়। তারুণ্যের এই অভিযাত্রাই কথা বলে নতুন বাংলাদেশের।
অমিয় সম্ভাবনার যে কথা পুঁথি-পুস্তকে ছিল, তা এখন বাস্তবতা। বিশ্ব চ্যালেঞ্জেও তরুণরা আজ হাল ধরছে বিজ্ঞ নাবিকের মতো। ‘মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি, চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি…’ কেবল এখন আর পঙ্ক্তি নয়। কল্পনাও নয়। কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’র শতবর্ষের দুয়ারে দাঁড়িয়ে বলা যায়, এটিই এখন সত্যি। তরুণরা সেই কবেই পৌঁছে গেছে মহাকাশে। বাংলাদেশ মহাকাশেও গেঁড়েছে ভিত।
চ্যালেঞ্জের শেষ তো নেই। কতশত নিত্য-নতুন। প্রতিটি ভোরই জীবনের সামনে দাঁড়ায় অনাগতের চ্যালেঞ্জ নিয়ে। কী ঘটতে যাচ্ছে কিছুক্ষণ পর, কেউ কি জানে? যদি বলি অতিমারি করোনার কথাই। কেউ কি ভেবেছে কখনো? এভাবে মুখ ঢেকে যাবে অতিমারির বিজ্ঞাপনে? ভেবেছে কি মাছের মৃত্যুর চেয়েও বিপুল হবে মানুষের মৃত্যু? গোটা বিশ্ব এখন একই বাস্তবতায় ভোর দেখে। অবসন্ন আর বিষণ্নতার অন্ধকারে রাত নামে। অনাহূত, কল্পনাতীত এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি এখন সবাই। উন্নত আর উন্নয়নশীল বলে কোনো বিভেদ নেই দেশে। অতিমারির নির্মম চিহ্নে ঢেকে যাচ্ছে উন্নত দেশের মাটিও। সেখানে বিস্ময়করভাবে বাংলাদেশ সক্ষম হয়েছে অতিমারির ক্ষতি কিছুটা হলেও ঠেকাতে।
দীর্ঘদিন ঘরবন্দি মানুষের জন্য চ্যালেঞ্জ কেবল জীবনেরই ছিল না, ছিল জীবিকারও। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ দৃষ্টান্ত রেখেছে এখানে। মহাদুর্যোগে প্রসারিত হয়েছে মানবতার হাত। যদিও আরো কিছু করার ছিল। দাঁড়ানোর ছিল মানুষের পাশে। সময় তো একেবারে বয়ে যায়নি, এখনো সম্ভব। তবে সম্মিলিত প্রয়াসে করোনার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যে সাহস দেখিয়েছে দেশ, তা যেন আরেক জন্মযুদ্ধ।
অবকাঠামোগত উন্নয়নে দৃষ্টান্ত হতে পারে বাংলাদেশ। স্বীকার করছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোও। কিন্তু বিপরীতে শিক্ষা, সামাজিক ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক মুক্তির পথে এখনো হাঁটতে হবে বহু দূর। মাথাপিছু আয় বেড়েছে সত্যি, কিন্তু মাথাপিছু মননের উন্নয়ন কতটা হয়েছে? সভ্যতার সূতিকাগার শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি। এর পাদপ্রদীপে খুব বেশি মানুষকে কি আনা গেছে? মন আর মননের উন্নয়ন না হলে কী করে হবে উন্নত জাতির স্বপ্নপূরণ?
নৈরাশ্যবাদী নই, আশাবাদী। এই প্রজন্মের একজন হিসেবে। কেবল সব উচ্ছন্নে যাচ্ছে, ছাড়তে হবে গড্ডলিকা প্রবাহের এই দোষারোপের পথ। হতাশার সলিলে নিমজ্জিতরা কখনো মাথা তুলতে পারে না। কেবল বিপথে গেছে, বখে গেছে, নষ্টদের দখলে গেছে বলে বলে সম্ভাবনাকেও কি হারাতে বসেছি আমরা? ‘অমঙ্গলকে উড়াইয়া দিও না সে মঙ্গল সহিত উড়িয়া যাইবে।’ রবীন্দ্রনাথের এই অমৃত বাণী ভুলে গেলে চলবে কী করে?
বিপুল সম্ভাবনার বাংলাদেশ আছে তরুণদের হাতেই। তাদের স্বপ্নেই। কেবল প্রয়োজন প্রেরণার। যে কোনো কিছুতেই প্রেরণা বিকল্পহীন। রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার দায়িত্ব আছে সবার। আলোগুলো খুঁজে বের করা। সলতেগুলো উস্কে দেয়া, প্রকৃত মননের বিকাশে। বাঙালি মাথা নোয়াবার নয়। ইতিহাস তাই বলে। অদম্য স্পৃহা আছে পরিশ্রমী বাঙালির হৃদয়ে। মহান শিল্পী এস এম সুলতানের আঁকা ছবিগুলো তারই প্রতীক। পেশাবহুল কৃষক, যার শ্রমে-ঘামে ঘোরে সভ্যতা-অর্থনীতির চাকা।
অসীম স্বপ্নের বীজ বোনা তারুণ্যের হৃদয় ভূমিতে। যেখানে গাথা আছে পূর্বপুরুষের বীরত্ব। লেখা আছে বিজয়ের ইতিহাস। ভাষা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী স্লোগান- কোনোটাই বিফল হয়নি। কারণ অধিকার আদায়ের দৃঢ় উচ্চারণ ছিল তরুণদের কণ্ঠেই। মুক্তির মন্দির-পথে অদম্য যাত্রী তরুণরাই নেতৃত্ব দেবে আগামীর বাংলাদেশ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়